নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহারে আমার বাংলাদেশ!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৪৬

বুয়েট হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা শিক্ষিত বাবা মা স্বপ্ন দেখেন তাঁর ছেলেমেয়েরা বুয়েট বা এই শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করুক। আবরারের বাবা মায়েরও একই স্বপ্ন ছিল, ছিল ওর খুনি বাকি পঁচিশটা ছেলের বাবা মায়েরও।
আমি ছোটবেলা থেকেই এই শিখে বড় হয়েছি যে ছাত্রদের কোন রাজনৈতিক দলেই যোগ দেয়া উচিৎ না। আমার আশেপাশে তখন নিয়মিতই ছাত্ররাজনীতি করা ছেলেরা খুন হচ্ছে। প্রতিপক্ষের হাতে মরছে, পুলিশের গুলিতে মরছে, অনেক কারণেই মরছে। প্রতিটা ঘটনা ঘটে, আব্বু আম্মু আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, কোন প্রতিষ্ঠানেই যেন কোন রাজনৈতিক দলের সাথেই আমরা যোগ না দেই। বয়স যখন তিন কি চার, তখন থেকে এইসব ঢুকছে মাথায়, আমি কোন বুদ্ধিতে রাজনীতিতে যোগ দেব?
আমাদের কাছে ছাত্রজীবনের কাজ একটাই, পড়ালেখা। "ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ" সংস্কৃতের শ্লোক, মানে অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের তপস্যা। এই তপস্যায় মুনিঋষি ছিলাম এমন বলার কোনই উপায় নেই, কিন্তু এ থেকে খুব একটা বিচ্যুতও ছিলাম না।
তাছাড়া এইটাতো প্রমাণিতই যে স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ছেলেরা সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরী ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা। নব্বই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত একটা ঘটনা অন্তত বলেন, একটা উদাহরণ দেন, যেখানে দেশের কল্যানে ছাত্ররাজনীতির ছেলেমেয়েরা নেতৃত্ব দিয়েছে। রিসার্চ করতে করতে আপনার মাথার চুল ঝরে মুরাদ টাকলা হয়ে যাবেন, তবু একটা উদাহরণ দিতে পারবেন না। হ্যা, ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের ছেলেরা বলবে ওরা নানান সময়ে জালিম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, কিন্তু মূল ঘটনা ছিল এই যে ওরা ওদের বিরোধী দলের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ওরা যদি আসলেই "জালিমের" বিরুদ্ধে আন্দোলন করতো, তাহলে নিজের সরকারেরই অন্যায়ের প্রতিবাদে ওরা মাঠে নামতো। আচ্ছা ঠিক আছে, নিজ সরকারের বিরুদ্ধে যাবার মতন কলিজা (ইংলিশে যুৎসই শব্দ আছে, "balls" বাংলায় লিখলে লোকে অশ্লীল বলবে, তাই কলিজা ব্যবহার করলাম) আমাদের ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর নেই। সেটা আশা করা বেশি বেশি হয়ে যাবে। কিন্তু এইটা আশা করতে দোষ কি যে যখন কেউ ন্যায়ের পক্ষে রাস্তায় নামে, তখন সাহায্য করতে না পারুক, অন্ততঃ চুপ করে থাকতো, বাঁধা দিতে যাবে কেন? "নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোলনের কথাই বলছি। কেউ তখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেনি, আন্দোলন ছিল সড়কের নিরাপত্তার দাবিতে। দেশের সাধারণ ছাত্ররা সেদিন রাস্তায় নেমেছিল, ওদের পেছনে কোন রাজনৈতিক ব্যাকাপ ছিল না। ছাত্রলীগ হেলমেট মাথায় লাঠি হাতে ওদের পেটাতে শুরু করলো। বিএনপির এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হলো যেখানে উনি উনার ছাত্রনেতাদের নির্দেশ দিচ্ছেন এই আন্দোলনের ফায়দা তুলতে। ছাত্ররাজনীতি যে প্রভুর নির্দেশে ছাত্রদের গলায় পট্টি বেঁধে জিভ বের করে লকলক করতে শেখায়, সেটার বেস্ট উদাহরণ এটি। কেন ভাই, সড়ক নিরাপদ হলে লাভটা কি পুরো দেশের মানুষদের হবেনা? আমি আপনি আমাদের আত্মীয় পরিবার রাস্তায় নামলে নিরাপদ থাকবে, এর মাঝে রাজনীতি আসলো কোত্থেকে? কিন্তু না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পিটিয়েছে বস্তিবাসী পরিবহন শ্রমিকরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ক্যাম্পাসে বোমা ফেটেছে, ভাংচুর হয়েছে, এবং সবই হয়েছে রাজনৈতিক ব্যাকআপে।
গণজাগরণ আন্দোলনের কথা বলতে পারেন। সেখানেও রাজনীতি ছিল না, মুক্তিযুদ্ধে বেঈমান রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন ছিল। ছাত্রলীগ পক্ষে ছিল কারন রাজাকাররা ছিল বিএনপি জামাতের সদস্য, যদি ঘটনা ভিন্ন হতো, তাহলে লীগ পাশে থাকতো না। এই আন্দোলনকেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের ফায়দায় ব্যবহার করে ঠিকই চুষে ফেলেও দিয়েছে।
পুরান প্যাঁচাল পাড়তে ভাল লাগেনা। পুরানো ইতিহাস ঘাটলেই বুঝতে পারি বড় জ্বালা এই বুকে। গর্ব করার কিছুই পাই না। এরশাদ পতনের আন্দোলন নিয়ে কিছু মলম দেয়ার চেষ্টা করবেন? এরশাদ স্বৈরাচারী ছিল? তা ওর পতনের পরে এখন পর্যন্ত কি ঘোড়ার আন্ডার পার্থক্য ঘটেছে? তারচেয়ে বড় কথা, যাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এত মানুষের প্রাণ গেল, এত আন্দোলন, যে খুনি পিশাচ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গুলি করে করে মানুষ মারলো এবং ওকে বিচারের জন্যই রাজপথে মিছিল ইত্যাদি হলো, সে কি রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করে, আওয়ামীলীগেরই জানের দোস্ত হয়ে দীর্ঘ একটা জীবন যাপন করে সুখের মৃত্যু মরলো না? বিচার হয়েছিল? কি ছিল বিচারে? এগুলি কি সেই আন্দোলনে শহীদদের প্রতি ব্যঙ্গ করা নয়?
যাই হোক। মূল বিষয়ে ফেরত যাই। এবং সেটা হচ্ছে, আবরারের হত্যা, এবং বিচার দুইটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি কতটা ধ্বংসাত্মক ভূমিকা পালন করে। অল্প বয়সে ক্ষমতা যে কারোর জন্যই খারাপ।
আপনি বলতে পারেন ছাত্র রাজনীতি না করলে ভবিষ্যতে নেতা হওয়া যায়না। ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি শিখে বড় হতে হবে। আপনাদের জ্ঞাতার্থে, আমেরিকায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটদের আজাইরা ফাত্রামি নেই যেমনটা আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল, শিবির আর ছাত্রলীগের দেখা যায়। ছাত্ররা যদি লিডারশিপ শিখতে চায়, তবে ওদের জন্য বিভিন্ন ক্লাব আছে। ফাই টিটা কাপ্পা, ফাই বেটা কাপ্পা, ফাই কাপ্পা ফাই ইত্যাদি অনার্স সোসাইটি আছে, যেগুলোতে টিকে থাকতে হলেও নির্দিষ্ট জিপিএ ধরে রাখতে হয়। ঘুরায়ে ফিরায়ে বিষয় একটাই, "পড়ালেখা।" এছাড়া ছাত্রদের অনেক অনেক ভলান্টিয়ার কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেখা যায়। এবং এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ওদের ক্রেডিটও দেয়। স্কলারশিপও পাওয়া যায় এইসব কাজ দেখিয়ে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতে হলে শুধু জিপিএ বা রেজাল্ট দেখালেই হয়না, পড়ালেখার পাশাপাশি সমাজের জন্য কল্যাণমুখী আর কি কি কাজ সে করেছে সেটাও দেখাতে হয়। সাধারণ জিপিএ নিয়েও তাই অনেকে অনেক ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে যায় যেখানে দিনরাত শুধু পড়াশোনা করে পারফেক্ট জিপিএ নিয়েও অনেকে পায়না। কিন্তু কোথাও দেখবেন না "আমার ভাই তোমার ভাই বাইডেন ভাই ট্রাম্প ভাই" বলে কেউ সুযোগ পেয়েছে। এইসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জ্যাম না থাকার এইটাও একটা প্রধান কারন। দুনিয়া উল্টে পাল্টে গেলেও পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়েই হবে, তুমি প্রস্তুত না, তাই পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন করবা, ভাংচুর করবা, দালাল ভিসির বাড়ি ঘেরাও করবা, এই ফাইজলামি এই দেশে নাই। শিক্ষকদেরও কোন ফাউল দল নাই। তা দেখা গেল এই দেশে ছাত্ররাজনীতি বলতে গেলে একেবারেই অনুপস্থিত, তাহলে এরা কি নেতৃত্ব দেয়া শিখে না? গোটা দুনিয়ার নেতা হয়ে বসে আছে আমেরিকান রাজনীতিবিদরা, আর ছাত্র রাজনীতি করে বেড়ে ওঠা আমাদের টাকলা প্রতিমন্ত্রী নায়ক নায়িকাকে এনে থ্রিসাম করতে করতে ফাইভস্টার হোটেলের সুইটে বসে টি বোন স্টেক খায়। আজকেই এক ছোটভাই আমাকে বলল, "এই হালায় টি বোন খাইয়াই টাল, ব্রিস্কিট, রিব্স বা অন্যান্য স্টেক খাইলেতো মইরাই যাইতো!"

আবরারের খুনিদের ফাঁসির হুকুম হয়েছে। খুশি হওয়ার কথা, একদল খুনির ফাঁসি হতে যাচ্ছে, বাকিগুলির যাবজ্জীবন। "ন্যায় বিচার" হয়েছে বলা চলে। কিন্তু কেন যেন আফসোস হচ্ছে পুরো ব্যাপারটার জন্য। এত্তগুলি সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল নক্ষত্রের কি করুণ পরিণতি। কি না হতে পারতো তারা! দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সাফল্য ছড়িয়ে যেত গোটা বিশ্বব্যাপী। গর্বে গর্বিত হতো ওদের ছাব্বিশটা (আবরারের সহ) পরিবার সহ গোটা দেশবাসী। অথচ কি হলো? একজনকে খুন করে এখন খুনিরা মরার জন্য তৈরী হচ্ছে। আহারে অভিভাবকরা, আহারে তাঁদের স্বপ্ন! আহারে আমার বাংলাদেশ!
ছাত্রদের হাতে বইয়ের বদলে যারা অস্ত্র তুলে দিল, সম্ভাবনাময় তরুণদের যারা দিকভ্রান্ত করলো, ওদের কোনই বিচার হলো না।
আবরার হত্যা ঘটনা চরম শিক্ষা হোক আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। প্রতিটা শিক্ষার্থী শিখুক কিসে জয় এবং কিসে পরাজয়। সবাই সাবধান হোক। "অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের তপস্যা" কথাটি যত দ্রুত আত্মস্থ করতে পারবে, ততই তাঁদের মঙ্গল। জীবনে কিছু ভুল থাকে যা একবার করে ফেললে শোধরানোর কোনই সুযোগ থাকেনা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি কি মংগল গ্রহে থাকেন?

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:৫৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: শফিউল আলম প্রধান খুন করেই বড় নেতা হয়ে যান।




৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়লেই বুঝা যায় আপনি নিরপেক্ষ নন। সমস্যা এখানেই।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা, তাই, এখানেও পক্ষ-নিরপেক্ষ ধরে নিলেন? আপনাদের সমস্যা এখানেই যে আপনারা ব্রডার পিকচার দেখার চেষ্টাই করেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.