নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মর্টগেজ ইন্টারেস্টের ব্যাপারে আপনার কি মত?"

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২৮

ভাইয়া, "মর্টগেজ ইন্টারেস্টের ব্যাপারে আপনার কি মত?"
প্রশ্নটা আমাকে এখন অহরহই শুনতে হয়। এ নিয়েই কিছু কথা বলতে চাই।
বর্তমান যুগের সবচেয়ে আলোচিত টপিক হচ্ছে, সুদ। আপনি ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিন, আপনাকে সুদ দিতেই হবে। কোন ব্যাংকই আপনাকে বলবে না, "এই নাও এক কোটি টাকা লোন, তিরিশ বছর পরে ঠিক এককোটি টাকা ফেরত দিও, ততদিন এনজয় করো!"
ইসলামী ব্যাংক, বা শরিয়া ভিত্তিক কোন প্রতিষ্ঠান, যারা দাবি করে আপনাকে সুদ দেয় না বা ওরাও নেয় না, আমি ওদের লজিকটা বুঝিনা। কারন সুদের ইসলামী সংজ্ঞা হচ্ছে, আপনাকে আমি এক টাকা ধার দিলাম, বিনিময়ে এক টাকা এক পয়সা নিলে সেই এক পয়সাই সুদ। এখানে সুগারকোটিংয়ের কোন উপায়ই নাই। ব্যাংক ও "হালাল প্রতিষ্ঠানগুলো" কি সেটাই করছে না? ওরা কি এক টাকা বা তারচেয়ে কম ফেরত নিয়ে বলছে "জাযাকাল্লাহ ব্রাদার!"?
হ্যা, "লভ্যাংশ" আরেকটা কনসেপ্ট আছে। সেটা হচ্ছে, আপনি আমাকে একশো টাকা দিলেন। আপনাকে আগেই বলে রেখেছি যে ঐ একশো টাকা আমি হালাল ব্যবসায় খাটাবো। সেটা থেকে লাভ হলো দশ টাকা। আমি আপনাকে পাঁচ টাকা দিলাম। এইটা সুদ না। এইটা ১০০% হালালই শুধু না, এইটাই আল্লাহ করতে বলেছেন। তিনি ব্যবসাকে উৎসাহিত করেছেন। ব্যবসা করেই লোকজন কোটিপতি হয়, চাকরি করে সেভাবে টাকা আসেনা।
তবে, যদি আমি লস করি। ধরেন একশো টাকা দিয়ে সবজি কিনলাম, যা কেউ না কেনার ফলে বাসি হয়ে যাচ্ছিল, আমি কমদামে বিক্রি করে দিলাম। ৯০ টাকায় বিক্রি করায় দশ টাকা লস হলো। তার উপর ছিল কর্মচারীর বেতন ও অন্যান্য খরচ। ফলে আশি টাকা আমি আপনাকে ফেরত দিলাম। আপনি নিবেন? না। তখন আপনি বলবেন, "তোকে একশো টাকা দিয়েছি, আমাকে আমার পুঁজি ফেরত দে চোরের বাচ্চা চোর!!"
হাতে পায়ে ধরলেও আপনি আমাকে মাফ করবেন না। এইটাকে ব্যবসা বলে না, আপনি আসলে সুদেই টাকা খাটিয়েছেন। বুঝাতে পারছি?
আপনি বলতে পারেন, সামান্য বিশ টাকার জন্য আপনি এমন করবেন না। বিশ টাকার জায়গায় বিশ লাখ টাকা হলে আপনার কলিজা এত বড় হবে?
এখন ধরে নিলাম আপনি ভাল মানুষ। কিন্তু আমি নিজে বাটপার। আমি আপনার একশো টাকা থেকে দেড়শো টাকা লাভ করেছি। কিন্তু আপনাকে দেখালাম যে আসলে লোকসান হয়েছে। কাগজপত্র সবকিছু প্রমান আছে। আপনাকে আমি নব্বই টাকা বুঝিয়ে দিলাম। এমনটা হতে পারে না? বাংলাদেশে এমনটা না হওয়াটাইতো বিস্ময়কর। ভালমানুষের বিশ্বাসের ফায়দা তোলা আমাদের রক্তে মিশে আছে। তাহলে এখানেও একটা বিরাট ফাঁক থেকে যাচ্ছে, তাই না?
ইসলাম ব্যালেন্সের ধর্ম। মানে সবদিকেই সমান দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি একাই মুমিন মুসলিম হলে চলবে না, গোটা সমাজকেই সৎ হতে হবে। তাহলেই ইসলামী হুকুমত কায়েম সম্ভব। আমাদের দেশে আমরা ঠিক উল্টাটা করি। আমরা নিজেরা মুমিন না হয়ে অন্য সবাইকে মুমিন বানাতে ব্যস্ত।
এক আলেমের কাছে এক বেয়াক্কেল প্রশ্ন করেছে, "সানিয়া মির্জা ছোট কাপড় পরে খেলে, এ নিয়ে ইসলামী বিধান কি?"
হুজুর বললেন, "প্রশ্নটা যখন সানিয়া মির্জা আমাকে করবে, তখন আমি তাঁকে জবাব দিব। তুমি বাছা নিজের চরকায় তেল দাও!"
এই হচ্ছে খাঁটি আলেম। আর আমরা হচ্ছি ঐ প্রশ্নকর্তা।
প্রসঙ্গে ফেরত যাই।
আরেকটা উদাহরণ দেই।
মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী মানুষ সমস্ত জীবন কাজ করে রিটায়ার করে কিছু টাকা পেয়েছেন। রিটায়ার জীবনে তাঁর ইনকাম হবে শূন্য। তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন, এবং চিটার বাটপাররা তাঁর টাকা মেরে দিল। শেষ জীবনে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেলেন। উনার অবস্থা দেখে উনার সহকর্মী আর দশজন মানুষ ব্যাঙ্কে টাকা রাখাকে নিরাপদ মনে করলেন। সেটা থেকেই তাঁদের সংসার চলে। ঋণ নিতে চাননি বলে বাড়িও কিনেন নি। ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়। কিন্তু দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদির সাথে পাল্লা দিয়ে তাঁরা টিকতে পারেন না। ব্যাংকের সুদ/লভ্যাংশ তাঁদের নিতেই হয়। নাহলে মূল দ্রুত ফুরিয়ে আসে। দোষ দিতে পারবেন? তাঁকে দোষ দেয়ার আগে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা শুধরান, ওরা কেন চোর বাটপারদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারলো না?
ইউনিপে ডেসটিনিতে প্রচুর মানুষ টাকা খাটিয়েছিলেন। সরকারের অনুমতি ছিল বলেই ওরা কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করেছে, কাজেই সাধারণ মানুষ ওদের বিশ্বাসও করেছে। বেশিরভাগই রিটায়ার্ড লোকজন। ব্যাংকের অল্টারনেটিভ হিসেবে তাঁরা ভেবেছিলেন এইটাই বুঝিবা ভাল ও হালাল উপায়। মুসলিম ছাড়াও অনেক অন্যান্য ধর্মের মানুষও ছিলেন। সবাই নিঃস্ব হলেন। সরকার দোষীদের জেলে বন্দি করলো। কিন্তু ওদের টাকাগুলো ফেরত দেয়ার কোন ব্যবস্থা করেছে কি? কাগজে কলমে নথিতেতো সবারই নাম আছে, অথচ টাকাগুলো সরকার বাজেয়াপ্ত করে নিজে নিয়ে নিল। ঐসব ভিকটিমদের কি লাভ হলো? আগে চোরেরা নিয়েছে, এখন সরকার নিয়েছে, তাঁদের টাকাতো তাঁদের কাছে ফেরত আসেনি। এইটা ন্যায় বিচার?

অথবা আরেকটা দৃশ্য কল্পনা করা যাক। এক বিধবা মহিলার স্বামী মারা গেছেন। তাঁর টাকা তিনি ব্যাংকে রেখেছেন। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন গীত গাওয়া শুরু করলো, "হারাম!" অথচ এই মহিলা কিভাবে সংসার চালাবেন? কে তাঁদের দায়িত্ব নিবেন ও সততার সাথে নিশ্চিত করবেন যে তাঁদের টাকা পয়সা ঠিকঠাক মতন ব্যয় হবে ও তাঁরা বুঝে পাবেন? পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের এই সময়ে "ইসলামিক" দায়িত্ব যে তাঁদের সংসার যেন ঠিকঠাকভাবে চলে সেটা নিশ্চিত করতে টাকা পয়সা ও অন্যান্য অনেক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসা, কয়জন আগায়? কেউ না। পাওয়ার অফ এটর্নি দিবেন নিজের ভাইকে? সে নিজেই মেরে দিবে। অথবা ভাইপোরা মুখ হা করে থাকবে ফুপুর সম্পদ লুটে খাবার জন্য। এই সিচ্যুয়েশনে মহিলার উপায় কি?
গেল একদিক।
এখন অন্যদিকটা ধরেন।
আমার কোন কাজের জন্য এক কোটি টাকা লোন লাগবে। অবশ্যই আমাদের সমাজে এমন দিলদরিয়া লোক নাই যারা আমাকে এককোটি টাকা লোন দিবে। আমি মেরে দিতে পারি, কিছুই করার নেই। বাংলাদেশে লোকে পাঁচশো টাকাই ফেরত দিতে চায় না, আর কথা হচ্ছে এককোটি টাকা নিয়ে! তারপরেও আপনি আমাকে এককোটি টাকা লোন দিলেন। চুক্তি হয়েছে যে তিরিশ বছরে আমি টাকাটা পরিশোধ করবো। তিরিশ বছর পরে আমি আপনাকে এককোটি টাকাই ফেরত দিলাম। আমাকে বলেন, তিরিশ বছর পরে সেই এককোটি টাকার মূল্য কি সমান থাকবে? তাহলে আমাকে লোন দিয়ে আপনি ঠকে গেলেন না?

ইসলামে যে ঋণের কথা ও সময়কালের কথা বলা হয়েছে, সেটা স্বল্পকালীন। অমুক সাহাবী তমুক সাহাবীকে লোন দিয়েছেন, এবং ফেরত দেয়ার তারিখও এক দুই বছরের মধ্যেই নির্ধারিত হতো। এক ক্যারাভান মৌসুমেই সাধারণত তাঁদের টাকা চলে আসতো, তাঁরা ঋণ শোধ করে দিতে পারতেন। তিরিশ চল্লিশ বছরের দীর্ঘকালীন ঋণের কোন উদাহরণ আমার জানা নেই। আপনাদের কারোর কাছে অথেন্টিক রেফারেন্স থাকলে আলোচনা করতে পারেন। বর্তমানে উদাহরণ এমন হতে পারে যে আমি আজকে এক কোটি টাকা ধার নিলাম, চায়নায় গিয়ে মালপত্র কিনলাম, বাজারে বিক্রি করলাম, ছয়মাসের মধ্যে আপনার টাকা আপনাকে ফেরত দিলাম। জানি ছয়মাসেও বাংলাদেশে অনেক কিছুরই দাম বেড়ে যায়, কিন্তু সেটা গায়ে লাগে না। এই ক্ষেত্রে আমি যদি সুদ নেই, আমাকে জুতাপেটা করা যেতে পারে। আপনার যদি টাকা বেশি লাগে, আপনি আমার ব্যবসায় পার্টনার হিসেবে যোগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমি আপনাকে এককোটি দশ লাখ ফেরত দিতে পারি, বাকি যা লাভ আমার। আর লস করলে আপনিও কম পাবেন।

দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে একটি সমাধান হতে পারে এই যে, সোনার মূল্যকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরা। আপনি আমাকে এককোটি টাকা ধার দিলেন, সেই সময়ে এককোটি টাকায় যে পরিমান স্বর্ণ কেনা যায়, সেটাও লিখে রাখা হলো। তিরিশ বছর পরে আমি যখন আপনাকে টাকাটা ফেরত দেব, সেটার পরিমান হবে তিরিশ বছর পরে সেই পরিমান স্বর্ণ কিনতে যত টাকা লাগবে, সেটাই। এতে রিস্ক হচ্ছে, স্বর্ণের পরিমান অনেক দ্রুত অনেক বেশি পরিমানে বাড়ে। ২-৩% ইন্টারেস্ট রেট সেই তুলনায় কিছুই না। আমার মনে আছে এককালে সোনার ভরি ছিল ষোল হাজার টাকা। এখন তিরাশি হাজার টাকারও বেশি। ১৫-২০ বছরে পাঁচগুণের বেশি মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আমি যদি ২-৩% ইন্টারেস্ট রেটে ফেরত দেই, তাহলে আমাকে যে লোন দিয়েছে, ওর লস হচ্ছে। কিন্তু সোনার মূল্যে ফেরত দিলে আমরা সমানে সমান। ঠিক?
এইটা আমার থিওরি, এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক যা খুশি করেন, কোনই সমস্যা নাই।

এইবার মূল সাবজেক্টের দৃশ্য নিয়ে আলোচনা হোক।
আমি আমেরিকায় একটা বাড়ি কিনলাম সাড়ে তিন কোটি টাকায়। সুদের হার ৪.১২%. ডাউন পেমেন্ট যা দিয়েছি তাতে লোন নিয়েছি ৩,১৯,১৩০ টাকা। তাহলে মাসিক ১,৫৪,৬৬৭ টাকা হারে আমি তিরিশ বছরে ফেরত দিতে থাকলে শেষ পর্যন্ত আমি ৫,৫৬,৮০,১২০ টাকা ফেরত দিব। আপনি বলবেন, আমার লোন ছিল মাত্র সাড়ে তিন কোটি, আর পরিশোধ করলাম সাড়ে পাঁচ কোটি! এ তো জালিয়াতি! ঠিকতো?
কিন্তু এরই মাঝে যে আমার বাড়ির দাম সাড়ে ছয় কোটি হয়ে গেছে, সেটার বেলা? যে লোন দিয়েছে, সেতো আমার বাড়ির এগেইন্সটেই লোন দিয়েছিল। আমি লাভ করেছি এক কোটি টাকারও বেশি।
টাকা জমিয়ে তিরিশ বছর পরে এই বাড়ি সাড়ে ছয়কোটি টাকা দিয়ে কিনতেই পারি, কিন্তু ভাল এলাকায় ভাল বাড়িতে ভাড়া দিয়ে এত টাকা ক্যাশ জমানো সম্ভব?
আমি কনজারভেটিভ নম্বর বললাম। ইনফ্লেশনের সময়ে সাড়ে তিন কোটির বাড়ি সাড়ে ছয় কোটি হতে দুই তিন বছরই যথেষ্ট। এই অবস্থায় বাঁশটা খায় ব্যাংক। ব্যাংক কিন্তু সুদের হার বাড়ায় না। সে তিরিশ বছরে ঐ সাড়ে পাঁচ কোটিই ফেরত নিবে, বাড়ির দাম ততদিনে পনেরো কোটি হয়ে গেলেও।
আবার উল্টো দৃশ্যও হয়। আপনি বাড়ি কিনলেন, এবং দেখলেন ঐ বাড়ির মার্কেট ভ্যালু কমে গেছে। শহর পরিত্যক্ত হয়েছে। আপনি নিজেই থাকতে পারছেন না, ভাড়াও দিতে পারছেন না। বিক্রি করতে হচ্ছে খুবই কম দামে। বিরাট লস খেলেন। তারউপর আবার লোনের বোঝা। তখন আসলেই বাঁশটা খেলেন আপনি।

এখানে ইন্টারেস্ট রেট নিয়ে আরেকটা সংজ্ঞা আমি শুনেছিলাম, সেটা হচ্ছে, "ব্যাংক তোমাকে তার নিজের ক্যাশ (এসেট/সম্পদ) ব্যবহার করতে দিচ্ছে, বিনিময়ে তুমি "ভাড়া হিসেবে" মাসিক এত টাকা দিবে - এইটাই ইন্টারেস্ট।"
এইটাকে "ইন্টারেস্ট" না লিখে যদি fees লিখে, তাহলে কেউ কোন আপত্তি করে না। অনেক ইসলামিক ফাইন্যান্স কোম্পানি সেটাই করছে। ঋণ দিচ্ছে সাড়ে তিন কোটি, ফিস হিসেবে লিখে দিয়েছে ৪.১২% এবং ওদের যুক্তিও ফেলনা না, কারন ওদেরকে ওদের কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়, নিজেদের অন্যান্য খরচ বহন করতে হয়। টাকাটা আসে এই "fees" থেকেই।

হ্যা, কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট হারাম। তিরিশ বছর পরে সাড়ে পাঁচকোটি টাকা ঋণ পরিশোধের পরে আপনি জানতে পারবেন এখনও আপনি সাড়ে চার কোটি টাকা দিতে বাধ্য। এইটা হারাম, এবং কোন অবস্থাতেই জাস্টিফাইড নয়।

আমেরিকায় সাধারণত ইনফ্লেশন রেট থাকে তিন পার্সেন্টের নিচে। ব্যংকে কোন সুদ দেয় না। তাজ্জব হবার কিছু নাই, বাংলাদেশে যেমন ব্যাংকে টাকা রেখে লোকজন নিশ্চিন্তে বছরের পরপর সুদ (লাভের অংশ) খেয়ে জীবন কাটিয়ে দেন, আমেরিকায় সেই উপায় নেই। এখানে টাকা জমিয়ে রাখাটা লস। একশো টাকা পরের বছরে হয়ে যায় আটানব্বই টাকার সমমূল্যের। লোকে তাই ইনভেস্ট করে। শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটায়। কেউ হাজারপতি থেকে কোটিপতি হয়ে যায়। কেউ শেষ বয়সে এসে দেখেন ঠিক তখনই মার্কেট ক্র্যাশ করেছে। তাঁর সমস্ত জীবনের পুঁজি অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। মাথায় হাত!
কেউ কেউ আমার মতন রিয়েল এস্টেটে বিশ্বাসী। জমি, বাড়ি ইত্যাদির উপর ভরসা করে। জানে যে জমির চাহিদা, বাড়ির চাহিদা থাকবেই। স্লো গ্রোথ হবে, রাতারাতি হয়তো কোটিপতি হবো না, তবে রাতারাতি ফকির হবার চান্সও কম। হ্যা, আল্লাহ চাইলে একটা ভূমিকম্প বা টর্নেডো হবে এবং আমি শেষ! হয়তো বন্যা হবে বা শহরে এমন কিছু হবে যার ফলে জমির দাম কমে যাবে। কিন্তু একটু বুদ্ধি বিবেচনা করে করলে রিয়েল এস্টেট তুলনামূলক সেফ বিনিয়োগ। আর যদি এমন কিছু ঘটে যে আপনার শহরে নতুন হাইওয়ে, এয়ারপোর্ট বা এমন কিছু হয়েছে যার ফলে শহরের চাহিদা বেড়েছে, তখনতো কেল্লা ফতেহ! এমন অনেককেই চিনি যারা চার পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে নেমে এখন মাসে চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার ডলার বাড়তি উপার্জন করছেন।
আমি একজন লাইসেন্সড রিয়েল্টর, মানুষকে বাড়ি ঘর জমি ইত্যাদি কিনতে সাহায্য করি এবং এজন্যই লোকে প্রশ্ন করে, "ইন্টারেস্টের ব্যাপারে তোমার কি মত?"

ভাইরে, আমি হালাল বলার দুঃসাহস করবো না। আবার উপরে মর্টগেজের যে ব্যাখ্যা দিলাম, আর অনেকেরই অনেক পরিস্থিতির উদাহরণ দিলাম, বাস্তবতা দেখি বলেই সেটাকে সরাসরি হারামও বলবো না। বরং গ্রে এরিয়াতে ফেলে বলবো, "আল্লাহ ভাল জানেন, এবং তিনি নিয়্যত জানেন।"
আবারও বলি, চক্রবৃদ্ধি সুদ গ্রহণ, অবশ্যই হারাম। এ নিয়ে কোন তর্ক খাটেনা। সেটা নিয়ে কোন কথা বলছি না।
আমি যেটা আলোচনা করছি, সেটা হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড মর্টগেজ রেট।
আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে বাড়ি কিনতে হলে, গাড়ি কিনতে হলে, ব্যবসা করতে হলে কিংবা পড়াশোনা করতে হলেও আপনাকে লোন নিতেই হবে। কোন ব্যাংকই আপনাকে "ইন্টারেস্ট ফ্রী" লোন দিবে না। এখন আপনি ভাড়া করে থাকতে পারেন, গাড়ি না কিনতে পারেন, ব্যবসা থেকেও দূরে থাকতে পারেন, এবং পড়াশোনা বাদ দিতে পারেন - আপনার ইচ্ছা। কথা এখানেই, বিষয়টা কতটা প্র্যাকটিক্যাল? জীবনকে অনেক কঠিন করে ফেলা নয় কি? ইসলামতো এসেছে জীবনকে সহজ করতে। মদ হারাম করা হয়েছে। শীতে শরীর গরম করতে অনেকে মদ খেতেন। উনাদের জন্য অল্টারনেটিভ হচ্ছে মধু। ইসলামে এমন কিছুই হারাম নেই যার হালাল বিকল্প নেই। সুদের বিকল্প যেমন ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসায় আপনি চোর বাটপারি ভরপুর একটা দেশে থাকেন, সেক্ষেত্রে সেফ বিনিয়োগের একটি বিকল্প মাধ্যমতো লাগবে। সুদ মুক্ত ঋণের বিকল্পটা কি?
(আর বিদেশেতো আপনি সুদ খাচ্ছেন না, সুদ দিচ্ছেন, বা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। লোকে বলতেই পারে, আপনার ঋণ নেয়াই উচিত না, কিন্তু কথাটা প্র্যাকটিকাল না। ঋণ না নিলে বাড়ি, গাড়ি, চিকিৎসা, পড়ালেখা অনেককিছুই অসম্ভব যদিনা আপনি বিপুল পরিমান টাকার মালিক হন।)

প্রশ্নটা তুলে দিলাম। এখন মুসলিমদের দায়িত্ব ব্রেন খাটানো, ফাইন্যান্স নিয়ে এবং শরিয়া নিয়ে পড়াশোনা করা, এবং এমন কোন উপায় নিয়ে হাজির হওয়া যা কোন পক্ষকেই মার দিবে না। উপরে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের মতন কিছু নিয়ে গবেষণা চলতেই পারে।

ডিসক্লেইমার দিয়ে নেই: অতি অতি অতি জটিল ও রিস্কি বিষয় নিয়ে লিখেছি। এ নিয়ে ভুলভ্রান্তি হলে আমি সরাসরি দোজখে। কিন্তু এ বিষয়ে আলোচনা না করাটাও আমাদের বিপদে ফেলছে।
আল্লাহ ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন। তিনি নিয়্যত জানেন, তিনি যেন নিয়্যত দেখেই আমার বিচার করেন। এবং আমাদের দ্রুত সঠিক পথ দেখান।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:২৩

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: এক পোষ্টে অনেক কিছু নিয়ে এসেছেন। পয়েন্ট ধরে ধরে ভাঙ্গাতে গেলে অন্তত পক্ষে ১০০০ পোষ্ট লাগবে। ইসলামিক ফাইনান্সিং এর উপর লেখাপড়া করতে পারেন। তাতে সন্দেহ দূর হবে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সেটাই চাচ্ছি। লিংক, সোর্স ইত্যাদি দিলে উপকৃত হতাম।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪০

Rehan বলেছেন: ভাই! কথাগুলো অতি সঠিক। সুদ নিয়ে নয় আমার কথা ব্যাবসা নিয়ে। আর ল্যান্ডে ইনভেস্ট এখনকার সময়ে আমার মত চুনোপুটির দ্বারা কিভাবে সম্ভব?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সম্ভব ভাই। আপনার যা আছে, তা দিয়ে হয়তো ঢাকা শহরে সম্ভব না, কিন্তু গ্রামে সম্ভব।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি মোটামটি ভালোই লিখেন। কিন্তু আপনার পোষ্টে মন্তব্য অনেক কম। এর কারন কি?
কারন আপনি কারো পোষ্ট পড়েন না। মন্তব্যও করেন না।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৩৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সময় হয়না ভাই, তাছাড়া, যা বলার তা পোস্টেই বলে দেই।

৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৪

বিটপি বলেছেন: ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে আপনার নলেজের অনেক ঘাটতি আছে। মুশারাকা, মুবারাকা, মুবারাহা, মুয়াজ্জেল - এগুলো কি এবং কিভাবে কাজ করে - সেটা জেনে তারপর ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সমস্যা দিয়ে কথা বলতে আসবেন।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জানা নেই ভাই, জানালে উপকৃত হতাম। বিষয়টা জটিল, এবং অনেক হুজুরকেও তাই বলতে শুনি ইসলামী ব্যাংকিং মূলত নতুন শাড়িতে পুরানো বৌকে পরিবেশন। যদি সেটা ইসলামিক হয়ে থাকে, তাহলেতো কথাই নাই। কিন্তু ইসলামিক ব্যাংকই দেখলাম নিজেরাই সুদে লোন নিতে বাধ্য হয়েছে।

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৫

ইমরান আশফাক বলেছেন: বাংকের সুদকে ফি হিসাবে উল্লেখ করলেই এটা হালাল হবে? চক্রবর্তী সুদের কথা বলছি না, বলছি সরল সুদের ক্ষেত্রে?

৬| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:৫৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: দূ:খিত চক্রবর্তী না, চক্রবৃদ্ধি হারে হবে। :P

৭| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৫৬

বিটপি বলেছেন: আগে আমাকে বলুন বাই মুয়াজ্জাল বা বাই মুশারাকা লিখে ইন্টারনেটে সার্চ করে আপনি কি পেলেন?

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সার্চ করি নাই, এখানে লিংক দিন।

৮| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:০৯

সোহানী বলেছেন: জ্বী ভাই, ভাত সরাসরি না খেয়ে একটু ঘুরিয়ে খেলাম আর কি!!! :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.