![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, আমি আপনার ahlehaqmedia.com থেকে নিয়মিত ফতুয়াগুলো পড়ি। আপনার লেখাগুলো এ সময়ে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। নাস্তিকদের নিয়েও আপনার একাধিক লেখা পড়ে ভাল জ্ঞান অর্জন করেছি। এখন আমার প্রশ্ন হলঃ কিছু লোক বলে বুখারি মুসলিম ছাড়া কোনো সহিহ হাদিস নেই। এ ব্যাপারে উক্ত মুহাদ্দিসগণ নিজেরা কী বলেছেন? দয়া করে জানাবেন। আর কোনো লিঙ্ক থাকলেও দিবেন। জাযকাআল্লাহু খাইরান। সারওয়ার, উত্তরা, ঢাকা
উত্তর :
ওয়ালাইকুমুস সালাম। আল্লাহ'র নামে আরম্ভ করলাম যিনি করুণাময় অসীম দয়ালু।
ইলমে হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া এমন হাস্যকর কথা কারো বলার কথা নয়। যদি উলুমে হাদীসের সাথে সামান্যতম সম্পর্কও কারো থাকে, সে এমন মুর্খতাসূলভ কথা বলতেই পারে না। বুখারী মুসলিম ছাড়াও সহীহ হাদীসের উপর অনেক হাদীস গ্রন্থ রচিত হয়েছে। বুখারী ও মুসলিমের মূলনীতি অনুপাতে যেসব হাদীস সহীহ। এমন হাদীস যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনেননি। কিন্তু তা বুখারী ও মুসলিমে আনা হাদীসের মতই সহীহ। এমন হাদীস একত্র করে “মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন” নামে আলাদা কিতাবও রচিত হয়েছে। যা এক সুবিশাল কিতাব। যে কিতাবে আট হাজার আটশত তিনটি হাদীস রয়েছে। যার কোনটিই বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হয়নি। এসব হাদীসকে সহীহ হওয়া থেকে বের করে দেয়া পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কী’ হতে পারে?
ইমাম বুখারী রহঃ নিজেই বলেছেনঃ
فَقَدْ رُوِّينَا عَنِ الْبُخَارِيِّ أَنَّهُ قَالَ: ” مَا أَدْخَلْتُ فِي كِتَابِي (الْجَامِعِ) إِلَّا مَا صَحَّ، وَتَرَكْتُ مِنَ الصِّحَاحِ لِحَالِ الطُّولِ
অর্থ:- ইমাম বুখারী রহঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ আমি আমার কিতাবে [সহীহ বুখারীতে] সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস আনিনি। কিন্তু আমি অনেক সহীহ হাদীস আমার কিতাবের কলেবর বড় হবার শংকায় বাদ দিয়েছি। (সূত্র: মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/১৯)
ইমাম মুসলিম বলেছেনঃ
وَرُوِّينَا عَنْ مُسْلِمٍ أَنَّهُ قَالَ: ” لَيْسَ كُلُّ شَيْءٍ عِنْدِي صَحِيحٌ وَضَعْتُهُ هَاهُنَا – يَعْنِي فِي كِتَابِهِ الصَّحِيحِ –
অর্থ:- ইমাম মুসলিম থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ আমার কাছে “সহীহ” হিসেবে গণ্য সব হাদীসই আমি আমার কিতাবে নিইনি। (সূত্র: মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ- ১/২০)
এ বিষয়ে ইমাম ইবনুস সালাহ রহঃ এর বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন -
وَقَدْ قَالَ الْبُخَارِيُّ: ” أَحْفَظُ مِائَةَ أَلْفِ حَدِيثٍ صَحِيحٍ، وَمِائَتَيْ أَلْفِ حَدِيثٍ غَيْرِ صَحِيحٍ “، وَجُمْلَةُ مَا فِي كِتَابِهِ الصَّحِيحِ سَبْعَةُ آلَافٍ وَمِائَتَانِ وَخَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ حَدِيثًا بِالْأَحَادِيثِ الْمُتَكَرِّرَةِ. وَقَدْ قِيلَ: إِنَّهَا بِإِسْقَاطِ الْمُكَرَّرَةِ أَرْبَعَةُ آلَافِ حَدِيثٍ،
অর্থ:- ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, আমার এক লাখ সহীহ হাদীস মুখস্ত। আর দুই লাখ গায়রে সহীহ হাদীস মুখস্ত। অথচ সহীহ বুখারীতে তাকরার [এক বর্ণনা একাধিকবার উল্লেখকরণ] সহ মোট হাদীস সংখ্যা হল, ৭২৭৫টি। আর কেউ বলেছেন, তাকরার ছাড়া হাদীস সংখ্যা হল ৪০০০ (চার হাজার)। (সূত্র: মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/২০)। আর তা'লীক ও তাকরারসহ হাদীস সংখ্যা হল ৯০৮২টি (নয় হাজার বিরাশি)।
এখন প্রশ্ন হল, ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, তার সহীহ হাদীসই মুখস্ত ছিল এক লাখ। অথচ বুখারীতে উল্লেখ আছে সর্বোচ্চ মাত্র ৯০০০ (নয় হাজার)। তাও তাকরারসহ যদি হিসেব করা হয়। তাহলে বাকি ৯১,০০০ (একান্নব্বই হাজার) সহীহ হাদীস গেল কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব সেসব দু' চার পাতার পণ্ডিতদের কাছে না থাকলেও আমাদের কাছে আছে। আমাদের কথা হল, ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহঃ তাদের কিতাবে সহীহ হাদীস এনেছেন তা সত্য। কিন্তু তারা সব হাদীস আনার দাবী করেননি। আনতে পারেনও নি। তা সম্ভবও নয়। অন্যথা কিতাব আরো বিশাল বড় হয়ে যেতো।
বাকি সহীহ হাদীসগুলো 'মুস্তাদরিকে হাকেম (مستدرک للحاكم), সহীহ ইবনে আওয়ানা (صحیح ابن عوانة), সুনানে দারা কুতনী (), সহীহ ইবনে হিব্বান (صحیح ابن حبان), সহীহ ইবনে খুজাইমা (صحیح ابن خزيمة), সুনানে তিরমিজী (سنن الترمذي), সুনানে আবু দাউদ (سنن ابی داؤد), জামে তিরজিমী (جامع للترمذي), সুনানে নাসায়ী (سنن النسائي), সুনানে ইবনে মাজাহ (سنن ابن ماجہ), মুসনাদুল হুমায়দী (المسند الحميدي), মুসনাদুল বাজ্জার (المسند البجار), মুসনাদে আহমাদ (مسند احمد), সুনানে কুবরা লিল-বায়হাকী (سنن الكبرى للبيهقي), সুনানে সুগরা লিল-বায়হাকী (سنن الصغرى للبيهقي), শুয়াবুল ঈমান (شعب الإيمان), তাহাবী শরীফ (طحاوى شريف), মুসনাদে ইবনুল জা’দ (مسند إبن الجعد) ইত্যাদি হাদীসের কিতাবসমূহে রয়েছে। যদিও এসব কিতাবের সব হাদীসই সহীহ নয়। কিছু হাদীস দ্বয়িফ (দুর্বল) এমনকি জালও (ভিত্তিহীন/বানোয়াট)। কিন্তু অধিকাংশ হাদীসই সহীহ কিংবা হাসান। বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন-
মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ১/১৯-২২।
ফাতহুল মুগীছ বিশরহি আলফিয়াতিল হাদীস-১/৪৬-৪৭।
তাদরীবুর রাবী-১/১০৪।
সুতরাং ইলমে হাদীসের প্রাইমারী লেভেলের ছাত্রও জানে যে, বুখারী এবং মুসলিমেই সহীহ হাদীস সীমাবদ্ধ মনে করা চরম পর্যায়ের মূর্খতা বৈ কিছু না। ইমাম ইবনে কাছীর রহঃ এর একটি বক্তব্যের অনুবাদ দিয়ে এ আলোচনার ইতি টানব। তিনি লিখেছেন -
ثم إن البخاري ومسلماً لم يلتزما بإخراج جميع ما يحكم بصحته من الأحاديث، فإنهما قد صححا أحاديث ليست في كتابيهما، كما ينقل الترمذي وغيره عن البخاري تصحيح أحاديث ليست عنده، بل في السنن وغيرها.
অর্থ:- নিশ্চয় ইমাম বুখারী ও মুসলিম তারা সকল সহীহ হাদীসকে তাদের কিতাবে একত্র করাকে আবশ্যক করে নেননি। তারা উভয়ে এমন অনেক হাদীসকেই সহীহ বলেছেন, যা তাদের কিতাবে নেই। যেমন ইমাম বুখারী নিজেই সহীহ বলেছেন এমন অনেক হাদীস উল্লেখ করেছেন ইমাম তিরমিজী [ইমাম বুখারীর ছাত্র] ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ।অথচ সেসব হাদীস ইমাম বুখারীর কিতাবে পাওয়া যায় না। বরং তা রয়েছে সুনান ও অন্যান্য গ্রন্থসমূহে। (সূত্র : ইখতিছারু উলুমিল হাদীস-১/২৫)। লেখক, মুফতি লুৎফর ফারাজী, চেয়ারম্যান : তালিমুদ্দিন ফাউণ্ডেশন, ঢাকা।
ঈষৎ পরিমার্জন : মুহাম্মদ নূরুন্নবী। ইমেইল : [email protected]
©somewhere in net ltd.