নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাদিয়ানিদের গোড়ার ইতিহাস

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৪

কাদিয়ানিদের গোড়ার ইতিহাস :-

'কাদিয়ানিয়ত' সেই আঠার শতকের শেষের দিকে তথা আজ থেকে প্রায় দেড় শত বছর আগের ইতিহাস। নবাব সিরাজ উদ-দৌলার হাত থেকে ক্ষমতা যখন ইংরেজরা ছিনিয়ে নেয় এটি তারও অনেক পরের ইতিহাস। তখন সুচতুর ইংরেজ মুসলমানদের হাত থেকে অখণ্ড ভারতের ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। প্রায় ১৯০ বছর পর্যন্ত তারা ভারতীয়দের গোলাম বানিয়ে রেখেছিল। কিন্তু তারা স্বস্তিতে দেশ পরিচালনায় অপারগ ছিল। কারন স্বাধীনতাকামী মুসলিম বিপ্লবীরা আযাদী আন্দোলনে আপোষহীন ছিলেন। স্বাধীনচেতা রক্ত টগবগে বিপ্লবী মুজাহিদদের তখন কোনো মতেই দমন করা যাচ্ছিল না। এমন অবস্থায় দখলদার ইংরেজ সরকারের পক্ষে নিজেদের ক্ষমতা টিকানো ছিল খুবই দুরূহ ব্যাপার। তাই তারা মুসলিম মুজাহিদদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে ফাটল ধরানোর কৌশল খুঁজতে লাগল। ধূর্ত ইংরেজ কৌশল খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে পড়ল। অবশেষে তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলার ষড়যন্ত্রই পাকাপোক্ত করল। বেছে নিল শতাব্দীর নিকৃষ্টতম পন্থা। তাদেরই বংশবদ একজন পরীক্ষিত ও প্রশিক্ষিত অনুগত ব্যক্তিকে "নবী" হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়ার পন্থা। আর এ ভয়ংকর পন্থায় নবীর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তাদেরই অনুগত পরিবার থেকে একজন গোলামকে বেছে নেয়া হল। যার নামও ছিল গোলাম। পুরো নাম গোলাম আহমদ। পিতা গোলাম মর্তুজা। তার বংশ ছিল মির্যা। ১৮৩৮ সালে জন্ম। তৎকালীন ভারতের (বর্তমান পাকিস্তানের) পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার "কাদিয়ান" নামক গ্রামের বাসিন্দা। সেই দিকে নেসবত করে তাকে সংক্ষেপে "মির্যা কাদিয়ানী" বলে। বর্তমানে তার অনুসারিদেরকে "কাদিয়ানী বা আহমদি" বলে। ইতিহাস অনেক লম্বা। আমি একদম সংক্ষেপে কিছু লেখছি।

সেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব ইংরেজ তথা ব্রিটিশদের শেখানো বুলি ও তাদের নির্দেশনা মত প্রথমে সরলমনা মুসলমানদের নিকট নিজেকে "মুজাদ্দিদ" (সংস্কারক) হিসেবে জাহির করেন। তার দাবির ফিরিস্তি অনেক লম্বা। নিজেকে "খোদা" থেকে শুরু করে আর্যজাতির (হিন্দু) "রাধাকৃষ্ণ" হবার দাবি পর্যন্ত তার বইতে উল্লেখ আছে। বিস্তারিত বইয়ের ভেতরে। ১৮৬৪ সাল থেকে ইলহামের দাবিদার তিনি। ১৮৮৪ সালে নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করেন। তখন "বারাহিনে আহমদিয়া" নাম দিয়ে একটি বইও লিখেন। এভাবে পাক্কা ১০ বছর অতিবাহিত হয় তার মুজাদ্দিদ দাবির মধ্য দিয়ে। তারপর তিনি ১৮৯০ সালে প্রথমে ইমাম মাহাদী, এর কিছুদিন পরে ঈসা মাসীহ (আ)-এর "মাসীল" বা রূপক হওয়ার দাবি করেন। তখন নতুন করে তিনি কুরান শরিফ থেকে হযরত ঈসা (আ)-এর মৃত্যুর তথ্য আবিষ্কার করেন। তাও কিনা কমপক্ষে ত্রিশটি আয়াত দ্বারা। অথচ বিগত ছৌদ্দশত বছরেও এমন কথা আর কেউ বলেননি। তারপর বেশ কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। এবার তিনি ১৯০১ সালে নিজেকে কথিত "উম্মতি নবী" দাবি করেন। তারপর ১৯০৭ সালে আর কোনো রাখঢাক ছাড়াই নিজেকে পরিপূর্ণ একজন নবী এবং রাসূল ঘোষণা দিয়ে বসেন। এরপর জারি করলেন, আসল ফতুয়া। এত দীর্ঘ সময় যেই ফতুয়ার অপেক্ষায় ছিলেন দখলদার সুচতুর ইংরেজগোষ্ঠী। মির্যা সাহেব যেহেতু আপনা দাবি অনুসারে আল্লাহ'র একজন প্রেরিত নবী সেহেতু আল্লাহ'র নাম ভেঙ্গে এখন আর কোনো কিছু প্রচারে বাধা থাকল না। তাই তিনি ফতুয়া জারি করলেন : "বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহতালা বলেছেন, এদেশে ব্রিটিশ শাসন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে মনোনীত। তাদের অত্যাচার অবিচার যাই দেখনা কেন, তা আল্লাহ'র রহমত এবং আশীর্বাদ। তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম।" কিন্তু সচেতন জনতা মির্যা সাহেবকে প্রথম থেকেই সন্দেহের চোখে দেখে আসছিলেন। এবার যখন তিনি স্ব মূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করলেন তখন তাদের সেই সন্দেহ সত্য প্রমাণিত হল।

আপনি আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ বাংলা উইকিপিডিয়া সাইট থেকে দেখলে বুঝতে পারবেন যে, সেখানি পরিষ্কার লেখা আছে "আহমদিয়া মুসলিম জামাত" নামক একটি আলাদা ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন মির্যা কাদিয়ানী সাহেব। এ মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেকে একই সাথে ইমাম মাহদী এবং মাসীলে মাসীহ সাব্যস্ত করার জন্য পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে ইচ্ছেমত অপব্যাখ্যার পথ বেছে নেন। এ সম্পর্কে অত্র বইতে বিস্তারিত আলোচন রয়েছে। কাদিয়ানী ধর্মের সূচনা কিভাবে হয় সে সম্পর্কে সংক্ষেপে জানলেন। তবু সেটি আরেকটু পরিষ্কার করতে চাই। এবার একটু ইতিহাসে ফিরে চলুন!

বিচিত্র ভূ সম্পদ ও বৈচিত্রের লীলাভূমি হিমালয় গঙ্গার অববাহিকায় অবস্থিত ভারত বর্ষের নানা অংশ খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকেই মুসলিম বিজয়ীদের হাতে আসে। দিল্লীর মসনদে আরোহণ করেন সুলতান কুতুবুদ্দীন আইবেক ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে। তখন থেকে পুরো সাড়ে পাঁচ শ বছর পর্যন্ত গোটা ভারতবর্ষ শাসন করেন মুসলিম শাসকগণ। ইনসাফ ও ন্যায় বিচার, সততা ও উদারতার নজিরবিহীন শাসনব্যবস্থার সুফল ভোগ করে এ অঞ্চলের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ। তারা ভালোবাসে এই ন্যায় নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী মুসলিম শাসকদের। শাসকরাও প্রজাদের অকৃত্রিম সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়ে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন এ অঞ্চলের উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে, প্রজাদের সুখ আর দেশের সমৃদ্ধির প্রতি। সেই ধারা সচল থাকে মোঘল বাদশাহ আলমগির রহঃ (মৃত : ১১২৮ হিজরী) পর্যন্ত।

তারপরের আমলে দেখা দেয় শাসকদের অদক্ষতা, ক্ষমতার কোন্দল আর সীমাহীন ভোগ বিলাসিতার প্রতিযোগিতা। দেশীয় গাদ্দার, হিন্দু সমাজের ঐক্যবদ্ধ ষড়যন্ত্রে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে যায় এবং পরে এক শত বছরের কম সময়ের ব্যবধানে গোটা ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতা দখল করে নেয় ভিনদেশি ব্রিটিশ বেনিয়া দখলদারেরা। উপমহাদেশের মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়। উচ্চশিক্ষা লাভ, সরকারী চাকুরী এবং জমিদারি জায়গির সহ সব কিছু থেকে ব্রিটিশরা মুসলমানদের বঞ্চিত রাখে। জেল জুলুম তো আছেই। মুসলমানদের দ্বীন ধর্ম আর জান মালের নিরাপত্তা বলতে কিছুই ছিলনা। মুসলমান যেন নিজ দেশে থেকেও পরবাসী! রাজ্যহারা নিরুপায় মুসলিম জাতি তখন প্রিয় মাতৃভূমি উদ্ধারে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের পথ বেছে নিলেন। যেহেতু পীঠ তখন দেয়ালে ঠেকা। আর গোলামী জিন্দেগি তো স্বপ্নেও ভাবা যায়না। বিপ্লব এগিয়ে চলল মরু ঝড়ের গতিতে।

স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত আল্লাহ'র প্রিয় মুজাহিদরা তখন ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বালাকোটি বীর শহিদ সাইয়িদ আহমেদ বেরলবী, সহচর শায়খুল হাদিস শহীদ শাহ ইসমাইল দেহলবী, বীর সিপাহশালা নেসারুদ্দিন তিতুমীর, হাজি শরীয়তুল্লাহ মুসলিম মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিলেন। ডাক দিলেন জিহাদের। ভারতবর্ষের আপামর তৌহিদি জনতা সাড়া দিল। ঝাপিয়ে পড়ল জিহাদে। শপথ নিল মাতৃভূমি উদ্ধারের। শপথ নিল দখলদার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কায়েমি সিংহাসন চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে।

১৮৫৭ সালের আযাদি আন্দোলনের তীব্রতায় কেঁপে উঠল দখলদার ব্রিটিশদের সিংহাসন। দিশেহারা দখলদার ব্রিটিশরা আযাদি আন্দোলন নস্যাৎ করতে শুরুতে বেছে নিল জেল জুলুম আর গণহত্যার মত নিষ্ঠুর পন্থা। তাদের আসল ভয় মুসলিম মুজাহিদদের ঈমান, জিহাদি চেতনা আর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। (আজকের পৃথিবীর তাবৎ মোড়লরাও মুসলমানদের ঈমান আর জিহাদে এখনো তটস্থ।) স্বাধীনতাকামি জিহাদিদের শত জুলুম, নিপীড়ন দ্বারাও যখন দমাতে পারছিলনা তখন তারা নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। কেন মুসলিম স্বাধিকার জিহাদিরা এতটা আপোষহীন? কোনো প্রলোভন, নিপীড়ন, হত্যা সত্ত্বেও কেন তাদের পিছু হটানো কিংবা আন্দোলন ও সংগ্রামের পথ ছাড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা? এর মূল কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারের উপায় খুঁজে বের করতে ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাঠায় একদল গবেষক। স্কটিশ বংশোদ্ভূত স্যার উইলিয়াম উইলস হান্টারের (ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার) নেতৃত্বে এই দল কাজ শুরু করেন ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে।

মূল ইতিহাসে যাওয়ার পুর্বে উইলিয়াম উইলসন হান্টার সম্পর্কে জেনে নিই। হান্টার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ১৮৪০ সালের ১৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অ্যান্ড্রু হান্টার উৎপাদন শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। মাতাপিতার তিন ছেলের মধ্যে হান্টার ছিলেন দ্বিতীয়। হ্যামশায়ারের কুইন্সউডে কোয়েকার সেমিনারীতে ১৮৫৪ সালে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল। একবছর পর তিনি গ্লাসগো অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। হান্টার ১৮৬০ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। সেখানে তিনি রসায়ন, যুক্তিবিদ্যা, ল্যাটিন ভাষা, গ্রিক ভাষা, অঙ্কশাস্ত্র, নৈতিক দর্শন ও নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ১৮৬২ সালে হান্টার ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি ১৯০০ সালে মারা যান।

এবার চলুন মূল পর্বে যাই। মিস্টার হান্টার সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার ৭ বছরের মাথায় অর্থাৎ ১৮৬৯ সালে গবেষক দলটির নেতৃত্ব দেন। তাদের সুপারিশ ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। তারা দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ এবং নিরীক্ষার পর ব্রিটিশ সরকারের নিকট যে রিপোর্ট ও সুপারিশ পেশ করেন তা ছিল নিম্নরূপ -

"মুসলিম জাতি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলে। তাদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরানে বিজাতিদের বিরুদ্ধে জান মাল ব্যয় করে জিহাদ করার জোরালো নির্দেশ আছে। এ জিহাদের বহু পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি বর্ণিত আছে তাদের ধর্মগ্রন্থে। যতদিন তাদের মাঝে জিহাদের প্রেরণা থাকবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকে, ততদিন তারা এভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জীবন মরন জিহাদ চালিয়ে যাবে। অতএব কমিটি সুপারিশ করছে যে,

(১) দারিদ্রপীড়িত সর্বহারা মুসলিমদের একটি দলকে সরকারী উপহার, পদবী দিয়ে নিজেদের আপন করে নিতে হবে। পর্যায়ক্রমে তাদের দিয়ে ফতুয়া জারি করাতে হবে যে, ভারতবর্ষ "দারুল আমান" বা নিরাপদ আবাসভূমি। ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ বা যাবতীয় সংগ্রাম নিষ্প্রয়োজন। কারন যে সরকার ধর্ম পালনে বাধা দেয়না তার বিরুদ্ধে জিহাদ বৈধ নয়।

(২) বেশিরভাগ মুসলিমের আস্থা আছে পীর দরবেসের প্রতি। তেমন কোনো আস্থাবান ব্যক্তিকে দাঁড় করে দিতে হবে "নবী" হিসেবে। যিনি একটা সময়ের ব্যবধানে নবী দাবি করে ঘোষণা দিবে- "আমার নিকট ওহী এসেছে যে, আজ থেকে জিহাদ নিষিদ্ধ, জিহাদ বাতিল, জিহাদ হারাম।"

(৩) এ ব্যক্তি নিজেকে প্রথমে একজন ধর্মীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলবে। এ জন্য ইসলামি বই পুস্তক রচনা করবে। এ কাজে আমাদের ওরিয়েন্টালিস্ট বা প্রাচ্যবিদদের দ্বারা তাকে সব রকমের সাহায্য দিতে হবে। এভাবে একজন সৎ-সাধু মানুষ হিসেবে তিনি প্রথমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন। তারপর একটি পর্যায়ে যেন "নবী" দাবি করেন। আমাদের সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উইলিয়াম উইলসন হান্টারের সেই গবেষণা দলের রিপোর্ট এবং সুপারিশ গৃহীত হল। আর তার আলোকে ব্রিটিশ সরকার ভারতে তাদের দীর্ঘ পরীক্ষিত ও বংশবদ অনুগত এবং তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাধিক যোগ্য হিসেবে মনোনীত করেন মির্যা গোলাম মর্তুজা আর চেরাগ বিবি'র দম্পতির ঘরে জন্ম নেয়া মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে। যেমন ভাবনা তেমন ফল। মিস্টার হান্টারের পরিকল্পনার ফসল মির্যা কাদিয়ানী সাহেব আজীবন দখলদার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে যান। নিরপেক্ষভাবে দেখলে বুঝতে কষ্ট হবার নয় যে, তার আদ্যোপান্ত চরিত্রই উইলিয়াম উইলসন হান্টারের "মাইন্ডগেইম" (Mind Game) ছিল। যার অনুসারী "কাদিয়ানি জামাত" নিজেদের "আহমদি মুসলমান" বলে পরিচয় দিতে আগ্রহী। অথচ তারা জানেই না, তাদের কথিত ইমাম মাহদী অনেক আগ থেকেই নবুওত দাবি করে "কাফির" হয়ে যান

মির্যা সাহেবের চরিত্রে আবার ফিরে এলাম। "রূহানী খাযায়েন" পুস্তকের ৬ষ্ঠ ভলিউমের ৩৮০ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার তিনি লিখেছেন - "আমি বার বার এ মত প্রকাশ করেছি যে, ইসলামের দুটি অংশ। (এক) আল্লাহ'র আনুগত্য করা আর (দুই) এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করা।" তিনি আরো লিখে গেছেন - "ব্রিটিশ সরকারের অবাধ্যতা আল্লাহ, রাসূল এবং ইসলামের অবাধ্যতা। (দেখুন : রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮১)। এভাবে আরো অনেক দেয়া যাবে।

সত্য বলতে, মির্যা সাহেব ব্রিটিশদের এতো প্রসংশা করেছেন যে আমি নিজেও অবাক হই। এমনকি তিনি রানী ভিক্টোরিয়াকে বলেছেন : ব্রিটিশ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকারের অধীনে তার আগমনের উদ্দেশ্য সফল হতো না। যেমন - Though it is incumbent on everyone of the public to be grateful to this government, I think it behooves me more than everyone else to be grateful because my sublime objectives are being accomplished under the rule of the Empress of India. Certainly, these objectives could not be accomplished under another government even if it were an Islamic government - (A gift for the Queen বই থেকে)

আমি ভেবে অবাক হই, একজন নবী (?) কিভাবে এ কথা বলেন অর্থাৎ "Certainly, these objectives could not be accomplished under another government..."?

অথচ আল্লাহ চাইলে তো যে কোনো সরকারের অধীনে সফলতা আসবে, তাই নয় কি? ব্রিটিশ সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে এ ক্ষেত্রে সন্দেহ নেই। তবে এর পেছনে যে তাদের রাজনৈতিক ফায়দাও ছিল তাও সবাই জানে। তাছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে প্রায় সব নবীর ক্ষেত্রে সমসাময়িক শাসকরা নবীদের বিরদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিল । মির্যা সাহেব যে ঈসা নবীর মাসিল হওয়ার দাবি করলেন তাকে তো ক্রুশে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল । আর তিনি যে নবীর ঝিল্লি (ছায়া-নবী) হওয়ার দাবি করলেন তিনিও তো হিজরত (দেশত্যাগ) করেছিলেন!!! অর্থাৎ সমসাময়িক শাসকরা কখনো তদানীন্তন নবী রাসূলদের দুধকলা খাইয়ে লালন করেছিলেন বলে জানা নেই।

সবার জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত হোক, সবাই নিজ নিজ ধর্মপালন করুক এটি আমাদের সকলের প্রত্যাশা এবং দাবিও কিন্তু তার (মির্যা) এই মন্তব্য সত্যানুসন্ধানকারীদের খুব ভাবিয়ে তুলে, তেমনি আমাকেও। যদিওবা সমসাময়িক আলেমগণ কিংবা পণ্ডিত ব্যক্তিগণ এ ধরণের মন্তব্য করলে মানা যেত কিন্তু একজন নবী(?) কিকরে এমন আত্মমর্যাদাহীন কথাবার্তা বলতে পারে তা বুঝে আসেনা!! যেহেতু তাকে তো সর্বদা আল্লাহর উপর-ই ভরসা রাখা উচিত।

এখানে জানিয়ে দিতে চাই যে, মির্যা সাহেব তাঁর ধর্মমত প্রচারের জন্য বেশ কিছু বই লিখে গেছেন। যার মধ্যে ৮৪টি বইকে তারই এক ভক্ত জালালুদ্দিন শামস ২৩ ভলিউমে একত্রিত করে 'রূহানী খাযায়েন' নাম দিয়ে ছেপেছেন। (আমার নিকট সব কয়টি ভলিউম মজুদ আছে)। যাইহোক, এ ছিল অবস্থা। কিভাবে লজ্জা শরম আর আত্মমর্যাদা বোধ বিসর্জন দিতে পারলে একটি দখলদার সাম্রাজ্যবাদ সরকারের পক্ষে দালালি করা সম্ভব! তাও কখনো ইমাম মাহদী আবার কখনো নবী রাসুলের চরিত্রে অভিনেতার ভূমিকায়!!! অথচ পবিত্র কুরানের সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতের সুস্পষ্ট ঘোষণা - ওয়া লাকিন রাসূলাল্লাহি ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন। অর্থাৎ... তিনি (মুহাম্মদ) আল্লাহ'র রাসূল এবং শেষনবী।" আর পরের ইতিহাস তো সবাই জানেন।

বর্তমানে এ কাদিয়ানী জামাত ছোট বড় সব কয়টি মিলে মোট ১০টি ভাগে বিভক্ত। প্রত্যেকের দলীয় নেতা এবং অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও তাবৎ ডকুমেন্টারি ফাইলপত্র আলাদা আলাদা। তাদের এক দলের ফতুয়াতে আরেক দল কাফের। বিস্তারিত অত্র বইতে দেখা যেতে পারে। তাই প্রিয় আহমদী বন্ধুরা! আরেকবার ভাবুন! দাওয়াত রইল, ইসলামে ফিরে আসুন!! বই : আহমদী বন্ধু! ইসলামে ফিরে এসো)।

লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

ইমেইল : [email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২১

NurunNabi বলেছেন: পুরো লেখাটি পড়তে http://www.markajomar.com/?p=1784

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৩

NurunNabi বলেছেন:

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৪

NurunNabi বলেছেন: Click This Link

৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৮

NurunNabi বলেছেন: অর্ডার করুন Click This Link

৫| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১৪

NurunNabi বলেছেন: মির্যা সাহেব ব্রিটিশদের এতো প্রসংশা করেছেন যে আমি নিজেও অবাক হই। এমনকি তিনি রানী ভিক্টোরিয়াকে বলেছেন : ব্রিটিশ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকারের অধীনে তার আগমনের উদ্দেশ্য সফল হতো না। Though it is incumbent on everyone of the public to be grateful to this government, I think it behooves me more than everyone else to be grateful because my sublime objectives are being accomplished under the rule of the Empress of India. Certainly, these objectives could not be accomplished under another government even if it were an Islamic government - (A gift for the Queen বই থেকে)

আমি ভেবে অবাক হই, একজন নবী (?) কিভাবে এ কথা বলেন অর্থাৎ "Certainly, these objectives could not be accomplished under another government..."?

অথচ আল্লাহ চাইলে তো যে কোনো সরকারের অধীনে সফলতা আসবে, তাই নয় কি? ব্রিটিশ সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে এ ক্ষেত্রে সন্দেহ নেই। তবে এর পেছনে যে তাদের রাজনৈতিক ফায়দাও ছিল এটি সবাই জানে। তাছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে প্রায় সব নবীর ক্ষেত্রে সমসাময়িক শাসক নবীদের বিরদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিল । যে ঈসা নবীর মাসিল হওয়ার দাবি করলেন তাকে তো ক্রুশে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল । আর যে নবীর ঝিল্লি (ছায়া-নবী) হওয়ার দাবি করলেন তিনিও তো হিজরত (দেশত্যাগ) করেছিলেন!!! এককথায় সমসাময়িক শাসকরা তাদের সময়কার নবী রাসূলদের দুধকলা খাইয়ে লালন করার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়না, বরং সংঘর্ষের ইতিহাসই খুঁজে পাওয়া যায়। যাইহোক সবার জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত হোক, সবাই তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করুক এটি আমাদের সকলের প্রত্যাশা এবং দাবিও কিন্তু মির্যা সাহেব ব্রিটিশদের স্বার্থে বা তাদের তোষামোদ করতে গিয়ে যেসব নতজানু মন্তব্য করে গেলেন তা খুব ভাবিয়ে তুলে আমাকে। যদিওবা সমসাময়িক আলেমগণ কিংবা পণ্ডিত বাক্তিগণ এ ধরণের মন্তব্য করলে মানা যেত কিন্তু একজন নবী(?) কিকরে এমন আত্মমর্যাদাহীন কথাবার্তা বলতে পারে! কারণ তাকে তো সর্বদা আল্লাহর উপর-ই ভরসা রাখা উচিত।
ভাবিয়ে তুলে কিনা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.