![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মির্যা কাদিয়ানী বলেন, "আমি মক্কা অথবা মদীনায় মৃত্যুবরণ করব।"
প্রথমে জেনে রাখা জুরুরি যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি সাহেব তার ধর্মমত প্রচারের জন্য বেশ কিছু বই লিখে গেছেন। যার ৮৪টি বইকে তারই এক ভক্ত জালালুদ্দিন শামস ২৩ ভলিয়মে একত্রিত করে ছেপেছেন। নাম দিয়েছেন, রূহানী খাযায়েন (আরবি : روحانی خزائن) । মির্যা সাহেব কোন উদ্দেশ্যে কোন বই লিখেছেন, তা প্রায় সকল বইয়ের শুরুতে উল্লেখ আছে। এ ছাড়া তার বিজ্ঞপ্তি ও ঘোষণাপত্র ৩ খণ্ডে ছাপা হয়। যা 'মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত' (আরবি : مجموعة اشتہارات) নামে পরিচিত। বর্তমানে এটি নতুন ভাবে ২ খণ্ডে ছাপানো হচ্ছে। মির্যা সাহেবের বিভিন্ন জলসা এবং প্রদত্ত বয়ানগুলো 'মালফূজাত' (আরবি : ملفوظات) নামে পরিচিত। মোটে ১০ খণ্ডে ছাপা হয়েছিল। কিন্তু এখন নতুন এডিশনে ৫ খণ্ডে ছাপা হচ্ছে।
অনুরূপ মির্যা সাহেবের কথিত ইলহাম, ওহী, কাশফ 'তাযকিরা' (আরবি : تذكرة) নামে পরিচিত। যা মাত্র এক খণ্ডে ছাপা হয়েছিল। তার একটি কবিতার বইও আছে। নাম 'দুররে ছামীন' (আরবি : در ثمين) ।
এবার আসি মূল কথায়। মির্যা সাহেব কর্তৃক রচিত 'তাযকিরা' (৪র্থ এডিশন) কিতাবের ৫০৩ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার উল্লেখ আছে তিনি লিখেছেন "আমি মক্কা বা মদীনায় মৃত্যুবরণ করব"। কিন্তু আমরা যখন এর সত্যতা খুঁজতে শুরু করি তখন জানতে পারি যে, মির্যা সাহেবের উপরিউক্ত ইলহামি ভবিষৎবাণী সত্য হয়নি। কারণ, তার মৃত্যু মক্কা বা মদিনা কোথাও হয়নি। এবার প্রশ্ন জাগতে পারে যে, তাহলে তার মৃত্যু কোথায় হয়েছিল? আর কাদিয়ানি মতাবলম্বীরা সেটিকে কিভাবে দেখছেন? সামনে চলুন!
মির্যার মৃত্যু হয় পাকিস্তান লাহোরে :
প্রিয় পাঠকবর্গ, কাদিয়ানিরা মির্যা সাহেবের মৃত্যু যখন তারই ভবিষৎবাণীর বিপরীতে পাকিস্তানের লাহোরে তার এক ভক্তের বাড়িতে হতে দেখেন তখন জনরোষ সামলাতে এবং মির্যা সাহেবের বদনাম ঘোচাতে ভবিষৎবাণীর ব্যাখ্যার পেছনে ছুটলেন। শেষমেশ তারা একটি নতুন ব্যাখ্যাও দাঁড় করে দিলেন। বললেন, এর অর্থ তোমরা এতদিন জাহেরি ভাবে যেটি বুঝে এসেছ আসলে কিন্তু তা নয়। বরং এর একটা ব্যাখ্যা আছে। তো ব্যাখ্যাটি কি রকম? ব্যাখ্যাটি হল, "মির্যা সাহেব মক্কা বা মদীনায় মৃত্যুবরণ করবেন মানে, মক্কা মদীনার উপর তিনি বিজয় অর্জন করবেন।"
আমি মনে করি, জ্ঞানীদের জন্য মির্যার এসব বালখিল্য ধরণের ভবিষৎবাণী আর তার অন্ধভক্তদের কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাখ্যা পড়েই সত্য অনুধাবন করা যথেষ্ট হবে।
যাইহোক, এখন প্রশ্ন হল, মৃত্যুর অর্থ কি "বিজয়" অর্জন করা? দুনিয়ার কোন অভিধানে এমন অর্থ পেয়েছেন দেখতে চাই? যদি তাই হয়, তাহলে কেউ যদি বলে যে, ঢাকায় বাংলাদেশের সকল আহমদি তথা কাদিয়ানীর মৃত্যু হোক। তাতে রাগ হবার কথা না। কারণ, এর দ্বারা তাদের বিজয়ের জন্য দোয়া করা হয়েছে। যাতে করে ঢাকার উপর আহমদিদের বিজয় অর্জিত হয়!
ব্যাখ্যাটিতে মির্যায়ীদের দুটো মস্তবড় ভুল :
প্রিয়পাঠক, মির্যায়িরা উপরিউক্ত ব্যাখ্যাটির মাধ্যমে দুটো মস্তবড় ভুল করেছে। যা খোদ নিজেরাও কখনো আকল ব্যবহার করে বুঝতে চায়নি। কিভাবে ভুল করেছে তা জানেন? প্রথমত, মক্কা আর মদীনার উপর মির্যা সাহেব বিজয় অর্জন করতে চাইবেন কেন? মির্যা সাহেবের যুগে উক্ত দুই পবিত্র স্থাপনা কি আদৌ অমুসলিমদের কবজায় চলে গিয়েছিল? আর যদি কথার কথা সেগুলো অমুসলিমদের কবজায় চলে গিয়ে থাকে তাহলে মির্যা সাহেব যুদ্ধ জিহাদ ছাড়াই সেটি বিজয় করলেন কিভাবে? নাকি বলবেন যে, সেই বিজয় কথিত আধ্যাত্মিকভাবে ছিল? যদি তাই হয় তাহলে তো মির্যা সাহেবকে পেয়ারে আক্বা মুহাম্মদে আরাবী আঁ হযরত (সা)-এর চেয়েও বড় দাবি করা হচ্ছে। কেননা, মুহাম্মদে আরাবী (সা) তিনি কখনো হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থেকে কিংবা বিনা যুদ্ধে কোনো শহর বা ভূমি বিজয় করার দাবি করেননি। বরং তজ্জন্য তাঁকে আমৃত্যু ২৮টি সশস্ত্র জিহাদ পরিচালনা করতে হয়েছে। শরীর থেকে রক্ত ঝরাতে হয়েছে। পেটে পাথর বেধে তাবুকের যুদ্ধে খননকাজে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। তার বিপরীতে ব্রিটিশ আজ্ঞাবহ মির্যা সাহেব কিসের জোরে মক্কা মদীনার উপর বিজয় করে গেলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। মজার ব্যাপার হল, তার কল্পিত বিজিত মক্কা মদীনার রাজা প্রজারাও তাকে এবং তার অনুসারিদের মুসলমান মনে করেন না। তা সত্ত্বেও মির্যা সাহেব এ পবিত্র নগরীদ্বয় কিভাবে বিজয় করলেন তা আহমদিদের আরেকবার ভেবে দেখা দরকার।
দ্বিতীয়ত, মির্যা সাহেবের মৃত্যু হয়েছিল কলেরায়। যেটি মুবাহালার প্রায়শ্চিত্ত এবং অভিশাপ ছিল। কারণ তিনি শায়খ আব্দুল হক গজনবী রহঃ এর সাথে মুবাহালা করেছিলেন। তখন দুনো পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আসমানি নিশানায় মৃত্যুর জন্য বদ দোয়া করেছিলেন। কলেরা বা মহামারির আপদে পাকড়াও হয়ে মৃত্যুবরণ করার কথা উল্লেখ আছে। "মুবাহালাকারী সত্যাবাদীর জীবদ্দশাতেই মুবাহালাকারী মিথ্যাবাদীর মৃত্যু হবে"-এমনি ইশতিহার ছিল দুপক্ষের। মির্যা সাহেব থেকে এধরণের ঘোষণা তারই রচনাবলীতে বিস্তর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার লেখিত ইজাজে আহমদী, শাহাদাতুল কুরান (৬/৩৭২) এবং মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত (২/৭০৫), মালফূজাত (৫/৩২৭; চতুর্থ এডিশন), মির্যাপুত্র রচিত 'সিরাতে মাহদী' (১/৩৮০; চতুর্থ এডিশন) প্রভৃতি বইগুলো দেখুন। যেমন মির্যা সাহেব তার রচিত "শাহাদাতুল কুরান" বইতে লিখেছেন -
اور اللہ جل شانہ جانتا ہے کہ ہم نے کسی مباہلہ میں کسی دشمن پر عذاب نازل ہونا نہیں چاہا اور نہ عبد الحق غزنوی کیلئے جس نے بمقام امرتسر مباہلہ کیا تھا اسکی موت کیلئے بد دعا کی مگر اس نے بہت کچھ جزع فزع کیا. شہادۃ القرآن ؛ روحانی خزائن 6/372
অর্থ:- আল্লাহতালা জানেন যে, আমি কোনো মুবাহালাতে কোনো দুশমনের উপর আযাব নাযিল হতে চাইনি এমনকি আব্দুল হক গজনবীর জন্যেও চাইনি। যিনি অমৃতসর নামক স্থানে মুবাহালা করেছিল। তবে তার মৃত্যুর জন্য আমি বদ দোয়া করেছিলাম। কিন্তু সে অনেক বেশি ভয় আর উৎকণ্ঠা দেখিয়েছে।" (রূহানী খাযায়েন, খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩৭২)।
এখানে আরেকটি কথা বলে রাখা দরকার, তা হল- মির্যা কাদিয়ানী সাহেব উক্ত মুবাহালা’র ৪ বছর পরে অর্থাৎ ২ রা অক্টোবর ১৯০৭ সালে আরেকটি ঘোষণা জারি করেন। অর্থাৎ তিনি একটি ঊসূল বা নীতিমালা তৈরি করে ডিগ্রি জারি করেছিন। সেটি নিম্নরূপ :-
مباہلہ کرنے والوں میں سے جو جھوٹا ہوتا ہے وہ سچے کی زندگی میں ہی ہلاک ہوا کرتا ہے ۔۔۔۔۔۔۔۔۔ ہاں اتنی بات صحیح ہے کہ سچے کے ساتھ جو جھوٹے مباہلہ کرتے ہیں تو وہ سچے کی زندگی میں ہی ہلاک ہوجاتے ہیں۔ (ملفوظات جلد 5صفحہ 327‘328 از مرزا قادیانی طبع چہارم)
অর্থ : মুবাহালাকারীদের ভেতর যিনি মিথ্যাবাদী তিনি সত্যবাদীর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করবে। হ্যাঁ, এটি সঠিক কথা যে, সত্যবাদির সাথে মিথ্যাবাদী মুবাহালাকারীর মৃত্যু তারই জীবদ্দশাতে হবেই। (মির্যার রচিত – মালফূজাত ৫/৩২৭-২৮; ৪র্থ সংস্করণ)
প্রিয় পাঠক, এবার খোঁজ নিয়ে দেখুন কার জীবদ্দশাতে কে মারা গেলেন? মির্যা সাহেব মারা যান ১৯০৮ সালের ২৬ শে মে। অপর দিকে শায়খ আব্দুল হক গজনবী মির্যার মৃত্যুর পর আরো নয় (৯) বছর বেঁচে থেকে ১৬ মে ১৯১৭ সালে মারা যান। এরপর মির্যা সাহেব কলেরায় মৃত্যুবরণ করার প্রমাণ পাবেন তারই শ্বশুর নবাব মীর নাসির এর জীবনী গ্রন্থ "হায়াতে নাসের" বইয়ের ১৪ নং পৃষ্ঠাতে; ডিসেম্বর ১৯২৭ সালে প্রকাশিত। (লেখক, মির্যায়ীদের 'আল-হিকাম' পত্রিকার এডিটর, কাদিয়ানী মুবাল্লিগ শেখ ইয়াকুব আলী ইরফানী কাদিয়ানী)। সুতরাং যে ব্যক্তিটির মৃত্যুই হয়েছে অভিশাপের উপর তার তো জাহান্নামি হওয়াই পরিষ্কার। এমন জাহান্নামি ব্যক্তি মক্কা মদীনার উপর বিজয় অর্জন করার দাবি নেহাত স্বজাতি আহমদিদের সাথে রসিকতা ছাড়া আর কী হতে পারে? সত্য গোপন করে মানুষকে জাহান্নামের দিকে আহবান করা বৈ আর কী হতে পারে? সংক্ষেপে এ পর্যন্ত।
এই হল মির্যা সাহেবের কথিত ওহী আর ইলহাম নির্ভর ভবিষৎবাণীর নামে যতসব বাগাড়ম্বর। যার সত্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে পরবর্তীতে তার অন্ধভক্তরা এভাবেই শয়তানি দেমাগ ব্যবহার করে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। আর যদি সত্যিকার ভাবেই তার উক্ত ইলহাম আল্লাহ'র পক্ষ থেকে হত, তাহলে তা নিশ্চিত বাস্তবায়িত হত। অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা সাহেব লাহোরে মৃত্যুবরণ করার ফলে তাদের কেউ আজ অব্ধি তার গ্রহণযোগ্য কোনো জবাব দিতে পারেনি। কেবলই এটা বলা ছাড়া যে, এই ভবিষৎবাণী খোদাতায়ালার পক্ষ থেকে নয়, বরং এটি একটি মিথ্যা এবং বানোয়াট। (তথ্যসূত্র : আহমদী বন্ধু! ইসলামে ফিরে এসো)
লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।
©somewhere in net ltd.