![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
'ওয়ালাকিন শুব্বিহা লাহুম' [নিসাঃ১৫৭] প্রশ্নোত্তরে সঠিক মর্মার্থ বুঝে নিন
প্রশ্নকর্তাঃ ওয়ালাকিন শুব্বিহা লাহুম- এর অর্থ কী?
উত্তরদাতাঃ এর অর্থ হল, কিন্তু তাদের এইরূপ বিভ্রম (সন্দেহ) হয়েছিল।
প্রশ্নকর্তাঃ সহজ করে বুঝিয়ে বলুন!
উত্তরদাতাঃ অর্থাৎ ইহুদীরা নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তে পতিত হয়েছিল। তারা নিশ্চিত করে বলতে পারল না যে, তারা যাকে শূলিবিদ্ধ করেছে সেই আসলে কে? ঈসা নাকি অন্য আর কেউ? (এই ছিল তাদের বিভ্রান্তির কারণ)।
প্রশ্নকর্তাঃ 'তবে তাদের অনুরূপ মনে হয়েছিল'-এই অনুবাদ কি ভুল? যদি ভুল হয় কেন ভুল হবে?
উত্তরদাতাঃ আপনার মতে আয়াতের মর্মার্থ পরিস্কার করে দিন।
প্রশ্নকর্তাঃ এর মানে হল, ইহুদীরা ঈসা (আঃ)-কে স্বাভাবিক হত্যা কিংবা শূলেচড়িয়ে হত্যা এর কোনোটাই করতে পারেনি, বড়জোর ঈসাকে শূলেচড়াতে পেরেছিল। তবে শূলির উপর তাঁর মৃত্যু হয়নি। কিন্তু ইহুদীদের দৃষ্টিতে তাঁকে মৃত্যুর অনুরূপ করে দেয়া হয়েছিল।
উত্তরদাতাঃ আপনার উক্ত অনুবাদ "তাদের অনুরূপ মনে হয়েছিল" বেশকিছু কারণে অসম্ভব রকমের ভুল।
প্রথম কারণ হল, আয়াতে শব্দটি "শুব্বিহা"। এটি বাবে তাফয়ীল থেকে কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়া। এর আভিধানিক অর্থ - উপমা দেয়া, তুলনা করা, তাশবীহ দেওয়া। (দেখুন আল-মু'জামুল ওয়াফী)। কিন্তু "শুব্বিহা"এর পরে যখন ل/علي হবে তখন এটি لبس (লুব্বিছা)'র অর্থ প্রদান করবে। লুব্বিছা অর্থ সন্দেহ হয়েছিল, বিভ্রম হয়েছিল।
এখন আপনি নিজেই চিন্তা করুন, "শুব্বিহা" এর পরে "লাহু" ( ﻟَﻪُ ) থাকা সত্ত্বেও 'লুব্বিছা' এর অর্থ ত্যাগ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ নেয়া কি ঠিক হয়েছে? এই দেখুন অভিধান কী বলে!
ﺷُﺒِّﻪَ ﻟَﻪُ ﺃﻭْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ : ﻟُﺒِّﺲَ ، ﺍِﺧْﺘَﻠَﻂَ عليه اﻟﻨﺴﺎﺀ ﺁﻳﺔ 157 ﻭﻣَﺎ ﻗَﺘَﻠُﻮﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﺻَﻠَﺒُﻮﻩُ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺷُﺒِّﻪَ ﻟَﻬُﻢْ ( ﻗﺮﺁﻥ )
অর্থাৎ শুব্বিহা লাহু বা আলাইহি - লুব্বিছা, ইখতালাত্বা আলাইহি। যেমন- ওয়ামা কাতালূহু ওয়ামা ছালাবূহু ওয়ালাকিন শুব্বিহা লাহুম। সূরা নিসাঃ ১৫৭; পবিত্র কুরআনের আয়াত। (রেফারেন্সঃ অনলাইনের সর্ববৃহৎ আরবী অভিধান "আল-মা'আনী" দ্রষ্টব্য http://www.almaany.com দ্রষ্টব্য)।
______
মজার ব্যাপার হল, শুব্বিহা লাহুম শব্দের একটু পরেই لفى شك منه (লাফী শাক্কিম মিনহু) এসেছে। যেখানে "শক" (شك) অর্থ সন্দেহ। যার ফলে শুব্বিহা শব্দের পর ل/علي হওয়াতে এর অর্থ (شك) তথা সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্ত ধরেই অনুবাদ করতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত পবিত্র কুরআনের অনুবাদে লিখা আছে - 'কিন্তু তাহাদের এইরূপ বিভ্রম (সন্দেহ) হইয়াছিল।'
____
দ্বিতীয় কারণ, ঈসা (আঃ)-কে ইহুদীরা পাকড়াও করেছিল কিংবা শূলিতেও চড়িয়েছিল - এই ধরণের বিশ্বাস পবিত্র কুরআন পরিপন্থী ও কুফুরী বিশ্বাস। কেননা সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৫২ এর ভাষ্য মতে, ঈসা যখন কাফেরদের হত্যা ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পারলেন তখন স্বীয় হাওয়ারিদের উদ্দেশ্যে 'মান আনছারী ইলাল্লাহ' (কে আছ তোমরা আল্লাহ'র পথে আমার সাহায্যকারী হবে) বলেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা ঈসার মনের আকূতির প্রতিউত্তরে বললেন (আলে ইমরানঃ ৫৪) ওয়ামাকারূ ওয়ামা কারাল্লাহ ওয়াল্লাহু খাইরুল মাকিরীন (বনী ইসরাইলের লোকেরা নবীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল, তাই আল্লাহও কৌশলের পন্থা গ্রহন করলেন, আল্লাহতালাই হচ্ছেন সর্বোত্তম কৌশলী)।
_____
তারপর সূরা মায়েদার ১১০ নং আয়াতে আছে, ওয়া ইয কাফাফতু আনকা বানী ইসরায়ীলা (অর্থাৎ হে ঈসা স্মরণ কর, যখন আমি বনী ইসরাইলকে তোমা হতে নিবৃত্ত রেখেছিলাম)।
______
এবার মূলকথায় চলুন। এক স্থানে আল্লাহ বললেন, তিনি ঈসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মুকাবেলায় উত্তম কৌশলী। আরেক জায়গাতে বললেন, বনী ইস্রাইলকে ঈসার নাগাল পেতেও দেননি, তাদের থেকে তাঁকে নিবৃত্ত রেখেছিলেন। এই দুটি আয়াতের আলোকে একদম পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, ইহুদী সন্ত্রাসীরা ঈসাকে পাকড়াও করবে তো দূরের কথা, তারা তাঁর কাছেও ভিড়তে পারেনি। তার আগেই 'রাফেউকা ইলাইয়্যা' তথা আল্লাহ ঈসাকে নিজের নিকট (আকাশে) উঠিয়ে নিয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ)।
যেজন্য ইহুদীরা তাঁকে পাকড়াও করে শূলে দিয়ে রক্তাক্ত করার নিকৃষ্ট এই কাদিয়ানী মতবাদ সঠিক হলে তখন "ওয়াল্লাহু খাইরুল মাকিরীন" এবং "ওয়া ইয কাফাফতু" ইত্যাদি খোদাতায়ালার প্রতিশ্রুতি ইহুদীবাদী ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় ব্যর্থ ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। অথচ আল্লাহ'র সর্বোত্তম কৌশলের সামনে তাদেরই ব্যর্থ হওয়া স্বাভাবিক, তাই নয় কি?
তাই 'ইহুদীরা ঈসাকে শূলিতে চড়াতে পারা'র অলিক কল্পনা থেকে "তাদের (মৃত্যুর) অনুরূপ মনে হয়েছিল" এই অনুবাদ সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। এমনকি তাদের এই অনুবাদ পবিত্র কুরআনের বর্ণনাভঙ্গিসহ অসংখ্য সহীহ হাদীস এবং সালফে সালেহীনের বুঝের বিপরীতও ।
_____
প্রশ্নকর্তাঃ "শুব্বিহা লাহুম" এর যেই মর্মার্থ দেখালেন তার সমর্থনে কোনো সহীহ হাদীস কিংবা নির্ভরযোগ্য যুগ ইমাম হতে প্রমাণ করে দেখাতে পারবেন?
জবাবদাতাঃ জ্বী পারব, ইনশাআল্লাহ। যথাক্রমে রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস, শায়খ ইবনে তাইমিয়া, রঈসুল মুহাদ্দিসীন শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভী প্রমুখ থেকে এর সমর্থনে উদ্ধৃতি পেশ করছি। উল্লেখ্য, উপরের তিন জনই স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানীর নিকটও মাননীয় এবং নির্ভরযোগ্য।
_____
(১) ওয়া লাকিন শুব্বিহা লাহুম- এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে তদীয় শাগরেদ হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেনঃ صلبوا رجلاً شبهوه بعيسى و رفع الله عز و جل عيسى إلى السماء حيا. অর্থাৎ ইহুদীরা ঈসা মনে করে এক ব্যক্তিকে শূলিতে চড়িয়েছিল। অপর দিকে আল্লাহতায়ালা ঈসাকে আকাশে জীবিত উঠিয়ে নেন। (সূরা নিসা, তাফসীরে আত-তাইসীর ফী ইখতিসারে ইবনে কাসীর ৬/৪৮৯)। দারুল হুদা, জিদ্দা (সৌদিয়ারব) হতে প্রকাশিত। তত্ত্বাবধায়ক, শায়খ ছালেহ বিন আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদী। ইমাম ও খতীব, মসজিদুল হারাম।
_____
(২) শায়খ ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) লিখেছেনঃ أى شبه للناس الذين اخبرهم أولئك بصلبه. অর্থাৎ 'শুব্বিহা লাহুম' দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সেসব লোকদের সন্দেহে পতিত হওয়া যাদেরকে ঈসার হত্যা সম্পর্কে তথ্য দেয়া হয়েছিল। (দেখুন শায়খ ইবনে তাইমিয়া রচিত কিতাব 'আল জাওয়াবুস সহীহ' ২/৩০৪)। (আল জাওয়াবুস সহীহ কিতাবটির স্কিনকপি পোস্টে দেখুন)।
_____
(৩) শাহ দেহলভী (রহঃ) লিখেছেনঃ و فى الواقع در حق عیسیٰ علیہ السلام اشتباہ واقع شدہ بود. رفع بر آسمان را قتل گماں کردند. অর্থাৎ তারা ঈসার বিষয় নিয়ে বিভ্রমে (সন্দেহে) পতিত হয়েছিল। তারা ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়াকে হত্যা ভেবেছিল। (দেখুন, শাহ সাহেব রচিত কিতাব 'আল ফাউযুল কাবীর' পৃষ্ঠা নং ১০)। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী তার 'ইযালায়ে আওহাম' কিতাবের ১৫৫ নং পৃষ্ঠায় শাহ সাহেবকে 'রঈসুল মুহাদ্দিসীন' লিখেছেন। যাইহোক, আপনার সঠিক জ্ঞান আহরণের জন্য আপাদত এই কয়েকটিই যথেষ্ট। অন্যথা আরো বহু দলিল দেয়া যায়।
_____
প্রশ্নকর্তাঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমার আরো একটি প্রশ্ন আছে। সূরা আলে ইমরানের ৫৫ নং আয়াতে "রাফেউকা" অর্থ - তোমাকে উন্নীত করব, এই অনুবাদ সঠিক হবে কিনা? যদি সঠিক না হয় তাহলে কেন হবেনা?
উত্তরদাতাঃ আপনি যেই অনুবাদ দিয়েছেন এটি সঠিক ধরে নিলে তখন বলতে হবে যে, হযরত ঈসা (আঃ) ইতিপূর্বে আধ্যাত্মিক কোনো উন্নীত ছাড়াই পয়গম্বরী দায়িত্ব পেয়েছিলেন! তো এই বিশ্বাস কি সঠিক? এটা তো হযরত ঈসার শানে সুস্পষ্ট অসম্মানজনক বিশ্বাস, যা ইসলাম সমর্থন করতে পারেনা। দ্বিতীয়ত, শব্দটি সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতেও আছে।
_____
খেয়াল করলে দেখবেন, দুই জায়গাতেই "রাফা'আ" শব্দের শেষে "ইলাইয়্যা" অথবা "ইলাইহি" শব্দ চয়িত হয়েছে। যেটি উপরে উঠিয়ে নেয়ার অর্থেই ক্বারীনা বা প্রমাণ বহন করে থাকে। যার ফলে "রাফা'আ" এর আরেক রূপক অর্থ 'উন্নীত' থাকা সত্ত্বেও হযরত ঈসা (আঃ) এর ক্ষেত্রে শব্দটির এই রূপক অর্থ সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয়ে গেছে।
তৃতীয়ত, আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈসা (আঃ)-কে "কা" শব্দে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻳَٰﻌِﻴﺴَﻰٰٓ ﺇِﻧِّﻰ ﻣُﺘَﻮَﻓِّﻴﻚَ ﻭَﺭَﺍﻓِﻌُﻚَ ﺇِﻟَﻰَّ ﻭَﻣُﻄَﻬِّﺮُﻙَ ﻣِﻦَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ۟ ﻭَﺟَﺎﻋِﻞُ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﭐﺗَّﺒَﻌُﻮﻙَ
প্রিয় আহমদীবন্ধু! এখানে (মুতাওয়াফফি+কা)/(রাফিউ+কা)/(মুত্বাহহিরু+কা) এবং (ইত্তাবায়ূ+কা) আয়াতের সবগুলো শব্দের মধ্যে "কা" (ইংরেজিতে you) আছে। এখন আপনাকে আমার প্রশ্ন হল, এই চারটি শব্দে "কা" (তোমাকে) দ্বারা শুধু কি ঈসার রূহ বুঝানো উদ্দেশ্য? নাকি রূহ এবং শরীর দুটোর সমষ্টি ঈসা নাবিয়ুল্লাকে বুঝানো উদ্দেশ্য? উত্তর যদি "ঈসা" (আঃ)-কে বুঝানো উদ্দেশ্য হয় তাহলে "রাফেউকা" বলতে শুধু ঈসার রূহ কেন উদ্দেশ্য হবে? ঈসা কি শরীর বাদ দিয়ে শুধু রূহের নাম? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?
এইজন্যই অত্র আয়াতে "রাফেউকা" দ্বারা ঈসাকে সশরীরে উঠিয়ে নেয়াই উদ্দেশ্য। সকল মুসলমানের বিশ্বাস এটাই। অসংখ্য সহীহ হাদীস এই আকিদার সুস্পষ্ট সমর্থক। তাই কাদিয়ানিরা ভ্রষ্ট এবং তাদের উক্ত আকিদা গুলো মনগড়া এবং পরিত্যাজ্য। ওয়াসসালাম।
(সম্পূর্ণ লেখাটি আমার পেইজ থেকে পড়তে ক্লিক করুন Click This Link)
লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।
©somewhere in net ltd.