![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
অনলাইনে যেমন অসাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সন্ধান পাই, তেমনি নানা বৈচিত্রময় মানুষের দেখাও পাই। কয়দিন পূর্বের কথা। জনপ্রিয় একটি ব্লগ সামহোয়্যারইন ব্লগ (সামু)-র একটি লিখা পড়ি। লিখাটি ছিল কাদিয়ানিরা কেন মুসলমান নয়, এই বিষয়ে। খুবই তথ্যবহুল লেখা ছিল। সেখানে দেখলাম ব্লগারদের বিশাল একটি অংশ লিখাটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জেনেছেন অনেক কিছুই। তেমনি আমিও। কিন্তু বাধসাধল একজনে। সে ছিল ছদ্মবেশী ব্রিটিশ-চর ও এক কাদিয়ানী (আহমদী)। এবার দেখুন সে পোস্টের কোনো সঠিক জবাব দিতে না পেরে কিরকম দূতিয়ালি স্বরে লিখাটিতে মন্তব্য করেছেন! কাদিয়ানী লোকটার মন্তব্যঃ
"কে মুসলমান আর কে কাফের শুধু আল্লাহ জানেন"।
আমি তার এই হেয়ালিপূর্ণ মেকি মন্তব্যের কড়া জবাবে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, কোনো শিক্ষার্থী তার অধ্যক্ষের নিকট প্রশংসাপত্র (Testimonial Certificate) চাওয়ামাত্র তিনি "কে প্রশংসিত আর কে নিন্দিত তা শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন" এভাবে বলাটা বিধিসংগত হবে কিনা?
আচ্ছা এটা বাদ দিন, আমাকে বলুন তো ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো অমুসলিমকে যাকাত দিলে তা ইসলামের বিধিমতে সঠিক হবে কিনা? যেহেতু যাকাতের খাতগুলো মাত্র ৮টিতে সীমাবদ্ধ । সূরা তাওবা, আয়াত নং ৬০ দ্রষ্টব্য। তাই উক্ত যাকাতদাতা কেয়ামতের দিন যদি যুক্তি দেয় যে, কে কাফের আর কে মুসলিম সেটি তো তুমি-ই জানতে। তাই আমি নির্বিচারে যাকে ইচ্ছে যাকাত দিয়েছিলাম। তো সেদিন তার এই যুক্তি কতটুকু গ্রহনযোগ্য হবে? অথচ যাকাত আদায় না করার উপর কঠোর সাবধানবাণী রয়েছে। সূরা তাওবা, আয়াত নং ৩৪-৩৫ দ্রষ্টব্য। কী জবাব দেবেন?
এবার কাদিয়ানী উম্মতের উক্ত মন্তব্যের ব্যাখ্যায় ফেরা যাক। এখানে একটি কথা বলে রাখতে চাই, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নিকট তাদের মতবাদের সমর্থনে মনগড়া কিছু শয়তানি যুক্তি আর রূপকের কাসুন্দির বাহিরে কিছুই নেই। তারা প্রসঙ্গ ছাড়াই কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দেয়। সহীহ হাদীসের দ্বারেকাছেও যাওয়ার সাহস পায়না। তারা হাদীসের আগপাছ বাদ দিয়ে খন্ডিত অংশে ধোকা দেয়ার বড় ওস্তাদ।
এখানে আরো লক্ষণীয় যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় উক্ত কথাটি কিন্তু নিঃশর্তভাবেই বলে থাকে। তাই এখন নিচের বিষয়গুলো অনায়াসে ভাবনার জন্ম দেবে! যেমন -
(ক) তাহলে তো কেউ নিজেকে "মুসলমান" ভাবাও সঠিক না! কারণ তাদেরই যুক্তি অনুসারে আমি মুসলমান নাকি অমুসলমান সেটিও শুধু আল্লাহ জানেন। এমতাবস্থায় নিচের আয়াতগুলোর জবাব কী?
পবিত্র কুরআনে হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে এসেছে, তিনি বলেছেন - আনা আওয়ালুন মুমিনীন। অর্থাৎ আমি-ই (এই সময়কার) সর্বপ্রথম মুমিন। (7:143)।
রাসূলেপাক (সাঃ) সম্পর্কে এসেছে, তিনিও বলেছেন - আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। অর্থাৎ আমি-ই (এই সময়কার) সর্বপ্রথম মুসলমান। (6:163)।
ঢালাওভাবে সব মুসলমান সম্পর্কে এসেছে, (তোমরা বলো) নাহনু লাহু মুসলিমূন। অর্থাৎ আমরা হচ্ছি আল্লাহরই অনুগত বান্দা (তথা মুসলমান)। (2:136)
পবিত্র কুরআনে আরো এসেছে, ইন্নানী মিনাল মুসলিমীন। অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের একজন। (41:33)
আয়াতগুলোর প্রত্যেকটিতে মুসলমান হিসেবে যে স্বীকারোক্তি এসেছে এর কোনোটা মূসা (আঃ)-এর সাথে সম্পর্কিত, কোনোটা রাসূল (সাঃ)-এর সাথে আবার কোনো কোনোটা ঢালাওভাবে উম্মতে মুহাম্মদিয়ার সাথে সম্পর্কিত।
বিজ্ঞপাঠক! এবার বলুন, আমরা কারটা গ্রহণ করব? কাদিয়ানিদের যুক্তি মেনে নিলে তখন পবিত্র কুরআনের এইসব আয়াতকে নিরবে চ্যলেঞ্জ করা হবে কিনা?
(খ) প্রজাতন্ত্রের বিচারালয় কাউকে খুনি বলে রায় দিতে পারবেনা। কারণ তাদেরই যুক্তি অনুসারে 'কে খুনি আর কে নন-খুনি বা কে দোষী আর কে নির্দোষী' তা শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন।
তাই কাদিয়ানীদের উচিত, সরকারকে অনতিবিলম্বে বিচারালয়ে সংশোধনী আনতে পরামর্শ দেয়া। সরকার যদি ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে কড়াভাবে এর প্রতিবাদ করা। কারণ, কে মুসলমান আর কে কাফের এটি যেমন শুধু আল্লাহ জানেন(!) তেমনি 'কে দোষী আর কে নির্দোষী সেটাও তো শুধুমাত্র আল্লাহ জানার কথা! তাহলে এটিও কেন আল্লাহ'র ইখতিয়ারের বাহিরে থাকবে?
(গ) ইতিপূর্বে যারা অমুক কাফের তমুক মুরতাদ বলেছিলেন তারা জালিম বা অনাধিকার চর্চাকারী সাব্যস্ত হচ্ছেন। হোক তিনি নবী, সাহাবী কিংবা মুফতিয়ানে কেরাম। (নাউযুবিল্লাহ)
কাদিয়ানিদের উচিত, তারা যেন প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যে, ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদে আরাবি (সাঃ) নিচের হাদীসটি বলে সঠিক করেন নি! (নাউযুবিল্লাহ)। কারণ এই হাদীসের বর্ণনাভঙ্গী দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে দায়িত্বশীল মহল যদি কাউকে ফাসেক অথবা কাফের ফতুয়া দেয় তবে তার অনুমতি রয়েছে। এবার হাদীসটা দেখুন,
"কোনো ব্যক্তি অপর কাউকে ফাসেক বা কাফের বললে যদি সে তেমন না হয়, তখন যে বলেছে সে নিজেই ফাসেক এবং কাফের হয়ে যাবে।" (সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং ৫৬৯৮)।
খুব খেয়াল করুন, হাদীসটিতে পরিস্কারভাবে .... যদি সে তেমন না হয় - উল্লেখ আছে। এতেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, কাদিয়ানিদের যুক্তি সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। কারণ তাদের উক্ত দাবিটা পুরোপুরি শর্তহীন। হ্যাঁ বড়জোর এটা বলা যেত যে, কে কাফের আর কে মুরতাদ এসব সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বিজ্ঞ মহলের হাতে ছেড়ে দেয়া হোক। যেহেতু এটি অনেক স্পর্শকাতর মাসআলা। কিন্তু কাদিয়ানিরা এভাবে বলেনা। তাই এর কী জবাব?
______
# মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার বিরুধী সকল মুসলমানকে "অমুসলিম" আখ্যা দেয়ার অতিব সামান্য কিছু বর্ণনা ইতিপূর্বেও উল্লেখপূর্বক পোস্ট করেছি। (মির্যার কথিত ইলহামী বই 'তাযকিরা' ৫১৯ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। মির্যা সাহেব তার সুদীর্ঘ ২০ বছরের সহযোগী ও শিষ্য ডাক্টার আব্দুল হাকিমকে "কাদিয়ানী জামাত" ত্যাগ করার অপরাধে 'মুরতাদ' আখ্যা দেন। (রূহানী খাযায়েন ২৩/৬৩৩ দ্রষ্টব্য)।
# মির্যা কাদিয়ানির পুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর বইতে কাদিয়ানিরা ছাড়া অ-কাদিয়ানী সবাই অমুসলমান। যেমন তিনি লিখেছেনঃ- یہ ہمارا فرض ہے کہ ہم غیر احمدیوں کومسلمان تصور نہ کریں اور ان کے پیچھے نماز پڑھنے سے انکار کردیں۔ کیوں کہ ہمارے عقیدہ کے مطابق وہ کافر ہیں۔ انھوں نے ا ﷲ تعالیٰ کے ایک پیغمبر کو تسلیم کرنے سے انکار کردیا ہے۔
অর্থাৎ আমাদের জন্য ফরজ হল, অ-আহমদীদের মুসলমান মনে না করা এবং তাদের পেছনে নামায পড়তে অস্বীকার করা। কেননা আমাদের বিশ্বাস অনুসারে তারা কাফের। যেহেতু তারা আল্লাহতালার একজন পয়গম্বর (মির্যা)-কে অস্বীকার করেছে। (রেফারেন্স, মির্যার বই 'আনওয়ারে খেলাফত' পৃষ্ঠা নং ১৪৮; নতুন এডিশন)। স্কিনশট দেখুন
প্রিয়পাঠক! এবার কাদিয়ানী সম্প্রদায় এর কী জবাব দেবে? তারা এবার মির্যাকে আল্লাহর ক্ষমতায় শরিক করবে? একেই বলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ!
পরিশেষে বলব, কাদিয়ানিরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং শেষনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরেও ভারতের মির্যা কাদিয়ানী (১৮৩৮-১৯০৮ইং)- কে নতুন আরেকজন "নবী" স্বীকার করায় ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছে। যদ্দুরুন এরা মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সবার নিকট নতুন আরেকটা ধর্মের অনুসারী হিসেবেই পরিচিত। ফলে কোনো মুসলিম দেশে এরা প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে পারেনা। ইহুদী খ্রিস্টানরাই এদের একমাত্র আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা। বর্তমানে গ্রেট বৃটেন তাদের অন্যতম স্বর্গরাজ্য। যেজন্য সর্বশেষ এরা এ সমস্ত কুযুক্তি আর কিছু চটকদার কথাবার্তার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করে। এটা ওদের ভয়ংকর আরেক ষড়যন্ত্র। আর সহজ সরল কাদিয়ানী মানুষগুলো এদের এসব চটকদার কথায় আত্মপ্রসাদ লাভ করে। আহ! আফসোস আর আফসোস!! অথচ তাদের সেসব যুক্তিগুলো অসার এবং সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। আশাকরি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
লিখক, প্রিন্সিপাল নুরুন্নবী।
©somewhere in net ltd.