নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক কাদিয়ানী মুরুব্বীর সাথে প্রফেসর মতিন খালিদ সাহেবের সফল ধারাবাহিক বিতর্ক

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬



কাদিয়ানী থেকে ইসলামে সিরিজ ২

"মির্যা গোলাম আহমদ" এর নবুওত দাবীর প্রেক্ষিতে দ্বি-পাক্ষিক বিতর্ক আলোচনা

পর্ব ১

আলোচনার বিষয়ঃ
নবুওতের দাবিদার মির্যা গোলাম আহমদ আসলে কে ছিলেন?

তারিখঃ ২ রা জানুয়ারী ২০০৯ ইং।
স্থানঃ মারকাযে সিরাজিয়া লাহোর, পাকিস্তান।

১ম পক্ষঃ প্রফেসর মতিন খালেদ, সহযোগী ওয়াকার আহমদ এবং আমের খুরশিদ ও হাশেম জাভেদ।
২য় পক্ষঃ শাহিদ বশির কাদিয়ানী ও সহযোগী অতিরিক্ত আরো তিনজন।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনা (ডিবেট) শুরু হল -

প্রথমে প্রফেসর মতিন খালেদ সাহেব প্রতিপক্ষ কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব এবং তার পুত্রদের কি পরিমাণ বই পড়েছেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : প্রায় ১০ - ১২ টি।

প্রফেসর মতিন খালেদ: কিন্তু মির্যা সাহেব তো প্রায় ৮৩টি বই লিখেছেন। সে সাথে তার তিন খণ্ডে মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত, দশ খণ্ডে মালফূজাতে আহমদিয়া এবং তার কথিত ওহী আর ইলহামি বই "তাযকিরাহ" ও কবিতার বই "দুররে ছামীন" সহ হিসেব করলে এই সংখ্যা একশতে পৌছবে। এমতাবস্থায় আপনি মাত্র ১২টা বই পড়ে তার বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগগুলো খণ্ডাবেন কিভাবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো প্রতিউত্তর নেই)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা বেশ ভাল কথা, আপনি বললেন মাত্র ১০-১২টি বই পড়েছেন। তো একেকটা বই কয়বার করে রিভাইজ (পুনঃ পাঠ) দিলেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : এক বার করে।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তো বলে গেছেন, যেই কাদিয়ানী উনার সকল বই ন্যূনতম তিনবার না পড়বে তার ঈমান নিয়ে উনার সন্দেহ থাকবে। তিনি যেন বুঝাতে চাচ্ছেন যে, সে কাদিয়ানী-ই নন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কি যা তা বলছেন! প্রমাণ দেখান!!

প্রফেসর মতিন খালেদ : দেখে নিন, সীরাতে মাহদীঃ খণ্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৭৮; লেখক মির্যা পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ। (বই খুলে দেখিয়ে দেয়া হল)। Screenshot সীরাতে মাহদীর পুরাতন এডিশন

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (উত্তর না দিয়ে বললেন) আমি যদিও তাদের সব বই পড়িনি কিন্তু আমি আপনার সব প্রশ্ন আর আপত্তির জবাব দেবই। আর তখন আপনি আমার কোনো উত্তর রুখাতে পারবেন না!

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু সেটা তো তখনি দেখা যাবে যখন আমরা পুরোদমে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় যাব! তখন সবাই দেখবে কে কার জবাব ঠিকমত দিতে পারছে! সে যাইহোক, এখন আলোচনায় আসা যাক।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : জ্বী, আলোচনা শুরু করুন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি কোন বিষয়ের উপর আলোচনা করতে চাচ্ছেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আমি আপনাকে একটা জুরুরি কথা বলতে চাই। তা হচ্ছে আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা পবিত্র কুরআন দিয়েই হতে হবে। কুরআনের বাহিরে যাওয়া যাবেনা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : বাহ! তো কোন কুরআন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : এটা আবার কেমন প্রশ্ন! কোন কুরআন মানে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : মানে বুঝেননি? একটা তো হল মুসলমানের কুরআন। যেটি আজ থেকে প্রায় গত চৌদ্দশত বছর পূর্বে খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হয়েছিল। আর আরেকটা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতে তার উপর নাযিল হয়েছিল। তার কথিত ওহী আর ইলহামী বই যেটি আপনারা "তাযকিরাহ" নাম দিয়েছেন।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কী বলছেন এসব! প্রমাণ দেখান!!

প্রফেসর মতিন খালিদ : তাহলে শুনুন! রূহানী খাযায়েন এর ৩নং খণ্ডের ১৪০ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, মির্যা সাহেব বলেছেন "আমি একদা কাশফ অবস্থায় দেখতে পেলাম আমার ভাই মির্যা গোলাম কাদের আমার নিকটে বসে উচ্চ আওয়াজে কুরআন পাঠ করছেন। তিনি পড়তে পড়তে انا انزلناه قريباً من القاديان -(নিশ্চয়ই আমি কাদিয়ানের নিকট এই কুরআন নাযিল করেছি) অংশটুকুও পড়েছেন। আমি শুনে বহুত আশ্চার্য হলাম। এ কি! কুরআন শরীফেও কাদিয়ান এর নাম লেখা আছে? তখন সে (আমাকে) বলল, দেখুন লিখা আছে। তখন আমি দৃষ্টি দিলাম। তাতে মনে হয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে কুরআন শরীফের (অত্র পাঠের) ডান পৃষ্ঠায় বোধহয় অর্ধ পৃষ্ঠার নিকটেই এই ইলহামী লাইনটুকু লিখা আছে। তখন আমি মনে মনে আশ্বস্ত হই যে, হ্যাঁ বাস্তবিকই কাদিয়ান এর নাম কুরআন শরীফে উল্লেখ আছে। আমি বললাম, কুরআন শরীফে তিনটি শহরের নাম খুব সম্মানের সাথে উল্লেখ আছে। মক্কা, মদীনা এবং কাদিয়ান।" (অনুবাদ শেষ হল)। তো এবার বলুন কুরআন শরীফের কোন সূরার কত নং আয়াতে "কাদিয়ান" শব্দ উল্লেখ আছে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : এটা তো শুধুমাত্র একটি কাশফ!

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নবী এবং রাসূল দাবী করে গেছেন। আর আপনিও এটা মানেন যে, নবী রাসূলের কাশফ সত্যই হয়। তাই মির্যা সাহেবের কাশফ যদি সত্য হয় তাহলে কুরআন থেকে "কাদিয়ান" শব্দ দেখাতে হবে। আর যদি তার কাশফ মিথ্যা হয় তাহলে তিনি একজন মিথ্যাবাদী। অথচ আপনিও মানেন যে, মিথ্যাবাদী কখনো নবী হতে পারেনা!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (লা জবাব। কোনো উত্তর দিলেন না)!

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা, আপনি মির্যা কাদিয়ানীকে কী হিসেবে মানেন?

পর্ব ২

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মির্যা কাদিয়ানী সাহেবকে আমরা ইমাম মাহদী মানি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব তো আজীবন হাস্যকর এমন সব দাবী করে গেছেন যার ফলে পাঠকগণ তার বই পড়লে পেরেশান হয়ে যান। তিনি দাবী করেন, আমি আমীনুল মুলক (রাষ্ট্র পরিচালক), আমি জে সিং বাহাদূর, আমি শ্রীকৃষ্ণ, আমি আর্যদের বাদশাহ, আমি মুহাদ্দাস, আমি আদম, আমি আহমদ, আমি মরিয়ম, আমি মূসা, আমি ঈসা, আমি দাউদ, আমি যুলকরনাইন, আমি খাতামুল আওলিয়া, আমি ইমামুয জামান, আমি মিকাঈল, আমি নবী, আমি রাসূল, আমি জিন্দা আলী, আমি যুগ মাসীহ, আমি সমস্ত নবীর সমষ্টি, আমি মুহাম্মদ, আমি মুহাম্মদ রাহমাতুল্লিল আলামীন, আমি খাতামুল আম্বিয়া এবং আমি খোদা। (নাউজুবিল্লা)। তাহলে তিনি আসলে কী?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : উনার এ সমস্ত দাবীর ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব এ সমস্ত দাবী আপনা জীবনে পর্যায়ক্রমে করে গেছেন। তার বইগুলো পড়লে এ দাবীগুলো আপনিও দেখতে পাবেন। আমি তার বই থেকে এগুলোর সবটা আপনাকে দেখাতে পারব। অধিকন্তু একজন সাচ্ছা আহমদী হিসেবে এ ব্যাপারে আপনারও ধারণা থাকা উচিত ছিল!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : তার এসব দাবী দাওয়াতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। আমি তো তাকে ইমাম মাহদী-ই মনে করি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু কথা তো এটা না। কথা হল, মনে করুন কেউ দাবী করে বলল আমি পুলিশের আই.জি। আর আপনি বলছেন, না না; আমি তাকে একজন হাবিলদার-ই মনে করি। তো এটা কি ঠিক হবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আপনি কিন্তু অযথা প্যাঁচাল করছেন! আমরা মির্যা সাহেবকে শুধুমাত্র একজন "ইমাম মাহদী" মানি। ব্যস, আর কিছুনা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : ইমাম মাহদী বিষয়ে কোনো ভবিষৎবাণী কি পবিত্র কুরআনে আছে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : জানা নেই।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনার তো তা জানা থাকা-ই জুরুরি ছিল! কারণ আপনি আলোচনার শুরুতেই বলেছিলেন, দ্বিপাক্ষিক বাহাস (বিতর্ক আলোচনা) শুধুমাত্র কুরআন শরীফ থেকে হতে হবে। তাহলে কুরআন শরীফ থেকে ইমাম মাহদীর আগমনী ভবিষৎবাণী কেন দেখাতে পারবেন না?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : ইমাম মাহদীর কথা কুরআন শরীফে নেই।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তাহলে আপনি মির্যা সাহেবকে ইমাম মাহদী মানেন কিসের ভিত্তিতে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : হাদীস সমূহের ভিত্তিতে।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা সাহেব তো হাদীস শরীফকে কোনোই গুরুত্ব দিতেন না। তিনি বলতেন, সব কিছু কুরআনই। তিনি লিখেছেন "কুরআন শরীফ হচ্ছে সবার আগে। আর হাদীস শরীফ সংশয় কবলিত।...ইসলামের সব কিছু কুরআনের উপর নির্ভরশীল।... হযরত (সা) কি লোকদের অসিয়ত করে গেছেন যে, আমার পরে তোমরা বুখারী মানবে? বরং হযরত (সা) এর অসিয়ত তো ছিল এটাই যে, আল্লাহর কিতাব (কুরআন)ই যথেষ্ট। আমাদেরকে কুরআন থেকে জিজ্ঞাসা করো! যায়েদ, বকরের সঞ্চিত কোনো পূঁজি (হাদীসের কিতাব) থেকে কিছু জিজ্ঞেস করিওনা (দলিল চাইও না)। আমাদের ব্যাপারে এই প্রশ্ন হতে পারেনা যে, তোমরা সিয়াহ ছিত্তা (বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদীসের কিতাব) এর উপর কেন ঈমান (বিশ্বাস) রাখো না? তোমরা জিজ্ঞাসা তো এটা করতে পারো যে, তোমরা কিজন্য কুরআনে ঈমান (বিশ্বাস) রাখোনা? (মালফূজাত: ২/৪৭০-৭২; নতুন এডিশন)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : সে যাইহোক, আমরা মির্যাকে ইমাম মাহদী মানি হাদীসের ভিত্তিতেই!

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু হাদীসের মধ্যে ইমাম মাহদীর পরিচয়, কর্মসূচি ইত্যাদি যাইকিছু বর্ণিত আছে মির্যা সাহেবের সাথে তো এর কোনোটাই মিলেনা! আমি কি এর সামান্য কিছু দেখাব আপনাকে!!

পর্ব ৩

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কিভাবে মিললো না দেখান!

প্রফেসর মতিন খালেদ : তাহলে দেখুন, আবুদাউদ শরীফের দ্বিতীয় খণ্ডের 'মা জাআ ফিল মাহদী' শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন 'পৃথিবীর একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকতেও আল্লাহতালা সেই দিনটিতে আমার থেকে তথা আমার আহলে বায়েত থেকে এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন। (প্রয়োজনে) আল্লাহতালা (পৃথিবীর) সেই (একমাত্র) দিনটি অবশ্য দীর্ঘ করে দেবেন। এই ব্যক্তির নাম আর পিতার নাম (কাকতালীয়ভাবে) আমার নাম আর পিতার নামের সাথে মিলে যাবে। তিনি পৃথিবীকে ন্যায় বিচার আর ইনসাফ দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ করে দেবেন যেমনিভাবে (ইতিপূর্বে) পৃথিবী জুলুম আর নিপীড়ন দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।" (অনুবাদ শেষ হল)।

আবুদাউদ শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় আরো একটি হাদীসে আছে, উম্মে সালমা (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূল (সা) থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন : ইমাম মাহদী আমার বংশ হতে বিবি ফাতেমার সন্তান-সন্ততি থেকে হবেন।

আবুদাউদ শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় হাদীসে আরো আছে, "মদীনায় একজন খলিফার মৃত্যুর পর গদিনিসীন হওয়া নিয়ে বিতর্ক বাঁধবে। তখন ইমাম মাহদী মদীনা থেকে মক্কায় চলে আসবেন। তখন মক্কার অধিবাসীগণ তাঁর নিকট বাইয়াত নেবেন। রুকনে ইয়ামানী আর হাজরে আসওয়াদ এর মধ্যবর্তী স্থানে তারা বাইয়াত নেবেন। সিরিয়া এবং ইরাকের আবদালগণও এসে (মক্কায়) 'মাকামে ইবরাহীম' নামক স্থানে (তাঁর নিকট) বাইয়াত নেবেন।"

উল্লিখিত বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত মারফূ, মুত্তাসিলুস সনদ দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, শেষ যুগের প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ। পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ। তিনি নবীর বংশধর তথা হযরত ফাতেমা (রা) এর বংশ থেকে হবেন। জন্ম হবে মদীনায়। মক্কায় (হজ্ব করতে) তাশরিফ নেবেন।

খুব বেশি কিছুনা। শুধুমাত্র এই পাঁচটা মানদণ্ডের বিচারে প্রমাণ করুন যে, এগুলো মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মধ্যেও ছিল?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : শুধুমাত্র এ গুলোই কি ইমাম মাহদীর পরিচয় পাওয়ার আলামত? ইমাম মাহদীর পরিচয় পাওয়ার জন্য আরো বহু আলামত আছে। আবার সেগুলোতে ইখতিলাফও আছে।

প্রফেসর মতিন খালেদ : যেসব সহীহ হাদীসে ইমাম মাহদীর পরিচয় নিয়ে বর্ণিত আছে আমি (মতিন খালিদ) সবই মানি। আপনাদের দৃষ্টিতে সেগুলোতে যদিও বা কোনো ইখতিলাফ মনে হয় না কেন তবে বরেণ্য মুহাদ্দিসীন ও যুগ ইমামগণ সেগুলোর মধ্যে তাতবীক (সামঞ্জস্যতার বিধান) করে গেছেন। সুতরাং আপনি আমার উল্লিখিত পাঁচটি পয়েন্টের জবাব দিন। তারপর কোনো সহীহ হাদীস দ্বারা আপনার দৃষ্টিতে যদি কোনো ইখতিলাফ মনে হয় তাহলে আমাকে বলতে পারেন। আমি তার জবাব দেব, ইনশাআল্লাহ। তবেই সমাধা হয়ে যাবে যে, মির্যা সাহেব কেমন মাহদী?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আপনি লিখে দিন যে, মাহদীর বর্ণনাগুলোতে কোনো ইখতিলাফ নেই! আমি এখনি ইখতিলাফ (মতভেদ) বলে দিচ্ছি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এই নিন আমি কাগজেই লিখে দিচ্ছি যে, ইমাম মাহদীর নাম মুহাম্মদ হবে, পিতার নাম আব্দুল্লাহ হবে এবং তিনি নবী বংশের তথা ফাতেমি হবেন, তিনি মদীনা থেকে মক্কায় আসবেন এবং সেখানে রুকনে ইয়ামানি আর মাক্বামে ইবরাহিম এই দুটি স্থানের মধ্যবর্তী জায়গায় বাইয়াত গ্রহণ করবেন, এই বিষয়গুলো সর্বসম্মত। কোনো ইখতিলাফ নেই। এবার আপনি এই সর্বসম্মত বিষয়গুলোর বিপরীতে এমন একটি সহীহ হাদীস [কিবা দুর্বল সূত্রের হাদীস হলেও হবে] দেখান যেটি এগুলোর বিরুদ্ধে যাচ্ছে! আমার চ্যালেঞ্জ, আপনি এর বিরুদ্ধে কোনো হাদীস দেখাতে পারবেন না। তাই এবার ফয়সালা নিজেই করুন যে, ইমাম মাহদী যিনি হবেন তার নাম নবী করিম (সা)-এর ফরমান মুতাবেক 'মুহাম্মদ' হয়ে থাকলে তখন মাহদী দাবিদার মির্যা কাদিয়ানী'র নাম কিজন্য "মুহাম্মদ" ছিল না?

মির্যা কাদিয়ানীর পিতার নাম ছিল মির্যা গোলাম মর্তুজা। অথচ নবী করিম (সা) এর ফরমান মুতাবেক ইমাম মাহদীর পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ।

ইমাম মাহদীর বংশ হবে সাইয়েদ ও ফাতেমি। কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর বংশ তো ছিল মুঘল (তুর্কিজাত)!

ইমাম মাহদী তিনি মদীনা থেকে মক্কায় আসবেন। এখন বলুন মির্যা কাদিয়ানী মদীনায় জন্মেছিল নাকি হিন্দুস্তানের কাদিয়ান (পাঞ্জাব) নামক গ্রামে জন্মেছিল?

ইমাম মাহদী হাজ্ব করতে মক্কায় আসবেন। এখন আপনি বলুন মির্যা সাহেবের তো জীবনে কখনো হাজ্বও করার সুভাগ্য হয়নি, থাক তো মক্কায় গেছেন! সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো প্রতিউত্তর করতে পারলেন না!) সে যাইহোক, আমরা মির্যা সাহেবকে ইমাম মাহদী মেনে থাকি। ব্যস এর চেয়ে বেশি কিছুনা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তা বটে, কিন্তু তাকে ইমাম মাহদী কিসের ভিত্তিতে মানেন অন্ততপক্ষে একথার তো প্রমাণ দেবেন!! অন্যথা এভাবে ইচ্ছেমত ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যার গ্যাঁড়াকলে কুরআন হাদীসের হাত পা ভেঙ্গে যে কেউই তো ইমাম মাহদী দাবী করতে পারে!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন, ইমাম মাহদীর অন্যতম একটি আলামত হল, ইমাম মাহদীর যুগে একই রমাদ্বানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটবে। যেটি ইতিপূর্বে আসমান জমিন সৃষ্টি হওয়া অব্ধি আর কখনো সংঘটিত হয়নি। আর এটি মির্যা সাহেবের "মাহদী" দাবীর ক্ষেত্রে ঘটেছিল। সেই সময়টিতে তিনি-ই ছিলেন একমাত্র ইমাম মাহদী হবার দাবিদার। এতেই সাব্যস্ত হয়ে যায় যে, মির্যা সাহেব নবী করীম (সা) এর ফরমান মুতাবেক ইমাম মাহদী ছিলেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি বললেন এটি নবী করীম (সা) বলেছেন। আর সে হিসেবে মির্যা সাহেব উনার (সা) ফরমান মুতাবেক ইমাম মাহদী! কিন্তু বাস্তবতা হল, এটি হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। এমনকি সেখানে উক্ত কথাগুলো না নবী করীম (সা) বলেছেন, আর না কোনো সাহাবী বলেছেন!

পর্ব ৪

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি এর কোনো জবাবই দিলেন না!) কিন্তু এটি মুহাম্মদ ইবনে আলী থেকে বর্ণিত আছে। যিনি ইমাম আবুজাফর আল বাকের নামে পরিচিত।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তাহলে আগে কেন বললেন যে, নবী করীম (সা) এর ফরমান মুতাবেক এই কথিত নিদর্শনের মাধ্যমে মির্যা সাহেব ইমাম মাহদী হিসেবে সাব্যস্ত? সে যাইহোক, ইমাম বাকের এর নামে এটি যে সূত্রে (সনদ) বর্ণিত আছে সেটিও মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল। ইমাম ইবনে হাব্বান (রহ) তিনি এর একজন বর্ণনাকারী আমর ইবনে শামিরকে "শীয়া" আখ্যায়িত করে বলেছেন, এই লোক সাহাবীদের গালমন্দ করত। দেখুন, ইবনে হাব্বান রচিত আল-মাজরূহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন, বিস্তারিত দেখুন ইমাম যাহাবী রচিত মীযানুল ইতিদাল ২/২৬২। ইমাম নাসায়ী (রহ) 'আদ-দ্বু'আফা ওয়াল মাতরূকীন' কিতাবে লিখেছেন, এই ব্যক্তি মাতরূকুল হাদীস তথা হাদীসের জগতে পরিত্যাজ্য। ইমাম ইবনে আবী হাতিম এবং ইমাম বুখারী (রহ) উনারাও বলেছেন, এই লোক মুনকারুল হাদীস তথা হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য।

সনদের আরেকজন রাবী হচ্ছেন জাবির ইবনে ইয়াজিদ আল-জা'ফী। ইবনে হাব্বান (রহ) লিখেছেন, এই ব্যক্তি ইহুদী বংশোদ্ভূত আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা এর দলভুক্ত ছিল। সে হযরত আলী (রা) সম্পর্কে পুনঃজন্ম হবার আকিদা রাখত। সে বলত, আলী দুনিয়াতে পুনঃবার জন্মিবেন। দেখুন, তাহযীবুত তাহযীব : ১/২৮৫, লিখক ইবনে হাজার আসকালানী (রহ)।

ইমাম সুফিয়ান আস সাওরী, ইমাম হুমাইদী, ইমাম বুখারী, ইমাম মুহাম্মদ বিন সালমান বিন ফারিস প্রমূখ সবাই বলেছেন, এই ব্যক্তি "পুনঃজন্ম" (ভ্রান্ত) মতবাদে বিশ্বাসী ছিল। আর ইমাম আবু হানীফা (রহ) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আমি জাবির আল জা'ফী অপেক্ষা অতি মিথ্যাবাদী আর কাউকে দেখিনি। (দেখুন ইবনে আবী আদী রচিত 'আল কামিল ফী দ্বু'আফায়ির রিজাল' খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ১১৩)। এবার বলুন, যেই বর্ণনার সাথে নবী করিম (সা) এর কোনো সম্পর্ক নেই কিংবা যার সনদ নানা কারণে দুর্বলও, সেটি কিভাবে দলিলযোগ্য হতে পারে? দারেকুতনী কিতাবের হাদীসটির Screenshot নিম্নরূপ

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (এবারও তিনি এর কোনো জবাব দিতে পারলেন না)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব দারে কুতনীর সম্পূর্ণ বর্ণনাটির যেই অনুবাদ করে গেছেন প্রথমে তা দেখুন : "আমাদের মাহদীর সত্যায়নের জন্য দুটি নিদর্শন নির্ধারিত আছে। আসমান জমিন যখন থেকে সৃষ্টি হয় তখন থেকে এই দুটি নিদর্শন কোনো দাবিদারের সময় প্রকাশিত হয়নি। আর সেটি হচ্ছে মাহদী দাবিদারের সময় চন্দ্র তার গ্রহণের তিন রাত্রির প্রথম রাত্রিতে অর্থাৎ ১৩তম রাত্রিতে গ্রহণ লাগবে। সূর্য তার গ্রহণের দিনগুলোর মাঝখানের দিনটিতে অর্থাৎ ২৮ তারিখে গ্রহণ লাগবে। যখন থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে কোনো দাবিদারের জন্য মতৈক্য হয়নি যে, তার দাবীর সময় রমাদ্বানের উক্ত তারিখেই চন্দ্রগ্রহণ আর সূর্যগ্রহণ হয়েছেই।" (অনুবাদ শেষ হল)। দেখুন কাদিয়ানী রচিত 'আঞ্জামে আথহাম দ্বমিমাহ ৪৬; রূহানী খাযায়েন ১১/৩৩০।

এখন আমার জানার বিষয় যে, মির্যা সাহেবের উক্ত অনুবাদের মধ্যে "মাহদী দাবিদারের সময় চন্দ্র তার গ্রহণের তিন রাত্রির প্রথম রাত্রিতে অর্থাৎ ১৩তম রাত্রিতে গ্রহণ লাগবে।... সূর্য তার গ্রহণের দিনগুলোর মাঝখানের দিনটিতে অর্থাৎ ২৮ তারিখে গ্রহণ লাগবে" - এই দীর্ঘ অংশটি দারেকুতনী'র বর্ণনাটির কোন কোন লাইনের অনুবাদ? উনাকে মনগড়া অনুবাদ করার এই স্বাধীনতা দিয়েছে কে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি এর জবাবটাও এড়িয়ে যান)। কিন্তু রমাদ্বানের প্রথম রাত্রিতে চন্দ্রগ্রহণ হওয়াটা অবৈজ্ঞানিক। তেমনি রমাদ্বানের পনের তারিখে সূর্যগ্রহণ হওয়াটাও। সুতরাং হাদীসের উদ্দেশ্য সেটাই যা মির্যা সাহেব উল্লেখ করে গেছেন। অর্থাৎ চন্দ্রগ্রহণ হবে ১৩ তারিখে আর সূর্যগ্রহণ হবে ২৮ তারিখে। যেটি ইতিপূর্বে আসমান জমিন সৃষ্টি হওয়া থেকে আজ অব্ধি সংঘটিত হয়নি। সে হিসেবে ১৩১১ হিজরীতে মির্যা সাহেব মাহদী দাবী করলে উক্ত গ্রহণ দুটি শুধুই সেই সময়টিতে (১৮৯৪ ইং) সংঘটিত হয়।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি তাহলে নিজেই স্বীকার করলেন যে, দারেকুতনীর বর্ণনাটির বক্তব্য পুরোই অবৈজ্ঞানিক! তাহলে এমন একটি অবৈজ্ঞানিক ও পরিত্যাজ্য বর্ণনা কিভাবে ইমাম মাহদীর আলামত হয়?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো জবাব না দিয়ে বললেন)। এই জন্যই আমরা একে ব্যাখ্যা দিই যে, তার উদ্দেশ্য হল উক্ত গ্রহণ দুটি যথাক্রমে রমাদ্বানের ১৩ এবং ২৮ তারিখে হবে যা ইতিপূর্বে এভাবে আর কখনো সংঘটিত হয়নি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনার ইতিহাস জ্ঞান খুবই নগণ্য দেখা যাচ্ছে। দারেকুতনী'র বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনে আলী'র এই বক্তব্যটি সহীহ ধরে নিলে তার যাহেরী অর্থই গ্রহণ করতে হবে। তখন আপনাদের নিকট নিচের প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব থাকেনা। তার কারণ, গত অষ্টাদশ শতাব্দীতে হিজরীর ১২৬৭ (১৮৫১ইং) হতে হিজরী ১৩১১ (১৮৯৫ইং) এর ভেতর মাত্র চুয়াল্লিশ বছরের ব্যবধানে একই রমাদ্বানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ঘটনা পাঁচবার ঘটেছিল। যথা ১৮৫১, ১৮৭২, ১৮৭৩, ১৮৯৪ এবং ১৮৯৫ সাল। (কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পাক্ষিক আহমদী ১৫ই এপ্রিল ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ সংখ্যাতেও একথাগুলো স্বীকার করা হয়েছে। অবাক হবার কথা যে, একই রমাদ্বানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ঘটনা রাসূল (সা) এর যুগ থেকে আমাদের এই যুগ [২০০১ইং] পর্যন্ত ১০৯ বার সংঘটিত হয়। কাদিয়ানিদের পাক্ষিক আহমদী'র ২৪ নং পৃষ্ঠার ২ এর কলাম দ্রষ্টব্য। তারিখ ১৫ই এপ্রিল ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ - অনুবাদক)। এমতাবস্থায় বর্ণনাটির ভাষ্য : آيتين لم تكونا (আয়াতাঈনি লাম তাকূনা) 'এমন নিদর্শনদ্বয় যা ইতিপূর্বে আর সংঘটিত হয়নি' - এর কী হবে? কারণ ইতিহাস বলছে, এরূপ গ্রহণের ঘটনা ইতিপূর্বে বহুবার ঘটেছিল! ফলে বুঝা গেল, এই ধরণের গ্রহণ নিতান্তই প্রাকৃতিক ও একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সুতরাং দারেকুতনীর বর্ণনাটি এ মর্মে পুরোই গুরুত্বহীন প্রমাণিত হল কিনা?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি চুপসে গেলেন। আর কোনো জবাব দিলেন না।)

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা আপনার কথায় ফিরে আসি। আপনি লিখেছেন : হাদীসের উদ্দেশ্য সেটাই যা মির্যা সাহেব উল্লেখ করে গেছেন। তাহলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। রূহানী খাযায়েন এর ২২ নং খণ্ডের ২০৩ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, মির্যা সাহেব বলেছেন "বরং হাদীসের উদ্দেশ্য হল, কোনো নবুওত বা রেসালত দাবীদারের সময়টিতে কখনো এই দুটি গ্রহণ একত্রিত হয়নি।" এখন আমার প্রশ্ন হল, মির্যা সাহেব ১৮৯৪ বা ১৮৯৫ সালে চন্দ্র সূর্যগ্রহণের সময়টিতেও কি নবুওত বা রেসালতের দাবিদার ছিলেন? জবাবটা আপনি দেবেন নাকি আমি দেব? Screenshot দেখুন

পর্ব ৫

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি কিছু বলছেন না!)

প্রফেসর মতিন খালেদ : আমরা মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের 'মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত' পুস্তক থেকে তথ্য পাই যে, চন্দ্রসূর্যগ্রহণের ঘটনার তিন (০৩) বছর পরে অর্থাৎ ১৮৯৭ সালে মৌলভী গোলাম দস্তগীর সাহেবের একটি প্রশ্নের জবাবে মির্যা কাদিয়ানী সাহেব একখানা ইশতিহার (প্রজ্ঞাপন) প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি নবুওত দাবীদারের প্রতি স্পষ্টভাবে অভিশাপ দিয়ে লিখেছেন :- ﺍﻥ ﭘﺮ ﻭﺍﺿﺢ ﺭﮨﮯ ﮐﮧ ﮨﻢ ﺑﮩﯽ ﻧﺒﻮﺕ ﮐﮯ ﻣﺪﻋﯽ ﭘﺮ ﻟﻌﻨﺖ ﺑﮩﯿﺠﺘﮯ ﮨﯿﮟ অর্থাৎ এটা সুস্পষ্ট যে, আমরাও নবুওত দাবীদারের উপর লানত (অভিশাপ) বর্ষণ করে থাকি। (রেফারেন্সঃ মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ২/২৯৭-২৯৮; একই গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২নং পৃষ্ঠাতেও দেখা যেতে পারে। ইনসাফের দৃষ্টিতে বিচার করুন, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ১৮৯৭ সালেও নবুওত দাবীদারের প্রতি লানত বর্ষণ করতেন বলে জানা যাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ১৮৯৪/৯৫ সালে একই রমাদ্বানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময়টিতে মির্যা সাহেব নিজেও নবুওত এবং রেসালতের দাবীদার ছিলেন না। এমতাবস্থায় দারেকুতনী'র বর্ণনাটি তারই ব্যাখ্যামতে তার মাহাদিয়তের পক্ষে দলিল হয় কিভাবে? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (শাহিদ বশির কাদিয়ানীর সারা শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। দুই চোখ লালবর্ণ ধারণ করল। কোনো জবাবই দিতে পারলেন না!)

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনারা মির্যা কাদিয়ানী সাহেবকে ইমাম মাহদী মানেন। অথচ মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেও "ইমাম মাহদী" হওয়া অস্বীকার করতেন।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : অসম্ভব! এটা আপনার ভুল ধারণা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তাহলে এক্ষুনি প্রমাণ করে দিচ্ছি! মির্যা সাহেব লিখেছেনঃ "স্মরণ রাখা চাই যে, মুসলমানদের আদিম ফেরকাটি এমন একজন মাহদীর জন্য অপেক্ষমান যিনি ফাতেমা (রাঃ) এর সন্তানের মধ্য থেকে হবেন। এমনকি এমন একজন মাসীহ'র জন্যও অপেক্ষমান যিনি ইমাম মাহদীর সাথে মিলিত হয়ে ইসলাম বিরোধীদের মোকাবেলায় লড়াই করবেন। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলছি, এসব ধারণা পুরোই অনর্থক, বাতিল আর মিথ্যা। এরূপ ধারণামূলক বিষয় যারা বিশ্বাস করে তারা মারাত্মক ভ্রান্তিতে আছে। এ ধরণের মাহদীর অস্তিত্ব একটি কাল্পনিক অস্তিত্ব যা অজ্ঞতা আর ধোকা বশত মুসলমানদের মাঝে চালু রয়েছে। সত্য তো এটাই যে, বনী ফাতেমা হতে কোনো মাহদী আগমন করবেনা। আর এই সংক্রান্ত সব হাদীস জাল এবং ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। সম্ভবতঃ আব্বাসীয় শাসনামলে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল।" (রূহানী খাযায়েনঃ ১৪/১৯৩)।

মির্যা সাহেব আরো লিখেছেনঃ "মাহদী এবং মাসীহে মওঊদ এর ব্যাপারে আমার এবং আমার জামাতে আহমদিয়া'র বিশ্বাস হচ্ছে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত যত হাদীস আছে সেগুলো কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়।" (হাকীকাতুল মাহদীঃ ৩; রূহানী খাযায়েন ১৪/৪২৯-৩০)।

তিনি আরো লিখেছেন "বিশিষ্টজনদের মতে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব কোনো অকাট্য বিষয় নয়।" (ইযালায়ে আওহাম ৪৫৭; রূহানী খাযায়েন ৩/৩৪৪)।

এখন আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন, মির্যা সাহেব তাহলে নিজেকে কিসের ভিত্তিতে "ইমাম মাহদী" মনে করতে পারেন যেখানে তিনি নিজেই ইমাম মাহদী সংক্রান্ত সকল হাদীসের প্রতি কঠোরভাবে অনাস্থা পোষণ করলেন? তিনি যেন এও বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত বিষয়টি কথিত বিশিষ্টজনদের ন্যায় তার মতেও "অকাট্য" কিছু না! এমতাবস্থায় তিনি নিজে না "ইমাম মাহদী" আর না তাকে গ্রহণ কিংবা ত্যাগ করলে ঈমান আর কুফুরের প্রশ্ন আসতে পারে, তাই নয় কি?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কাদিয়ানী মুরুব্বী শাহিদ বশির সাহেবের চোখ যেন কপালে উঠে গেল। তিনি এতটা লজ্জিত হচ্ছিলেন আর চেহারা এতখানি ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল; ফলে দেখার মত ছিল! তিনি বরাবরই চুপ থাকলেন)।

পর্ব ৬

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ছিলেন একজন খুনি মাহদী!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কিভাবে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : আমি কিছু ডকুমেন্ট দেব। তবেই মির্যা কাদিয়ানী খুনি মাহদী ছিল কিনা বুঝবেন! মির্যা সাহেবের "তাযকিরাহ" (৪র্থ এডিশন) বইয়ের ৪৪৬ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে "তারপর ১৮ ই মার্চ ১৯০৫ ইং আমার জ্বর হয়েছিল। অত্যধিক যন্ত্রণার সাথে প্রস্রাব হত। প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে খুন আসা শুরু হত। এমনকি বহু খুন নির্গত হত।"

তারপর রূহানী খাযায়েন এর ১৭/৪৫২ দেখুন। সেখানে আরো লিখা আছে "সামান্য কিছুদিন পর মুন্সী এলাহী বখশ এর নিকট ইলহাম হয়, ইয়ুরীদূনা আন ইয়ারাও ত্বমছাকা অর্থাৎ এই লোকেরা তোমার (মির্যা) মাসিকের খুন দেখতে চাচ্ছে।"

তারপর রূহানী খাযায়েন এর ২২/২৪৬ দেখুন। সেখানে আরো লিখা আছে "একবার আমি শূলবেদনায় মারাত্মক অসুস্থ হই এবং ষোল দিন পর্যন্ত আমার পায়খানার রাস্তা দিয়ে খুন যেতে থাকে। এটি এতই মারাত্মক বেদনা ছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।" এখন আপনিই বলুন, কাদিয়ানের মাহদীর প্রস্রাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে অস্বাভাবিক কায়দায় খুনের বন্যা বয়ে গেলে এবং প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বেরুনো খুন "মাসিকের খুন" নামে ইলহাম হলে এমতাবস্থায় মির্যা সাহেব অন্তত এসব কারণে হলেও একজন "খুনি মাহদী" হয়ে যাচ্ছেন কিনা?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললেন। জবাব দেয়ার মত যেন ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেন না!)

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, "মাহদী" অর্থ কী?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মাহদী অর্থ 'হিদায়াত ইয়াফতা' তথা হিদায়াতপ্রাপ্ত। তার মানে তিনি শিক্ষাদীক্ষা লাভ করবেন কেবলই আল্লাহ'র কাছ থেকে।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তো ইনসান (মানুষ) থেকেও শিক্ষাদীক্ষা নিয়েছিলেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : না, তিনি কোনো ইনসান থেকে কিছু শিক্ষা নেননি। একথা তিনি নিজেই লিখে গেছেন। তার নিজের ভাষায় : 'কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা যে, আমি কোনো ইনসান থেকে কুরআন, হাদীস বা তাফসীরের একটি পাঠও পড়েছি কিংবা আমি কোনো মুহাদ্দিস মুফাসসিরের ছাত্রত্ব গ্রহণ করেছি'। (রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৯৪) সুতরাং মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের কোনো ওস্তাদ (শিক্ষক) ছিল না।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু রূহানী খাযায়েন এর ১৩নং খণ্ডের ১৭৯-১৮১ পৃষ্ঠাব্যাপী লিখা আছে, মির্যা সাহেবের বয়স যখন ছয় বছর তখন তাকে একজন ফার্সিভাষী শিক্ষক পাঠদান করেছিল। তিনি তাকে পবিত্র কুরআন এবং কয়েকটি ফার্সি কিতাবও পড়িয়েছেন। যার নাম ছিল ফজলে ইলাহী। তারপর বয়স যখন দশের কৌটায় পৌঁছে তখন ফজলে আহমদ নামের আরেকজন শিক্ষক মির্যা সাহেবকে পাঠদান করেন। যিনি আরবীভাষী ছিলেন। মির্যা সাহেব উনার কাছ থেকে আরবী শব্দপ্রকরণ শাস্ত্র (সরফ)'র কয়েকটা বই আর বাক্যপ্রকরণ শাস্ত্র (নাহু)'র কতিপয় নিয়মাদি শিখেছিলেন। তারপর বয়স যখন সতেরো কিবা আঠারো তখন তিনি গুলআলী শাহ নামের আরেকজনের ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয় পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজা থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় দীক্ষা নেয়ার সুস্পষ্ট বয়ানও দিয়ে রাখেন। (সারাংশ)।

এখন বলুন, তিনি কিভাবে কোনো ইনসান থেকে কুরআন শিক্ষা নিলেন না! কিভাবে তিনি কোনো ইনসানের ছাত্রত্ব গ্রহণ করলেন না!

(মতিন খালেদ সাহেব তিনি শাহিদ বশির কাদিয়ানীকে লক্ষ্য করে শেষে এও বললেন) স্মরণ রাখা দরকার যে, মির্যা কাদিয়ানী একজন অপদার্থ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। সে শিয়ালকোটের মুখতিয়ারি পদে চাকুরীর জন্য পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষায় ফেলও করেছিল। একথা লিখা আছে খোদ তারই পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ রচিত বই 'সীরাতে মাহদী' এর ১ম খণ্ডের ১৫৬ নং পৃষ্ঠায়।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (এইসব রেফারেন্স আর বাস্তবতার মধ্যে যখন কোনো পার্থক্য পেলেন না, তখন শাহিদ বাশির কাদিয়ানীর চেহারার উপর একধরণের ভয়ানক ভীতির চাপ দেখা গেল)।

পর্ব ৭

প্রফেসর মতিন খালেদ : এ তো সামান্যই। মির্যা সাহেব মিথ্যা বলাতে যে কেমন পটু ছিলেন তা কেউ তার লিখনী না পড়লে বিশ্বাসই করবেনা। তিনি লিখেছেন اگر قرآن نے میرا نام ابن مریم نہیں رکہا تو میں جہوٹا ہوں অর্থাৎ যদি কুরআন শরিফ আমার নাম ইবনে মরিয়ম না রাখে তাহলে আমি মিথ্যাবাদী। (রূহানী খাযায়েন ১৯/৯৭-৯৮)। অধিকন্তু মির্যা কাদিয়ানীর জীবন জিন্দেগী স্টাডি করে জানা গেছে যে, তার মায়ের নাম মরিয়ম ছিল না, বরং চেরাগ বিবি ছিল। আপনি কুরআনের সেই আয়াতটা বের করুন যেটিতে আল্লাহতায়ালা মির্যা কাদিয়ানীকে "ইবনে মরিয়ম" (মরিয়মের ছেলে) বলেছেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (প্রশ্ন শুনে শাহিদ বাশির কাদিয়ানী একদম খামুশ বনে গেলেন)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল বেশি। কিন্তু মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত মানুষটিকে নিচের নীতিবাক্যগুলোও আওড়াতে খুব দেখা গেছে । মির্যা সাহেব লিখেছেন - جہوٹ بولنا مرتد ہونے سے کم نہیں অর্থাৎ মিথ্যা বলা মুরতাদ হওয়ার চেয়ে কম নয়। (রূহানী খাযায়েন ১৭/৫৬)

মির্যা সাহেবের বইতে আরো আছে وہ کنجر جو ولدالزنا کہلاتے ہیں وہ بہی جہوٹ بولتے ہوئے شرماتے ہیں অর্থাৎ জারজ পোলাপানও মিথ্যা বলতে শরম পায়। (রূহানী খাযায়েন ২/৩৮৬)

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন جہوٹ بولنا اور گوہ کھانا ایک برابر ہے অর্থাৎ মিথ্যা বলা আর গু-খাওয়া এক সমান। (রূহানী খাযায়েন ২২/২১৫)। এভাবে আরো উল্লেখ করা যাবে। তো এবার মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের বই থেকে তার যে সমস্ত বক্তব্য ইতিপূর্বে আপনাকে উল্লেখ করে দেখালাম সেগুলো মিথ্যা হলে তিনি নিজেই নিজের ফতুয়ায় কী সাব্যস্ত হচ্ছেন? মির্যা সাহেব নিজের অসংখ্য মিথ্যার কারণে মুরতাদ সমতুল্য, জারজ পোলাপান চেয়েও অধম কিংবা গু-খোর সাব্যস্ত হলেন কিনা?

শাহিদ বাশির সাহেব! মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি 'রূহানী খাযায়েন' এর ২০নং খন্ডের ৪০ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখা আছে حدیثوں سے ثابت ہوتا ہے کہ اس مسیح موعود کی تیرھویں صدی میں پیدائش ہوگی اور چودھویں صدی میں اس کا ظہور ہوگا অর্থাৎ হাদীস সমূহ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, এই মাসীহে মওঊদ ত্রয়োদশ শতকে জন্মিবেন এবং চতুর্দশ শতকে তার প্রকাশ হবে।

এখন আমাকে কি সেই হাদীসগুলো দেখাতে পারবেন যেখানে এধরণের কোনো কথার ন্যূনতম প্রমাণও পাওয়া যাবে? মির্যা সাহেব বহুবচনে حدیثوں শব্দ লিখে গেছেন। তার মানে এধরনের কথাবার্তা তিন বা ততোধিক হাদীসে আছে। কাজেই আপনাকে আমার সবিনয় অনুরোধ যে, আমার এতগুলো লাগবেনা; স্রেফ একটিমাত্র হাদীস দেখান! তবেই মির্যা সাহেব মিথ্যাবাদী হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন !

এবার জেনে নিন, নিজের কথাকে হাদীসের নামে চালিয়ে দেয়া ব্যক্তি নিশ্চিতই জাহান্নামী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন من كذب على متعمدا فليتبو مقعده من النار অর্থাৎ "যে জেনেবুঝে আমার নামে মিথ্যাচার করে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়।" (বুখারী, কিতাবুল ইলম)।

মির্যা সাহেবকে সত্যবাদী প্রমাণ করতে না পারার অর্থই হল, সহীহ বুখারীর উক্ত হাদীসের আলোকে তিনি নিশ্চিতই একজন জাহান্নামী। আর আপনিও মেনে নিবেন যে, কোনো জাহান্নামী আদৌ মাসীহ কিবা ইমাম মাহদী হতে পারেনা!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি বরাবরের মত কথাগুলো শুনেই যাচ্ছেন। প্রতিউত্তর করার মত যেন ভাষা আগেই হারিয়ে পেলেছেন। মির্যার বইতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এধরণের সস্তা কথাবার্তার সংখ্যা যে অগণিত, তিনি যেন তা আজই উপলব্ধি করছেন)।

পর্ব ৮

প্রফেসর মতিন খালেদ : আগেও জেনেছেন যে, মির্যা কাদিয়ানী মিথ্যা বলাতে খুবই অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি তার বইতে লিখেছেন صحيح بخاری کی وہ حدیثیں جن میں آخری زمانہ میں بعض خلیفوں کی بہت خبر دی گئی ہے ۔خاص کر وہ خلیفہ جس کی نسبت بخاری میں لکھا ہے کہ آسمان سے اس کی نسبت آواز آئےگی کہ هذا خليفة الله المهدي اب سوچو کہ یہ حدیث کس پایہ اور مرتبہ کی ہے جو اسی کتاب میں درج ہے جو اصح الكتب بعد كتاب الله ہے۔

অর্থাৎ "সহীহ বুখারীর হাদীস সমূহে শেষ যামানার বেশ কয়জন খলিফা সম্পর্কে বহু তথ্য দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বুখারীতে এমন একজন খলিফা সম্পর্কে লিখা আছে যে, আকাশ থেকে তার সম্পর্কে আওয়াজ ভেসে আসবে هذا خليفة الله المهدي তথা ইনি-ই আল্লাহর খলিফা ইমাম মাহদী। এবার ভেবে দেখ! এই হাদীস কতটা উচ্চ মর্যাদার! এটি এমন একটি কিতাবে এসেছে বিশুদ্ধতার বিচারে যার অবস্থান আল্লাহর কিতাবের পরে।" (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৩৭)।

এখন আমাকে প্রমাণ করুন যে বুখারীর কোন খন্ডের কোন অধ্যায়ে এই হাদীস আছে? ব্যাপারটিকে মির্যার ইজতিহাদি ভুল বলাও ঠিক হবেনা। কারণ, তিনি বুখারীর নাম বলেই থেমে যাননি, বরং আরো বলেছেন যে, এটি এমন একটি কিতাব বিশুদ্ধতার বিচারে পবিত্র কুরআনের পরেই যার অবস্থান। তো যেই লোক সহীহ বুখারীর নাম ভেঙ্গে মানুষকে ধোকা দিতে পারে সে নবুওত আর মাহদী দাবীদার সেজে মানুষকে ধোকা দেয়নি তা কিভাবে বলা যায়?

মির্যা সাহেবের বইতে লিখা আছে "সুস্পষ্ট কথা হল, কেউ যখন তার কোনো একটি কথায় মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়ে যায় তখন তার অপরাপর আর কোনো কথার গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা।" (রূহানী খাযায়েন ২৩/২৩১; চশমায়ে মা'আরেফত ২২২; রচনাকাল ১৯০৭ইং)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : হযরত ইবরাহীম (আঃ) তিনিও তিনখানা মিথ্যা বলেছিলেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : নাউযুবিল্লাহ। আপনি কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীকে রক্ষা করতে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রতি মিথ্যার অপবাদ দিচ্ছেন! আল্লাহর একজন মনোনীত ও পবিত্র নবীর সাথে আপনাদের এইরূপ উক্তি সুস্পষ্ট অবমাননাকর। আপনার অভিযোগের জবাবে আমি লম্বালম্বি কোনো বিতর্কে যেতে চাইনা। পবিত্র কুরআনের ভাষায় আপনার উক্ত অবমাননাকর উক্তির খণ্ডন করতে সূরা মরিয়মের ১১ নং আয়াতের অনুবাদ করে দিচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন انه كان صديقا نبيا "নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন একজন সত্যবাদী ও নবী।"

এখন আপনাকে আমার প্রশ্ন, আল্লাহতায়ালা যাঁকে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতে "সত্যবাদী" বললেন আপনি কিভাবে তাঁর উপর মিথ্যার কাদা ছিঁটাতে পারেন? আপনার পরকাল নিয়ে কি একবারও ভয় হল না? আপনি রূহানী খাযায়েন এর ৫নং খণ্ডের ৫৯৮ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখুন, ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রতি মিথ্যার আপবাদ আরোপকারীকে মির্যা নিজেও "খবিস" আখ্যা দিয়েছেন।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ও প্রসঙ্গ পালটিয়ে বললেন) মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের সত্যবাদিতার প্রমাণ তার সকল ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণতা লাভ করেছিল। তার সত্যতার পক্ষের নিদর্শন এর চেয়ে বেশিকিছু আর কী হতে পারে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেবের ভবিষ্যৎবাণীগুলো শুধুশুধু ভুল আর মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি, বরং মির্যার স্বীকারোক্তি ছিল যে, "এটা সুস্পষ্ট যে, আমার সত্যবাদিতা আর মিথ্যাবাদিতা যাচাইয়ের জন্য আমার ভবিষ্যৎবাণীগুলো অপেক্ষা আর কোনো নিখুঁত কষ্টিপাথর থাকতে পারেনা।" (রূহানী খাযায়েন ৫/২৮৮)।

তিনি আরো লিখেছেন "যদি প্রমাণিত হয়ে যায় যে, আমার শত ভবিষ্যৎবাণীগুলোর মধ্য হতে একটিও মিথ্যা, তাহলে আমি স্বীকার করে নেব যে, আমি একজন মিথ্যাবাদী।" (রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৬১; আরবাঈন ৪/১১৯; রচনাকাল ১৯০০ ইং)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তিনি তার সবকয়টি মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তার সব ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ হয়েছিল।

প্রফেসর মতিন খালেদ : পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফরমান, فلا تحسبن الله مخلف وعده رسله أن الله عزيز ذو انتقام অর্থাৎ (হে নবী) তুমি কখনো আল্লাহতায়ালাকে তাঁর রাসূলদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী মনে করো না। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (ইবরাহীম ৪৭)। এবার এই আয়াতের আলোকে আপনি মির্যা সাহেবের এমন একটি ভবিষ্যৎবাণী উল্লেখ করে প্রমাণ করে দেখান যে সেটি বাস্তবে পূর্ণতা লাভ করেছিল! কারণ আয়াত বলছে আল্লাহতায়ালা তাঁঁর কোনো রাসূলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মির্যা সাহেব ভবিষ্যৎবাণী করে বলেছিলেন 'দুটি বকরী জবেহ হয়ে যাবে'।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তার এই ভবিষ্যৎবাণী কোন ভাষায় ছিল? তার কোন বইতে এটি লিখা আছে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : জানি না, তবে তিনি এরকম একটা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এটুকু জানি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কি আশ্চর্যের বিষয়! আপনি কি মুনাজিরায় আসেননি? তাহলে কেন 'জানিনা জানিনা' বলছেন? আচ্ছা ঠিক আছে। আমি রেফারেন্স দিচ্ছি। মির্যা সাহেবের উক্ত কথিত ইলহামি ভবিষ্যৎবাণীটা 'বারাহীনে আহমদিয়া'র ১ম খণ্ডের ৬১০ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে। (রূহানী খাযায়েন ১/৬১০ দ্রষ্টব্য)। তো এবার বলুন, এই ভবিষ্যৎবাণী কাদের উদ্দেশ্যে ছিল?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : জামাতে আহমদিয়ার দুইজন ধর্মপ্রচারকের উদ্দেশ্যে ছিল। যাদের একজন আব্দুল লতিফ আরেকজন আব্দুর রহমান। তৎকালীন আফগান সরকার এদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। দুটি বকরী জবেহ হয়ে যাবে - এ কথা বলে ইহাই উদ্দেশ্য ছিল।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু উক্ত ভবিষ্যৎবাণীতে উল্লিখিত বকরি দুটি'র ব্যাখ্যায় মির্যা সাহেব 'আঞ্জামে আথহাম' (রচনাকাল ১৮৯৬ইং) বইয়ের ৫৭ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, دو بکریاں ذبح کی جائیں گی پہلی بکری سے مراد مرزا احمد بیگ ہوشیار پوری ہے اور دوسری بکری سے مراد اسکا داماد ہے অর্থাৎ দুটি বকরী জবেহ হয়ে যাবে। প্রথম বকরি দ্বারা উদ্দেশ্য মির্যা আহমদ বেগ হুশিয়ারপুরী এবং দ্বিতীয় বকরি দ্বারা উদ্দেশ্য তার জামাতা (মুহাম্মদী বেগমের স্বামী সুলতান মুহাম্মদ)। (রূহানী খাযায়েন ১১/৩৪১ দ্রষ্টব্য)। Screenshot দ্রষ্টব্য।

তাহলে এবার মির্যা সাহেবের এই ভবিষ্যৎবাণীটাও কিভাবে পূর্ণতা লাভ করল বুঝিয়ে দিন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (শাহিদ বশির কাদিয়ানী পুরোই লা-জবাব। তিনি এতক্ষণে হয়ত বুঝে গেছেন যে, গোটা আহমদিয়ত তথা কাদিয়ানিয়ত কতটা ভেল্কি আর অগণিত ফুটোর মোড়কে আবৃত! চটকদার তাবীল আর রূপকের কাসুন্দিই যার প্রাণ! কিন্তু মিথ্যা তো একদিন বিলুপ্ত হবেই)।

পর্ব ৯

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তিনি কথিত ইলহামের নাম ভেঙ্গে ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে বললেন "আমি মক্কায় অথবা মদীনায় মৃত্যুবরণ করব।" (তাযকিরাহ, চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫০৩)। Screenshot দেয়া হল।

আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে, মির্যার এই ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। কারণ তার মৃত্যু হয়েছিল পাকিস্তানের লাহোরে আহমদী বিল্ডিংয়ে ২৬ ই মে ১৯০৮ সালে। আপনি এর কী জবাব দেবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : জামাতে আহমদিয়ার তাবীল মতে এখানে "মৃত্যু" বলতে আহমদী জামাত অচিরেই মক্কা-মদীনার উপর জয়লাভ করাই উদ্দেশ্য।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এইরকম তাবীল (ব্যাখ্যা) জগতের সর্বাপেক্ষা জঘণ্য ধোকা আর মিথ্যা। দুনিয়ার কোনো অভিধানে "মৃত্যু" অর্থ "বিজয়" উল্লেখ পাওয়া যায় না। যদি মৃত্যু মানে বিজয় হয় তাহলে আজই সকল কাদিয়ানী যেন বিষ পান করে। যাতে মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের বিজয় হয়ে যায়! এবার মির্যার বইতে "তাবীল" সম্পর্কে একটা নীতিমালা দেখে নিন।

মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন "যদি সকল শব্দের তাবীল করা হয় তবে ভবিষ্যৎবাণীর কিছুই আর থাকেনা। উপরন্তু বিরুদ্ধবাদীদের নিকট এটি হাস্যকরে পরিণত হয়। কারণ ভবিষ্যৎবাণীর সকল স্বকীয়তা এবং ইংগিত আপনা যাহেরী শব্দের সাথেই লাগোয়া থাকে। ভবিষ্যৎবাণীকারীর উদ্দেশ্য এটাই থাকে যে, মানুষ সেই প্রমাণগুলো স্মরণ রাখবে এবং তাকে একজন দাবিকারী সত্যবাদীর মানদণ্ডে রাখবে। কিন্তু তাবীল দ্বারা তো এসব প্রমাণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে! আর একথা নিশ্চিত ও সঠিক যে, নুসূসকে (কুরআন হাদীস) সর্বদা তাদের যাহেরী অর্থে গ্রহণ করা উচিত। প্রত্যেক শব্দের তাবীল বিরুদ্ধবাদীকে আকর্ষণ করেনা। কেননা সেভাবে কোনো মোকাদ্দমার ফয়সালাই হতে পারেনা।" (রূহানী খাযায়েন ১৭/১৬১)।

দীর্ঘ বিবরণ দ্বারা বুঝা গেল, ভবিষ্যৎবাণীর সকল স্বকীয়তা এবং ইংগিত আপনা যাহেরী শব্দের সাথেই লাগোয়া থাকে। সুতরাং মির্যায়ী নীতিমালা মেনেও বলা যেতে পারে যে, মির্যা সাহেবের "মক্কা কিবা মদীনায় মৃত্যুবরণ করার ভবিষ্যৎবাণী" যাহেরি অর্থেই ধর্তব্য হবে। কাজেই মক্কা বা মদীনার বিপরীতে পাকিস্তানের লাহোরে মির্যার মৃত্যু হওয়াটাই প্রমাণ করে তার ইলহাম মিথ্যা এবং ভবিষ্যৎবাণীটাও বানোয়াট।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি চুপচাপ বসে রইলেন। প্রতিউত্তর করার ভাষাই যেন হারিয়ে ফেললেন!)

প্রফেসর মতিন খালেদ : রূহানী খাযায়েন এর ১৫ নং খণ্ডের ২০১ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে মির্যা সাহেবের উপর ইলহাম হয়েছিল "বিকরুন ওয়া ছায়্যিবুন"। মির্যা সাহেব বললেন, খোদাতায়ালার ইচ্ছে যে, দুজন নারীর সাথে তার বিবাহ সংঘটিত হবে। তন্মধ্যে একজন কুমারী আর অপরজন বিধবা। কুমারীর সাথে বিবাহের ইলহাম পূর্ণতা পেয়েছে। এখন তিনি বিধবার সাথে বিবাহের ইলহাম পূর্ণ হবার অপেক্ষায়। (মির্যার বক্তব্যের সারাংশ)।

এবার আমার প্রশ্ন হল, মির্যা সাহেবের সাথে কোন বিধবা নারীটার বিবাহ হয়েছিল, তার নামও বা কী ছিল প্রমাণ করুন! কারণ, মির্যা কাদিয়ানীর কুমারী স্ত্রী নুসরাত জাহানের পর মির্যার সাথে আর কোনো নারীরই বিয়ে হয়নি। তাহলে মির্যার ভবিষ্যৎবাণী বিধবা নারীর সাথে বিবাহের কথিত ইলহাম ডাহা মিথ্যা সাব্যস্ত হল কিনা?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (খামুশ হয়ে গেলেন। জবাব দিতে পারলেন না)।

পর্ব ১০

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি কিন্তু জেনেবুঝেই মির্যা কাদিয়ানী সম্পর্কে আপনার আকিদাগুলো গোপন রাখছেন! আপনি মির্যাকে ইমাম মাহদী ছাড়াও আরো অনেক কিছু মানেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : না, আমি আমার আকিদা মোটেও গোপন করছিনা। আমি মির্যাকে শুধুমাত্র ইমাম মাহদী মানি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি তো মির্যা আর তার ছেলেদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বইও পড়েননি। কাজেই মির্যা সাহেব নিজেকে কী কী দাবী করে লিখে গেছেন আপনি সে সম্পর্কে অবগত না থাকলে তাকে কিসের ভিত্তিতে শুধুই ইমাম মাহদী মানেন বলে জোর দিতে পারেন?

মির্যা সাহেব তার বইয়ের পাতায় পাতায় নিজেকে "মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ" হবার দাবী করে গেছেন। সুতরাং কোনো কাদিয়ানী যখন কলেমা শরিফ পাঠ করেন তখন সেখানে "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" বলতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেই উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে। এর চেয়ে নিষ্ঠুরতম রাসূল অবমাননা আর কী হতে পারে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আমরা মির্যা সাহেবকে "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" মনে করিনা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনিই হয়ত মানেন না। যেজন্য আপনাকে অসংখ্য মুবারকবাদ। কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী আর তার পুত্ররা তাদের বইগুলোতে যেসব কিছু লিখে গেছেন আপনি সে সম্পর্কে কী বলবেন? এমন ব্যক্তিকে আপনি রাসূল অবমাননাকারী ও ইসলাম থেকে খারিজ মানবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আমার মনে হয় না যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার বইতে এধরনের কোনো কথা লিখতে পারেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব এধরনের কথা অবশ্যই লিখেছেন। মির্যা কাদিয়ানীর 'এক গলতি কা ইযালা' বইটির ৩নং পৃষ্ঠা খুলে দেখুন। আপনি রূহানী খাযায়েন এর ১৮ নং খণ্ডের ২০৭ নং পৃষ্ঠাটিও খুলে দেখুন। তিনি লিখেছেন پہر اسی کتاب میں اسی مکالمہ کے قریب ہی یہ وحی اللہ ہے محمد رسول الله والذين معه أشداء على الكفار رحماء بينهم اس وحی الٰہی میں میرا نام محمد رکہا گیا اور رسول بہی۔

অর্থাৎ অতপর এই কিতাবে এই কথপোকথনের সন্নিকটেই আল্লাহর এই ওহী "মুহাম্মাদ আল্লাহর একজন রাসূল এবং তাঁর সাথীগণ কাফেরদের ব্যাপারে খুবই কঠোর আর নিজেদের মধ্যে অত্যন্ত সদয়" আল্লাহর এই ওহীতে আমার নাম মুহাম্মাদ রাখা হয়েছে এবং (আমাকে) একজন রাসূল বলেও সম্বোধন করা হয়েছে। (অনুবাদ সমাপ্ত হল)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : না না, এই বই মির্যা সাহেবের হতে পারেনা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনার ভাবসাব বলে দিচ্ছে, আপনি নিজেও এধরনের কথাবার্তাকে চরম আপত্তিকর মনে করছেন। সে যাইহোক, যদি এই কিতাব মির্যা সাহেবের লেখিত না হয় তাহলে আপনি একটু কষ্ট করে এই সাদা কাগজটিতে লিখে দিন, এই কিতাবের লিখক যিনি কিংবা এধরনের আকিদা যার সে মিথ্যাবাদী, অভিশপ্ত এবং ওয়াজিবুল কতল ও একজন জাহান্নামী।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি লিখেও দিলেন না আবার কোনো জবাবও দিতে চাইলেন না।)

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব লিখে গেছেন "মাই খোদ মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ হোঁ।" অর্থাৎ আমি-ই স্বয়ং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ। (রেফারেন্স উপরে দেখুন)। আর এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মির্যা সাহেবের পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ। যাকে মির্যা সাহেব 'কমরুল আম্বিয়া' (নবীদের চন্দ্র) উপাধি দিয়েছিলেন। (রূহানী খাযায়েন ৫/২৬৬ দ্রষ্টব্য)। এবার ব্যাখ্যায় চলুন!

মির্যা বশির আহমদ এম. এ লিখেছেন ہم کو نئے کلمہ کی ضرورت پیش نہیں آتی کیونکہ مسیح موعود نبی کریم سے کوئی الگ چیز نہیں ہے جیسا کہ وہ خود فرماتا ہے کہ صار وجودى وجوده نیز من فرق بيني وبين المصطفى فما عرفني ومارى اور یہ اس لیے ہے کہ اللہ تعالٰی کا وعدہ تھا کہ وہ ایک دفعہ اور خاتم النبیین کو دنیا میں مبعوث کرے گا جیسا کہ آیت و آخرين منهم سے ظاہر ہے ۔ پس مسیح موعود خود محمد رسول اللہ ہے جو اشاعت اسلام کے لئے دوبارہ دنیا میں تشریف لائے ۔اسلئے ہم کو کسی نئے کلمہ کی ضرورت نہیں ۔ ہاں اگر محمد رسول اللہ کی جگہ کوئی اور آتا تو ضرورت پیش آتی ۔

অর্থাৎ আমাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। কারণ মাসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী) নবী করীম (সাঃ) থেকে ভিন্ন কেউ না। তিনি নিজেও বলতেন, আমার সত্ত্বা তাঁর সত্ত্বাতে পরিণত। তিনি আরো বলে গেছেন 'যে ব্যক্তি আমার আর মুহাম্মদের মাঝে পার্থক্য করে সে না আমাকে দেখল আর না আমাকে চিনল। এসবের কারণ হচ্ছে আল্লাহর ওয়াদা ছিল যে, তিনি খাতামুন নাবিয়্যীনকে আরো একবার পৃথিবীতে প্রেরণ করবেন। যেমন আয়াত 'ওয়া আখারীনা মিনহুম' দ্বারা প্রকাশ। সুতরাং মাসীহ মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী) তিনিই মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ যাকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার প্রেরণ করেছেন। যেজন্য আমাদের নতুন আর কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ (নতুন কলেমার) প্রয়োজন তখনি হত যদি মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর স্থলে অন্য কেউ আগমন করত। (দেখুন, কালিমাতুল ফছল পৃষ্ঠা নং ১৫৮; মির্যা বশির আহমদ এম. এ)। Screenshot দেয়া হল।

এভাবে বহু প্রমাণ দেয়া যেতে পারে যেখানে মির্যা সাহেব স্পষ্টতই নিজেকে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ হবার দাবী করে গেছেন। (আরো দেখুন, কালিমাতুল ফছল পৃষ্ঠা ১০৪-১০৫)।

অধিকন্তু আমরা মুসলমানগণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুধু একজনকে বিশ্বাস করি। যিনি খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আরাবী ওয়া মাক্কী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার রাওজা শরীফ মদীনায় সবুজ গম্বুজের নিচে অবস্থিত। আমরা মির্যাকে মুহাম্মদ স্বীকার করিনা। ফলে তার দৃষ্টিতে আমরা দেড়শত কোটি মুসলমান সবাই কাফের, জাহান্নামী! নাউযুবিল্লাহ।

এবার জেনে নিন মির্যা কাদিয়ানীকে প্রত্যাখ্যানকারী মুসলমানদের ব্যাপারে মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ কিরকম ফতুয়াবাজি করলেন!

তিনি লিখেছেন "এখন মু'আমালা পরিস্কার যে, যদি নবী করীম (সাঃ)-কে অস্বীকার করা কুফুরী হয় তাহলে মাসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)-কেও অস্বীকার করা কুফুরী হওয়া চাই। কারণ মাসীহে মওঊদ নবী করীম (সাঃ) থেকে ভিন্ন আর কেউ নন, বরং সে তিনি-ই। যদি মাসীহে মওঊদকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফের না হয় তাহলে নাউযুবিল্লা নবী করীমের অস্বীকারকারীও কাফের নন। কেননা এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, প্রথমবার প্রেরণকালে তাঁর অস্বীকার করা কুফুরী ছিল কিন্তু দ্বিতীয়বার প্রেরণকালে যখন তাঁর রূহানী শক্তি পরিপূর্ণ এবং মজবুত ছিল; উনার অস্বীকার করা কুফুরী নয়!" (দেখুন কালিমাতুল ফছল পৃষ্ঠা নং ১৪৬-৪৭)।

এখন বলুন, আপনি বললেন মির্যা সাহেবকে 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' মানেন না, অথচ খোদ মির্যা কাদিয়ানী আর তার পুত্র বশির আহমদ স্ব স্ব বইতে মির্যা কাদিয়ানীকে দৃঢ়ভাবে 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বলে আখ্যা দিয়ে গেছেন। এবার আপনি এর সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন? এমন খতরনাক ব্যক্তিকে অনুসরণ করলে আপনার নিজের ঈমানের কী হাশর হবে তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (লা-জবাব। তিনি যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়লেন! এধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুকাবেলায় তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।)

দ্বি-পাক্ষিক বিতর্ক আলোচনার বাকী অংশ এই লিখাটির পরবর্তী ধারাবাহিক সিরিজগুলো থেকে দেখে নিন! সম্পূর্ণ লিখাটি 'কাদিয়ানী থেকে ইসলামে' নামে বই আকারে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি পেতে যোগাযোগঃ ০১৮১২-৫৬১৮২৪

লেখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ - ফেনী

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.