![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
ফ্যাক্টঃ শেষ নবী!! কাদিয়ানিদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের নিরসন
প্রশ্নঃ ঈসা (আঃ) আবার আগমন করলে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ নবী থাকেন কিভাবে?
উত্তরঃ অনলাইনে জনৈক কাদিয়ানী আমাকে হুবহু এই প্রশ্নই করেছিল। আমি তখন তার উক্ত প্রশ্নের উত্তরে বললাম, হযরত ঈসা (আঃ) তো হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের আগেই নবুওত লাভ করেছিলেন। এমতাবস্থায় উনার পুনঃ আগমন দ্বারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের দফতরের সীল কি খুলে যাবে? ঈসা (আঃ) কি আবার এসে আবার নবী হবেন? উনি প্রতিউত্তরে বললেন, তা মানলাম কিন্তু ঈসা (আঃ) আবার আসলে তখন তো তিনি-ই সর্বশেষ নবী হয়ে যাচ্ছেন!
প্রত্যুত্তরে বললাম, আপনার জ্ঞানের দুর্বলতা তো এখানেই। কারণ আপনি শেষনবী বলতে মনে করেছেন সব নবীর শেষে যিনি আগমন করবেন তিনি-ই শেষনবী, হোক তিনি আগের কোনো পুরাতন নবী! অথচ এটি সর্বশেষ নবীর প্রকৃত সংজ্ঞা নয়। বরং "সর্বশেষ নবী" বা খাতামুন নাবিয়্যীন বলতে বুঝাবে এমন নবীকে যিনি সবার শেষে নবুওত লাভ করেছেন। এবার বুঝে থাকলে বলুন, ঈসা (আঃ) পুনরায় এসে আবার নবুওত না পাওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে শেষ নবী হয়ে যাচ্ছেন?
একথাগুলো আমার নিজের বানানো কোনো কথা নয়। তাফসীরে কাশশাফ এর খণ্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ৫৪৫ খুলে দেখুন। ইমাম যামাখসারী (রহঃ) লিখেছেন معنى كونه آخر الأنبياء انه لا ينبأ أحد بعده و عيسى ممن نبي قبله و حين ينزل عاملا علي شريعة محمد، مصليا إلي قبلته، كأنه بعض أمته অর্থাৎ "তিনি (মুহাম্মদে আরাবী) সর্বশেষ নবী একথার অর্থ হচ্ছে তাঁর পরে অন্য আর কাউকে নবী বানানো হবেনা। অধিকন্তু ঈসা (আঃ)-কে উনার আগেই নবী বানানো হয়েছে। আর তিনি (ঈসা) যখন পুনঃ আগমন করবেন তখন তিনি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শরীয়তের উপর একজন আমলকারী হবেন এবং তাঁর কেবলার দিকেই সালাত আদায়কারী হবেন। যেমন নাকি তিনিও অপরাপর উম্মতগণের মত একজন উম্মতী।" (অনুবাদ শেষ হল)।
এবার প্রশ্ন থাকে যে, তাহলে তিনি কী হিসেবে পুনঃ আগমন করবেন? জবাব হল, সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়ার ৩২৬৪ নং হাদীসে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঈসার পুনঃ আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে বলে গেছেন 'হাকামান আদালান' তথা তিনি একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে পুনঃ আগমন করবেন। খুব খেয়াল করুন, তিনি "নাবিয়্যান" তথা নবী হিসেবে আগমন করবেন বলেননি। অথচ নাবিয়্যান বললে তখন 'হাকামান আদালান' বলার কোনো প্রয়োজনই ছিলনা। যেহেতু সব নবীই ন্যায়পরায়ন। এতে সূক্ষভাবে ইংগিত দেয়া হয়েছে যে, ঈসা (আঃ) যদিও একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে পুনঃ আগমন করবেন, যেহেতু ন্যায়পরায়ন শাসক হওয়ার জন্য নবী হওয়া শর্ত নয়, তবে কিন্তু তিনি নতুন করে আবার নবুওতপ্রাপ্ত হবেন না। হাদীসে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ "হাকামান আদালান" উল্লেখ করার পেছনে আসল রহস্য এটাই।
ভিন্ন বাক্যে যদি বলি তাহলে বলতে পারি, ঈসা (আঃ)-এর পুনঃ আগমন হবে শুধুমাত্র একজন "উম্মত" হিসেবে। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কথিত নবী মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের বইয়ের এক জায়গায় পরিস্কার লিখা আছে যে, অন্য শব্দচয়নে এই বাক্যের অর্থ এটাই হবে যে, "সেই ইবনে মরিয়ম যিনি আগমন করবেন তিনি কোনো নবী হবেন না, বরং শুধুমাত্র উম্মতী লোকদের মধ্য হতে একজন উম্মতী হবেন।" (রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ২৪৯)।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইতে সম্পূর্ণ আলোচনাটি নিম্নরূপঃ
"যদি বল যে, হযরত ঈসা (আঃ)-কে উম্মতী বলে কোথায় সম্বোধন করা হয়েছে? তাহলে জবাবে আমি বলব, সহীহ বুখারীর সেই হাদীসটা দেখ যেখানে (উম্মতী বলার দলিল স্বরূপ) 'ইমামুকুম মিনকুম' বিদ্যমান আছে। এতে সন্দেহ নেই যে, "মিনকুম" এর সম্বোধনে সম্বোধিত তিনি এমন একজন উম্মতী ব্যক্তি যিনি হযরত সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে শুরু করে দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকবেন।
এখন সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সম্বোধিত ব্যক্তিটি শুধুমাত্র একজন উম্মতী ব্যক্তি এবং উম্মতগণের জন্য সুখবর দেয়া হয়েছে যে, ইবনে মরিয়ম যিনি আগমন করবেন তিনি তোমাদের থেকে এবং তোমাদের মধ্য থেকেই সৃষ্টি হবেন। অন্য শব্দচয়নে এই বাক্যের অর্থ এটাই হবে যে, সেই ইবনে মরিয়ম যিনি আগমন করবেন তিনি কোনো নবী হবেন না, বরং শুধুমাত্র উম্মতী লোকদের মধ্য হতে একজন উম্মতী হবেন।" (রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ২৪৯)।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহ'রও এই বিশ্বাস যে, ঈসা (আঃ) আবার আসলে তিনি পুনরায় নবী হবেন না। যাদের বিশ্বাস যে, তাঁকে পুনরায় নবুওত দেয়া হবে তারা যেন বলতে চাচ্ছে যে, তাঁর কাছ থেকে পূর্বের নবুওত ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাই তাঁকে নতুনভাবে নবী বানানো হবে! নাউযুবিল্লাহ! এই জঘন্য বিশ্বাস কাদিয়ানীদের হতে পারে, কিন্তু কোনো মুসলমানের হতে পারেনা। আমাদের বুঝতে হবে যে, হযরত ঈসা (আঃ) তিনি শুধুমাত্র বনী ইসরায়েলের জন্য নবী হিসেবে প্রেরিত ছিলেন। তাই পুনঃ আগমনের পর তাঁর পূর্বেকার নবুওত কার্যত আপনা জায়গায় স্থগিত থাকবে। যেহেতু শরীয়তে মুহাম্মদী দ্বারা পূর্বের সব শরীয়ত রহিত হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ তুরস্কের মাননীয় প্রেসিডেন্ট এরদোগান সাহেব যদি বাংলাদেশে আসেন তখন তাঁর পূর্বেকার প্রেসিডেন্টসি বাতিল হয়ে যাবেনা। বড়জোর সময় বা স্থানভেদে তা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
কে জানি বলেছিল, মির্যা সাহেব একথা বলে ইংগিতে নিজেকেই বুঝাতে চেয়েছেন। আমি তখন প্রত্যুত্তরে বললাম, রূহানী খাযায়েন এর ৩ নং খণ্ডের ১৯২ নং পৃষ্ঠায় মির্যা সাহেবের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে আছে এভাবে "এ অধম মাছীলে মওঊদ হবারই দাবিদার। যেটিকে কোনো কোনো কম বুঝদার লোকে 'মাসীহে মওঊদ' মনে করে বসে আসে।" এবার কী বলবেন? হাদীসে কি 'মাছীলে মওঊদ' ধরণের কোনো শব্দ উল্লেখ আছে? উত্তর যদি হয়, না। তাহলে মির্যা সাহেব হাদীসটির ভবিষ্যৎবাণীকৃত সেই ইবনে মরিয়ম কিভাবে হন? ইবনে মরিয়ম আর ইবনে মরিয়মের মাছীল (নকল) কি একই? আপনি আর আপনার ফটো কি একই জিনিস? আপনি খাবার খান তাই বলে কি আপনার ফটোও খাবার খায়? না। তার মানে আপনি আর আপনার ফটো যেমন এক জিনিস নন, তেমনি ইবনে মরিয়ম আর ইবনে মরিয়মের মাছীল (নকল)ও একই জিনিস নন! সে যাইহোক, অন্ততপক্ষে এটুকু তো প্রমাণিত হল যে, মির্যার বইতেও অত্যাসন্ন ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) এর পুনঃ আগমন শুধুমাত্র একজন "উম্মতী" হিসেবে হবে বলে-ই উল্লেখ আছে! তবে হ্যাঁ মির্যা সাহেব যদি পরবর্তীতে নিজেই নিজের বোল পাল্টে পেলেন তাতে কার কী করার আছে!
তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে, বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া'র হাদীসটিতে 'ইবনে মরিয়ম' দ্বারা আসল ইবনে মরিয়ম নয়, বরং রূপক ইবনে মরিয়ম তথা মির্যা কাদিয়ানী উদ্দেশ্য। যদি তাই হয় তাহলে নিচের প্রশ্নটির কী জবাব? রূহানী খাযায়েন এর ৭নং খণ্ডের ১৯২ নং (টিকা) পৃষ্ঠায় মির্যা সাহেব নিজেই লিখেছেন والقسم يدل على أن الخبر محمول على الظاهر لا تأويل فيه و لا استثناء و الا أي فائدة في القسم . অর্থাৎ শপথ (কসম করে কিছু বলা) একথারই প্রমাণ বহন করে যে, নিশ্চয়ই খবর বা হাদীসটি জাহেরী (দৃশ্যমান) অর্থই বুঝাবে। সেখানে কোনো তাবীল (ব্যাখ্যা) চলবে না, ব্যতিক্রম মর্মার্থ নেয়াও চলবেনা। নচেৎ শপথ করে লাভ হী হল? (আরো দেখুন, হামামাতুল বুশরাঃ ১৪)। এখানে আমার প্রশ্নটি হল, বুখারীর হাদীসটিতে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "আল্লাহর শপথ নিশ্চয়ই ইবনে মরিয়ম তোমাদের মাঝে একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে নাযিল হবেন।" তো এবার এই ইবনে মরিয়ম দ্বারা ভারতের মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব উদ্দেশ্য হতে গেলে সেটি রূপক অর্থে চলে গেল কিনা? হাদীসটির 'ইবনে মরিয়ম' (মরিয়মের পুত্র ঈসা) তখন জাহেরী অর্থে থাকল কিভাবে? উপরন্তু রূপকের কাসুন্দি একদিকে মির্যা সাহেবের উপরিউক্ত নীতিবিরোধী যেমন, তেমনি হাদীসে শপথবাক্য থেকেও কোনো লাভ হয়নি। কাদিয়ানিদের নিকট এই প্রশ্নের আদৌ কোনো জবাব নেই।
বিজ্ঞপাঠক! চলমান বিষয়টির ইতি টানার আগে কাদিয়ানীদের প্রতি আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়তে চাই যে, আপনারা আমার উক্ত দীর্ঘ আলোচনার সাথে যদি দ্বিমত পোষণ করতে চান তাহলে এমন একটি হাদীস দেখান যেখানে বলা হয়েছে যে, পুনরায় নবুওত না পাওয়া সত্ত্বেও পুরাতন কোনো নবী পৃথিবীতে পুনঃ আগমন করার দ্বারাও খাতামুন নাবিয়্যীনের খাতামিয়তকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে! দয়া করে চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়ে নগতে ১লক্ষ টাকা পুরস্কার জিতে নেয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না! অন্যথা আল্লাহর ওয়াস্তে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসুন! শপথ করুন, বাকি জীবনে এসব বিভ্রান্তি আর ছড়াবেন না!
প্রসঙ্গক্রমে আমি কাদিয়ানীদেরকে আরেকটি কথা জিজ্ঞেস করতে চাই তা হল, কাদিয়ানীদের উপরিউক্ত মস্তিষ্কপ্রসূত যুক্তি মতে, পুনঃবার নবুওত না পাওয়া সত্ত্বেও হযরত ঈসা (আঃ) পুনঃ আগমন করার দ্বারা যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের খাতামিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবীর কারণে সেই একই যুক্তিতে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর খাতামিয়ত কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? অথচ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবী দাবী করে পরিস্কার লিখেছেঃ ہمارا دعوی ہے کہ ہم نبی اور رسول ہوں অর্থাৎ আমার দাবী আমি নবী এবং রাসূল। (মালফূজাত খন্ড ৫ পৃষ্ঠা নং ৪৪৭; নতুন এডিশন)। এবার সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন? আছেন কেউ এর জবাব দিবেন? মির্যা কাদিয়ানীর নবী এবং রাসূল দাবী করার প্রামাণ্য ডকুমেন্টারি স্কিনশট তারই লেখিত বই 'মালফূজাত' থেকে এখানে তুলে ধরলাম।
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয় তা হচ্ছে, মির্যা কাদিয়ানীর বইতে ইমাম মাহদী আর ঈসা এঁদেরকে আলাদা দুইজন উল্লেখ করে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে, "মাসীহে মওঊদ, ইমাম মাহদী এবং দাজ্জাল এরা তিনজন পূর্ব দিকেই প্রকাশিত হবে।" (দেখুন, মির্যা কাদিয়ানী রচিত, তোহফায়ে গোলডবিয়া [রচনাকালঃ আগস্ট ১৯০০-১৯০২ইং], রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ১৬৭)।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বই সাক্ষী থাকবে যে, মাসীহে মওঊদ এবং ইমাম মাহদী এরা একই ব্যক্তি নন, বরং এরা দুইজনই আলাদা। অবাক করার ব্যাপার হল, স্ববিরোধী প্রবক্তা মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেকে একই সাথে মাহদী এবং মাসীহ মওঊদ দাবী করার ১০ বছর পরেও বিশ্বাস করতেন যে, মাহদী আর মাসীহে মওঊদ এঁরা আলাদাভাবে দুইজনই। তো কাদিয়ানী সম্প্রদায় কি এর পরেও অসংখ্য সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে গিয়ে এমনকি স্বয়ং মির্যার এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করে বলতে চাইবে যে, ইমাম মাহদী আর ঈসা (আঃ) একই ব্যক্তি!? অন্যথা বলতে বাধ্য যে, মির্যা কাদিয়ানী স্ববিরোধী বক্তা ছিলেন! আর একথা সবাই জানেন যে, স্ববিরোধী বক্তার কোনো কথারই গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা। বিচারের ভার বিজ্ঞপাঠক-পাঠিকার নিরপেক্ষ বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
©somewhere in net ltd.