নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাসূল (সাঃ)-এর নবুওত কবে থেকে নির্ধারিত?

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১৯

রাসূল (সাঃ)-এর নবুওত কবে থেকে নির্ধারিত?

প্রশ্নঃ কাদিয়ানিদের দাবী, রাসূল (সাঃ) সবার শেষে নবুওত প্রাপ্ত হয়েছিলেন - এটা ঠিক নয়! তাদের যুক্তি হচ্ছে, একটি হাদীসে লিখা আছে, হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির পূর্ব থেকে তিনি (সাঃ) 'খাতামুন নাবিয়্যীন' ছিলেন! তাই উনি সবার শেষে নবুওত প্রাপ্ত হন বলেই উনাকে "শেষনবী" বলা হয়, একথা ঠিক না। তাদের মতে সঠিক হল, রাসূল (সাঃ)-এর পরে যেই ঈসার আগমন করার ভবিষ্যৎবাণী আছে তিনি-ই নাকি মূলত "শেষনবী"! এ সম্পর্কে সঠিক মাসয়ালা বুঝিয়ে দিন!

জবাবঃ সত্যি বলতে কাদিয়ানী সম্প্রদায় বিশ্বাসই করে না যে, হাদীসে ভবিষ্যৎবাণীকৃত সেই আসল ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) দুনিয়াতে পুনঃ আগমন করবেন! বরং তারা মনে করে আসল ঈসা মারা গেছেন এবং তাঁর কবর নাকি কাশ্মীরের শ্রীনগরে। অতএব অত্যাসন্ন ইবনে মরিয়ম বলতে রূপক ইবনে মরিয়ম তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী-ই উদ্দেশ্য। (নাউযুবিল্লাহ)। একেই বলে - দুই দুই চার রুটি!! তাদের এরকম গাজাখুরি কথাবার্তা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য।

মূলকথায় ফিরে এলাম। তারা যেই হাদীসটির উপর ভিত্তি করে উপরিউক্ত যুক্তির অবতারণা করে থাকে, সেই হাদীসটির আরবী শব্দগুচ্ছগুলো কিভাবে উল্লেখ আছে তা দেখিয়ে দেব। ফলে বুঝতে পারবেন যে, হাদীসটির প্রকৃত অর্থ কী? কাদিয়ানিরা যেরূপ শব্দচয়নে যুক্তি দাঁড় করে এবং "শেষনবী" এর সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞাকে ভুল আখ্যা দেয়; সেই হাদীসখানা পাঠকদের সামনে অর্থ এবং ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ। তবেই বুঝতে পারবেন যে, ভন্ডনবীর অনুসারী কাদিয়ানী সম্প্রদায় সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে ঈমান নষ্ট করতে কিভাবে হাদীসের ভেতর অর্থের বিকৃতি ঘটিয়ে শয়তানি যুক্তির পিছু নিয়ে থাকে!

'মেশকাত' কিতাবের ব্যাখ্যাকারক "মেরকাত" (হাদীস নং ৫৭৫৮) এর লিখক মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ)-এর কিতাব থেকে হাদীসটি পেশ করা হল। কিতাবটির ১০ম খন্ডে 'কিতাবুল ফাদ্বায়েল ওয়াশ শামায়েল দ্রষ্টব্য। হাদীসখানা নিম্নরূপঃ وعن أبي هريرة ، رضي الله عنه ، قال : قالوا : يا رسول الله ! متى وجبت لك النبوة ؟ قال : وآدم بين الروح والجسد رواه الترمذي অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম (একদা উনাকে) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মাতা ওয়াজাবাত লাকান নাবুওয়্যাতু? তথা আপনার জন্য নবুওত কবে থেকে নির্ধারিত? তিনি (সাঃ) প্রত্যুত্তরে বললেন, ওয়া আদামু বাইনার রূহি ওয়াত ত্বীন। তথা যখন আদম পানি এবং মাটির মাঝে নিহিত (তখন থেকে আমার জন্য নবুওত নির্ধারিত)। (অনুবাদ শেষ হল)। এবার মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদ মোল্লা আলী কারী (রহঃ) থেকে হাদীসখানার ব্যাখ্যা পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিচে তুলে দিলাম।

الحاشية رقم:
1

( وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قالوا : يا رسول الله ! متى وجبت لك النبوة ) ؟ أي : ثبتت ( قال : وآدم ) أي : وجبت لي النبوة والحال أن آدم ( بين الروح والجسد ) يعني وأنه مطروح على الأرض صورة بلا روح ، والمعنى أنه قبل تعلق روحه بجسده অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম (একদা উনাকে) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মাতা ওয়াজাবাত লাকান নাবুওয়্যাতু? এর অর্থ হল أي : ثبتت তথা আপনার জন্য নবুওত কবে থেকে স্থিরকৃত? রাসূল (সাঃ) উত্তরে বললেন, আমার জন্য নবুওত তখন থেকে (স্থিরকৃত ছিল) যখন আদম পানি এবং মাটির মাঝে নিহিত ছিল। অর্থাৎ যখন আদম রূহ বিহীন মাটিতেই নিক্ষিপ্ত ছিল তাঁর (সাঃ) নবুওত তখন থেকেই স্থিরকৃত ছিল। তার আরেক অর্থ এই যে, নিশ্চয়ই আদমের দেহে রূহ প্রবিষ্ট করার পূর্ব থেকেই নবুওত (তার জন্য) স্থিরকৃত ছিল! (মোল্লা আলী কারীর কৃত ব্যাখ্যার অনুবাদ শেষ হল)। স্কিনশট দেখুন।


সম্পর্কিত আলোচনাঃ- আমি উক্ত হাদীসের অর্থ এবং ব্যাখ্যা দুটোই পেশ করেছি। হাদীসের শব্দগুচ্ছগুলোও কেমন সেটিও দেখিয়ে দিয়েছি। এবার নিরপেক্ষভাবে ভেবেচিন্তে বলুন তো কাদিয়ানিরা হাদীসটির কোন শব্দে এমন কী রসদ পেয়েছে যদ্দ্বারা ওরা রাসূল (সাঃ) সবার শেষে নবুওতপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে ঠাণ্ডা মাথায় চ্যালেঞ্জ করার মত স্পর্ধা দেখায়! ওদের ভাষ্য হল 'রাসূল (সাঃ) নাকি আদমের অস্তিত্ব লাভের পূর্ব থেকেই নবুওতপ্রাপ্ত'। এটা নাকি হাদীসেরই বক্তব্য! হায় হায়! এত জঘন্য বিকৃতি আসমান জমিন কিভাবে বরদাশত করবে? মহান আল্লাহর দরবারে এরা এর কী জবাব দেবে? আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, হাদীসের শুরুতে সাহাবাদের প্রশ্নটি কেমন শব্দচয়নে ছিল! সাহাবীরা প্রশ্ন করেছিলেনঃ متى وجبت لك النبوة ؟ অর্থাৎ আপনার জন্য নবুওয়াত কবে থেকে নির্ধারিত? তো এই নির্ধারিত বলতে কী বুঝাল?

"আমরা বিশ্বাস করি যে, একজন সত্যিকারের মুমিন ব্যক্তি কেয়ামতের দিন হিসেব নিকেশের পর চির শান্তির নীড় জান্নাত লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ; যেটি তার জন্য পূর্ব থেকে আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত।"

একথা বুঝে থাকলে এবার বলুন, নবুওত যেটি রাসূল (সাঃ) এর জন্য পূর্ব থেকে নির্ধারিত ছিল তিনি জন্মের আগেই সেটি লাভ করেছেন বলা যায় কিভাবে? অধিকন্তু নবুওত লাভ করার মাধ্যমে নবীগণ উম্মতের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকেন। তাদেরকে সতর্কবাণী শুনান। হালাল হারামের বয়ান দিয়ে থাকেন। কাজেই রাসূল (সাঃ) যদি জন্মের আগেই নবুওত প্রাপ্ত হয়ে যান তাহলে তিনি কাদের পথপ্রদর্শক হবেন? সতর্কবাণী কাদের শুনাবেন? হালাল হারামের বয়ান কাদের দেবেন? তখন কি তার কোনো উম্মত মজুদ ছিল? ভাবিয়ে তুলে কিনা? কাজে আমাদের বুঝতে হবে যে, নির্ধারিত কোনো বস্তু তৎক্ষনাৎ প্রাপ্ত হওয়াকে বুঝাবেনা। তাই বলব, অভিধান কর শুদ্ধ আর ফেরাও দৃষ্টিভঙ্গী!

তারপর ইরবাছ ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদীস এমন রয়েছে যেখানে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ عن العرباض بن سارية ، رضي الله عنه ، عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - أنه قال إني عند الله مكتوب : خاتم النبيين অর্থাৎ "নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর নিকটে খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম।" খুব খেয়াল করুন, হাদীসে বলা হয়েছে, مكتوب তথা "লিপিবদ্ধ" ছিলাম। হাদীস কিন্তু বলছেনা যে, রাসূল (সাঃ) স্বীয় জন্মের পূর্ব থেকেই খাতামুন নাবিয়্যীন ছিল! বরং বলছে, খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিল। যেন বুঝাতে চেয়েছে যে, উনি (সাঃ) খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে পূর্ব থেকেই মনোনীত তবে তার বাস্তবায়ন হিসেবে প্রকাশ ঘটবে দুনিয়ায় জন্মগ্রহণকরার আরো ৪০ বছর পর। সে যাইহোক, হাদীসগুলোর বর্ণনাভঙ্গি আমাদের ডেকে ডেকে বলছে যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় অসম্ভব মিথ্যাবাদী আর ধোকাবাজ। ওরা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে ঈমান হরণকরার জন্য কুরআন হাদীসে যেভাবে বিকৃতি ঘটায় এবং উদ্ভট ব্যাখ্যা দেয় সেভাবে আর কোনো বাতিল সম্প্রদায়কে দেখা যায় না।

পরিশেষে বলব, কাদিয়ানিরা রাসূল (সাঃ)-এর পরেও অন্য কাউকে শেষনবী সাব্যস্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে "শেষনবী" এর সংজ্ঞার বিরুদ্ধে যেই যুক্তি দাঁড় করে সেটি সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। এর অন্যতম কারণ, এরা যেই হাদীসখানার ভিত্তিতে এজাতীয় যুক্তি প্রদর্শন করে সেটি তাদের যুক্তিকে না অনুবাদগতভাবে সমর্থন করে আর না ব্যাখ্যাগতভাবে। আল্লাহ আমাদেরকে এই সহজ বিষয়টা সহজেই বুঝার যোগ্যতা দিন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.