নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাজ্জালের গাধা ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অনর্থক সংশয় নিরসন

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩২

তথাকথিত দাজ্জালের 'গাধা'র ব্যাখ্যা ও তার খণ্ডন

অনেক আগে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একটি রচনা 'দাজ্জাল ও তার গাধা' বইটি পড়েছিলাম। ওরা যে কত ধূর্ত এবং ভয়ংকর অপব্যাখ্যাদাতা তা সেদিনই প্রথম বুঝলাম। দাজ্জালের গাধা সংক্রান্ত প্রায় ডজনখানেক বক্তব্য তারা বইটিতে নিয়ে এসেছে এবং মনের মাধুরি মিশিয়ে ইচ্ছেমতো বিশ্লেষণ দিয়ে রূপক একটা কনসেপ্টও দাঁড় করে ছেড়েছে। অবাক করা কথা হল, তারা মেশকাত, সহীহ মুসলিম সহ অনেক গুলো কিতাবের নাম ভাঙতেও ভুল করেনি। অথচ ঐ সমস্ত কোনো কথার ইংগিতও কিতাবগুলোর বারান্দায়ও খোঁজে পাওয়া কষ্টকর। সম্ভবত, আশির দশকে নাটোর জেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের অধিবাসী জনৈক কাদিয়ানী প্রেসিডেন্টের ছেলে জনাব আব্দুর রশিদ সরকার তাদের উক্ত জঘন্য মিথ্যা আর প্রতারণা বুঝতে পেরেই কাদিয়ানীবাদকে গুডবাই জানাতে বাধ্য হন।

প্রশ্ন আসতে পারে যে, দাজ্জালের "গাধা" সম্পর্কে কি কোনো বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতও পাওয়া যায়?

আমি এর উত্তরে অত্র লিখাটির একদম শেষে লিখব, ইনশাআল্লাহ। তার আগে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, আমি এই বিষয়ে এই পর্যন্ত যত পড়াশোনা করেছি তার আলোকে বলতে পারি যে, দাজ্জালের "গাধা" সম্পর্কিত যে সমস্ত অলিক কথাবার্তা বিভিন্ন লিটারেচারে পাওয়া যায় তার সিংহভাগই আন-অথেনটিক ও অপ্রমাণিত এবং রেওয়ায়েতগুলো সহীহ নয়। বিশেষত, নু'আইম ইবনে হাম্মাদ (রহ.)-এর কিতাবুল ফিতানে (كتاب الفتن) এ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতের সনদে বেশিরভাগ রাবীই (বর্ণনাকারী) মুহাদ্দিসগণের মতে মিথ্যাবাদী ও পরিত্যাজ্য হিসেবে সাব্যস্ত।

যারা উম্মাহা'র সর্বসম্মত শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে দাজ্জালের বাহক বা 'গাধা'-এর রূপক ব্যাখ্যা দেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল, হযরত উমর (রা.) আজ থেকে ১৪শ বছর আগেই ইহুদী বংশোদ্ভূত "ইবনে ছাইয়াদ" নামীয় এক ব্যক্তিকে (দাজ্জালের কতিপয় বৈশিষ্ট্য তার সাথে মিলে যাওয়াতে) সত্যিকারের 'কানা দাজ্জাল' মনে করেছিলেন! তাই প্রশ্ন আসে, হযরত উমর (রা.) তখন ইবনে ছাইয়াদকে দাজ্জাল মনে করা সত্ত্বেও 'দাজ্জালের গাধা' এর রূপক বাহন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কোনোকিছুরই তলব করলেন না কেন? তিনি কেন বললেন না যে, দাজ্জালের খোঁজ তো পেলাম কিন্তু তার গাধাটা (উড়োজাহাজ, ডুবোজাহাজ ইত্যাদী) কোথায়? জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

এবার প্রশ্ন আসবে, তাহলে দাজ্জালের গাধা শীর্ষক বর্ণনাতে কী এমন আছে? উত্তর হচ্ছে, দাজ্জালের গাধা সংক্রান্ত বর্ণনার একটি পর্যায়ে উল্লেখ আছে যে,

“দাজ্জালের গাধার (বাহনের) মাঝে চল্লিশ গজের দূরত্ব থাকবে এবং এক একটি পদক্ষেপ তিনদিনের ভ্রমণের সমান হবে। সে তার গাধার পিঠে আরোহণ করে সমুদ্রে এমনভাবে ঢুকে যাবে, যেমন তোমরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে পানির ছোট নালায় ঢুকে থাক (এবং নালা পার হয়ে থাক)। সে দাবি করবে, আমি বিশ্বজগতের রব এবং সূর্যটা আমার কথা মত চলছে। তোমরা কি চাচ্ছ যে আমি একে থামিয়ে দেই? তার কথায় সূর্য থেমে যাবে। এমনকি একটি দিন মাস ও সপ্তাহের সমান হয়ে যাবে। এবার সে বলবে, তোমরা কি চাচ্ছ, আমি এটিকে আবার চালিয়ে দেই? লোকেরা বলবে, হ্যাঁ দিন। তখন দিন ঘণ্টার সমান হয়ে যাবে......."।

মূল আলোচনায় ফিরে এলাম,

আমাদের খুব ভালভাবেই মনে রাখতে হবে যে, আকীদা-বিষয়ক যে কোনো ব্যাপারে কোনো কিছু সাব্যস্ত করতে হলে তার সমর্থনে দলিল-প্রমাণ হতে হবে পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস। তার বাহিরে তৃতীয় কোনো উৎস গ্রহণযোগ্য নয়। এবার আসুন জেনে নিই "দাজ্জালের গাধা" সম্পর্কে যেসব আজগুবি কিবা অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা রয়েছে সেগুলো মুসলিম উম্মাহা কেন গ্রহণ করেন না? ঊসূলে হাদীস বা হাদীস শাস্ত্রের অন্যতম একটি সুপ্রসিদ্ধ কিতাব, "তাহযীবুল কামাল"। দাজ্জালের গাধা সম্পর্কিত যেসব অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা বিভিন্ন বইতে রয়েছে মুসলিম উম্মাহা সেগুলো সনদের বিচারে বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তার কারণ এর সবই অপ্রমাণিত এবং বর্ণনাকারীদের অনেকেই "অজ্ঞাত" আর "মিথ্যাবাদী" হিসেবে অভিযুক্ত। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী, ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম আবু যুর'আ এবং ইমাম দারে কুতনী আর ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন সহ বেশ কতেক আইম্মায়ে জারহু ওয়াত তা'দীলগণের মতামত নিচে দেখুন।

দাজ্জালের গাধা সংক্রান্ত উক্ত বর্ণনার সনদের রাবীগণ সম্পর্কে এবার একটু জানুন। আলোচ্য বর্ণনার সনদের রাবীগণ হলেন,

১- আবু উমর (ابو عمر)।
২- ইবনে লাহিয়াহ (ابن لهيعة)।
৩- আব্দুল ওয়াহহাব ইবনে হুসাইন (عبد الوهاب بن حسين)।
৪- মুহাম্মদ ইবনে সাবেত (محمد بن ثابت)।
৫- সাবেত ইবনে আসলাম আল-বানানী (ثابت بن اسلم البناني)।
৬- হারেছ ইবনে আব্দুল্লাহ (حارث ابن عبداللہ) প্রমুখ।

আমরা এখানে সূত্রের উল্লিখিত চারজন বর্ণনাকারীরই জীবন-চরিত্র ও অবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা করব। ফলে সহজেই বুঝতে পারবেন যে, এ ব্যক্তিগুলোর সূত্রে দাজ্জালের "গাধা" সম্পর্কে উল্লিখিত বিবরণসমূহ কতটা গ্রহণযোগ্য?

যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণের মতামত :-

কথিত "দাজ্জালের গাধা" শীর্ষক বর্ণনাটি যাদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তাদের একজনের নাম হচ্ছে - ইবনে লাহিয়াহ। তার পূর্ণ নাম আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়াহ ইবনে উকবাহ। তিনি 'দুর্বল' (তাহযীবুল কামাল)।

তারপর আরও একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন 'আব্দুল ওয়াহহাব বিন হুসাইন'। সে একজন "মাজহূল" তথা অজ্ঞাত ব্যক্তি। হাদীস শাস্ত্রের নীতিমালায় লিখা আছে, কোনো হাদীসের বর্ণনাকারীদের কেউ "অজ্ঞাত" হিসেবে অভিযুক্ত হলে তখন সেই হাদীস গ্রহণযোগ্যতা হারায়। যেহেতু এটিও হাদীসের বিশুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সুতরাং এ ব্যাপারে এখন থেকে আর কাহারো কোনো ধরণের সংশয় থাকতে পারেনা। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অবিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম থেকে আরো ভালভাবে জেনে নেবেন।

তারপর আরেকজন হলেন, মুহাম্মদ ইবনে সাবেত আল-বানানী। (দেখুন, তাহযীবুল কামাল, রাবীর ক্রমিক নং ৬৮৯১)। তার সম্পর্কে ইমাম আবু হাতিম আল-রাযী বলেছেন, এ ব্যক্তির হাদীস "মুনকার" এবং তার বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। উল্লেখ্য, বিশ্বস্ত রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিপরীতে দুর্বল রাবীর বর্ণিত হাদীসকে 'মুনকার হাদীস' বলে। ইমাম বুখারী বলেছেন, তার বর্ণনাতে সমস্যা থাকে। সে বহু আশ্চর্য ধরণের ও উদ্ভট কথাবার্তা বর্ণনা করে। ইমাম আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেছেন, তার বর্ণিত হাদীস পরিত্যক্ত। এরকম কমবেশি ১৪ জন মুহাদ্দিস থেকে উক্তি পাওয়া যায়। যেমন, (যারা আরবী জানেন অনুবাদ করে নিন!)।

1 أبو أحمد بن عدي الجرجاني روى له أحاديث ثم قال: وهذه الأحاديث مع غيرها مما لم أذكرها عامتها مما لا يتابع عليه
2 أبو الفتح الأزدي ساقط
3 أبو حاتم الرازي منكر الحديث، يكتب حديثه ولا يحتج به، ومرة: قال: ليس بقوي
4 أبو حاتم بن حبان البستي يروي عن أبيه ما ليس من حديثه كأنه ثابت آخر لا يجوز الاحتجاج به ولا الرواية عنه على قلته
5 أبو دواد السجستاني ضعيف
6 أبو زرعة الرازي لين
7 أبو عبد الله الحاكم النيسابوري هو عزيز الحديث، ولم يأت بمتن منكر
8 أحمد بن شعيب النسائي ضعيف
9 ابن حجر العسقلاني ضعيف
10 الدارقطني ضعيف
11 عفان بن مسلم الصفار رجل صدوق في نفسه، ولكنه ضعيف الحديث
12 محمد بن إسماعيل البخاري فيه نظر، ومرة: له عجائب
13 يحيى بن معين ليس بشيء، ومرة: ليس بقوي
14 يعقوب بن سفيان الفسوي ليس بالقوي، ومرة: قال: ضعيف

এই বর্ণনার আরেকজন রাবী হচ্ছেন 'হারিছ ইবনে আব্দুল্লাহ'। তাহবীবুল কামাল কিতাবে (রাবী নং ১২০০) তার সম্পর্কে লেখা আছে, সে হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞদের মতে "মুত্তাহিম বিল কিজব (متهم بالكذب)" অর্থাৎ মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত। ইমাম আবু আহমদ ইবনে আদী বলেছেন, তার বর্ণিত বর্ণনাগুলো অনিরাপদ। ইমাম আবু ইসহাক আস-সাবিয়ী বলেছেন, তিনি মিথ্যা বলতেন। ইমাম বায়হাক্বী বলেছেন, তার বর্ণনা দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, এই ব্যক্তি "অজ্ঞাত"। ইমাম আবু হাতিম আর-রাযী বলেছেন, এর বর্ণনা শক্তিশালী নয় এবং সে এমন ব্যক্তিও নন যার বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলিল দেয়া যেতে পারে। ইমাম আবু যুর'আ আর-রাযী বলেছেন, তার বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেন, ইমাম শা'আবী তাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম যোহায়ের ইবনে হারব আন-নাসায়ী বলেছেন, এই ব্যক্তি বহুত বড় মিথ্যুক ছিল। ইমাম আলী বিন মদনী বলেছেন, এই লোক বহুত বড় মিথ্যাবাদী ছিল। মির্যা কাদিয়ানির জন্মেরও আগ থেকে প্রায় ২৭ জন মুহাদ্দিস এ ব্যক্তি সম্পর্কে এরকম বহু অনাস্থা-মূলক উক্তি করে গেছেন। যেমন,

1 أبو أحمد بن عدي الجرجاني عامة ما يرويه غير محفوظ
2 أبو إسحاق السبيعي كذوب
3 أبو بكر البيهقي لا يحتج به، ونقل عن الشافعي أنه مجهول
4 أبو بكر بن أبي داود كان أفقه الناس، وأفرض الناس، وأحسب الناس
5 أبو بكر بن عياش لم يكن الحارث بأرضاهم كان غيره أرضى منه، وكانوا يقولون: إنه صاحب كتب، كذاب
6 أبو حاتم الرازي ليس بالقوي، ولا ممن يحتج بحديثه
7 أبو حاتم بن حبان البستي كان غاليا في التشيع واهيا في الحديث
8 أبو زرعة الرازي لا يحتج بحديثه، ذكره في أسامي الضعفاء
9 أبو عيسى الترمذي فيه مقال، ضعفه بعض أهل العلم
10 أحمد بن شعيب النسائي ليس بالقوي، ومرة: ليس به بأس
11 أحمد بن صالح المصري ثقة ما أحفظه، وما أحسن ما روى عن علي وأثني عليه، قيل له فقد قال الشعبي: كان يكذب، قال: لم يكن يكذب في الحديث إنما كان كذبه في رأيه
12 إبراهيم بن يزيد النخعي اتهم
13 ابن حجر العسقلاني كذبه الشعبي في رأيه، ورمي بالرفض، وفي حديثه ضعف
14 الحسن بن الصباح البزار لا يثبت ما ينفرد به
15 الدارقطني ضعيف، ومرة: إذا انفرد لم يثبت حديثه
16 الذهبي لين شيعي
17 جرير بن عبد الحميد الضبي كان الحارث زيفا
18 زهير بن حرب النسائي كذاب
19 زهير بن معاوية الجعفي كذاب
20 شعبة بن الحجاج لم يسمع أبو إسحاق من الحارث إلا أربعة أحاديث وكذلك قال العجلي وزاد وسائر ذلك كتاب أخذه
21 عامر بن شراحيل الشعبي أشهد أنه أحد الكذابين، ومرة: كان والله كذابا
22 عبد الرحمن بن مهدي ترك حديث الحارث
23 علي بن المديني كذاب
24 عماد الدين بن كثير الدمشقي كان حافظا للفرائض معتنيا بها وبالحساب
25 محمد بن سعد كاتب الواقدي كان له قول سوء، وهو ضعيف في رأيه
26 يحيى بن معين ضعيف، ومرة: ليس به بأس، ومرة: ثقة فيما يرويه عن علي بن أبي طالب
27 يوسف بن موسى كان الحارث الأعور زيفا

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যেহেতু দাজ্জালের গাধা'র উল্লিখিত বিবরণগুলো অথেনটিক সূত্রে প্রাপ্ত নহে তাহলে এর ব্যাখ্যার কী প্রয়োজন? 'দাজ্জাল ও তার গাধা' নামীয় বইটিও বা লিখে শত শত রিম কাগজ অপচয়ের কী অর্থ? অগণিত মিথ্যা আর ধোকার আশ্রয় নিয়ে 'গাধা'-এর স্বরূপ বিশ্লেষণে উড়োজাহাজ, ডুবোজাহাজ আর রেলগাড়ী বলে যতসব গর্দভ টাইপের ব্যাখ্যারও বা কী মানে? ধিক্কার জানাই তাদের, বিশেষ করে কাদিয়ানীদের। কেননা তারা নিজেদের কথিত আধ্যাত্মিক জামাতের অনুসারী দাবী করে অথচ তারা একবারের জন্যও "দাজ্জালের গাধা" সংক্রান্ত রচনাবলিতে সংশ্লিষ্ট বর্ণনার সনদ (সূত্র) প্রকাশ করেনা। আমি মনে করি, সহজ সরল আহমদীদের অন্তরে ওয়াসওয়াসা দিতেই তারা ঠান্ডা মাথায় এইরূপ ধুম্রজাল সৃষ্টি করে থাকেন!

এবার দাজ্জালের 'গাধা' সংক্রান্ত বিশুদ্ধ কিছু বর্ণনা জেনে নিই,

দাজ্জাল একটি গাধার পিঠে চড়ে সারা পৃথিবী বিচরণ করে বেড়াবে। জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, يخرج الدجال في خفقة من الدين وإدبار من العلم، فله أربعون ليلة يسيحها في الأرض اليوم منها كالسنة، واليوم منها كالشهر، واليوم منها كالجمعة، ثم سائر أيامه كأيامكم هذه، وله حمار يركبه عرض ما بين أذنيه أربعون ذراعا.... إلخ، قال الألباني: ضعيف

অর্থ-দ্বীনদারির করুণ অবস্থা এবং ইলমের প্রস্থানলগ্নে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। …তার একটা গাধা থাকবে, যাতে সে আরোহণ করবে। গাধাটির দুই কানের মাঝে দূরত্ব থাকবে চল্লিশ গজ পরিমাণ (ما بين أذنيه أربعون ذراعا)।” (আল-মুসনাদ, ইমাম আহমদ হাদীস নং ১৪৯৫৪; মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ৭/৩৪৬, শায়খ আলবানী বলেছেন, এর সনদ জঈফ)। এখানে কথা হচ্ছে, ইমাম যাহাবীসহ অনেকের মতে হাদীসটির সনদ সহীহ হিসেবে গণ্য হওয়া সত্ত্বেও শায়খ আলবানীর তাহকীক মতে এর সনদও ক্রুটিবিচ্যুতির অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়। যাইহোক, এবার একই ধরনের আরও কয়েকটি বর্ণনা পড়ুন!

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“দাজ্জাল একটি শ্বেত-শুভ্র গাধার পিঠে চড়ে আত্মপ্রকাশ করবে। গাধাটির দুই কানের মাঝে দূরত্ব হবে সত্তর হাত।” (আল-বা‘সু ওয়ান নুশুর, ইমাম বায়হাকী; মিশকাতুল মাসাবিহ)।

হযরত হুযায়ফা ইবনু উসায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“দাজ্জালের মধ্যে তিনটি আলামত থাকবে। সে কানা হবে অথচ তোমাদের রব কানা নন। তার দু’চোখের মাঝে ‘কাফির’ লেখা থাকবে, যা সকল মুমিন পড়তে পারবে—নিরক্ষর হোক কিবা লেখক। গাধা ছাড়া অন্য কোনো পশু তার অনুগত হবে না। ফলে তা হবে নোংরার ওপর নোংরা।” (আল-মুসতাদরাক, ইমাম হাকিম নিশাপুরী)।

আবু তুফায়ল (রহ.) জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন,

“দাজ্জাল একটা নোংরা গাধার ওপর চড়ে আত্মপ্রকাশ করবে।” (আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বা)। ইমাম দাইলামী (রহ.) তার ‘মুসনাদুল ফিরদাউস’ গ্রন্থে উপরিউক্ত বর্ণনাটিকে এই শব্দে বর্ণনা করেন, “অধিক লোমবিশিষ্ট শ্বেত-শুভ্র গাধায় চড়ে…।”

দাজ্জালের গাধা সংক্রান্ত উল্লিখিত রেওয়ায়েতটি ছাড়া আর কোনো রেওয়ায়েতই অথেনটিক নয়। তদুপরি শায়খ নাসির উদ্দীন আল বানী (রহ.) এটিকেও জঈফ (দুর্বল) আখ্যা দিয়েছেন। সে যাইহোক, এখন আমার সেসব কথিত স্কলারদের জিজ্ঞেস করতে চাই, এমতাবস্থায় আপনারা দাজ্জালের "গাধা" এর স্বরূপ বিশ্লেষণে কেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন? কেন উড়োজাহাজ, ডুবোজাহাজ ইত্যাদি রূপক ব্যাখ্যার পেছনে পড়লেন? দাজ্জালের গাধার দুই কানের মধ্যবর্তী দূরত্ব চল্লিশ গজ হওয়ার উক্ত সংবাদটি আপনার নিকট হয়ত বা প্রকৃতবিরোধী মনে হচ্ছে, তাই না? হযরত আদম (আ.)-এর দৈহিক উচ্চতাও কিন্তু ষাট গজ ছিল! এখন তাহলে এই ষাট গজ উচ্চতারও কী রূপক ব্যাখ্যা দেবেন?

আমার প্রিয় ভাই আবু ত্বহা আদনান সাহেবের সম্প্রতি একটি উদ্ভট লেকচার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। তিনি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের তাবৎ একাডেমিক উসূল (নীতিমালা)-কে পাশকাটিয়ে যাইচ্ছেতাই বাগাড়ম্বর করে গেছেন আর কতেম উল্লু কা পাঠা মুরিদান 'মাশা আল্লাহ, জাজাকাল্লাহ' বলে বলে ভাইটির জেহালতকে সাপোর্ট দিয়েছেন! হায় বিবেকবুদ্ধি! হায় মূর্খতা!! অথচ শরীয়তে ইসলামীয়ার উসূল হচ্ছে, কোনো শব্দকে তার প্রকৃত অর্থের বাহিরে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা দেয়া যাবেনা, যতক্ষণ না শব্দটির প্রকৃত অর্থ পূর্ব থেকে প্রত্যাখ্যাত হয় অথবা প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা অসম্ভব হয়। (নূরুল আনওয়া, আল মানার, উসূলুশ শাশী)।

আফসোস! এই আখেরি যুগে অধিকাংশ মানুষ ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার অভাবে যতটা গোমরা হয়ে যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি গোমরা হচ্ছে যার-তার লেকচার নির্বিচারে গ্রহণ করার কারণে।

পরিশেষে বলব, প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! আপনারা সহীহ হাদীসের বিপরীতে এইধরনের উদ্ভট বর্ণনার পেছনে পড়া থেকে বিরত থাকবেন। যেহেতু মুসলিম উম্মাহা প্রথম থেকেই এগুলো প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। অনেক পরিশ্রম করে লিখাটি লিখেছি। আল্লাহ যেন এর অছিলায় আমাকে দোজাহানে কামিয়াবি দান করেন। সবার নেক দোয়ার প্রত্যাশী। ওয়াসসালাম।

(লিখাটি অধিক পরিমাণে শেয়ার করুন)

লিখক,
শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
এডমিন, http://www.markajomar.org

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.