![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
[স্কিনশর্টঃ ইমাম আলী ইবনু হুসামুদ্দীন [মৃতঃ ৯৭৫ হিজরী] সংকলিত হাদীসের কিতাব "আল বুরহান ফী আলামাতে মাহদীয়ে আখিরিয জামান" পৃষ্ঠা নং ৫৭ এবং ১৫৮]
নিচের ১০টি হাদীসের আলোকে "ইমাম মাহদী" আর "ঈসা ইবনে মরিয়ম" উনাদের দুইজনের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের বর্ণনা দেখুনঃ-
(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- এই লেখাটি শুধুমাত্র সেসব আহমদীবন্ধুদের জন্য উপকারী যাদের অন্তরে মির্যা কাদিয়ানীর কথার চেয়ে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের গুরুত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতা বেশি)।
(১) রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- "ইয়ানযিলু ঈসা ইবনু মরিয়াম ফা-ইয়াকূলু আমীরুহুমুল মাহদী তা'আল ছাল্লি বিনা"। অর্থাৎ ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) অবতরণ করবেন অতপর (তদানিন্তন সময়ের উপস্থিত) লোকদের আমীর ইমাম মাহদী বলবেন, আসুন! আমাদের সালাত পড়িয়ে দিন!"
রেফারেন্স - ইমাম আলী ইবনু হুসামুদ্দীন [মৃতঃ ৯৭৫ হিজরী] সংকলিত হাদীসের কিতাব "আল বুরহান ফী আলামাতে মাহদীয়ে আখিরিয জামান" পৃষ্ঠা নং ৫৭ এবং ১৫৮।
(২) রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ "আল মাহদী মিন হাযিহিল উম্মাতি ওয়া হুয়াল্লাযী ইয়ায়ুম্মু ঈসা ইবনা মরিয়াম"। অর্থাৎ ইমাম মাহদী এই উম্মত থেকেই হবেন তিনি ঈসা ইবনে মরিয়মের (নাযিলের পর প্রথম সালাত তথা ফজরের) সালাতের ইমামত করবেন।"
রেফারেন্স - ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী সংকলিত "আল আ'রফুল ওয়ারদী ফী আখবারিল মাহদী" পৃষ্ঠা ১৩৫।
ইমাম আলী ইবনু হুসামুদ্দীন [মৃতঃ ৯৭৫ হিজরী] সংকলিত হাদীসের কিতাব "আল বুরহান ফী আলামাতে মাহদীয়ে আখিরিয জামান" পৃষ্ঠা নং ১৬০। কিতাবের স্কিনশট দেখুন।
(৩) রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- "ইয়ালতাফিতুল মাহদী ওয়া ক্বদ নাযালা ঈসা ইবনু মরিয়ম। কা'আন্নামা ইয়াক্বতুরু মিন শা'রিহিল মায়ু"। অর্থাৎ ইমাম মাহদী লক্ষ্য করবেন ঈসা ইবনে মরিয়ম নাযিল হলেন আর তাঁর মাথা থেকে পানির ফোটা গড়িয়ে পড়ছে।"
রেফারেন্স - ইমাম আলী ইবনু হুসামুদ্দীন [মৃতঃ ৯৭৫ হিজরী] সংকলিত হাদীসের কিতাব "আল বুরহান ফী আলামাতে মাহদীয়ে আখিরিয জামান" পৃষ্ঠা নং ১৬০।
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ আল-ক্বারশী আল-কুনুজী আশ-শাফেয়ী [মৃতঃ ৬৫৮ হিজরী] সংকলিত 'আল-বয়ান ফী আখবারি ছাহিবিয যামান' পৃষ্ঠা নং ৭৭।
(৪) রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ- "ফা ইয়ানযিলু ঈসা ইবনু মরিয়াম আ'ন সালাতিল ফাজরি ফা ইয়াকূলু লাহু ইমামুন্নাস তাক্বাদ্দাম ইয়া রূহাল্লাহ!" অর্থাৎ অতপর ঈসা ইবনে মরিয়ম ফজরের সালাতের সময় অবতরণ করবেন। তারপর (সেই সময়কার) মানুষদের ইমাম (মাহদী) তাঁকে বলবেন, হে রূহুল্লাহ (উল্লেখ্য, ঈসার উপাধি হচ্ছে রূহুল্লাহ) আপনি আরো সামনে বাড়ুন!"
রেফারেন্সঃ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল হাকিম নিশাপুরী সংকলিত "মুসতাদরিক আ'লা আস সহীহাইন" খন্ড নং ৪ পৃষ্ঠা নং ৪৭৮; মুসলিম শরীফের কৃর্ত শর্তে এর সনদ সহীহ - বললেন ইমাম হাকীম রহঃ।
(৫) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "লান তুহলিকা উম্মাতুন আনা ফী আওয়ালিহা ওয়া ঈসা ইবনে মরিয়ম ফী আখিরিহা ওয়াল মাহদী ফী আওসাতিহা।" অর্থাৎ এই উম্মত (উম্মতে মুহাম্মাদিয়া) কখনো ধ্বংস হবেনা। (যেহেতু) আমি এই উম্মতের শুরুতে রয়েছি। শেষে থাকবেন ঈসা ইবনে মরিয়ম আর মধ্যখানে ইমাম মাহদী থাকবেন।
রেফারেন্স - কাঞ্জুল উম্মালঃ খন্ড ১৪ পৃষ্ঠা ২৬৬; সংকলক আলাউদ্দিন আলী আল মুত্তাকী [মৃতঃ ৪৯৯ হিজরী]। আরো দেখুন
ইমাম আলী ইবনু হুসামুদ্দীন [মৃতঃ ৯৭৫ হিজরী] সংকলিত হাদীসের কিতাব "আল বুরহান ফী আলামাতে মাহদীয়ে আখিরিয জামান" পৃষ্ঠা নং ৫৭)। কিতাবের স্কিনশট দেখুন।
(৬) কাঞ্জুল উম্মাল নামক হাদীসের কিতাবে লেখা আছে - "আরাদা বিল ওয়াসাতি মা-ক্ববলাল আখিরি লি-আন্না নুযূলা ঈসা লি-ক্বাতলি দাজ্জাল ইয়াকূনু ফী যামানিল মাহদী ওয়া ইউছাল্লি ঈসা খালফাহু।" অর্থাৎ 'ওয়াসাত' (মধ্যখান) দ্বারা শেষ যামানার পূর্ব মুহূর্তের সময়টি উদ্দেশ্য। কারণ ইমাম মাহদীর যুগেই দাজ্জালকে হত্যা করতে ঈসার অবতরণ হবে এবং তিনি তাঁর (মাহদীর) পেছনে সালাত পড়বেন।" উল্লেখ্য এই হাদীসে পরিস্কার শব্দে يكون في ذمن المهدي و يصلى عيسى خلفه - তথা ইমাম মাহদীর যুগেই ঈসা হবেন এবং তিনি ইমাম মাহদীর পেছনে (প্রথম সালাত) ফজরের সালাত পড়বেন এইরূপ উল্লেখ আছে।
রেফারেন্সঃ কাঞ্জুল উম্মাল খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৩৮৩; হাদীস নং ৭৩৮৪)।
(৭) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "ইয়ানযিলু ঈসা ইবনু মরিয়ম ফা ইয়াকূলু আমীরুহুম তা'আল ছাল্লি বিনা"। অর্থাৎ ঈসা ইবনে মরিয়ম অবতরণ করবেন। অতপর (তদানিন্তন সময়কার উপস্থিত) মুসলমানদের আমীর (ইমাম মাহদী) বলবেন, আসুন, আমাদের সালাত পড়িয়ে দিন।
রেফারেন্স - সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফিতান, পৃষ্ঠা নং ২২৫)।
(৮) হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ " কাইফা আনতুম ইযা নাযালা ঈসা ইবনু মরিয়ম ফী কুম ওয়া ইমামুকুম মিনকুম"। অর্থাৎ (তখন) তোমাদের কেমন হবে যখন ঈসা ইবনে মরিয়ম তোমাদের মাঝে নাযিল হবেন এবং তোমাদের ইমাম (মাহদী) তোমাদের মধ্য হতে হবেন।" উল্লেখ্য, এই হাদীসে 'আকাশ থেকে নাযিল হবেন' এটি উল্লেখ নেই। তবে কমপক্ষে ৪টি সহীহ হাদীস এমন পাওয়া যায় যেখানে "আকাশ" (السماء) শব্দের আরবী 'ছামায়ুন' উল্লেখ আছে। তার অর্থ ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে নাযিল হবেন।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী কিতাবুল আম্বিয়া হা/৩২৬৫।
(৯) হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ " কাইফা আনতুম ইযা নাযালা ঈসা ইবনু মরিয়ম মিনাছ ছামায়ি ফী-কুম ওয়া ইমামুকুম মিনকুম"। অর্থাৎ (তখন) তোমাদের কেমন হবে যখন ঈসা ইবনে মরিয়ম তোমাদের মাঝে আকাশ থেকে নাযিল হবেন এবং তোমাদের ইমাম (মাহদী) তোমাদের মধ্য হতে হবেন।" {খেয়াল করুন, এই হাদীসে আকাশ শব্দের আরবী 'ছামায়ুন' উল্লেখ আছে। তথা ঈসা আকাশ থেকে (من السماء) নাযিল হবেন; এখানে "ইমামুকুম" (امامكم) শব্দ উল্লেখ আছে বটে, তবে এর দ্বারা ইমাম মাহদীকে বুঝাবে কিনা- এটি পরের হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে}।
রেফারেন্স - ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) সংকলিত "কিতাবুল আসমা ওয়াস সিফাত" খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫; হাদীসের মানঃ সহীহ।
(১০) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "ইয়ানযিলু ঈসা ইবনু মরিয়ম ফা ইয়াকূলু আমীরুহুমুল মাহদী, ক্বালা তা'আল ছাল্লি বিনা..."। অর্থাৎ ঈসা ইবনে মরিয়ম অবতরণ করবেন। অতপর মুসলমানদের আমীর ইমাম মাহদী বলবেন, আসুন, আমাদের সালাত পড়িয়ে দিন। প্রতিউত্তরে তিনি (ঈসা) বলবেন, না; নিশ্চয় তোমরা একে অন্যের উপর কর্তৃত্ববান। (এটি) আল্লাহ কর্তৃক এই উম্মতের জন্য এক বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা।" {উল্লেখ্য, এই হাদীসে পরিস্কারভাবে "ঈসা" এবং "মাহদী" দুইজনের নাম ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে উল্লেখ হয়েছে}।
রেফারেন্সঃ আল বুরহানঃ ৫৭ (স্কিনকপি দ্রষ্টব্য); সহীহ মুসলিম শরীফঃ কিতাবুল ফিতান যদিও মুসলিমের হাদীসে اميرهم এর পর المهدي শব্দটি আসেনি। তবে কিন্তু ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহঃ) লিখেছেন, এখানে المهدي শব্দচয়নে হাদীসটির সনদ (বর্ণনাসূত্র) জায়্যিদ (ভাল)। দেখুন, ইবনে কাইয়ুম (রহঃ) রচিত কিতাব "আল মানারুল মুনীফ" পৃষ্ঠা নং ১৪৭-৪৮।
# পরিশেষে বলতে পারি, শুধুমাত্র সহীহ মুসলিম শরীফের হাদিসটি নিয়েও কেউ যদি চিন্তা করে তখন বুঝতে কষ্ট হবেনা যে, ঈসা (আঃ) আর প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী তারা দুজনই। কারণ হাদীসটিতে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ঈসা ইবনে মরিয়ম নাযিল হবেন। তারপরে আরেকটি শব্দ এসেছে "আমীরুহুম" অর্থাৎ সেই সময়কার মুসলমানদের আমীর ঈসাকে বলবেন "তা'আল ছাল্লি বিনা" তথা আসুন, আমাদের সালাত পড়িয়ে দিন। (মুসলিমঃ কিতাবুল ফিতান পৃষ্ঠা ২২৫)। এখন জ্ঞানীমাত্রই চিন্তা করবেন, মাহদী আর ঈসা দুইজন যদি একই হন তাহলে ঈসাকে আহবানকারী "আমীরুহুম" (তাদের আমীর) বলতে সেই আমীরটা কে??? নিশ্চয়ই তিনি "ইমাম মাহদী" ছাড়া আর কেউ নন। যা অপরাপর বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।
কাজে এখন প্রশ্ন আসবে, কাদিয়ানীদের ধারণামতে পবিত্র কুরআনের আলোকে হযরত ঈসা (আঃ) যদি আগেই মৃত্যুবরণ করে থাকেন তাহলে কুরআনের বিপরীতে রাসূল (সাঃ) এই ভবিষ্যৎবাণীগুলো কেন দিয়ে যাবেন? রাসূল (সাঃ) কি কুরআন বিরুধী? নাউযুবিল্লাহ। তাই এখানে কাকে সত্য মনে করবেন? কাদিয়ানীদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে নাকি রাসূলের হাদীসগুলোকে? জ্ঞানীরা ভাবুন!
কাদিয়ানিরা "ইবনে মাজাহ শরীফ" আর "মুসনাদে আহমদ" এই দুটি কিতাব থেকে মাত্র দুইখানা হাদীসের খন্ডাংশের ব্যাখ্যা দিয়ে "ইমাম মাহদী আর ঈসা (আঃ) উনারা মূলত একই ব্যক্তি হবেন" ধারণা করেন। নিচের লিংকটি হতে সবাই একবার হলেও তাদের সেই ভুল ধারণার খন্ডনটুকু দেখে নিন এখানে ক্লিক করুন
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।
©somewhere in net ltd.