![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
(স্কিনশর্ট - মুখতাসার তারীখে দামেস্ক লি-ইবনে আসাকীর খন্ড নং ২০ পৃষ্ঠা নং ১৪২)
হাদীস শরিফে ঈসা (আঃ) এর বয়স ১২০ বছর বর্ণিত থাকা ও সম্পর্কিত অজানা কিছু কথা -
------ প্রিন্সিপাল নুরুন্নবী।
প্রশ্নঃ কোনো সহীহ হাদীসে কি ঈসা (আঃ) এর বয়স ১২০ বছর হয়েছিল মর্মে উল্লেখ আছে?
জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত বিষয়ে আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে ঈসা (আঃ) এর ইহকালীন বয়স এবং তাঁর পুনঃ আগমন সম্পর্কে অতিব সামান্য কিছু দলিল প্রমাণ বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস এবং হাতেগুনে কয়েকজন যুগ ইমামের ভাষ্য হতে জেনে নিন!
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে -
(উচ্চারণ) "হীনা রুফিয়া কানা ইবনু ইছনাঈনিউ ওয়া ছালাছীনা ওয়া সিত্তাতা আশহুরিন।"
অর্থাৎ আল্লাহতালা হযরত ঈসা (আঃ)-কে যখন তুলে নেন তখন তাঁর বয়স ছিল সাড়ে ৩২ বছর। ইবনে আব্বাস থেকে একই হাদীসে আরো রয়েছে -
(উচ্চারণ) "ওয়া আন্নাল্লাহা রাফা'আহু বি-জাসাদিহি ওয়া আন্নাহু হাইয়্যুল আ-ন ওয়া সা-ইয়ারজিয়ু ইলাদ-দুনিয়া ফীহা মালিকান ছুম্মা ইয়ামূতু কামা ইয়ামূতুন নাস"।
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তাঁকে সশরিরে তুলে নিয়েছেন এবং তিনি এখনো জীবিত। অতিসত্বর তিনি পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসবেন। তখন তিনি পৃথিবীতে একজন বাদশাহ (শাসক) হবেন। তারপর তিনি অন্যান্য মানুষের মতই মৃত্যুবরণ করবেন।
রেফারেন্স - আত-তবক্বাতুল কাবীর, লিখক ইবনে সা'আদ (মৃতঃ ২৩০ হিজরী) ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং ৩৫-৩৬; প্রকাশনা, মাকতাবাতুল খানজি, কায়রো মিশর, দ্রষ্টব্য।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস সর্বজন স্বীকৃত যুগ ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহঃ) তিনি তাঁর 'আল-ফাউযুল কাবীর' (আরবী সংস্করণ) কিতাবের ৩৮ নং পৃষ্ঠায় 'আকীদাতু মাছলূবিয়াতিল মাসীহ ওয়া রাদ্দু আলাইহা' শীর্ষক শিরোনামে লিখেছেন و قد شبه لهم و التبس عليهم الأمر فظنوا رفعه الي السماء قتلا অর্থাৎ "তাদের (ইহুদীদের) বিভ্রম হয়েছিল এবং তিনি (আল্লাহতায়ালা) তাদের উপর ব্যাপারটিকে সন্দেহজনক করে দিয়েছিলেন। ফলে তাঁকে (ঈসা) আকাশে উঠিয়ে নেয়াকে তারা (ইহুদীরা) হত্যা করেছে ভেবেছিল।"
সূরা আলে ইমরানের ৫৫ নং আয়াত 'ওয়া রাফিয়ুকা ইলাইয়্যা" এর ব্যাখ্যায় ইমাম মুহাম্মদ তাহির গুজরাটি (রহঃ) তিনি 'মাজমাউল বিহার' কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৩৪ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার করে দিয়ে বলেন 'রাফা'আহু ইলাস সামা-য়ী' অর্থাৎ (আল্লাহতালা ঈসাকে তাঁর নিজের দিকে তুলে নিয়েছেন মানে) তিনি তাঁকে আকাশে তুলে নিয়েছেন।
এরপর 'আল-বাহরুল মুহীত' কিতাবে লেখা আছে 'আন্না ঈসা ফিস-সামায়ী হায়্যুন' অর্থাৎ নিশ্চয় ঈসা তিনি আকাশে জীবিত। (যাইহোক, এ পর্যন্ত সংক্ষেপে)
# কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের আকীদা ঈসা (আঃ) মারা গেছেনঃ
কাদিয়ানীধর্মের প্রবর্তক মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী দাবী করত, ঈসা (আঃ) মারা গেছেন। তাঁর আকাশে জীবিত থাকা সঠিক নয় । তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল যে, তাহলে ঈসা (আঃ)-এর কবর কোথায়? তিনি কখন মারা গেলেন? এসব প্রশ্নের জবাবে মির্যা সাহেব তার রচনাবলীতে পরস্পর বিরোধী অনেক কিছুই লিখে গেছেন। তার মতে, ঈসা (আঃ)-কে ইহুদীরা শূলিবিদ্ধ করে রক্তাত্ত করেছিল। যদিও শূলির উপর তাঁর মৃত্যু হয়নি। অত:পর শূলি থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়ে গোপনে 'কাশ্মীর' চলে যান। তিনি সেখানে আরো ৮৭ বছর বেঁচে থেকে ১২০ বছর বয়সে মারা যান। বর্তমানে কাশ্মীরে তাঁর আম্মা বিবি মরিয়ম এবং ঈসা তাদের দু'জনের কবর রয়েছে। (নাউজুবিল্লা)। তাহলে হাদীসে যে ঈসা (আঃ) এর পুনঃ আগমনের ভবিষ্যৎবাণী এলো এখন তার কী হবে? মৃত ঈসা কি দুনিয়ায় পুনঃ আগমন করার সময় আবার পুনর্জীবন লাভ করবেন?
এর প্রতিউত্তরে মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য হচ্ছে, সেই ঈসা বলতে আসল ঈসা উদ্দেশ্য নয়, বরং একজন নকল ও রূপক ঈসার আগমন উদ্দেশ্য। তো তাহলে সেই নকল ঈসাটা কে? কাদিয়ানী সম্প্রদায় মনে করে, সেই নকল ঈসাটা কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদ! কিন্তু যখন তাদের প্রশ্ন করা হয় যে, ঈসার আগমন যদি পুনঃ আগমন হয় তখন সেই ঈসা দ্বারা মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে উদ্দেশ্য হন? মির্যা সাহেব কি ইতিপূর্বে দুনিয়াতে আরো একবার এসেছিলেন? নতুবা "পুনঃ আগমন" এর কী অর্থ? কবি এখানে নিরব!!! (সংক্ষেপে)।
একজন সচেতন পাঠকপাঠিকা মির্যার লেখাগুলো পড়ামাত্র তার মিথ্যাচার সম্পর্কে সহজে অবগতি লাভ করতে পারবেন। কারণ, নবুওতের দাবিদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৮-১৯০৮ইং) স্বভাবত প্রতারক এবং সত্য গোপনকারী ছিল। তার শেষ কথা বলতে কিছুই ছিলনা। এমন একজন মিথ্যাবাদী প্রতারক যখন বলে যে, "যে আমাকে বিশ্বাস করেনা সে কাফের" (দেখুন রূহানী খাযায়েন ২২/১৬৭) তার সম্পর্কে তখন আমি কী মন্তব্য করব ভাষা খুঁজে পাইনা!
# ঈসা (আঃ)-এর বয়স নিয়ে তার স্ববিরোধী কথাবার্তার কিছু ডকুমেন্টঃ
(১) মির্যা কাদিয়ানী তার লেখার এক জায়গায় লিখেছেন : ক্রুশীয় ঘটনার সময় ঈসার বয়স ছিল আনুমানিক ৩৩ বছর। (মির্যার ৮৩টি বইয়ের ২৩ খন্ডে মুদ্রিত রচনাসমগ্র 'রূহানী খাযায়েন' ১৯/১০৩ দ্রষ্টব্য)। অত্র পৃষ্ঠায় মির্যার কথা অনুসারে ঈসা (আঃ) এর মোট বয়স দাঁড়াচ্ছে ৮৫ বছর। মির্যা কাদিয়ানী সে তার উপরের লেখাটিতে ঈসা (আঃ)-এর একজন হাওয়ারীর নাম "ফেৎরাস" (উর্দু : پطرس) উল্লেখ করেছেন। ঈসা (আঃ)-এর বয়স ক্রুশীয় ঘটনার দিন ৩৩ বছর ছিল। আর তখন সেই "ফেৎরাস" এর বয়স নাকি ৩০ আর ৪০ এর মাঝামাঝিতে (তথা ৩৫ বছর) ছিল। দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৯/১০৩। 'ফেৎরাস' তিনি নাকি স্বীয় ৯০ বছর বয়সে একটি পত্র লিখেছিলেন। পত্রটি লেখার ৩ বছর আগে-ই নাকি ঈসা (আঃ) মারা যান!
এখন হিসেব করে পাওয়া গেল যে, ক্রুশীয় ঘটনার সময় ফেৎরাস নামক হাওয়ারী'র বয়স ৩৫ বছর হলে তার পত্র লেখার তিন বছর আগে ঈসা (আঃ) মাত্র (৩৩+৫২=৮৫) পঁচাশি বছর বয়সে পৌঁছাতে পেরেছেন। তার মানে ঈসা (আঃ)-এর মোট বয়স ৮৫ বছরের বেশি না। {উল্লেখ্য, ৫২ = ৯০-৩৫-৩}। (মির্যা কাদিয়ানির বইয়ের তথ্য মতে)।
যাইহোক এ ছাড়াও মির্যা কাদিয়ানী থেকে ঈসা (আঃ)'র মোট হায়াত সম্পর্কে চরম স্ববিরোধী আরো বহু তথ্য পাওয়া যায়। তার বইয়ের কোথাও লেখা আছে, কথিত ক্রুশীয় ঘটনার পর তিনি [ঈসা] আরো ৮৭ বছর বেঁচে ছিলেন। (রূহানী খাযায়েন ১০/৩০২ দ্রষ্টব্য)। আবার কোথাও মোট ১২৫ বছর লেখা আছে (রূহানী খাযায়েন ১৫/৪৯৯ দ্রষ্টব্য)। আবার কোথাও লেখা আছে, কথিত ক্রুশীয় ঘটনার পর তিনি ৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। অর্থাৎ তিনি মোট (৩৩+৫০) ৮৩ বছর বেঁচে থেকে মারা গেছেন (রূহানী খাযায়েন ১৯/১০৩ দ্রষ্টব্য)। এখানে আগের হিসেবে আরো ৩৭ বছর কম পাওয়া গেল।
প্রিয়পাঠক! এর চেয়ে চরম স্ববিরোধী কথাবার্তা আর কী হতে পারে? মজার ব্যাপার হল, মির্যা সাহেব নিজেই লিখে গেছেন "জোহুটে কে কালাম মে তানাকুয জুরূর হোতা হে" অর্থাৎ মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ২১/২৭৫)।
# ঈসা (আঃ)-এর কবর সম্পর্কে ৫ ধরণের তথ্যঃ
এরপর আসুন, মির্যা সাহেব থেকে তারই লেখনী দ্বারা ঈসা (আঃ)-এর জন্য কাল্পনিক ৫টি ভিন্ন ভিন্ন কবরের তথ্য নিই। মির্যা সাহেব থেকে ঈসা (আ)-এর কবরস্থান যথাক্রমে শামদেশ (সিরিয়ার গ্যালিল), বায়তুল মোকাদ্দাস (ফিলিস্তিন), কাশ্মীরের আশেপাশে (তিব্বত), কাশ্মীরের শ্রীনগরের খান ইয়ার মহল্লাতে এবং সর্বশেষ তার মৃত্যুর ১১ দিন আগে লিখে গেছেন "এক বুজূর্গ কি রেওয়ায়েত চে মাসীহ কি কবর মদীনা কে ক্বরীব হে" অর্থাৎ মাসীহ এর কবর মদীনার নিকটবর্তী কোথাও। (দেখুন রূহানী খাযায়েন ২৩/২৬১)। প্রিয় পাঠক! এতে বুঝা গেল, মির্যা খোদ নিজেই ঈসা (আঃ)-এর কবরস্থান আবিষ্কার করা নিয়ে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। ফলে একই মুখে পাঁচমিশালি তথ্য দিয়ে নিজেই নিজের ভণ্ডামি প্রকাশ করে গেল। খোদার উপর খোদখিরির প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে অবশেষে ১৯০৮ সালের ২৬ মে তাকে কলেরার আপদে আক্রান্ত হয়ে মরতে হল। (সূত্র- হায়াতে নাসীর, পৃষ্ঠা ১৪; লেখক, ইয়াকুব কাদিয়ানী) দুনিয়াবাসীর জন্য এর চেয়ে শিক্ষণীয় আর কী হতে পারে? এবার মূল কথায় ফেরা যাক।
# ঈসা (আঃ) এর বয়স ১২০ বছর হওয়া সম্পর্কিত বর্ণনা সম্পর্কেঃ
এবার জানার বিষয় হল, হযরত ঈসা (আঃ)-এর সর্বমোট বয়স ১২০ সম্পর্কিত গ্রহণযোগ্য কোনো রেওয়ায়েত আছে কিনা? জবাবে বলব, না; গ্রহনযোগ্য এমন কোনো রেওয়ায়েত নেই। এবার হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে মির্যা কাদিয়ানীর অনুসারীরা মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে উক্ত ১২০ বছরের চর্বিতচর্বন কেন করেন? তারা এর সপক্ষে যে রেওয়ায়েতটি পেশ করে তার জবাব কী?
তার জবাব দিতে গেলে বহু কথা বলা লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মির্যায়িদের সাথে এ নিয়ে বহুবার (অনলাইনে) বাহাস করেছি। তাদেরকে একটি বারের জন্যও সম্পূর্ণ রেওয়ায়েতটি তুলে ধরতে দেখিনি। প্রতিবারই তাদেরকে উদ্দেশ্যমূলক খণ্ডাংশটি পেশ করে তর্কাতর্কি করতে দেখেছি। হয়ত প্রশ্ন করবেন যে, সম্পূর্ণ রেওয়ায়েতটি তুলে না ধরার রহস্য কী? জবাবে বলব, রহস্য এটাই যে, ঈসা (আঃ)-এর বয়স ১২০ বছর মর্মে তথ্যটি সঠিক নয় কিসের জন্য এরই সমাধান রয়েছে একই রেওয়ায়েতের প্রথমাংশে।
কিভাবে জানেন? সেখানে পরিষ্কার করে উল্লেখ আছে - "আন্নাহু লাম ইয়াকুন নাবিয়্যুন ইল্লা আ'শা নিছফাল্লাযী কাবলাহু" অর্থাৎ যত নবীই ইতিপূর্বে ছিলেন তাদের সবাই পূর্ববর্তী নবীদের অর্ধেক জীবন লাভ করেছিলেন।
মজার কথা যে, মির্যা কাদিয়ানী নবী রাসূল দাবী করেছিল। (মালফূজাতঃ ৫/৪৪৭; নতুন এডিশন দ্রষ্টব্য)। আমরা জানি, আখেরি পয়গম্বর মুহাম্মদে আরাবী (সাঃ) ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। সে হিসেবে মির্যা কাদিয়ানী যদিও সাড়ে ৩১ বছর বেঁচে থাকার কথা কিন্তু সে বেঁচে ছিল ৭০ বছর। উক্ত রেওয়ায়েতটির প্রথমাংশ মেনে নিলে মির্যা সুস্পষ্ট একজন মিথ্যাবাদী এবং ভন্ড-ই প্রমাণিত হয়। (এ ছিল আসল রহস্য)।
যাইহোক এবার চলুন, তাদের পেশকৃত রেওয়ায়েতটি সম্পর্কে বরেণ্য হাদিস বিশারদগণ কেমন উক্তি করে গেছেন শুনি! তার আগে রেওয়ায়েতটি দেখুনঃ- وأخبرني أنه أخبر بأنه لم يكن نبي كان بعده نبي إلا عاش نصف عمر الذي كان قبله، وأخبرني أن عيسى عليه السلام عاش عشرين ومئة سنة، ولا أراني إلا ذاهباً على ستين، فأبكاني ذلك অর্থাৎ আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমাকে জানিয়েছেন, নিশ্চয় ইতিপূর্বে যত নবী ছিলেন তাদের পরবর্তী নবীগণ তাদের অর্ধেক জীবন লাভ করেছিলেন। আমাকে [আরো] জানালেন, নিশ্চয় ঈসা (আঃ) ১২০ বছর জীবন-যাপন করেছিলেন। আমি মনে করি ষাট বছরের মাথায় আমি বিদায় হয়ে যাব। (কথাগুলো শুনে) আমি কান্না শুরু করে দিই " (হাদীসের মান - দুর্বল ও মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য)।
এবার দেখার বিষয় যে, কাদিয়ানিরা তাদের মতের পক্ষে রেওয়ায়েতটির কোন অংশটি পেশ করে থাকে! হ্যাঁ সত্য গোপনকারী ভয়ংকর এ প্রতারক জামাত নিচের খণ্ডিত অংশটুকু যত্রতত্র পেশ করে থাকে। কিন্তু যখনি তাদের প্রতারণা ধরা পড়ে তখনি অপ্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। যাতে প্রসঙ্গ এড়িয়ে রক্ষা পাওয়া যায়! খণ্ডিত অংশটুকু এই যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্নিত আছে : أن عيسى عليه السلام عاش عشرين ومئة سنة অর্থাৎ নিশ্চয় ঈসা (আঃ) ১২০ বছর জীবন-যাপন ছিলেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বর্ণনাটি একে তো মুনকার ও শাজ, তদুপরি এর কোনো একটি শব্দও এমন না যদ্দ্বারা ঈসা (আঃ)-কে মৃত সাব্যস্ত করা যেতে পারে। বড়জোর এর দ্বারা এটুকু প্রশ্ন উঠে যে, তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পূর্বে তিনি দুনিয়াতে কত বছর জীবন-যাপন করেছিলেন; ১২০ বছর নাকি মাত্র অনূর্ধ্ব ৩৩ বছর! 'ফতহুল বারী' কিতাবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এই রকমই লিখেছেন।
এবার চলুন বরেণ্য হাদীস বিশারদগণ এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কী বললেন শুনি! (১) হাফিজ নূরুদ্দীন আল হাইতামী (রহঃ) বলেছেন : رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ بِإِسْنَادٍ ضَعِيفٍ، وَرَوَى الْبَزَّارُ بَعْضَهُ أَيْضًا، وَفِي رِجَالِهِ ضَعْفٌ অর্থাৎ ইমাম তাবারী (রহঃ) এটি বর্ণনা করেছেন। তবে এর সূত্র দুর্বল। ইমাম বাজ্জার (রহঃ) তিনিও বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারীদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। (মাজমায়ুয যাওয়াঈদ ওয়া মানবায়ুল ফাওয়াঈদ ৯/২৩)।
(২) ইমাম হাফিজ ইবনে আসাকীর (রহঃ) তিনিও এর দুর্বলতার প্রতি ইংগিত করে বলেন :- والصحيح أن عيسى لم يبلغ هذا العمر অর্থাৎ বিশুদ্ধ কথা হল, হযরত ঈসা (আঃ) এরূপ হায়াত পর্যন্ত পৌঁছেননি। (তারিখে ইবনে আসাকীর - ৪৭/৪৮২)।
মুখতাসার তারীখে দামেস্ক লি-ইবনে আসাকীরঃ খন্ড ২০ পৃষ্ঠা ১৪২ স্কিনশর্ট দ্রষ্টব্য
(৩) সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) তিনিও এর সনদ ও মতনের ব্যাপারে সংশয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন : وَاخْتُلِفَ فِي عُمُرِهِ حِينَ رُفِعَ فَقِيلَ بن ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ وَقِيلَ مِائَةٍ وَعِشْرِينَ الْحَدِيثُ الْعَاشِرُ অর্থাৎ তাঁর হায়াত নিয়ে মতভেদ হয়ে গেল। তাঁকে যখন (আকাশে) উঠিয়ে নেয় কারো মতে তখন তাঁর হায়াত ৩৩ বছর, কারো মতে ১২০ বছর। (ফাতহুল বারী ৬/৪৯৩)।
(৪) মুহাদ্দিস সাম্প্রতিক সময়কার বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ শায়খ আল-বানী (রহঃ) তিনিও এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। বহু ইমাম থেকে এ সম্পর্কে মতামত তিনি উল্লেখ করে গেছেন। (দেখুন সিলসিলাতুল আহাদীসিদ দ্বয়ীফা ওয়াল মওদূ'আহ ওয়া আছরুহাস সীয়ু ফিল উম্মাহ - ৯/৪২৫-২৬)।
এবার আমরা প্রমান করব যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে সহীহ সনদে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে কী ভবিষৎবাণী এসেছে? প্রিয় পাঠক! এবার হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসে হযরত ঈসা (আঃ)-এর কবরস্থান কোথায় হবে তার বর্ণনায় নিচের হাদিসটি পড়ে দেখার অনুরোধ। হাদিস শরিফ –
عن عائشة رضي الله عنها قالت قلت یا رسول اﷲﷺ انی أرى إني اعیش بعدك فتاذن لی ان ادفن الی جنبك فقال انیّٰ بذلك الموضع مافيه الا موضع قبری وقبر ابی بکر وعمر وعیسیٰ ابن مریم অর্থাৎ আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন আমি বললাম হে আল্লাহ’র রাসূল! আমার মনে হচ্ছে যে আমি আপনার পরেও বেচে থাকব। সুতরাং আপনার পাশে আমাকে দাফন হওয়ার অনুমতি দিন! প্রতিউত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই ওই স্থানে আমার কবর এবং আবুবকর, উমর এবং ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)-এর কবর থাকবে।” (সূত্র : মুসনাদে আহমদ : ৬/৫৭; হাশিয়া)।
____
উক্ত হাদীসের আলোকে ধূর্ত চরিত্রের কাদিয়ানিদের কয়েকটি আপত্তির জবাব হয়ে যায়। কারণ, হযরত আয়েশা (রাঃ) নিজে খোদ উক্ত রাওজাতে দাফন হওয়ার জন্য পরবর্তী সময়ে আর কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করার অন্যতম কারণ সেটাই ছিল যা উপরের হাদিস দ্বারা বুঝা গেছে। অর্থাৎ রাওজা শরীফে নবীকরিম (সাঃ) এবং আবুবকর, উমর আর প্রতিশ্রুত ঈসা ইবনে মারিয়াম সহ চারজনের জন্যই সেখানে কবরের জায়গা নির্ধারিত, অন্য কারো জন্য সেখানে পঞ্চমতম জায়গা খালি নেই। তাই হযরত আয়েশা (রাঃ) রাওজাতে দাফন হওয়ার আগ্রহ পরিত্যাগ করেছেন।
ইমাম বুখারী (রহঃ) আপনা কিতাব "তারীখে কাবীর" এর মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) এর বর্ণনায় একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) রেওয়ায়েত করেনঃ- ﻟﻴﺪﻓﻨﻦ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻦ ﻣﺮﻳﻢ ﻣﻊ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ অর্থাৎ "নিশ্চিত ভাবেই হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর কবর নবী করীম (সাঃ)-এর রাওজাতে হবে।" {ইমাম বুখারী সংকলিত "তারীখে কাবীর ( ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻟﻠﺒﺨﺎﺭﻱ )" খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ১৬৩; উল্লেখ্য কিতাবটি সর্বমোট ৯ খন্ডে প্রকাশিত}।
পরিশেষে তাদের পেশকৃত রেওয়ায়েতটি হাদীস শাস্ত্রের ইমামদের মতে দলিল হিসেবে অগ্রহণযোগ্য হবার আরো কিছু কারণ এই যে, তথায় এও এসেছে, "পরবর্তী যুগের নবীদের বয়স তাদের পূর্ববর্তী নবীর বয়সের অর্ধেক হবে।"
# অসঙ্গতি লক্ষণীয়ঃ-
এবার অসঙ্গতি কোথায় তা লক্ষ্য করুন! রাসূল (সাঃ)-এর নাম ভেঙ্গে প্রচারিত তাদের বর্ণনা মতে হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর সন্তান হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বয়স ১১০ বছর না হয়ে বরং ৩০ বছর হওয়াই জুরুরি ছিল। কেননা, ইয়াকুব (আঃ) ৬০ বছরে ইন্তেকাল করেছিলেন। কিন্তু উক্ত ৬০ এর অর্ধেক মোটেও ১১০ নয়, বরং ৩০। তেমনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বয়স ১৩০ না হয়ে বরং ৬০ বছরই হওয়া জুরুরি ছিল। কেননা ইবরাহিম (আঃ)-এর বয়স ছিল ১২০ বছর। যার অর্ধেক মোটেও ১৩০ নয়, বরং ৬০। এভাবে আরো বহু উদাহরণ দেয়া যায়। মজার ব্যাপার হল, এমতাবস্থায় হযরত আদম (আঃ)-এর বয়স লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। অথচ পবিত্র কুরআনে তাঁর বয়স উল্লেখ আছে মাত্র সাড়ে নয়শ (৯৫০) বছর।
আশাকরি বুঝতেই পারছেন যে, তাদের সেই বর্ণনাটি সনদ এবং মতন (Text) সব দিক থেকে কেন পরিত্যাজ্য? এজন্যই এরকম একটি অগ্রহণযোগ্য বর্ণনার উপর মুসলিম উম্মাহার কোনো যুগের কোনো একজন যুগ ইমাম, মুহাদ্দিস, মুজাদ্দিদ কিবা মুফাসসির কেউই আস্থা রাখেননি। আমাদের উচিত, এইধরনের দুর্বল ও পরিত্যাজ্য বর্ণনার বিপরীতে অন্যান্য সহীহ হাদীসগুলো মতে আকীদা রাখা। এতক্ষণে যে ব্যাপারটি খোলাসা হয়ে গেছে তা হচ্ছে, ব্রিটিশ উচ্ছিষ্টভোগী ধূর্ত চরিত্রের কাদিয়ানী কালো ক্যাফের মোল্লাগুলো এই একই রেওয়ায়েতের শেষাংশটি দেদারচে পেশ করলেও প্রথমাংশটি গোপন রাখে কিজন্য? আল্লাহ তাদের সহীহ বুঝ দিন। কাদিয়ানিয়তের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক ইসলাম শিক্ষার তাওফিক দিন। আমীন।
# হাদীসে 'ফা-লাম্মা তাওয়াফফাইতানী' থাকা ও কাদিয়ানিদের একটি আপত্তির জবাব এখানে ক্লিক করুন
লিখাটি সবাই কপি/শেয়ার করে প্রচার করুন।
©somewhere in net ltd.