![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
নিশ্চয় আমার মসজিদ আখিরুল মসজিদ - এই কথার প্রকৃত মর্মার্থ কী? জানতে পড়ুন
---------- প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
# সহীহ মুসলিম শরীফ নামক কিতাবে দীর্ঘ একটি হাদীসের খণ্ডাংশে উল্লেখ আছে - ওয়া আন্না মাসজিদী আখিরুল মাসাজিদ তথা "নিশ্চয় আমার মসজিদ (মসজিদে নববী) সর্বশেষ মসজিদ"। অথচ দুনিয়াতে কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদ তৈরি হতে থাকবে। তা সত্ত্বেও বলা হয়েছে মসজিদে নববী "আখিরুল মাসাজিদ বা সর্বশেষ মসজিদ"! জবাব কী?
জবাবঃ সহীহ মুসলিম শরীফে 'মসজিদে নববী' -কে আখিরুল মাসাজিদ তথা সর্বশেষ মসজিদ বলা অবশ্যই সঠিক হয়েছে। কেননা, মসজিদে নববীর পর আর কোনো মসজিদ আখেরি পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সুতরাং হাদীসটিকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া কাদিয়ানিদের সীমাহীন বক্র মানসিকতারই প্রমাণ। হাদীসের খণ্ডাংশটি এরকম, তিনি (সাঃ) ইরশাদ করেছেন - فإني آخر الأنبياء و ان مسجدى آخر المساجد অর্থাৎ "নিশ্চয় আমি সর্বশেষ নবী এবং আমার মসজিদ সর্বশেষ মসজিদ।" (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৩৯)।
কাদিয়ানিদের অপব্যাখ্যার স্বরূপঃ আফসোস! কাদিয়ানী তথা আহমদীবন্ধুরা এ হাদিসে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির নবুওয়াত দাবীর বৈধতা খুঁজে পাওয়ার দাবী করেন। কিন্তু কিভাবে? তার জবাবে তারা যুক্তি দেন এভাবে যে, "মসজিদে নববী" আখিরুল মাসাজিদ সম্বোধিত হওয়া সত্ত্বেও তার পরে দুনিয়াতে আরো বহু মসজিদ হতে পারলে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আখিরুল নাবিয়্যীন হওয়া সত্ত্বে তার পরেও আর কোনো 'নতুন নবী' কেন হতে পারবেনা?" (এ হল কাদিয়ানীদের যুক্তি)।
সত্য বলতে, তাদের উক্ত যুক্তিই বলে দেয় যে, প্রকৃতপক্ষে তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে মির্যা কাদিয়ানী একজন নবী এবং মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বশেষ নবী নন। (নাউজুবিল্লা)। অথচ তারা দেশের আপামর জনতাকে ধোকা দিতেই মির্যা সম্পর্কে তাদের আসল বিশ্বাস গোপন রাখে। তারাও নাকি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে খাতামুন্নাবিয়্যীন তথা শেষনবী স্বীকার করে! অথচ তাদের উপরিউক্ত যুক্তি বলছে তারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে শেষনবী বিশ্বাস করেনা। কাজেই প্রিন্ট মিডিয়াতে তাদের প্রচারিত ক্রোড়পত্র যে সুস্পষ্ট ধোকা আর সত্য গোপন রাখার অপচেষ্টা তা বুঝতে কষ্ট হবেনা। গত ২০১৩ সালের ১৭-ই জানুয়ারীর দৈনিক 'প্রথম আলো' পত্রিকা সহ দেশের প্রায় সকল দৈনিকগুলো দেখা যেতে পারে। তারা সেই ক্রোড়পত্রে কেমন ছলচাতুরী আর ধোকার পন্থা অবলম্বন করেছে তা সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীদের নিকট গোপন থাকার কথা না।
এবার চলুন তাদের আপত্তির জবাব দিই। তাদের প্রশ্নের জবাব এই যে, 'মুসলিম শরীফ' এর হাদীস দ্বারা মির্যা সাহেবের নবুওত দাবী হালাল করতে চাওয়া মারাত্মক ভুল। কেননা, হাদীসটি দ্বারা নবীজী (সাঃ) নিজেকে সর্বশেষ নবী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে যেন বুঝাতে চেয়েছেন যে, "আমি যেমন সর্বশেষ নবী, তদ্রুপ আমার প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নববীও সর্বশেষ মসজিদ। আমার পরে যেমন কোনো নবী হবেনা, তেমনি আমার পরে কোনো মসজিদও নতুন কোনো নবীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবেনা।"
এবার হয়ত জানতে চাচ্ছেন যে, এ ব্যাখ্যা কোথায় আছে? জবাবে বলতে চাই যে, মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন, কুরআনের সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা খোদ করআন, তারপর নবীর সুন্নাহ, তারপর সংশ্লিষ্ট বরেণ্য বিশেষজ্ঞের উক্তি। এ হিসেবে আমরা নবীজীর অপর আরেকটি হাদীস দ্বারা এর মীমাংসা পেয়ে যাই। এ সম্পর্কে তথ্যবহ আলোচনা একটু পরে আসছে। তার আগে আমাদের জানতে হবে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদীনায় এসে নিজ তত্ত্বাবধানে প্রথম কোন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন? আমরা জানি যে, তিনি প্রথমে মসজিদে কুবা তারপর মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মসজিদে কুবা বা কুবা মসজিদ (আরবি: مسجد قباء) সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। হিজরতের পর মুহাম্মদ (সাঃ) এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। এখানে তিনি বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর মসজিদে নববী মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ মসজিদ যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। এই মসজিদ রাসূল (সাঃ) কর্তৃক ৬২২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ মসজিদ হওয়াতে তিনি বলেছিলেন : مسجدى آخر المساجد তথা আমার মসজিদই শেষ মসজিদ।
এখন আমার প্রশ্ন হল, মসজিদে নববীর পরে কোটি কোটি মসজিদই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন তাতে কি? এগুলো কি নবীজী (সাঃ)-এর হাতে প্রতিষ্ঠিত? নিশ্চয় না। কাজেই হাদীস আপনা জায়গায় সঠিক। কেউ বেঁকিয়ে বিপরীত বুঝলে তাতে সেই শুধু পথভ্রষ্ট হবে, এমন ব্যক্তির জন্য আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কিবা করার আছে!
এবার জানতে হবে যে, আমরা উপরিউক্ত মর্মার্থ কোন হাদিস দ্বারা বুঝলাম। তার জবাব এই যে, হাদিসের অন্যতম কিতাব 'আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব' কিতাবে উপরিউক্ত হাদিসটি শব্দের সামান্য পরিবর্তন সহ বর্ণনাকারীর বর্ণনাতে উল্লেখ আছে - آخر مساجد الأنبياء -(আখেরু মাসাজিদিল আম্বিয়া) তথা নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ। এ পর্যন্ত শেষ না, আরো আছে দেখুন। হযরত উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : قال رسول اﷲﷺ أنا خاتم الأنبياء و مسجدى خاتم مساجد الأنبياء অর্থাৎ "রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, "আমি সর্বশেষ নবী আর আমার মসজিদ নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ।" (দেখুন, কাঞ্জুল উম্মাল খণ্ড নং ৬ পৃষ্ঠা নং ২৫৬; হারামাঈন পরিচ্ছেদ)।
প্রমাণের জন্য আরো দেখা যেতে পারে -
# ইমাম নূর উদ্দীন আল হাইছামী (মৃত ৮০৭হিজরী) রচিত 'কাশফুল আছতার'।
# ইমাম আল ফাকেহী (মৃত ২৭৫ হিজরী) রচিত 'আখবারু মাক্কা'।
# ইমাম ইউছুফ আল মুযনী (মৃত ৭৪২ হিজরী) রচিত 'তাহযীবুল কামাল'।
# ইমাম আবুল ফারাজ ইবনে জাওযী (মৃত ৫৯৭ হিজরী) রচিত 'মাছীরুল গারামিস সাকিন ইলা আশরাফিল আমাকিন'।
# ইমাম নূর উদ্দিন আলী ইবনে আহমদ আল সামহূদী রচিত 'খোলাসাতুল ওয়াফা বি-আখবারি দারিল মুস্তফা - পৃষ্ঠা নং ৬৮ (উপরে স্কিনশর্ট দ্রষ্টব্য) ' এর 'ফাজিলাতু মসজিদিন নাবাবিয়্যি' শীর্ষক অধ্যায় দ্রষ্টব্য। বইটি অনলাইন থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তার মানে, রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করার জন্য প্রত্যেক যুগেই নবীগণ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, আর সর্বশেষ নবী হিসেবে আমি (মুহাম্মদ)ও "মসজিদে নববী" নির্মাণ করেছি। যেহেতু আমার পরে আর কোনো নবী নেই, সেহেতু নবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ হচ্ছে আমার মসজিদ তথা মসজিদে নববী।"
আশাকরি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
(উপরে লাইক অপশনে ক্লিক করুন এবং লিখাটি অধিক হারে প্রচার করুন)।
©somewhere in net ltd.