![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
জনৈক কাদিয়ানীধর্মমত প্রচারকের কৃত ৪টি প্রশ্ন ও আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর। প্রশ্নগুলো এই,
১। আপনি বা আপনারা বলে থাকেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন "আমার পরে আর কোনো নবী নেই"। আবার আপনারাই আল্লাহ'র নবী ঈসা নাবীউল্লাহ'র আসার অপেক্ষা করেন। এটা কি আপনাদের মোনাফেকী নয়?
২। নবীদেরকে খতম করনেওয়ালা বলতে আপনি কী বুঝেন? সব নবীই তো হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের আগেই মারা গেছেন। তাহলে হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবীদের খতম করলেন কিভাবে?
৩। হাদীস শরীফে ভবিষ্যতে আগমনকারী হযরত ঈসা (আ.)-কে নাবীউল্লাহ বা আল্লাহ'র নবী শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে কি আপনি এটি মানেন যে, ঈসা (আ.) আল্লাহ'র নবীর পদে থাকবেন?
৪। পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ.)-কে 'রসূলান ইলা বানী ইসরাঈলা' বলা হয়েছে। তিনি আবার যখন আসবেন তখন কি কুরআনের এই অংশ বাতিল হবে? (বানান ও শব্দচয়ন পরিমার্জিত সহ)।
⤵জবাব :
১- হাদীসের ভাষ্য, লা নাবিয়্যা বা'দী (لا نبى بعدى) অর্থাৎ আমার পরে নবী নাই, এই হাদীস কাদিয়ানিরা মানে কিনা জানিনা। যদি সত্যিই মেনে থাকে তাহলে "আমার পরে" এইরূপ কথার পরেও তারা মির্যার নবুওয়ত দাবী মেনে নিতে পারে কিভাবে?
এবার প্রশ্ন মতে উত্তরে আসি। প্রশ্নকারীর উক্ত প্রশ্নটি ভুলেভরা। কেননা রাসূল (সা.) এর উক্ত ভবিষ্যৎবাণীতে আগমনকারী ঈসা (আ.) এমন একজন নবী যার পুনরায় আগমন দ্বারা নবুওয়তের দরজায় ধাক্কা লাগবেনা। কারণ তিনি নতুনভাবে নবুওয়ত প্রাপ্ত হবেন না। সুতরাং "আমার পরে" (بعدى) একথার তাৎপর্য হল, মুহাম্মদ (সা.) এর পরে আর কোনো নবীর জন্ম হবেনা। কাজেই এই হাদীস ঈসা (আ.) এর আগমনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেনা বলেই প্রশ্নকারীর প্রশ্নটাই পুরোপুরি অমূলক ও বাতিল।
২-
"নবীগণের খতমকারী (ختم کرنےوالا نبیوں کا)" হুবহু এই অর্থ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও নিয়েছেন। দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৩/৪৩১। এখন এর কী মর্মার্থ সেটিও আমি মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে দিচ্ছি। মির্যা সাহেব পরিষ্কার লিখেছেন, ‘ওয়া লা-কির রাসূলাল্লাহি ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন’ আয়াতাংশও এই কথার সত্যায়ন করে থাকে যে, প্রকৃতপক্ষে আমাদের নবীর উপর নবুওয়ত খতম বা শেষ হয়ে গেছে। (দেখুন কিতাবুল বারিয়্যা, রূহানী খাযায়েন ১৩/২১৭-১৮; আরো দেখুন, হামামাতুল বুশরা [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ৪৮)। সুতরাং যা বুঝার বুঝতে পেরেছেন। তাই এর বেশি আমি আর কিছু বলতে চাই না।
৩-
দারুন প্রশ্ন করেছেন। কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ হল এই হাদীসটিতে আগমনকারী ঈসা আঃ -কে রাসূল (সা.) 'নাবিউল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়ম' (نبى الله عيسى بن مريم বা আল্লাহর নবী ঈসা ইবনে মরিয়ম) শব্দে সম্বোধন করা। এতেই সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, যার আগমন করা সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে তিনি নিশ্চিতভাবে কোনো রূপক ব্যক্তি নন। বরং তিনি এমন একজন যিনি ইতিপূর্বে নাবিউল্লাহ তথা আল্লাহর নবী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ। এর প্রমাণ হল, হাদীসে আগমনকারী ঈসা (আ.) সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণীটা শপথবাক্য সহকারে বর্ণিত হওয়া। ফলে হাদীসে উল্লিখিত ঈসা দ্বারা রূপক কাউকে বুঝাবেনা। কেননা, শপথ বাক্য সহকারে বর্ণিত ভবিষ্যৎবাণীর বিষয়টি নিশ্চিতভাবে হাকিকি অর্থে উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আর এই একই কথা খোদ মির্যা কাদিয়ানীও লিখে গেছেন। দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ২৭। সুতরাং প্রশ্নকারীর মগজে এগুলো লোড না নিলে তাতে আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কী বা করার আছে!
এখন প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্যে মাত্র একটি প্রশ্ন করতে চাই, হযরত ঈসা (আ.) এসে "নবী" হলে তখন কি তাঁর "উম্মত" ও হবেনা? এখন ঈসা দাবীদার মির্যা কাদিয়ানীর অনুসারীরা কি নিজেদেরকে তার উম্মত মনে করেন? উত্তর কী?
মির্যা কাদিয়ানীকে "রূপক ঈসা" সাব্যস্ত করার হীন উদ্দেশ্যে হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত প্রমাণ করতে কাদিয়ানীরা তাদের বই-পুস্তকে পবিত্র কুরআনের ৩০টি আয়াতের অপব্যাখ্যা দেয়। এখানে তার খণ্ডনমূলক জবাব দেয়া হল। ক্লিক করুন।
৪-
পবিত্র কুরআনে রাসূলান ইলা বনী ইসরাঈলা - উল্লেখ আছে বলেই তো আমরা (মুসলিম উম্মাহা) সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি যে, তার দ্বিতীয়বারের আগমন হবে "(على ملته) আ'লা মিল্লাতিহি" অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা.) এর একজন উম্মত ও তারই শরীয়তের অনুসারী হিসেবে। অর্থাৎ উনার পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসাটা নবুওয়তের দায়িত্ব সহকারে হবে না। বড়জোর একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক ও শরীয়তে মুহাম্মদীর উপর আমলকারীরূপে হবে। সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া দেখুন। সুতরাং প্রশ্নকারী একজন নির্বোধ বলেই এ সমস্ত অর্বাচীন টাইপের প্রশ্ন করেছে। সত্য বলতে এসব প্রশ্নের অধিকাংশই পাকি কাদিয়ানী মহারথী রাবওয়ার মুবাশ্বির আহমদ খালনের মত মালাউনদের নাপাক মগজ থেকে উগরানো বৈ নয়।
যাইহোক, কাদিয়ানীদেরই উক্ত প্রশ্নের আলোকে আমিও তাদেরকে পালটা প্রশ্ন করতে চাই, সূরা আস-সাফ এর ৬ নং আয়াতে ঈসা (আ.)-এর ভবিষ্যৎবাণীটা এভাবে এসেছে যে, (يأتى من بعدى إسمه احمد) 'ইয়াতি মিম বা'দিসমুহু আহমদ' অর্থাৎ তার (ঈসা) পর আহমদ (তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামীয় ব্যক্তি আগমন করবেন। তাই প্রশ্ন আসে, উক্ত ভবিষ্যৎবাণী শীর্ষক আয়াতটি কি বর্তমানে বাতিল বলে গণ্য হবে? নাউযুবিল্লাহ। যেহেতু যার আসার কথা তিনি গত ১৪শ বছর আগেই এসে গেছেন! এখন এর কী জবাব?
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী Principal NurunNabi
©somewhere in net ltd.