নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুড়ীর ঘটনাটি কি আসলেই অসত্য? এসো তাহকিক করি

২৮ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬

নবীজী (সা.)-এর পথে কাঁটা দেয়া সেই বুড়ীর ঘটনাটি কি ভিত্তিহীন?

প্রশ্ন : মক্কার এক বুড়ী রাসূল (সা.) এবং তাঁর সাহাবীদের কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতেন, ঘটনাটি সত্য হলে এর অথেনটিক সোর্স এবং সনদ (বর্ণনাসূত্র) কী?

উত্তর : ঘটনাটি মিথ্যা নয়, বরং এর বাস্তবতা রয়েছে। আজ থেকে হাজার বছর আগেকার মুহাদ্দিসগণের অন্যতম ইমাম সুফিয়ান আস সওরী (রহ.) নিজেই উক্ত ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে এটিকে 'সর্বাধিক সঠিক ও সুস্পষ্ট ঘটনা' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাফসীরে তাবারীর সংকলক ইমাম আবূ জা'ফর মুহাম্মদ ইবনু জারীর আত তাবারী (রহ.) নিজ সনদ সহ একাধিক সনদে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। এবার ইমাম সুফিয়ান আস সওরী (রহ.) থেকে বর্ণনাগুলোর সামারী (সারমর্ম) কীরূপ শব্দচয়নে উল্লেখ আছে তা নিচে দেখুন,

حدثنا ابن حميد قال: ثنا مهران، عن سفيان ﴿وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ﴾ قال: كانت تمشي بالنميمة. وأولى القولين في ذلك بالصواب عندي، قول من قال: كانت تحمل الشوك، فتطرحه في طريق رسول الله ﷺ، لأن ذلك هو أظهر معنى ذلك.

সনদ :

ইবনু জারীর আত তাবারী, (সিকাহ)

তিনি মুহাম্মদ ইবনু হুমায়েদ আত তামিমী (মৃত. ২৪৮ হি.) থেকে,

(ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, حافظ ضعيف সে হাফিয ও দুর্বল। ইয়াহইয়া ইবনু মা'ঈন বলেছেন, ثقة ليس به بأس তিনি সিকাহ, তার ভেতর কোনো সমস্যা নেই। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক্ব আস সাগানীকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনি ইবনে হুমায়েদ থেকে হাদীস বর্ণনা করেন? তিনি উত্তরে বললেন, فقال: وما لي لا أحدث عنه، قد حدث عنه أحمد بن حنبل، يحيى بن معين আমি তাঁর কাছ থেকে হাদীস কিজন্য বর্ণনা করব না? ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবনু মা'ঈন দুজনই তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম জা'ফর ইবনে মুহাম্মদ আত ত্বয়ালিসী (جعفر بن محمد الطيالسي : ثقة) বলেন, সে বিশ্বস্ত। কিন্তু তার সম্পর্কে ইমাম আবু হাতিম রাজী বলেন, সে খুবই দুর্বল। ইবনু হিব্বান বলেন, كان ممن ينفرد عن الثقات بالأشياء المقلوبات ولا سيما إذا حدث عن شيوخ بلده সে এমন একজন যিনি সিকাহ রাবীগণ থেকে এককভাবে উলোটপালোট জিনিস রেওয়ায়েত করে ফেলতেন, বিশেষ করে তার নিজ শহরের শায়খদের কাছ থেকে। সম্ভবতঃ এ কারণেই ইমাম যাহাবী লিখেছেন, وثقه جماعة والأولى تركه একটি জামাত তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন, তবে তার একক বর্ণনাগুলো পরিত্যাগ করাই ভালো।)

তিনি মাহরান ইবনে আবী উমর থেকে,

(মাকবুল রাবী, ইমাম আবু হাতিম আর-রাজী বলেন, ثقة، صالح الحديث তিনি একজন সিকাহ, হাদীস বর্ণনায় সঠিক। দারা কুতনী বলেন, لا بأس به তার বর্ণনায় কোনো সমস্যা নেই। ইমাম যাহাবী বলেন, فيه لين তার বর্ণনায় শিথিলতা রয়েছে। ইমাম যাহাবী 'তারীখুল ইসলাম' গ্রন্থে (১২/৪১৬) লিখেছেন, كتبت عنه وعنده غلط كثير في حديث سفيان الثوري ইমাম ইয়াহইয়া বিন মা'ঈন বলেছেন, আমি তার কাছ থেকে হাদীস লিপিবদ্ধ করেছি। তার নিকট থাকা সুফিয়ান আস সওরী থেকে বর্ণিত হাদীসে অনেক গলদ থাকত।' ইমাম ইবনু আ'দী 'আল কামিল' গ্রন্থে লিখেছেন, ইবনু মা'ঈন তাকে সিকাহ-ও বলেছেন। ইবনু হাজার আসকালানী তার 'তাকরীবুত তাহযীব' গ্রন্থে বলেন, ضعيف يعتبر به في المتابعات والشواهد সে দুর্বল, তবে তার হাদীসের মুতাবি এবং সমর্থন পাওয়া গেলে তখন তার হাদীস গৃহীত হবে। শায়খ আলবানী ইবনু মাজাহ'র জানাজাহ পর্বের ما جاء في الصلاة على القبر শীর্ষক অধ্যায়ের মাহরান ইবনে আবী উমর-এর হাদীসকে "সহীহ" বলেছেন। তিনি ১৭৮ হিজরীর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন)।

তিনি (সহীহাইনের সিনিয়র রাবী ও যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ফকীহ) ইমাম সুফিয়ান আস সওরী (মৃত. ৯৭-১৬১ হি.) থেকে,

“আল্লাহর বাণী {“ওয়ামরা'তুহু হাম্মা লাতাল হাত্বাব”} তিনি বলেন, সে (বুড়ীটি) ফেতনা ফ্যাসাদ ও পারস্পরিক শত্রুতার ইন্ধন জোগাতো। (তবে) এতদ সংক্রান্ত দু'টি মতের মধ্যে আমার মতে অধিকতর সঠিক হল, সেই ব্যক্তির মত, যিনি {সূরা লাহাব-এর ৪ নং আয়াত-وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ (তার স্ত্রী ছিল কাঠ বা লাকড়ি বহনকারীণী) এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ স্বরূপ} বলেছেনঃ সে কাঁটা বহন করত এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পথে সে তা ছুঁড়ে মারত। কেননা, তাৎপর্যের দিক থেকে এ অর্থই সর্বাধিক সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার।”

(তাফসীরে তাবারী : ২৪/৭১৯-৭২১)।

উল্লেখ্য, সুফিয়ান আস সওরী (রহ.) এর শায়খ ছিলেন সহীহ বুখারীর রাবী এবং বিশিষ্ট তাবেয়ী আবূ ইসহাক্ব আস সাবে'ঈ (৩৩-১২৭ হি.)। একই ঘটনাটি তাঁর শায়খ-ও রেওয়ায়েত করেছেন। ফলে বলা যেতে পারে যে, সুফিয়ান এটি তার উক্ত শায়খ থেকেই বর্ণনা করেছেন। আর আবু ইসহাক্ব আস সাবে'ঈ (রহ.) সম্পর্কে ইমাম আলী ইবনুল মদনী বলেন, তিনি সাহাবী এবং তাবেয়ী নির্বিশেষে ৭০-৮০ জনের কাছ থেকে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। আর তিনি হযরত উসমান (রা.)-এর যুগেই কূফায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ইমাম আবূ জা'ফর মুহাম্মদ ইবনু জারীর আত তাবারী (রহ.)-এর সূত্রে ইমাম সুফিয়ান আস সওরী (রহ.)-এর মতটি হাম্বলী মাযহাবের শায়খ ইবনু কুতাইবাহ আদ-দিনাওয়ারী (রহ.) (মৃত. ২৭৬ হিজরী)-এর تأويل مشكل القرآن لابن قتيبة গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ১৬০ নং পৃষ্ঠার টিকাতেও রয়েছে।

উক্ত ঘটনাটি আরও যেসব কিতাবে সনদ সহ উল্লেখ রয়েছে,

দুররে মানসূর, সুয়ূতী, ইমাম ইবনু আসাকীর রহ. এর সূত্রে : ৬/৪০৯
ইবনু কাসীর : ৮/৫৩৫
আনসাবুল আশরাফ, ইমাম বালাজুরী : ১/১৩৯, ইবনু আব্বাস থেকে ইকরামার সনদে বর্ণিত।
দালায়িলুন নাবুওয়াহ, বায়হাক্বী ২/১৮৩, মুহাম্মদ ইবনু সা'আদ এর সূত্রে।

উক্ত বুড়ীর পরিচয় :

উম্মে জামিল। আবূ সুফিয়ান (রা.) এর আপন বোন এবং মক্কার খান্দানী পরিবার উমাইয়্যা বংশের মহিলা ছিলেন। তিনি মক্কার সরদার আবূ লাহাবের স্ত্রীও। কিন্তু রাসূল (সা.)-এর সাথে তার এবং তার পরিবারের শত্রুতা ছিল অন্ধের মত। ফলে স্বামী স্ত্রী তাদের কারোরই ইসলাম গ্রহণ করার তাওফিক হয়নি।

এবার সনদ সহ একটি মাত্র হাদীসের বাংলা অনুবাদ নিচে উল্লেখ করছি,

حدثنا أبو كُرَيب، قال: ثنا وكيع، عن إسرائيل، عن أبي إسحاق، عن رجل من همدان يقال له يزيد بن زيد، أن امرأة أبي لهب كانت تلقي في طريق النبيّ صلى الله عليه وسلم الشوك، فنزلت: (تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ ... وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) .

সনদঃ

ইবনু জারীর আত তাবারী, (ছিকাহ)

তিনি আবু কুরাইব মুহাম্মদ ইবনুল আ'লা আল হামদানী (১৬১-২৪৮ হি.) থেকে, (ছিকাহ, হাফিয)

তিনি ওয়াক্বে'ঈ (১২৮-১৯৬ হি.) থেকে, (ছিকাহ)

তিনি ইসরাইল ইবনে ইউনুস ইবনে আবী ইসহাক্ব (মৃত. ১৬০ হি.) থেকে, (ছিকাহ)

তিনি স্বীয় দাদা ও সহীহ বুখারীর রাবী এবং বিশিষ্ট তাবেয়ী আবূ ইসহাক্ব আস সাবে'ঈ (৩৩-১২৭ হি.) থেকে, (ছিকাহ)

তিনি হামদান বংশীয় ইয়াযিদ ইবনে যায়েদ থেকে,

অর্থ- “নিশ্চয়ই আবু লাহাবের স্ত্রী রাসূল (সা.)-এর পথিমধ্যে কাঁটা বিছিয়ে দিত। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয় : تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ ... وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ তথা ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের উভয় হস্ত এবং সে নিজেও.... এবং তার স্ত্রী কাঠ বা লাকড়ি বহনকারীণী।”

আরো কিছু সনদ সহ "তাফসীরে তাবারী" গ্রন্থ থেকে ইমাম আবূ জা'ফর মুহাম্মদ ইবনু জারীর আত তাবারী (রহ.) (মৃত. ৩১০ হিজরী) থেকে ঘটনাটির বৃত্তান্ত,

واختلف أهل التأويل، في معنى قوله: (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) فقال بعضهم: كانت تجيء بالشوك فتطرحه في طريق رسول الله صلى الله عليه وسلم، ليدخل في قدمه إذا خرج إلى الصلاة.

অর্থাৎ তাফসীরকারকগণ এর তাৎপর্য নিয়ে মতবিরোধ করেছেন। আল্লাহর বাণী : (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) এর তাৎপর্য হিসেবে কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেছেন, সে (আবু লাহাবের স্ত্রী) রাসূল (সা.) এর পথিমধ্যে কাঁটা বিছিয়ে দিত যাতে তিনি যখন সালাতের উদ্দেশ্যে বের হবেন তখন পায়ে কাঁটাবিদ্ধ হন। - তাবারী।

উল্লেখ্য, সূরা লাহাব একটি মক্কী সূরা, নবুওয়তের চতুর্থ বর্ষে ষষ্ঠতম অবতীর্ণ সূরা। কিন্তু রাসূল (সা.) এবং তাঁর সাহাবীরা ইসরার পূর্ব থেকেই সালাত পড়তেন। এ সম্পর্কে আরব দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ইসলামি স্কলার শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল মুনাজ্জিদ লিখেছেন,

كَانَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْل الْإِسْرَاء يُصَلِّي قَطْعًا , وَكَذَلِكَ أَصْحَابه لَكِنْ اُخْتُلِفَ هَلْ اُفْتُرِضَ قَبْل الْخَمْس شَيْء مِنْ الصَّلَاة أَمْ لَا ؟ فقيل : إِنَّ الْفَرْض أَوَّلًا كَانَ صَلَاة قَبْل طُلُوع الشَّمْس وَصَلَاة قَبْل غُرُوبهَا , وَالْحُجَّة فِيهِ قَوْله تَعَالَى ( وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّك قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ) وَنَحْوهَا مِنْ الْآيَات " انتهى بتصرف يسير .

وينظر أيضاً : "تفسير ابن عطية" (1/204) ، "التحرير والتنوير" لابن عاشور (24/75) .

ইসরার পূর্বে রাসূল (সা.) সালাত অকাট্যভাবে পড়তেন। তেমনিভাবে তাঁর সাহাবীরাও। তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হবার পূর্বেও সালাত ছিল কি ছিল না, এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কারো মতে, প্রথমদিকে সূর্য উদিত হবার আগে এবং পরেও (কিছু) সালাত ফরজ ছিল। আর এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী : ( وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّك قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ) সহ অপরাপর বেশ কিছু আয়াত।

তাফসীরে ইবনু আতিয়্যাহ ১/২০৪, আত তাহরীর ওয়াত তানভীর, ইবনু আ'শূর ২৪/৭৫।

* ذكر من قال ذلك:

حدثني محمد بن سعد، قال: ثني أبي، قال: ثني عمي، قال: ثني أبي، عن أبيه، عن ابن عباس، في قوله: (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) قال: كانت تحمل الشوك، فتطرحه على طريق النبي صلى الله عليه وسلم، ليعقره وأصحابه، ويقال: (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) : نقالة للحديث.

ইমাম ইবনু জারীর আত তাবারী থেকে,

তিনি মুহাম্মদ ইবনু সা'দ থেকে,

তিনি স্বীয় পিতা থেকে,

তিনি নিজ চাচার কাছ থেকে,

তিনি নিজ পিতার কাছ থেকে

তিনিও নিজ পিতার কাছ থেকে,

আর তার পিতা হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর কাছ থেকে,

তিনি বলেন, সে (বুড়ীটি) কাঁটা বহনকারীণী ছিল, সে নবী করীম (সা.) এর পথিমধ্যে কাঁটা ছুঁড়ে ফেলত। যাতে কাঁটা তাঁকে এবং তাঁর সাহাবীদের কষ্ট দেয়। কুরআনে তাকে 'হাম্মালাতাল হাত্বাব' বলা হয়েছে।

حدثني أبو هريرة الضبعي، محمد بن فراس، قال: ثنا أبو عامر، عن قرة بن خالد، عن عطية الجدلِّي. في قوله: (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) قال: كانت تضع العضاه على طريق رسول الله صلى الله عليه وسلم، فكأنما يطأ به كثيبا.

আ'ত্বিয়াহ ইবনু সা'দ ইবনু জানাদাহ আল জিদাল্লী (মৃত. ১১১ হি.) হতে, তিনি (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) এর আলোকে বলেন, তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পথে লাকড়িসমূহ রেখে দিতেন, যাতে তিনি লাকড়ির স্তূপের উপর পা রাখেন।

আত্বিয়া আল জিদাল্লী সম্পর্কে,

তাক্বরীবুত তাহযীব গ্রন্থে ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) তার সম্পর্কে লিখেছেন, ضعيف، مجمع على تضعيفه، وما وثقه سوى ابن سعد، فلا ندري من أين جاء بعبارته: صدوق يخطئ كثيرا তিনি দুর্বল, তার দুর্বলতার উপর মতৈক্য আছে। ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সা'আদ ব্যতীত দ্বিতীয় কেউ তাকে সিক্বাহ বলেননি। আমরা জানিনা, তিনি এ মত কোথা থেকে নিয়ে আসলেন। তবে সে সত্যবাদী, ভুল অনেক করে ফেলেন। ইমাম ইবনু মা'ঈন বলেছেন, صالح، ومرة: ضعيف إلا أنه يكتب حديثه সে একজন নেককার, তবে দুর্বল হলেও তার হাদীস লিখা যাবে।

حُدثت عن الحسين، قال: سمعت أبا معاذ يقول: ثنا عبيد، قال: سمعت الضحاك يقول، في قوله: (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) كانت تحمل الشوك، فتلقيه على طريق نبي الله صلى الله عليه وسلم ليعقِره.

ইবনু আব্বাস (রা.)-এর শিষ্য ও বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত জাহহাক্ব (রহ.) হতে, তিনি বলেন, আল্লাহর বাণী : (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) এর তাৎপর্য হচ্ছে, সে (বুড়ী/উম্মে জামিল) কাঁটা বহন করত, আর সেটিকে নবী করীম (সা.)-এর পথিমধ্যে বিছিয়ে দিত যাতে তা নবীজীকে কষ্ট দেয়।

حدثني يونس، قال: أخبرنا ابن وهب، قال: قال ابن زيد، في قوله: (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) قال: كانت تأتي بأغصان الشوك، فتطرحها بالليل في طريق رسول الله صلى الله عليه وسلم.

সনদঃ

ইবনু জারীর আত তাবারী

ইউনুস থেকে,

ইবনু ওয়াহাব থেকে,

তিনি ইয়াজিদ ইবনু যায়েদ থেকে, তিনি বলেন, আল্লাহর বাণী : (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) এর তাৎপর্য হচ্ছে, তিনি (উম্মে জামিল নামীয় সেই বুড়ীটি) কাঁটাগাছের ডাল নিয়ে আসতেন এবং রাত্রিবেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথিমধ্যে বিছিয়ে দিতেন।

- তাবারী।

حدثنا ابن حميد، قال: ثنا مهران، عن عيسى بن يزيد، عن ابن إسحاق، عن يزيد بن زيد، وكان ألزم شيءٍ لمسروق، قال: لما نزلت: ﴿تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ﴾ بلغ امرأة أبي لهب أن النبي ﷺ يهجوك، قالت: علام يهجوني؟ هل رأيتموني كما قال محمد أحمل حطبا؟ " ﴿فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ﴾ "؟ فمكثت، ثم أتته، فقالت: إن ربك قلاك وودعك، فأنزل الله: ﴿وَالضُّحَى وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى﴾

সনদঃ

ইবনু জারীর আত তাবারী (সিক্বাহ)

ইবনু হুমায়েদ থেকে, (সিক্বাহ)

মাহরান থেকে, (মাকবুল, হাসানুল হাদীস)

ঈসা ইবনে ইয়াজিদ থেকে, (সদূক, হাসানুল হাদীস)

ইবনে ইসহাক্ব থেকে, (সিক্বাহ)

তাবেয়ী ইয়াজিদ ইবনে যায়েদ থেকে,

(ইবনু আবী হাতিম আর-রাজী 'আল জারহু ওয়াত তা'দীল' গ্রন্থে লিখেছেন, يزيد بن زيد روى عن مسروق روى عنه أبو إسحاق الهمداني سمعت أبي يقول ذلك ইয়াজিদ ইবনে যায়েদ প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত মাসরূক রহ. এর কাছ থেকে বর্ণনা করতেন, আর তার কাছ থেকে আবূ ইসহাক্ব আস সাবে'ঈ আল হামদানী রেওয়ায়েত করেছিলেন এভাবে যে, আমি আমার পিতার নিকট শুনেছি তিনি এটি বলেছেন...। ইমাম ইবনু হিব্বান 'আল মাজরূহীন' গ্রন্থে লিখেছেন, روى عَنهُ أَبُو إِسْحَاق السبيعِي لست أعرفهُ بعدالة وَلَا جرح إِلَّا أَنه روى أَشْيَاء مَنَاكِير لم يُتَابع عَلَيْهَا على قلَّة رِوَايَته فَهُوَ عِنْدِي يتنكب عَن الِاحْتِجَاج بِمَا انْفَرد আবূ ইসহাক্ব আস সাবে'ঈ তাঁর কাছ থেকে রেওয়ায়েত করেছেন। আমি তার জরাহ এবং তা'দীল কিছুই জানিনা, তবে তিনি মুনকার বিষয়সমূহ বর্ণনা করেছিলেন যেগুলোর পেছনে পড়া যাবেনা। তার গুটিকয়েক বর্ণনার ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হল, তিনি এককভাবে যা বর্ণনা করেছেন সেসব বর্ণনাকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।)

তিনি বলেন : تَبَّتْ يَدَا أَبِي আয়াতটি যখন নাযিল হল, তখন আবু লাহাবের স্ত্রীর নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, নবী (সা.) তোমাকে উপহাস করছেন। সে বলল, কেন তিনি আমাকে উপহাস করলেন? তোমরা কি আমাকে দেখেছ, যেমনটা মুহাম্মদ কাঠ বহন করার কথা বলছে? فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ 'তার গলায় খেজুর আঁশের মজবুত পাকানো রশি'। অতএব সে সেখানে অবস্থান করলো। তারপর সে নবী (সা.)-এর নিকট এসে বলল, আপনার প্রভু আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট এবং আপনাকে পরিত্যাগ করেছেন, অত:পর আল্লাহ তালা নাযিল করলেন, وَالضُّحَى وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى অর্থাৎ কসম পূর্বাহ্নের, কসম রাতের যখন তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং অসন্তুষ্টও হননি। - তাবারী।

পরিশেষঃ

গতকাল Muhammad Mushfiqur Rahman Minar ভাইয়ের একটি পোস্টে জনৈক কনভার্টেট নাস্তিকের কমেন্ট দেখলাম, সে লিখেছেঃ

সে নাকি ছোট বেলায় বুড়ীর ঘটনাটি বিভিন্ন ওয়াজে এবং বইতে পড়ে নবীজী (সা.)-কে খুব বেশি মুহব্বত ও ভালোবেসে ছিল। কিন্তু অনলাইনে ঘটনাটিকে বিভিন্ন শায়খগণ ভুয়া, জাল বলার কারণে নবীজীর প্রতি তার সেই ভালোবাসা আর অবশিষ্ট থাকেনি। নবীজী (সা.) সম্পর্কে নাস্তিকদের প্রোপাগাণ্ডার কারণে আস্তে আস্তে সে নাস্তিকতার পথে চলে যায়, বর্তমানে আপাদমস্তক সে একজন ধর্মহীন ও ইসলাম বিদ্বেষী। নাউযুবিল্লাহ।

তখনি আমি বুড়ীর ঘটনাটি নিয়ে স্টাডি করতে শুরু করি। অত:পর উক্ত ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে মুহাদ্দিসকূল শিরোমনি ইমাম সুফিয়ান আস সওরী (রহ.)-এর সুস্পষ্ট মতামত জানতে পারি, ফলে হৃদয়টা সত্যিই শীতল হয়ে যায়। আমিও পরিষ্কার ও অকাট্যভাবে নিশ্চিত হলাম যে, ঘটনা ভিত্তিহীন নয়, বরং অসংখ্য মুহাদ্দিস থেকে একাধিক সনদে এটি বর্ণিত ও সত্যায়িত। যার ফলে অপরাপর সমস্ত সনদের সমষ্টিগত যে মান দাঁড়াল, বর্ণনাটির মতন উঁচু স্তরীয় একটি মুতাওয়াতির বর্ণনা, যা বুখারী এবং মুয়াত্তার হাদীস থেকেও বহুগুণে শক্তিশালী। আর সনদের কথা বললে, নিঃসন্দেহে 'হাসান লি গয়রিহী'।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
এডমিন ফিকহ মিডিয়া

#বুড়ী
#ঘটনা
#ভিত্তিহীন
#কিনা?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.