নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সরকারি চাকুরে। বই আমার কাছে একটা বিশাল জানালার মত। যে জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়, সাগর দেখা যায়, পাহাড় দেখা যায়। ঘোরাঘুরি আমার নেশা। পাশাপাশি খেলাধুলা ভালবাসি। ছোটবেলা থেকেই টুকটাক লেখালেখি করি। একটাই জীবন, তার প্রতিটি দিনই \'বাঁচতে\' চাই।

মাশ-নুর

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন লেখালেখি করার। নানান কারণে লেখাগুলো কখনো গোছানো হয়নি। এই ব্লগ আমার সেই এলোমেলো লেখাগুলোকে গোছানোর একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস।

মাশ-নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিচারণঃ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

বিএমএ থেকে বের হয়েছি প্রায় ৫ মাসের মত হয়ে গিয়েছে। এখনও মাঝেমাঝে মাঝরাতে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায়, মনে পড়ে কাকডাকা ভোরে মাইল টেস্টের স্টার্টিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বুকের মাঝে সেই চিরচেনা অনুভূতিটা। মাইল টেস্ট হবে জেনেও স্টাফের কাছে আবার জানতে চাওয়া, “মাইল টেস্ট কি হবে স্টাফ!!?” মনে পড়ে দুপুরে ক্লাসের পর অধীর আগ্রহে কান খাড়া করে রাখা, “যদি স্টাফ ভুল করে বলে যে আজকে উইক সুইমিং হবে না!” কিন্তু স্টাফ সচারাচর ভুল করত না, আমার উইক সুইমিংও মাফ হত না। আর বাই চান্স স্টাফ যদি বলত যে আজকে উইক সুইমিং হবে না, কি যে আনন্দের মুহূর্ত ছিল সেগুলো!
মনে পড়ে উইক সুইমিং-এ যাবার পর গেট থেকে সুইমিং পুলের দিকে যাবার সময় কিভাবে সময়টা স্লো মোশনে চলে যেত! মনে পড়ে সুইমিং পুলের সামনে দাঁড়ানোর সময় বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডটা কিভাবে ঢিপঢিপ করত। গগলসটা লাগানোর সময় নিজের সাথে নিজে কথা বলতাম, “আমি জানি তুমি পারবা, এটা কোন ব্যাপারই না। লাফ দিলেই পার হয়ে যাবা!” কি দিনগুলিই না গেছে সেসময়! চিন্তা করেই এখনও আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে!
মনে পড়ে পিটি শেষ হবার পর যখন শরীরে আর কোন শক্তি নেই, তখন হঠাৎ আবিষ্কার করতাম আমরা আবার মাইল টেস্টের স্টার্টিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছি। “সাহেব! এখন একটা ১.৬ কিলো হবে। যারা আগে আসবেন, প্রথম দশজন ব্রেক!” বুকের মধ্যে কেমন যেন চিনচিন করে উঠত। মনে পড়ে গেমসের পর ৫০০ মিটার গ্রাউন্ডটা দেখিয়ে স্টাফ যখন বলত, ফ্রন্টরোল দিয়ে এটা পার হলেই ব্রেক!
মনে পড়ে দ্বিতীয় রাতের কথা, যখন রাত ১০ টার সময় কর্পোরাল বললেন, এখন সবাই হাফ ড্রেস পরে ফল-ইন। জানুয়ারি মাসের এই কনকনে শীতের মধ্যে কিভাবে হাফ প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে থাকব এটা চিন্তা করেই যখন কাতর, এর মাঝে কর্পোরাল স্যার বাথরুমের শাওয়ারের নিচে নিয়ে গিয়ে দাঁড়া করিয়ে দিলেন। মনে পড়ে নাইট ফল-ইনে প্লাটুনমেটদের সাথে কিভাবে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকতাম একটু উষ্ণতার জন্য। হামিদ কোম্পানির ড্রেনের মধ্যে কতদিন যে ঘুমিয়ে গেছি কোন হিসাব নেই।
মানুষ খুব আজব একটি প্রাণী। সে কখনই কোন অবস্থাতেই সুখী থাকতে পারে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে যে অবস্থাতেই থাকে, তার চেয়ে এক স্টেপ উপরে থাকে তার এক্সপেক্টেশন লেভেল। একজন বিএমএ ক্যাডেটের কাছে এক বিকেলের পিটি মাফ বা একদিনের উইক সুইমিং মাফ যতখানি আনন্দ এনে দিতে পারে, তারই ব্যাচের বাইরে যারা আছে তাদের একজনের কাছে কোন কিছু এক মাসেও অতখানি আনন্দ এনে দিতে পারে কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু সময় চেঞ্জ হয়। যে ছেলেটা একদিনের উইক সুইমিং-এর পরিবর্তে ১০ কিলোমিটার দৌড়াতে বললেও খুশি হয়ে যেত, তারও এখন সকালে ৪ কিলোমিটার দৌড়াতে হবে চিন্তা করলেও কষ্ট লাগে।
তবুও মাঝেমাঝে মাঝরাতে হঠাৎ যখন ঘুম ভেঙ্গে যায়, অথবা বিকালে ডুবতে থাকা সূর্যটার দিকে যখন এই কথাগুলো মনে পড়ে যায়, তখন মনে হয় অনেক ভালো আছি। অনেক অনেকের চেয়ে অনেক বেশি ভাল আছি। বিএমএ-তে একটা সময় ছিল, যখন মনে হত আর বোধহয় সম্ভব হবে না আমাকে দিয়ে। সেই সময়টাও পার হয়ে গিয়েছে। মানুষ অনেক ভুলোমনা প্রাণী, নাহলে কিভাবে এগুলো ভুলে যাই আমি! তাই রাত তিনটার সময় ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর যখন মনে হয় আমি বিএমএ-র বাইরে, বেড কভারটা গায়ের উপর টেনে দিয়ে আরেকটা ঘুম দেওয়ার প্রস্তুতি নিই, শান্তির ঘুম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪৬

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
এই সময়টার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানা হল! শুভকামনা!

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৪৬

মাশ-নুর বলেছেন: অনেক পরে উত্তর দেবার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: বহু বছর আগে মেজর আনোয়ার (অবঃ) এর লিখিত একটা বই পড়েছিলাম। বইটার নাম ছিলো হেল কমান্ডো। সেটা ছিলো তৎকালীণ পাকিস্তান আমলে, পিএমএ তে। সেই বইটা পড়ার সময় যে উত্তেজনা অনুভব করেছিলাম, আজকে আপনার লেখাটি পড়ে সেই উত্তেজনার কিছু পরশ পেলাম। আশা করব আপনি বিএমএ এর অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে লিখে প্রকাশ করবেন।

আপনার লেখার হাত চমৎকার, সাবলীল। আমাদের এখানে অনেকেই আছেন ডিফেন্স থেকে, আশা করি তারাও আপনার লেখা সাথে নিজেদের স্মৃতি ঝালাই করে নিতে পারবেন।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৪৬

মাশ-নুর বলেছেন: অনেক পরে উত্তর দেবার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৩২

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনুভূতিগুলো নিজের সাথে রিলেট করতে পারলাম। ভাল লিখেছো। + +
মানুষ যে হেঁটে হেঁটেও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতে পারে, সে কথাটা প্রথম জেনেছিলাম বিএমএ তে গিয়েই। অন্ধকার রাতে হাঁটতে হাঁটতে হেলমেটকে মাটিতে উপুর করে রেখে বালিশ বানিয়ে আর তার উপর হ্যাভার স্যাক না খুলেই, ঝোপ ঝাড়, পোকা মাকড়, ক্ববর কাদা ইত্যাদির তোয়াক্কা না করেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে পাঁচ দশ মিনিট ঘুমের রাজ্য থেকে ঘুরে আসা, এসব অভিজ্ঞতা তো প্রথম হয়েছিল সেখানে গিয়েই!

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২০

টারজান০০০০৭ বলেছেন: এই প্যাঁদানির চোটেই বুঝি সশস্ত্রবাহিনীর লোকজন সিভিলিয়ানদের দেখিতে পারে না, কারণ তাহারা প্যাঁদানি খায় না কেন !! তবে প্যাঁদানি না খাওয়াতেই সিভিলিয়ানরা বুঝি সোজা হয়না !! খাইলে শৃঙ্খলায় চলিয়া আসিত নিশ্চিত ! একারণেই সিভিলিয়ানদেরও পূর্ণমাত্রায় না হইলেও অন্তত অর্ধমাত্রায় সামরিক প্রশিক্ষণ দরকার ! ইহাতে সিভিলিয়ানরাও সশস্ত্র বাহিনীর লোকদের মতন প্যাঁদানি খাইয়া সোজা হইয়া যাইবে ! সশস্ত্রবাহিনীর লোকজনও আর ব্লাডি সিভিলিয়ান কহিবে না !

ছুডুকালে হেল কমান্ডো পড়িয়া আমিও নিয়ত করিয়াছিলাম কমান্ডোই হমু ! কফালে নাই ! এখন ভাবি না হইয়া কি যে আরামে আছি !! আমার ল্যাছড়া জীবনটাই পাল্টাইয়া যাইতো ! কি দরকার আরাম হারাম করার !

ক্যাডেট অবস্থায় আমার এক ঘনিষ্ঠ যখন বাসায় আসিত তখন তাহার হাত , পিঠ দেখিয়া আমরা ভয় পাইতাম !! তাই জীবনটা সম্পর্কে একটু আধটু ধারণা আছে !! ভালো লাগিল !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.