নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এনটনি

শুধু দেখে যাচ্ছি। চাকরি করি। খাই, ঘুমাই আর দেখি। একদিন কিছু করবো। লোক খুজছি

এনটনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন সাজিয়ে, জীবন হারিয়ে….

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৮

গান শুনলে লেখাপড়া নষ্ট হয়, তাই অনেক বছর আমাদের বাসায় গান শোনা নিষেধ ছিল। আমার ক্লাস টু থেকে ক্লাস এইট, প্রায় ৭ বছর। বাসায় একটা “টুইনওয়ান” ছিল, ওই বছরগুলো বাজানো হয়নি।

ক্লাস নাইনে ওঠার পর স্কুলের বন্ধুরা একে অন্যের বাসায় ছুটির দিনে দুপুরে খাওয়া আর বিকেলে খেলার নামে একে অন্যের বাসায় যাওয়া শুরু হলে, আমার বাসায় যেদিন বন্ধুরা এলো, ভয়ে ভয়ে প্লাস্টিকে মোড়ানো টুইনওয়ান টা বের করলাম, উদ্দেশ্য বন্ধুদের আনা ক্যাসেট বাজাব। অনেক ভয় আর উত্তেজনা নিয়ে বাইরে যেন আওয়াজ না যায় সেভাবে গান বাজালাম আমরা। পুরনো টুইনওয়ান মনে হলো নতুন জীবন দিল একটা!

আমার আব্বার খুব নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন। রাত ১০ টায় খেয়ে ১১ টায় ঘুমিয়ে যেতেন, আর আমি রাত বারটায় বন্ধুদের কাছ থেকে আনা ক্যাসেট বের করে আস্তে আস্তে শুনতাম। পুরনো ক্যাসেট প্লেয়ার, মাঝে মাঝেই সাউন্ড হঠাৎ বেড়ে যেত আবার কমে যেত, তাই সতর্ক থাকতে হতো। গান শুনে ঘুমাতে যেতাম। এক ফাঁকে কিনলাম আইওয়া ওয়াকম্যান। স্কুলে বা কোচিং থেকে প্রায়ই হেঁটে বাসায় আসতাম এক জোড়া পেনসিল ব্যাটারির টাকা জোগাড় করতে। জীবন ছিল এই কষ্টে!

ক্লাস টেনে ওঠার পর বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে একটা আইওয়া (AIWA) ডিস্ক চেঞ্জার ডেক সেট কিনে ফেললাম। সিডি বা ক্যাসেট অটোমেটিক পাল্টায়, টাইমার দিয়ে বন্ধ করা যায়। আবারো জীবন পেলাম মনে হলো। ততোদিনে নিজের ক্যাসেটের একটা ভাল সংগ্রহ হচ্ছে, নিউমার্কেট এর “ইউসুফ” আর রেইনবো এর কবীর ভাই এর বদৌলতে! জীবন তখন পরিপূর্ণ লাগতো!

এরপর এলো কম্পিউটার, ৯৮ তে কিনলাম ৬.৪ গিগাবিট হার্ডডিস্ক, যার ৩ জিবি ছিল “এমপিথ্রি”। ১৯৯৪ থেকে ২০০৯, এই পনেরো বছর খুব কম রাতই ছিল গান না বাজিয়ে ঘুমিয়েছি। ডেকসেট নষ্ট, আর কম্পিউটার এ গান আর অপশনের বদান্যতায় ক্যাসেট গুলো অযত্নে থাকতে লাগলো। TDK, Sony, BKSF, Maxell ব্রান্ডের ৬০/৯০ মিনিটের নরমাল, ক্রোম, মেটাল ক্যাসেটগুলো পড়ে থাকত এক কোনায়। শোনা হতোনা, তবু ছিল, আজো মনে আছে, প্রায় ১৪৭৩ টা ক্যাসেট! ২০০৯ এ বাড়ী বদলে কিভাবে যেন ক্যাসেটগুলো হারিয়ে গেল। খারাপ লেগেছিল, কিন্ত সত্যি কথা গায়ে লাগেনি, কেননা কম্পিউটার বদল হয়েছে, গান বেড়েছে। এমপিথ্রি প্লেয়ারো ছিল।

সংসার সাজালাম, সংসার বড় হলো। প্রথমে ছেলে ঘুমাতে পারেনা তাই রাতে গান শোনা বন্ধ, এরপর জোরে গান শোনা বন্ধ করলাম নিজেই। আস্তে আস্তে শুনতে শুনতে শুধু নিজের জন্য রাতে গান শুনতাম ভুলেই গিয়েছিলাম। ঘর সজ্জার অংশ হিসেবে বেডরুম থেকে একসময় কম্পিউটারও বিদায় নিল। বাসা ওয়াইফাই করেছি আগেই, টিভিতে ইউটিউব এ গান শুনি মাঝে মাঝে। গান-বাজনা করি বলে গান তোলার জন্য গান শুনেছি, শুধু শুনতে ভুলেই গিয়েছিলাম। অফিস যেতে আসতে গাড়ীতে গান বাজাই, প্রায়ই যানজটে বসে মোবাইলে ফেসবুকে ডুবে যেয়ে কানে গান আসেনা।

একসময় মনে হতো, চাকরী করে টাকা হবে, নিজের মত করে গান শুনব, যত আওয়াজ ইচ্ছা বাড়িয়ে। আগে সব ঠিকঠাক সাজিয়ে নেই! এরপর হবে!

এখন আমার বাড়ীতে বোস (BOSE), গাড়ীতে কেনউড (Kenwood), ড্রয়ারে আইপড শাফল পড়ে আছে, তবু জীবনটা সুন্দর করে সাজাতে যেয়ে মনে হয় জীবনটাকেই হারিয়ে ফেলেছি!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৯

আমিনুর রহমান বলেছেন:




সত্যি জীবন বড়োই অদ্ভুদ যায় দিন ভালো যায় আসে দিনগুলো আরো কঠিন হতে থাকে।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪

এনটনি বলেছেন: সত্যি বলেছেন আমিনুর রহমান ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.