![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"একটি হারিয়ে যাওয়া অভ্যাসের খোঁজে - যেখানে হাতের লেখা মানেই ছিল আত্ম-প্রকাশ ও মনের আয়না"
এক সময় মানুষের জীবনের সঙ্গে কলম ও খাতার ছিল এক গভীর, প্রায় আত্মীয়তাসম্পন্ন সম্পর্ক। সেই সম্পর্কটা ছিল না শুধুই পড়াশোনার; সেটা ছিল নিজের ভাব প্রকাশ, আবেগের বহিঃপ্রকাশ, বা নিছকই নীরব আনন্দের একটা মাধ্যম। শিশুরা খাতার পাতায় প্রিয় কবিতা নকল করত, চিঠি লিখত, নিজের আবেগ প্রকাশ করত পাতার পর পাতা ভরে। খাতার এক কোণে হিজিবিজি ছবি আঁকা, মাঝেমাঝে বড় বড় হরফে কোনো কথা লিখে তার নিচে তিনটে দাগ টানা, এসবই ছিল যেন এক ধরনের অন্তর্জগতের বহিঃপ্রকাশ।
আজকের দিনে, বিশেষ করে Gen Z অর্থাৎ যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, সেই ধারা অনেকটাই পাল্টে গেছে। তাদের হাতে কলমের চেয়ে বেশি থাকে ফোন, কাগজের চেয়ে স্ক্রিন বেশি কাছের। হাতের লেখা যেখানে এক সময় ছিল মস্তিষ্ক, হৃদয় আর আঙুলের সমন্বয়ে তৈরি এক স্বতঃস্ফূর্ত শিল্প, আজ তা অনেকের কাছেই প্রায় বিস্মৃত এক অভ্যাস। একটি গবেষণা জানাচ্ছে, এই প্রজন্মের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এখন আর সহজে কিছু গুছিয়ে লিখতে পারে না। না তারা হাতে লেখে, না তারা লেখাকে এক আত্মিক চর্চা হিসেবে দেখে।
হাতে লেখা শুধুমাত্র এক ধরনের লেখা নয়, এটা ছিল একটি ধীরগতির, গভীর চিন্তাশীল কার্যকলাপ। যখন একজন ব্যক্তি নিজের চিন্তা নিয়ে বসে কলম হাতে লিখতে শুরু করে, তখন সে শুধু শব্দ গঠনের কাজ করে না, সে নিজের ভাবনাগুলোকে সজ্জিত করে, হৃদয়ের সঞ্চয়কে শব্দে রূপান্তরিত করে। প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি বাক্য হয়ে উঠে চিন্তার ছায়া।
স্ক্রিনে টাইপ করাটা অনেক দ্রুত হয়, হয়তো আমাদের দ্রুতগতির জীবনের সাথে মানানসই। কিন্তু সেই টাইপ করার মধ্যে থাকে না অপেক্ষা, থাকে না অনুভব, থাকে না আত্মবিশ্লেষণ। অনেক সময় অটোকারেক্ট এমনকি আমাদের ভাবনারও আগে শব্দ সাজিয়ে দেয়। ফলে আমরা চিন্তার গভীরতায় না গিয়ে ভেসে থাকি। লেখার মধ্যে যে মনন থাকে, টাইপিং সেই মননের গভীরতা বহন করতে পারে না।
শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাও বলছে তেমনই কিছু। অনেক শিক্ষকই এখন বলেন, বর্তমান প্রজন্ম পড়তে পারে, শুনে বুঝতে পারে, কিন্তু লিখে নিজের ভাব প্রকাশ করতে গেলেই থমকে যায়। তারা জানে না কিভাবে শুরু করতে হয়, কোন শব্দ দিয়ে সাজাতে হয়, কোথায় যতিচিহ্ন বসাতে হয়। লেখার এই দুর্বলতা শুধু ভাষাগত নয়, এটা একধরনের চিন্তার কাঠামোর ভাঙন। আর এই ভাঙনের শুরু হাতের লেখা থেকে দূরে সরে যাওয়ার মধ্যেই হয়ত নিহিত।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, হাতের লেখার সময় মানুষের মস্তিষ্কে একধরনের 'ডিপ প্রসেসিং' সক্রিয় হয়। মানে, যা কিছু লিখছি, সেটা আমরা আরও গভীরভাবে বুঝি, মনে রাখি এবং অভিজ্ঞতার অংশ করে নিই। হাতে লেখা আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে আবেগেরও সংযোগ ঘটায়। যেমন, পুরনো একটি হাতে লেখা চিঠি পড়লে যে অনুভব হয়, তা কখনোই একটা ইমেইল বা ইনবক্স মেসেজ পড়ে হয় না। হাতে লেখার মধ্যে আছে স্পর্শ, গন্ধ, ভঙ্গিমা - এক ধরণের মানুষের ছোঁয়া।
এই হারিয়ে যাওয়া অভ্যাস ফিরিয়ে আনার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবার হাতের লেখার ওপর জোর দেওয়া দরকার, শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং চিন্তাকে গুছিয়ে প্রকাশ করতে শেখানোর জন্য। অভিভাবকরা চাইলে শিশুদের হাতে খাতা-কলম তুলে দিতে পারেন, বলার জন্য না যে "তুমি লিখো "- বরং বলার জন্য "তুমি নিজের একটা খাতা রাখো, যেখানে তুমি যা ইচ্ছা লিখতে পারো।" সেটা হতে পারে দিনের অভিজ্ঞতা, একটি ছোট গল্প, এমনকি রঙ দিয়ে আঁকা কিছু। শিশুদের মধ্যে হাতের লেখাকে আনন্দের মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরতে হবে, যেন তারা বাধ্যতামূলক কাজ নয়- আবিষ্কারের আনন্দ হিসেবেই লেখার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।
বড়রাও কিন্তু এই অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে পারেন। অফিসের কাজ, প্রেজেন্টেশন, মিটিং এর পরিকল্পনা - এসব তো অনলাইনে হবেই, কিন্তু নিজেদের ভাবনা বা অনুভব যদি একটু হাতে লেখা যায়, তাহলে একটা ভিন্ন ধরণের মস্তিষ্কসন্ধি তৈরি হয়। সপ্তাহে একদিন হলেও যদি কেউ ডায়েরি লেখেন, একটা কবিতা কপি করেন, বা কেবল নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কাগজে লেখেন, তাহলে সেই অনুভূতির গুণাগুণ অনেক গুণ বেড়ে যায়। এটা শুধু মস্তিষ্কের ব্যায়াম নয়, এটা আত্মার পরিচর্যা।
হাতে লেখা আসলে একটা নীরব আত্ম-সংলাপ। প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি লাইন একটা অভ্যন্তরীণ কথোপকথনের দরজা খুলে দেয়। একটা পৃষ্ঠা লেখা মানেই সেটা মনের আয়নার মতো দাঁড়িয়ে যায়, যেখানে মানুষ নিজের দৃষ্টিকে, নিজের অভিজ্ঞতাকে, নিজের স্বপ্নকে আরও পরিষ্কার দেখতে পায়। Gen Z যদি এই শক্তিটাকে হারিয়ে ফেলে, তাহলে তারা শুধু একটি দক্ষতা নয়, একটি আত্মিক ক্ষমতা হারাবে।
লেখা মানে শুধু অক্ষরের সংকলন নয়, এটা একধরনের মননের চর্চা। যারা লেখে, তারা ভাবে; যারা ভাবে, তারা গড়ে। আজকের এই দ্রুতগামী, ইমোজি নির্ভর, স্ক্রিন-আবিষ্ট জগতে, হাতে লেখার চর্চা ফেরানো মানে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার পথ খোলা রাখা।
হয়তো আজ থেকেই কেউ শুরু করতে পারেন, একটা খাতা খুলে লিখে রাখা, "আজকের দিনটা কেমন গেল।" অথবা হয়তো লিখে রাখা, "তোমার জন্য ভাবলাম আজ কিছু।" এই ছোট ছোট বাক্যই একদিন বড় বড় চিন্তার ভিত গড়ে তোলে। এই লেখাগুলো হয়তো কাউকে পাঠানো হবে না, কিন্তু পাঠানো না হওয়া লেখাই তো সবচেয়ে নিজস্ব!
তাই, কলম তুলুন। শব্দকে নিজের মতো করে সাজান। ভাবনাকে অক্ষরে রূপ দিন। কারণ লেখা শুধু প্রকাশ নয়, এটা আবিষ্কার - নিজেকে।
২| ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:১৬
অন্ধকারের আলোর দিশারী বলেছেন: আমাদের সময় স্কুল গুলোতে সুন্দর হাতের লেখার প্রতিযোগিতা হতো। রচনা লিখন প্রতিযোগিতা হতো। তখন এইসব প্রতিযোগিতা গুলোয় অংশগ্রহন করাটা বোরিং লাগতো। তখন ভাবতাম প্রতিযোগিতা কেবলমাত্র শারিরিক হতে হবে। এসব কি???? এখন বুঝি আমাদের মনোজগতের যে উন্নয়ন দরকার সেটার জন্য ওই প্রতিযোগিতা গুলো ফলপ্রসু ছিলো। বর্তমান প্রজন্ম Gen-Z এই আবেগটা বুঝবে না.।
৩| ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:০৮
অপু তানভীর বলেছেন: আসলে এটার কোন দরকারই নেই।
আজ থেকে একশ বছর পরে দেখবেন যে কাগজের কোন ব্যবহারই নেই। পড়াশোনা সব টুকুই হবে ডিজিটাল।
জেন জিরা তাদের জায়গাতে ঠিকই আছে। আমাদের সাথে তাদের তুলনা করার কোন মানে নেই। যে কাজ আমরা করেছি সেটা ওরা করবে বা করা উচিৎ এটাও ভাবা ঠিক না।
আপনার প্রজন্ম যেভাবে বড় হয়েছে আপনার দাদার প্রজন্ম কি সেই ভাবে বড় হয়েছে? তাদের সাথে আপনাদের বিশাল বড় পার্থক্য ছিল। এবং আপনার দাদার প্রজন্ম আপনাদের প্রজন্মের উপর খুশি ছিলেন না, যেমন আপনারা নন আপনাদের পরের প্রজন্মের উপর। এমনটাই হয়ে আসছে।
৪| ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে সময় বদলায়। যুগ বদলায়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৫০
কামাল১৮ বলেছেন: মূলতঃ লেখার বিষয় বস্তুর উপর নির্ভর করে তার মনন ও মানসিকতা।