নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেগুনী আগ্

মাছরাঙ্গা

আমার শরীরের গোপন সমুদ্র বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ হচ্ছে, আমার ভেতরের সমস্ত ক্ষোভ একত্রিত হয়ে বজ্র হচ্ছে,আমার তীব্র ইচ্ছের শেষাংসটুকু এখনই ঝলকে উঠবে,বৃষ্টি নামবে।

মাছরাঙ্গা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি ও কবিতার সাথে

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৫১

কারো সাথে দেখা হলে সবাই সাধারণ প্রশ্ন করে - কেমন আছি। উত্তর দিতে অসস্তি বোধ করি। দিনযাপনের জন্য ভাল বা মন্দ থাকার দরকার পড়ে না। আগে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় বলতাম, আমি সবসময় ভাল থাকি। হাসির মধ্যে নিষ্পাপ উদ্দীপনা থাকত তাই প্রশ্নকর্তাগণ নিশ্চিত থাকতেন আমার ভাল থাকা নিয়ে। পরবর্তী দিন আজকের দিনের চেয়ে আরো খারাপ যেতে পারে তাই বর্তমানই আমার সবচেয়ে প্রিয় সময়। কিন্তু আগত দিনেরা বর্তমান থেকে দূর্বিষহ হতে থাকলো। সন্দেহ করতে থাকলাম নিজের ভাল থাকা নিয়ে। যেখানে সন্দেহ সেখানে সত্য মিথ্যার দোলাচল। সত্য বলি পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে। মিথ্যে বলতে পারি না। কষ্ট হয় কেমন আছোর উত্তর দিতে। অসস্তি হয় এড়িয়ে যেতে। আমি কিছু এড়িয়ে যেতে পারি না। সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আবার এমনি এমনি যেতে পারি না। ঘ্রানেন্দ্রিয় প্রখর থাকায় বস্তু বা বিষয়ের সুক্ষ্ম ঘ্রানগুলো তীব্রভাবে পাই। চোখ বাহ্যিক গঠন ভেদ করে রঞ্জন রশ্মির মত ভেতরের গড়নটা দেখে। শ্রবনেন্দ্রিয় শোনে কথার ভেতরকার কথা, রূপকথা, গাঁথা। এ সব দেখাদেখি বোঝাবুঝি নিয়ে চলি। বড় বেশি বোঝার বড় বেশি কষ্ট। দেখতে না চাইলেও আমাকে দেখতে হবে, বুঝতে না চাইলেও আমাকে বুঝতে হবে। এটাই আমার গড়ন।



ছোটবেলায় রচনা লিখতে হত আমার জীবনের লক্ষ্য। পড়ার কাজ পড়তাম। কোনদিন পরীক্ষার খাতায় লিখিনি। বড় হয়ে কোনকিছু হতে হবে তখন সে বোধ হয়নি। প্রথম সে বোধ হল এক কবির কবিতা দেখে। তার কবিতায় আমার প্রতিচ্ছবি। আমি মোনালিসাকে দেখলাম আমার ভেতর। আমার সামনে চলে এল লিওনার্দো। তাঁর অপরূপ তুলিতে এক সাধারণ নারীকে মহিমান্বিত করেছেন। তার বিপুল প্রতিভায় খ্যাত হলেন আর নিশ্চিতভাবে এক সামান্য নারীকে করলেন তার মতন চিরজীবী। যেখানে লিওনার্দো সেখানে মোনালিসা। একজন প্রতিভাধরকে ধরলাম পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে। যিনি মানুষ হয়েও সব মানুষ থেকে আলাদা। যার উপলব্ধির জগত আলাদা। একজন প্রতিভাধরের স্বতন্ত্রতায় আমি মুগ্ধ, বিস্মিত। আমি মোনালিসা হতে চাইলাম ঐ কবির লেখায়। স্বার্থপরের মত চাইতাম কবি যেন শুধু আমাকে লেখে। আমি ভালবাসলাম কবিকে। এক বিশেষ উদ্দেশ্যে নিয়ে। সে অনেক বড় কবি হবে, যখন সে বা আমি থাকব না, কবির লেখা নিয়ে আলাপচারিতা হবে, কবিতার ভেতরকার মানুষটি কে সবাই জানতে চেষ্টা করবে, গবেষণা করবে। গর্বে আমার বুক ভরে ওঠে। কবির কবিতার মধ্য দিয়ে বিখ্যাত হবার সাধ। কবির কবিতা যেন কবির নয়, আমার অমরত্বের নাক উঁচু অহংকার।



আমার লেখা নিয়ে কবি যখন বলে ভাল হয়েছে, লজ্জা পেতাম। তার লেখার পাশে আমার লেখা নাঁকি নাঁকি ঠেকত। তার একটানা দম্যহীন ধাক্কাতে এক রকম ঠ্যাকায় পড়ে লিখতে বসি। তার উৎসাহ উদ্দীপনার নিপীড়নে প্রেম দেখি। এবার কবির প্রেমে পড়ি। খুব, খুব, খুব সামান্য সময়ের জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রেম। হয়তো । আমার সন্দেহ আছে। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন বড় হয়ে উঠি আমার কাছে। বড় হয়ে উঠি বাহিরে ও ভেতরে। অন্তর্জগতে অন্য এক আমির উপস্থিতি টের পাই। আমার আমিত্ব আমাকে অন্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র সত্ত্বায় শক্তভাবে দাঁড়াতে বলে। আমাকে অহংকারী হতে উজ্জ্বীবিত করে। পারিপার্শ্বিক মানুষের আচরণে বুঝতাম আমি কোথাও না কোথাও তাদের চেয়ে আলাদা। কিন্তু স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে তখনও আগ্রহী হইনি।



কবির লেখালেখি দেখাদেখি দেখে আমার কবিতায় আসা। লিখতে শুরু করি ও আগ্রহ পাই। লেখা শুরু করবার পর মনে হল ইচ্ছে করলে আমি লিখতে পারি, লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারি। আমাকে লেখায় নিয়ে আসে আমার কবি। আমার লেখনীতে আমি তাকে লিখি, তার সঙ্গ লিখি, কথা লিখি। লোকে আমার লেখা দেখে যদি প্রশংসা করে সেটা আসলে তাকে বলে। সে তাড়িত করে, ক্ষুধার্ত করে লিখতে। আমার বিষয়, আমার শব্দ, আমার উপস্থাপন, আমার দেখা শোনা জানা বোঝা, সোজা হয়ে দেখা, বাঁকা করে দেখা, আমার শব্দগুলোকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেয়া সবকিছু সে টেনে নিয়ে চলে। আমি শুনতে পাই কবি যেন বলছে তুমি এগিয়ে চলো, তুমি পারবে। তার কথায় ছুটি। সে আমাকে জাগিয়ে তোলে ভিতর থেকে যা মানুষ প্রায়শই জানতে পারে না তার মধ্যে অন্য এক মানুষ আছে। একক ব্যক্তিত্বরূপে। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি আমার অর্ন্তজগতে যা কিছু আছে সেটা একমাত্র সেই জাগিয়ে তুলতে পারে। আমার প্রজ্জ্বলনের দীপকাঠি কবির হাতে।



আমার অন্তঃস্থ সত্ত্বা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হবার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমি জানি আমার সর্ম্পূণতার জন্য কবির সম্পূর্ণরূপ দরকার। অথচ পূর্ণতা প্রাপ্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার অপূর্ণতায় আমি অপূর্ণই থেকে যাই। সে এখন আর কবিতা লেখে না। বড় কষ্ট পাই। যে বিশাল জগতের সন্ধান আমি পেয়েছি তার জানালাটা শুধু কবি খুলে দিয়েছে। দরজার চাবি তার হাতে। জানি, সে দরজা বন্ধ থাকবে। কারণ আমার পাওয়া জগতকে কবি দেখছে না। ব্যক্তি কবিকে যে কোন মুহূর্তে ফেলে চলে আসতে পারি কিন্তু কবি এবং যে আমাকে দীক্ষিত করেছে, আমার আমিত্বে ও প্রয়োজনে আমি তাকে ভালবাসি। ভালবাসি যে কোন প্রতিভাকে। একজন শিল্পির চিত্রের প্রয়োজনে উলঙ্গ হতে পারি। একজন ভাস্কর্যকারের জন্য যে কোন ভঙ্গিতে দাঁড়াতে পারি। একজন কবির একটা কবিতার জন্য আমি তার প্রেম হতে পারি। একটা সৃষ্টির জন্য যা দরকার তার সবকিছু পারি।



আমি কবির কাছে ঠিক এটাই চেয়েছিলাম। কবির কাছে এই চাওয়া ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংসারজীবন মনে হয়েছে। কিন্তু সে সব ছাড়িয়ে আরো উপরের কিছু যেখানে পৌঁছালে মানুষ মহৎ হয়, চিরজীবী হয় সেখানে। একজন পূর্ণাঙ্গিনী হিসেবে কেউ আমাকে নিয়ে যাবে ঊর্ধ্বলোকে সমসাময়িক সময়কে ছাড়িয়ে। আমার ভাস্কর্য হবার ইচ্ছে ছিল। যে কোন প্রতিভার কাছে যাতে আমি সম্পূর্ণ বিলীন হতে পারি। আমি কবির কাছে তাই আশা করেছিলাম। সে আকাঙ্খা পূর্ণতা লাভ করেনি। মানুষ হিসেবে আমার কবি অত্যন্ত দুর্বল চিত্তের। এই ভীরু মানুষটি আমাকে সময়ের স্রোত ঠেলে নিয়ে যাবে তা আশা করা যায় না। অর্থাৎ আমি যা চাই তা কখনও হবে না। একজন ভীরু মানুষকে দিয়ে কিছু হয়ও না। আমি সাধারণ হতে চাইনি কিন্তু আমি সাধারণ হয়ে থাকব।



আমি জানি কোন জায়গায় নাড়া দিলে আমি কি হব। অজানা কোন উপায়ে কবি তা জানে। আমি আমার সামনে আমার পৃথিবীকে সম্পূর্ণ লুন্ঠিত হতে দেখি। কষ্ট পাই যার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা তা সে বোঝে না। আত্মার মুক্তির জন্য সাহসী মানুষ দরকার। আমার অর্ন্তলোক প্রজ্জ্বলনের জন্য আমি একজন ভীরু মানুষকে বেছেছি। হয়তো কবি বলবে তুমি তা একাই করতে পার। কিন্তু মানুষের মানবিক জগৎ সম্পূর্ণ অদ্ভুত জগৎ। আমার মনোজগতকে কারো দ্বারা তাড়িত করে তুলতে হয়। আমি পিপাসার্ত হয়ে ছুটতে থাকি সাধারণ চোখের চেয়ে আলাদাভাবে দেখা অপূর্ব জগতে। কবি আমাকে সে চোখে দেখে না।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৫৪

কৌশিক বলেছেন: +

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৫৭

মাছরাঙ্গা বলেছেন: ইহা কি জাতীয় মন্তব্য ?

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৫৭

কালপুরুষ বলেছেন: কেমন আছো?

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৫৮

মাছরাঙ্গা বলেছেন: বেশ রকম ভালো। অনেক দিন খবর নেই আপনার । সব ভাল তো ?

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১১:০৫

কৌশিক বলেছেন: সাধারণ হয়ে তোমার থাকার কোন সুযোগ নেই। এত চমৎকার লিখনীই তোমাকে অসাধারণ করে দিয়েছে।

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১১:৪৭

চিটি (হামিদা রহমান) বলেছেন: আমি পিপাসার্ত হয়ে ছুটতে থাকি সাধারণ চোখের চেয়ে আলাদাভাবে দেখা অপূর্ব জগতে। কবি আমাকে সে চোখে দেখে না। .............।সাধারণ কথাগুলো কত অসাধারণভাবে লিখেছেন। প্রতিটি কথা অনেক অর্থবহ!!

প্রিয়তে রাখলাম। সময়ে বের করে পড়া যাবে।

অনেক ভালো থাকুন
শুভেচ্ছা থাকলো।

৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:০৩

বাবুয়া বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন! অনেক দিন যাবত আপনাকে মিস করি। কেন এখোন আগের মত বেশী বেশী লিখেননা?

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:৪৬

আরিফ জেবতিক বলেছেন: জীবনগুলো এমন কেন ?

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:৫২

মাহবুব সুমন বলেছেন: এত সুন্দর করে কবে যে লিখতে পারবো :(

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:১৩

একরামুল হক শামীম বলেছেন: বাহ! বাহ!!!
চমৎকার একটা লেখা পড়লাম।

৯| ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১০:২০

ছন্নছাড়ার পেন্সিল বলেছেন: লেখাটা আমার খুব ভালো লেগেছে কোন এক অদ্ভুত কারণে। যে কোন ভাল লাগার পিছনে কী মিথস্ক্রিয়া বিরাজমান তা আমি ঠিক জানি না। তাই সে কারণ অনুসন্ধানে সময় নষ্ট না করে বলি, লেখাটা অনেক বেশিই ভাল লেগেছে। আপনাকে ধন্যবাদ!

১০| ২৬ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:৪৩

সামী মিয়াদাদ বলেছেন: কবিরা গদ্য লিখলে তা অন্যমাত্রায় বিচরন করে সর্বদা

প্রিয় কবি দেখি গদ্যও লিখেন!!!

১১| ৩০ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:২৬

উধাও ভাবুক বলেছেন:
অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।
যদি কবি তার কল্পনার রঙে না রাঙায় তবেকি পূর্ণাঙ্গিনী হওয়া যায় ?

ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও সংসারজীবন এর বাইরে একজন পুরুষ আর একজন নারীর মধ্যে সম্পর্কের আদৌ কোন সীমারেখা আছে কি ? থাকলে সেটা কোথায় !

আর কবি যে চোখে দেখবে বলে আপনি পিপাসার্তের মত ছুটতে থাকেন, হয়তো কবি ঠিকই সেই চোখে দেখেন যা আপনি দেখতে পাননা।

ভীরু বলেই হয়তোবা...

১২| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১২:১৬

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: এসো ঝাপ দেই....

প্রিয় পোষ্ট

৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৩

মাছরাঙ্গা বলেছেন: চলো। চলো যাই ক্যারিবিয়ান। চলো যাই ঈশ্বরের
দীর্ণ শীর্ণ কুটির ছেড়ে। মরা নদী ছেড়ে চলো ভাসি
সমুদ্র স্রোতে। হাসি উচ্ছ্বাসে। আনন্দ নিরিখে।

চলো। চলো উড়ে যাই। হাতছানি দিয়ে ডাকে
সমুদ্র সবুজ। ক্ষীণ বিকেলের আইল ভেঙে চলো
চষে দেই রৌদ্রের ক্ষেত। গৌর সতেজ।

চলো । ডুবে যাই তলে। সুখের ঢলে। ফেনাক দানা
দানা বুদবুদ। সাদা সাদা রাশি রাশি হাসিরা
উদ্ভাসি। চলো পাক খাই গাঙচিলে। ডানা দুটি ঘিরে।

চলো। চলো সাঁতরাই সকালে। মুখে পড়ে ঢলে
প্রেমে পড়া সূর্য। জলে প্রেমে ঢলাঢলি। তোমা
আমা গলাগলি। চলো ডুব দেই। তুলি জোনাকির টুকরো।

চলো। হাটি ধীরে ধীরে। বালুকা বিস্তরে হাটি
হাটি পায়েদের প্রেম। চলো দৌড় দিয়ে ছুঁই
আমাদের ছুঁই। চলো গড়ে আসি অগুনতি ভাস্কর্য।

১৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৯

উধাও ভাবুক বলেছেন: অন্যমনস্ক শরৎ বলেছেন: এসো ঝাপ দেই....
প্রিয় পোষ্ট

এই কবির অপেক্ষাতেই মনে হয় ছিলেন এতোদিন ? ঝাপ দিন...

১৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৭

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: অদ্বুত অদ্ভুত সুন্দর, চলো যাই..
এখনি পালিয়ে যাই
এখনি হারিয়ে যাই

৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:০৮

মাছরাঙ্গা বলেছেন: চলে তবে যাওয়া যাক তোমাতে আমাতে
পেছনে চির রোদ্রের নগর রেখে,
বহুদিন দেখি না সন্ধ্যা, চৌকোণা আকাশের ফুটো হতে
কালো আকাশের মাঝে ছাড়া ছাড়া রোশনাই চুমকি।
বহুদিন বিমর্ষ লেগেছে পূর্ণিমার চাঁদখানি,
কাপড়ে ময়লা দাগের মতন
মধ্য রাত্রির সারি সারি দালানের মাথায়
হলুদ ল্যাম্পপোস্ট, গাড়ির অনিয়মিত শাঁ শাঁ শব্দ ;
নিস্তব্ধ অন্ধকার রাত্রে নিমগ্ন সৌন্দর্যের
অমল ধবল রূপ, ভুলে গেছি বোধ হয়।

তুমি কি জানতে চাও, ফিরব কি না ?
এই মাত্র ছেড়ে আসা মুখ, অতি পরিচিত।
অতি প্রিয় কিনা, জিজ্ঞেস করলে থমকে যাবে জানি।
খাবার প্লেটের উপর প্রশ্ন রেখে খাবারের বিস্বাদ জিহবায়।
ঠোঁটে ঠোঁটে এই কথা শুনেছ বহু বার
‘‘আমাকে অন্যদের সাথে মিলিয়ো না, আমি ব্যতিক্রম’’
ব্যতিক্রম হবার সাধারণ সূত্র ভুলে গিয়ে
যারা মিশেছে এক দলে
তাদেরকে বাদ দিয়ে চলো বড় সাধারণের কাছে ।

সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় পার হল।
মসৃন নতুন দেয়ালে যখন সাদা চুনকাম দেই
আমার চতুর্পাশের সমুদয় পিলার গুলিকে বড় শক্ত দেখতাম
দেখতাম, তাদের সাদা চোখ ;
সে সব চোখ গুলিতে আজ সবুজ শ্যাওলা
রং চটে তাদের পলেস্তরা খসে পড়েছে
পেছনে ফিরলে দেখবে, আমার ভাঙা বাড়ি।

এই অন্ধকার যাত্রায় আমাদের সাংকেতিক চোখে তীব্রতা
বিড়ালের মত ধীরে, আদুল পায়ে, চলো, যাই।
আমাদের তাড়া নেই।
দিনভর একাকী মানুষ গুলো গোছানো কাপড় পরে
তাড়াহুড়া করে,
চড়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়িতে, দু নম্বর ড্রাইভার
বাইরে থেকে ঝকঝকে, মসৃন পালিশ ;
প্রেয়সীর চকচকে লিপস্টিক, শক্ত ফোমের ব্রা
প্রেমিকের অসংখ্য বার ব্যবহৃত অভিজ্ঞ হাত।
সাজের কি পরিহাস্য বাড়াবাড়ি
সমৃদ্ধ মার্জিত টাই
হায় ! কি সুন্দর তাদের ঝোলানো ফাঁস !

এর পুরোটাই মিথ্যে নয় জানি,
তবু কত কাল মেনে নেয়া যায় সত্যের অর্ধ ভাগ।

এই হালকা আলো আঁধারির সন্ধ্যায় নাহয়
আমরা ভুলে যাওয়া গল্প বলি।
শরীরের নিচে যে হৃদয় আছে তা তো এক কালে
মন্দ ছিল না,
অভিনয়ের রাংতা খুলে
সাদামাটা মনটা দেখতে পারো স্নিগ্ধ অবসরে ।
নিরেট, নির্বোধ, হাস্যাস্পদ বলে যারা গালি দিত
আমিও চালাকি করে তারপরে
অতি ভারিক্কি বিজ্ঞ মানুষের মত চলতাম
এতদিন - বাদামের খোসার মত,
তুমি আজ অনায়াসে তার সাদা শাঁস
দেখে নিতে পারো।

তাই যাওয়া যাক তোমাতে আমাতে
আমাদের প্রার্থিত গন্তব্যে।
বাদুড়ের মতন দিন বাড়ি ছেড়ে ;
স্বপ্ন, স্বপ্নের ফানুস আর চিলতে চিলতে বাস্তবে।
আসন্ন অন্ধকারে অপসৃত স্বপ্নেরা ফিরে আসবে।






১৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:০৭

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: উমম!!!! উ উ উ !!! দূর্দান্ত।

১৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৫১

মুজিব মেহদী বলেছেন: খুব ঘন করে জাল বুনে রাখে মাকড়সা-সংশয়
দেখা যায় কী যায় না একটা কুঁড়ি চেয়ে আছে
এইপারে ওত পেতে আছে চিরন্ন্যাসী পাখি
শান দেয়া ধারঠোঁট ক্ষয়ে যায় তর সয়ে সয়ে
গা না-করার ভিতর দিয়ে মুঠোভরা স্বপ্ন জেগে ওঠে--
কুঁড়িকে লিখতে চায় পাখি কুঁড়িতে লিখতে চায়

১৭| ১৭ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:১০

সাদা কালো এবং ধূসর বলেছেন: আপনারে নিয়ে ব্যাপক যন্ত্রনায় আছি,


নেন দেখি আমার নেশা শেয়ার দিয়ে আপনারে কাবু করতে পারি কিনা:





বিজেত্রীর ঘরে আমি

বিজেত্রীর ঘরে আমি যাইনি সেদিন, লোকে তবু
আমাকেই বেরুতে দেখেছে। কি করে বোঝাব আমি
গোলাপ ও আফিমের কোনো তৃতীয়-উদয়-পথে
হেঁটে গেছি এক স্বপ্নরিক্ত নটরাজনের মতো।
সেই হাড়-কঙ্কনের পথে, প্রভু, ভেবেছি বিস্ময়ে :
রঘু ডাকাতের মতো হয়ে যাই কেন যে আমরা
ওষ্ঠ চুম্বনের লগ্নে! মাটিতে অর্ধেক ডুবে থাকা
রথের চাকার গোঁয়ার্তুমি কীভাবে শরীরে জাগে!
নায়িকা-চূর্ণের রাতে, মৃত বেলফুলের ভেতর
তার গাঢ় কেশগন্ধ আমি পাই। বিজেত্রী বলেছে :
কাছে না এসেও এইভাবে নিকটে থাকার পথ
উন্মুক্ত রয়েছে, এইভাবে বাক-বিভূতির দেশে
যখন তখন যেতে পারে কেউ, সকল সম্পর্ক
হয় খরতর নদী-- সময়ের সুতো কেটে চলে...

-মজনু শাহ







তেস্রা জুলাই

উত্তাল আবেগে অঝোরে কবিতা লিখে যাচ্ছিলাম।
আর ঐসব খসড়া কবিতাই পড়ে শোনাচ্ছিলাম তোমাকে।
অনেক কবিতাই শুনে স্তব্ধ হয়ে যেতে তুমি।
কথা বলতে পারতে না।
আমি জোর করে দু-একটা মন্তব্য শুনতাম তোমার কাছ থেকে।
আমাদের কথা চলছিল
সকালে দুপুরে বিকেলে রাতে_সব সময়।
মুখোমুখি আর টেলিফোনে আর সেলফোনে।
কোথায়-কোথায়-না আমরা মিলেছি পরস্পর।
একটিই লক্ষ্য ছিল : লোকচক্ষুর অগোচর হয় যাতে
আমাদের কথা কেউ শোনেনি।
দেখেছে-পড়েছে আমার কবিতা।
তুমি-আমিই জেনেছি
কথা আর কবিতা দুটি আলাদা জিনিস।
যে-সব কথা তুমি আমাকে বলেছ,
আমি বলেছি তোমাকে_
তা আমি কাউকে জানাতে পারি না।
লিখতেও পারি না।
চিরকালের মতো সে-সব কথা
তোমার-আমার ভেতরে বন্দি হয়ে থাকবে।
লোকে দেখবে-পড়বে শুধু আমার কবিতা।
কবিতা যে কথার ভেতরের কথা ধরতে পারে না,
সে শুধু জানি তুমি আর আমি।

তারপর এল তোমার-আমার মধ্যে সাগরপাড়ের ব্যাধি।
আমাদের কথা শেষ।
কবিতাও লিখি না আমি আর।
কথার সঙ্গে কবিতার কি তাহলে একটা সাঁকো আছে ভেতরে?
কী জানি।
তোমার সঙ্গে দেখাও হয় না আর।
কথাও হয় না।
আমার সব উত্তালতা এখন স্থির হয়ে গেছে।
যেন কোনো জাদুমন্ত্রবলে।
খাবার সময় খাই।
শোবার সময় শুয়ে পড়ি।
ডাক্তার সাহেব সব নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন।
বারান্দায় বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
গাছের কাছে গিয়ে বসে থাকি চুপচাপ।
আমার অতিপ্রিয় রঙ-চাও খাই না আর।

তারপর দেখা হলো তোমার সঙ্গে
তেস্রা জুলাইয়ে।
পরস্পরকে আমরা দেখলাম কি না জানি না।
আমরা বসে থাকলাম দুটি আলাদা সোফায়।
যে আমরা দেখা হলে হতাশ কলকণ্ঠ_
ফুটে উঠত তোমার মুখে জ্যোতি_
আমি যেন টগবগ করে ফুটতাম
কেশর-তোলা একটা ঘোড়ার মতো_
সেই আমাদের ভেতরে এখন স্তব্ধতা।
তোমাকে বলব বলে কত কিছু ভেবে এসেছিলাম_
কিছুই মনে পড়ছিল না।
কিছুই বলতে পারলাম না।
তুমিও না।
এক ঘণ্টা শুধু আমরা নিস্তব্ধ বসে থাকলাম মুখোমুখি।
আমার সামনে খাবার পড়ে থাকল।
রঙ-চা নিথর হয়ে গেল।
রাত্রি থেমে থাকল যেন বাইরে।
ঘণ্টা-মিনিটও নিশ্চল।
সময় হলে তুমি দরোজা খুলে দিলে।
আমি হাত তুললাম।
তুমি হাত তুললে।
আজ সকালবেলা একটা কথা জাগছে মনে।
একসময় আমরা শব্দ দিয়ে অনেক বাক্য তৈরি করেছি,
কবিতা লিখেছি আমি সেও শব্দ দিয়ে।
তেস্রা জুলাইয়ে নৈঃশব্দ্য কথা বলেছিল,
কবিতা লিখেছিল।

আব্দুল মান্নান সৈয়দ




আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.