নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিমুগ্ধ রজনীর্র্

বিমুগ্ধ রজনীর্র্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক যেমন হওয়া উচিত (পর্ব-১)

০৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৪৬

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। ইংরেজীতে বলা হয়- Islam is the complete code of life. জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের জীবনে যখন যা কিছু দরকার সবকিছুর সমাধান দিয়েছে ইসলাম। মানুষের বৈবাহিক তথা দাম্পত্য জীবনও তার সামগ্রিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।



বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধনের নাম। আর এই বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষ আরেকজন অপরিচিত মেয়ের সাথে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হন। একজন অপরজনকে জীবনের সংগী হিসেবে বেছে নেন। সুতরাং, এ জীবনের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এ জীবনকে সুখময় করতে পারলে সারাটা জীবন হবে সুখী সমৃদ্ধশালী। আর এ জীবনে সমস্যার সৃষ্টি হলে সারাটা জীবন দুঃখ কষ্টে অতিবাহিত হয়। এ জন্য ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করতে বেশকিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছে। তাদেরকে একে অপরের সাথে ভাল ব্যবহারের নির্দেশ। এখানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কেমন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার সে বিষয়ে দু’ একটি কথা বলার জন্য কম্পিউটারের মাউস-কীবোর্ড নিয়ে লিখতে বসলাম।



আমরা জানি, ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা দান করেছে। জাহেলী যুগে যখন মেয়েদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া হত সেই যুগে ইসলাম এসে তাদেরকে পুরুষদের সমান অধিকার দিয়ে ঘোষণা করেছে যে তারাও মানুষ। তাদের অধিকার আছে পৃথিবীতে মাথা উচু করে বেচে থাকার। তাদেরকে পিতামাতা ও নিকট আত্মীয় স্বজনের সম্পদে উত্তরাধিকার বানিয়েছে।



ইসলাম নারীকে সন্তান হিসেবে যেমন অধিকার দিয়েছে তেমনি স্ত্রী হিসেবেও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। পুরুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছে স্ত্রীর সাথে সদা সদ্ব্যবহার করার। স্ত্রীর সাথে যারা কথায় কথায় ঝগড়া করে বা তাদেরকে (যুক্তিসংগত স্বাধীনতা না দিয়ে) সর্বদা শাসন করে খাচার মধ্যে আটকিয়ে রাখতে চায় তাদেরকে আমি মানুষের ভিতরেই গণ্য করি না। কারণ, তারা সন্ত্রাসী। কারও মালিকানাধীন সম্পদ তার কাছ থেকে ছিনতাই করলে তাকে আমরা ডাকাতি বলি। ঠিক তেমনিভাবে কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কারীকে ডাকাত বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। অনেকের কথা জানি- ইসলামকে খুব ভালবাসে। পাচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা সবই করে কিন্তু, বাড়ীতে স্ত্রীর সাথে তার ব্যবহার দেখে মনে হয় তার স্ত্রী যেন তার কেনা গোলাম। সে যেন মানুষই না। ইসলাম যেন তাকে কোন স্বাধীনতাই দেয় নি। তাকে তার আত্মীয় স্বজনের বাড়ী যেতে দেয় না। এমনকি নিজেও নিয়ে যায় না। মনে হয় যেন বিবাহ করার দ্বারা মেয়েটি তার দাসীতে পরিণত হয়ে গেছে। আশ্চর্য হতে হয় এদের অবস্থা দেখে। এরা কী মানুষ?!! ধিক এদের প্রতি। ইসলাম কি এতটা কঠোরতা করেছে মোটেও না। ইসলাম বলেছে- আত্মীয় স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে।

স্ত্রীকে ইসলাম অনেক স্বাধীনতা দেয়া সত্ত্বেও তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে খোদ আমাদের মুসলিম সমাজেই।



ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে নারী-পুরুষের মাঝে হৃদ্যতা ও ভালবাসা সৃষ্টি করার মাধ্যমে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে নিজেদের জীবন পরিচালনার নিমিত্তে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ (21)

অর্থাৎ, তার এটাও একটা নিদর্শন যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাদের কাছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ও শান্তিতে অবস্থান করতে পার এছাড়াও তিনি তোমাদের মাঝে হৃদ্যতা ও দয়ার সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (সুরা রুম: ২১)



কিন্তু, আমরা সমাজে এ কি দেখছি?!! কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি আমাদের কাজগুলো সঠিক হচ্ছে কিনা?

আবু দাউদ শরীফসহ বেশ কিছু হাদীসের কিতাবে এসেছে- রাসুল (সাঃ) বলেছেন:

لاَ تَضْرِبُوا إِمَاءَ اللَّهِ

অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে (স্ত্রীদেরকে) মারধোর করো না। (আবু দাউদ)

وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34) وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا (35)



অর্থাৎ, তোমরা যে সমস্ত স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তাহলে তাদের সম্বন্ধে (বড় ধরণের) আর কোন সিদ্ধান্ত নিওনা। আল্লাহ তায়ালা সবার উপরে শ্রেষ্ঠ। আর যদি তাদের মধ্যে বিরোধের আশংকা কর তাহলে, তার পরিবার ও তোমার পরিবারের মধ্যকার একেকজন লোককে দিয়ে শালিস করতে প্রেরণ কর। তারা উভয়ের মাঝে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও সবকিছু অবহিত। (সুরা নিসা: ৩৪-৩৫)



ওলামায়ে কেরামগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: স্ত্রী যদি কোন অপরাধ করে তাহলে, তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সংশোধন করতে হবে। কারণ, সেও মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল করে। তাকে বুঝাতে পারলে সামনে তার এ ভুল আর হবে না। যদি তাতেও তার সংশোধন না হয় তাহলে, তাদের শয্যা পৃথক করে দিতে হবে। এখানে ঘর পৃথক করতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। কেননা, ঘর পৃথক করে দিলে সংশোধনের পরিবর্তে আরও ক্ষতির সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিজ ঘরে রেখেই পৃথক শয্যায় রাখতে হবে যেন সে, তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে। তখন ফিরে আসলে ভাল কথা। এখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত বিষয়টা তৃতীয় কারও কানে না দিয়ে নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করে নেয়ার চেয়ে উত্তম সমাধান পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। নিজেদের ভিতরের এ ব্যাপারটা তৃতীয়পক্ষ জেনে ফেললে তাতে সমস্যার সমাধান হওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার দ্বিতীয় জনের (যার বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে) মনোকষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক।

তবে, এখানে আরেকটা কথা বলতে হয়-তা হল সর্বদা স্বামীর উদার দিল সম্পন্ন হওয়া উচিত। এমনও হতে পারে যে, স্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসতে চায়; কিন্তু, মনের মধ্যকার লজ্জা ভাঙ্গতে পারছে না। সেই পরিস্থিতি স্বামীকেই আচ করে নিতে হবে। তাহলে, আশা করা যায় দাম্পত্য জীবনে অমানিশার কালো মেঘ উকি দিতেও সাহস পাবে না ইনশাল্লাহ। এছাড়া একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা থাকা দরকার।

উপরোক্ত উপদেশ এবং শয্যা- ত্যাগেও যদি সে সংশোধন না হয় তাহলে, তাকে মৃদু প্রহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। শর্ত করে দেয়া হয়েছে যে, প্রহার যেন কঠোর না হয়।

তবে, বহু সংখ্যক হাদীসে প্রহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, আমি বলব ভালবাসা ও মহব্বতে যত সহজে কাজ হয়, মারধর করে ততসহজে সে কাজ করানো যায় না। একজন ছাত্রকে মহব্বত করে যদি পড়ানো যায়, তাতে যে কাজ হবে তাকে প্রহার করে সে কাজ হবে না।



রাসুল (সাঃ) বলেছেন:- তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম নয় যে, তার স্ত্রীদেরকে প্রহার করে।



মূল: ইসমাইল একেবি

http://alokitojibon.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.