নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনিলাম অপরিচিতের নাম

অল্প অল্প বাংলা লিখতে পারি

মাসউদ আহমাদ

আনিলাম অপরিচিতের নাম ধরণিতে, পরিচিত জনতার সরণিতে। আমি আগন্তুক, আমি জনগণেশের প্রচণ্ড কৌতুক। খোলো দ্বার, বার্তা আনিয়াছি বিধাতার। মহাকালেশ্বর পাঠায়েছে দুর্লক্ষ্য অক্ষর, বল্‌ দুৎসাহসী কে কে মৃত্যু পণ রেখে দিবি তার দুরূহ উত্তর।

মাসউদ আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিবারণ চক্রবর্তীর কবিতা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৬

আনিলাম

অপরিচিতের নাম

ধরণিতে,

পরিচিত জনতার সরণিতে।

আমি আগন্তুক,

আমি জনগণেশের প্রচণ্ড কৌতুক।

খোলো দ্বার,

বার্তা আনিয়াছি বিধাতার।

মহাকালেশ্বর

পাঠায়েছে দুর্লক্ষ্য অক্ষর,

বল্‌ দুৎসাহসী কে কে

মৃত্যু পণ রেখে

দিবি তার দুরূহ উত্তর।

শুনিবে না।

মূঢ়তার সেনা

করে পথরোধ।

ব্যর্থ ক্রোধ

হুংকারিয়া পড়ে বুকে-

তরঙ্গের নিষ্ফলতা

নিত্য যথা

মরে মাথা ঠুকে

শৈলতট-'পরে

আত্মঘাতী দম্ভভরে।



পুষ্পমাল্য নাহি মোর, রিক্ত বক্ষতল,

নাহি বর্ম অঙ্গদ কুণ্ডল।

শূন্য এ ললাটপটে লিখা

গূঢ় জয়টিকা।

ছিন্ন কন্থা দরিদ্রের বেশ।

করিব নিঃশেষ

তোমার ভাণ্ডার।

খোলা খোলা দ্বার।

অকস্মাৎ

বাড়ায়েছি হাত,

যা দিবার দাও অচিরাৎ।

বক্ষ তব কেঁপে ওঠে, কম্পিত অর্গল,

পৃথ্বী টলমল।

ভয়ে আর্ত উঠিছে চিৎকারি

দিগন্ত বিদারি-

‘ফিরে যা এখনি,

রে দুর্দান্ত দুরন্ত ভিখারি,

তোর কণ্ঠধ্বনি

ঘুরি ঘুরি

নিশীথনিদ্রার বক্ষে হানে তীব্র ছুরি।’

অস্ত্র আনো।

ঝঞ্ঝনিয়ে আমার পঞ্জরে হানো।

মৃত্যুরে মারুক মৃত্যু, অক্ষয় এ প্রাণ

করি যাব দান।

শৃঙ্খল জড়াও তবে,

বাঁধো মোরে, খণ্ড খণ্ড হবে

মুহূর্তে চকিতে-

মুক্তি তব আমারি মুক্তিতে।

শাস্ত্র আনো।

হানো মোরে, হানো।

পণ্ডিতে পণ্ডিতে

ঊর্ধ্ব স্বরে চাহিব খণ্ডিতে

দিব্য বাণী।

জানি জানি,

তর্কবাণ

হয়ে যাবে খান খান।

মুক্ত হবে জীর্ণ বাক্যে আচ্ছন্ন দু চোখ-

হেরিবে আলোক।



অগ্নি জ্বালো।

আজিকার যাহা ভালো

কল্য যদি হয় তাহা কালো,

যদি তাহা ভস্ম হয়

বিশ্বময়,

ভস্ম হোক।

দূর করো শোক।

মোর অগ্নিপরীক্ষায়

ধন্য হোক বিশ্বলোক অপূর্ব দীক্ষায়।

আমার দুর্বোধ বাণী

বিরুদ্ধ বুদ্ধির 'পরে মুষ্টি হানি

করিবে তাহারে উচ্চকিত,

আতঙ্কিত।

উন্মাদ আমার ছন্দ

দিবে ধন্দ

শান্তিলুব্ধ মুমুক্ষুরে,

ভিক্ষাজীর্ণ বুভূক্ষুরে।

শিরে হস্ত হেনে

একে একে নিবে মেনে

ক্রোধে ক্ষোভ ভয়ে

লোকালয়ে

অপরিচিতের জয়,

অপরিচিতের পরিচয়-

যে অপরিচিত

বৈশাখের রুদ্র ঝড়ে বসুন্ধরা করে আন্দোলিত,

হানি বজ্রমুঠি

মেঘের কার্পণ্য টুটি

সংগোপন বর্ষণসঞ্চয়

ছিন্ন করে, মুক্ত করে সর্বজগন্ময়।।







নিবারণ চক্রবর্তী



নিবারণ চক্রবর্তী (৭ই মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটোগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। তাঁকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নিবারণ চক্রবর্তীর যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে চক্রবর্তী রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। তাঁর রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।



নিবারণ চক্রবর্তী কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেন নি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তাঁর 'অভিলাষ' কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে তিনি পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়।



নিবারণ চক্রবর্তীর কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা, চিত্ররূপময়তা, আধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। তাঁর গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তাঁর রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাঁর দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; তিনি দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। তাঁর গান তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাঁর রচিত 'আমার সোনার বাংলা' ও 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' গান দুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত।



তিনি ছদ্মনামে লেখালিখি করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছদ্মনামটিই সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেছিল।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। শুভ কামনা থাকলো।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৩১

সুরঞ্জনা বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম!

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৫৩

আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম । হ্যাপি ব্লগিং ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.