![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
President and entrepreneur at Muktijoddhar Itihas Songrokkhon Committee Bangladesh
মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস সংরক্ষণ কমিটি , বাংরাদেশ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল ইসলাম (নাননু )
পরিচিতি
নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল ইসলাম (নাননু )
পিতার নাম মৃতঃ আঃ লতিফ মিয়া
মাতার নাম মোসাঃ উম্মে ছালমা
স্ত্রীর নাম নাসরিন ইসলাম (তনু)
মোবাইল ০১৭২৮-১৬৭৭৩২
গ্রাম ঝাউতলা ১ম গলি
ইউনিয়ন ১৯নং ওয়ার্ড , বি সি সি
উপজেলা বরিশাল সদর
জেলা বরিশাল
বিভাগ বরিশাল
অন্যান্য তথ্য
মুক্তিবার্তা নং : ০৬০১০১১০৯১
ভারতীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট নং : ৪৫৭৬১/এফ এফ নং ৩৪৮৪(চাকুলিয়া ভারত)
বাংলাদেশ গেজেট নং : ২৯৫
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রালয়ের সনদ নং : ম-১৪২২৬
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান কি না? : yes
সন্তানদের নাম ও বয়স
নাম বয়স শিক্ষাগত যোগ্যতা
তানজিয়া ইসলাম মীম ১৮ বছর এইচ, এস, সি
মোঃ মঈন উদ্দিন তুহিন ১৪ বছর ৭ম শ্রেণী
যুদ্ধের ইতিহাস
আমার বাবা ছিলেন আমার শিক্ষা গুরু। তিনি ছিলেন রাজনীতিবিদ অন্য দিকে সমাজসেবক।তিনি জনাব শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের অনুসারি। আমি যতটুকু শিখেছি তা আমার বাবার কাছথেকে শিখেছি।দেশাত্ববোধ দেশপ্রেম সমাজের নিপিরিত মানুষের দুঃখ কষ্ট তাদের কাছে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর সে কারনেই দেশের প্রতি , মাতৃভূমির প্রতি একটা প্রেমের জন্ম নেয়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি সাধারন মানুষের জন্য দেশের জন্য একটা কিছু করতে হবে।সেটি জে কি করবো তা তখন আমি নিজেও জানতাম না।আমার বাবা পেশায় ছিলেন লাইব্রেরীম্যান।বড় বড় মহৎ ব্যাক্তিদের জীবনি পড়ে আমাকে বোঝাতেন তাদের মত হওয়ার জন্য। শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেব এক পাঞ্জাবীর হাত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন সে গল্পও বলেছেন প্রিতি লতা জোয়াদ্দার , নলিনি দাস। মনোরমা মাসিমা , সূর্যসেন , ক্ষুদিরাম তাদের বিরত্বের কথা বলতেন। ১৯৬৬ সালে যখন বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেফতার হন তখন আমি বরিশাল একে স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। সকল কলেজ স্কুলের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে আন্দোলন করে।আমাদের স্কুলে ২টা গেট ছিল। গেট ২টা বন্দ করে দেয়া হয় যাতে আমরা বের হতে না পারি।তখনকার ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র স্কুলের গেটের পিলারের উপর দাড়িয়ে সকল ছাত্রদের ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দিতে এক বক্তৃতা দেন।আমি আমার ক্লাসের সকল ছাত্রদের নিয়ে শিক্ষকের নির্দেশ অমান্য করে সামনের মাঠে বেরিয়ে আসি এবং দেয়াল টপকে রাস্তায় আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে যোগ দেই।এখান থেকেই আমার আন্দোলনের সূচনা।এরপর থেকে যখনই কোন মিছিল মিটিং হয়েছে কোনটাই অংশ নিতে পিছপা হয়নি। আমার বাবাও কোনো বাঁধা দেয়নি।শুধু বলেছে লেখাপড়াটা ঠিকমত চালিও। আন্দোলনের চাপে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেল। আমার বাবা তার শারীরিক অসু্স্থতার কারণে সবকিছু থেকে অবসর নিলেন।আমার লেখাপড়া বেঘাত ঘটল কিন্তু আন্দোলনের মাঠ ছাড়লাম না। ঘাতে-প্রতিঘাতেরে মধ্য দিয়ে এলো ৭০ এর নির্বাচন। আশায় বুক বাধলাম এ নির্বাচন আমাদের জিৎতে হবে। তাহলেই আমাদের অর্থাৎ বাঙ্গালীদের মুক্তি আসবে।এবং ৯৮% সিট নিয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হলো আওয়ামীলীগ। আজ আমার বাবা নেই। তার দূরদর্শিতার কথা আমার মনে পড়ে। সে বলেছিলো হউক পাকিস্তানীরা ক্ষমতা বাঙ্গালীর হাতে ছাড়বে না। সে অবধি নানান তাল বাহানার পর ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাতে ঢাকার ঘুমন্ত রাজারবাগ পুলিশ লাইন তখনকার বিডিআর ক্যাম্পে এবং নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর হামলা চালায়। এবং হত্যা করে হাজার হাজার মানুষ।শিয়াল কুকুরের মতো লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।হাজার হাজার নিরীহ জনগণ ঢাকা থেক যে যার গ্রামে ফিরে গেলো।বরিশালে কোনো আক্রমণ হয়নি এবং হানাদার বাহিনী পৌঁছায়নি। আমরা ৭-৮ জন বন্ধু মিলে রাতদিন রিক্সা বা ভ্যান গাড়ি করে ঢাকা থেকে আসা মানুষদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এরপরই আমরা সংগঠিত হওয়া শুরু করলাম এবং যুদ্ধের জন্য তৈরী হলাম। কিন্তু খালি হাতে তো আর যুদ্ধ করা যায় না। প্রতিবেশি একজনে গাড়ি ছিলো তার গাড়ি থেকে পেট্রোল চুরি করে পেট্রোলবোমা বানালাম। তখন বুঝতে পারিনি এ পেট্রোল বোমা দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে পেরে উঠব না।মনবল ছিল, সাহস ছিল মনবল ও সাহস নিয়েই তৈরী হয়েছিলাম। মেজর এম এ জলিল সাহেব এসেছেন আমাদের নেতৃত্ব দিতে।ডাক পড়লো যারা যারা মুক্তিযুদ্ধে যেতে চায় তাদের বরিশাল সদর গার্লস স্কুলে উপস্থিত হওয়ার জন্য। আজ এতবছর পরে তারিখ মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যখন মল্লিক রোড দিয়ে সদর গার্লস স্কুলের দেয়ালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটা গুলির শব্দ এবং আমাদের ঠিক সামনেই দেয়াল ছিদ্র হয়ে কিছু শুরকি সামনে পড়লো। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভেতরে গিয়ে দেখি জলিল ভাই সবাইকে বকাবকি করছেন।ট্রেনিংএর সময় অসাবধানতার কারনে গুলি বের হযে গেছে।সবাইকে সতর্ক করে দিলেন জলিল ভাই।এমন ভুল যাতে আর না হয়। হঠাৎ করে কে যেন ঘোষণা দিল “যারা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চাও তারা লাইন দিয়ে দাড়াও “ । আমি ও আমার এক বন্ধু লাইনে দাড়িয়ে গেলাম। মনে আনন্দ সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যাচ্ছি।এক এক করে সকলের সামনে জলিল ভাই এলেন নানান প্রশ্ন করলেন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে।আমার সামনে এসে হঠাৎ দাড়িয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করলেন তোমার বয়স কত? আমি বল্লাম বিশ। দেখেতো মনে হয় না তোমার বয়ষ বিশ বছর। বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে এসেছো? আমি বল্লাম হ্যা। সে বিশ্বাস করলোনা বল্লোন তুমি ছোট পারবে না। এই বলে লাইন থেকে বের করে দিলেন।এই দেখে আমার বন্ধু ও লাইন থেকে বের হয়ে এলো। আমার সম্পর্কে খালু হন উনি পিরোজপুর মঠবাড়িয়ার এমপি জনাব এ্যাডভোকেট সামছুল হক তিনি ও মাঠে উপস্থিত ছিলেন তার কাছে গেলাম তিনিও বকাবকি করে বাসায় চলে যেতে বল্লেন এবং আরো বল্লেন মেজর জলিল ভাইয়ের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।কি আর করার একরকম কাদতে কাদতে ফিরে এলাম।নতুন করে আবার পরিকল্পনা করতে শুরু করলাম কি ভাবে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া যায়।আমার বাসার পাশে হাসপাতাল রোডে ল-কলেজের মাঠে একটা টিনের ঘর ছিল সেখানে কিছু ছাত্র থাকতো।বাকেরগঞ্জের আবু ভাই কর্ণকাঠির মধু ভাই এরকম আরো অনেকে সবার নাম আজ মনে নাই তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করলো যার নেতৃত্ব ছিল আলেকান্দা বাংলাবাজারের নজরুল ভাই।পরবর্তিতে তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন।তার নামে আলেকান্দাতে “নজরুল পাঠাগার” নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুরু হলো আমাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি , আমাদের কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। পাইপ কেটে হাতে তৈরী গ্রানেড বানানো শুরু করলাম পেট্রোল বোমা বানালাম।চিন্তা ছিল যতদিন পর্যন্ত বরিশালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আক্রমন না করে ততদিন আমরা প্রস্তুতি নিব এবং সেনাবাহিনী আসার পর আমরা গ্রামের দিকে চলে যাব এবং গ্রাম থেকে এসে ঝটিকা আক্রমন করবো। ২৪ এপ্রিল রাত্রে হানাদার বাহিনী বরিশাল শহর আক্রমন করে দখল করে। এরপরদিন সকালে আমি আমর সাথের দল ভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা বাবুগঞ্জের বাহের চর গ্রামে রাশেদ খান মিলনের বাড়ী চলে যাই। সেখানে পৌছার পরে মিলন ভাইয়ের সাথে আমাদের দেখা হয়।সে বললো আমার বাবা মুসলিমলীগ নেতা এতএব যেকোন সময় পাকিস্তানীরা এখানে আসতে পারে।তাই তোমাদের জন্য আমাদের এই স্থান নিরাপদ নয়।ঐ দিন রাত্রে নৌকা যোগে অন্যত্র চলে যাই।যাবার পথে পাক বাহিনীর আক্রমনের স্বীকার হই। তখন আমরা আমাদের কাছে হাতে বানানো বোমা সহ যাকিছু ছিল তা নদীতে ফেলে দিয়ে আমরা পানিতে ঝাপদিই এবং পালিয়ে প্রাণ বাচাই। আমাদের গ্রুপে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল সকলেই গ্রামের ছেলে একমাত্র শহরের ছিলাম আমি, আমার ব্নধু জিয়াউল হক ও নজরুল ভাই এই তিন জন।নজরুল ভাই বয়সে বড় বিধায় দলের নেতৃত্ব দিত। তিনি বললেন তোমরা যে যার মত জীবন বাচাও আমরা পরবর্তীতে আমরা আবার একত্রিত হব। এর পর তিদিন বিভিন্ন গ্রামে আত্মগোপন করে থাকি।লোক মুখে জানতে পারলাম বরিশাল শহরের পরিস্থিতি অনেক খারাপ শহর পাক সেনাদের নিয়ন্ত্রনে । তখন আমরা দুই বন্ধু শহরে বাসায় ফিরে আসি এবং দেখি বাসায় আমার বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই।আমার বন্ধু জিয়াউল হকের বাবা তখনকার জেলা শিক্ষা অফিসার ছিল।আমাদের মহল্লায় তিনি থাকতেন।সেখানে জানতে পারলাম আমার বাবা মা ভাই বোন আমার মায়ের মাতুলবাড়ী চলে গেছেন।আমি সেখানে গিয়ে তাদের সাথে মিলিত হই। প্রায় ১৫ দিন সেখানে অবস্থান করার পর বরিশাল শহরের অবস্থা সাভাবিক হবার পর আমাদের বাসায় ফিরে আসি।এবং সব বন্ধুরা মিলে সংগঠিত হবার চেষ্টা করি।তখন শান্তি কমিটি গঠন হয়েছে।আমাদের এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন নতুন বাজারের মতি মিয়া।তিনি একদিন আমাকে রাস্তায় দেখে হুমকিদিলেন এবং বললেন আমি যেন মুক্তিযুদ্ধে না যাই। এবং আমার বাবাকে শতর্ক করে দিলেন। কিন্তু তার ভয়ে আমরা সংগঠিত হওযার জন্য বিভিন্ন দিকে ছুটে বেড়াই। কিভাবে যেন আমাদের গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে যায়।হঠাৎ করে একদিন তিন ট্রাক পাক হানাদার বাহিনী আমার বাসা ঘেরাও করে এবং আমাকে ধরে নিয়ে যায়।ঐ দিন সারারাত আমার উপর অমানুসিক নির্যাতন করে।তাদের একটাই প্রশ্ন ছিল আমি কাদেরকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি নিয়েছি এবং সুধীর সেনের পরিবার কোথায় লুকিয়ে রেখেছি।আমি শত নির্যাতন সয্য করে মুখ খুলি নাই।আমার প্রতিবেশি এক বিহারী পরিবার ছিল তার সহায়তার আমি পরের দিন মুক্তি পাই কিন্তু উনি না থাকলে হয়তো আমি প্রানে বাচতে পারতাম না।সেই বিহার মিথ্যা কথা বলে মুমুর্শ অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে এক সপ্তাহ তার বাসায় রেখে চিকিৎসা করান পরে আমি শুস্থ হয়ে আমার বন্ধুদের খুজতে থাকি।কয়েকদিন পর জিয়াউরকে পাই ও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য ভারত যাব।কিন্তু পথের সন্ধান করিতেছি । জিয়াউরের বাবা খবর দিলেন যদি আমরা গোপালগঞ্জ এর ওরাকান্দি ঠাকুর বাড়ী পর্যন্ত পৌছাতে পারি তাহলে ওখানথেকে আমরা ভারত যাবার দিক নির্দেশনা পাব।এবং আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পরের দিন ভোর রাত্রে আমরা রওনা হব।রাত্রে খাবার জন্য বাবা মার সাতে বসছি। আমার বাবা আমার সামনে থেকে খাবার টেনে নিয়ে যায় এবং বরেন যে আগে বলবি তুই বরিশাল কবে ছাড়বি।মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি চিন্তা ছিল খাবার খেয়ে বাবা মার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধে যাবার জন্য বিদায় নিব কিন্তু না খেয়েই সেখান থেকে উঠে গেরাম বন্ধুর বাসায়। তার বাসায় রাত্রে থেকে ভোর ৪টার সময় শহর ত্যাগ করে শিকারপুর হয়ে নৌকায ও পায়ে হেটে সন্ধায় ওরাকান্দী ঠাকুর বাড়ী গিয়ে পৌছি।সেখানে গিয়ে দেখি বিভিন্ন পেশার অনেক লোক জড় হয়েছে ভারতে পালিয়ে যাবার জন্য।একটি দল সেখানে ছিল যারা শুধু মুক্তিযুদ্ধে যাবার জন্য সমবেত হয়েছে।এমন অবস্থা কোথাও বসার ঠাই নাই। একটি নৌকায় ৫জন লোক রাত্রী যাপন করেছি।ভোর রাত্রে মাইকে ডাকদিয়ে সকলকে ভারত যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বলে।বিল এলাকা বিধায় পানির ভিতর দিয়ে পথ অতিক্রম করতে হয়েছে।মধুমতি নদী পার হয়ে লোহাগড়া , আড়পাড়া. গঙ্গারামপুর পৌছি। গঙ্গারামপুর স্কুলে কিছু সময়ের জন্য বিশ্যাম করি, তখন রাত্র হয়েছে,সেখানথেকে আবার পায়ে হেটে কালিগঞ্জ পৌছাই। পরেরদিন রাত্র ২টার সময় হাইওয়ে রোড অতিক্রম করি, সেখানে আমরা রাজাকারের হামলার শিকার হই। আমাদের কাছে টাকা পয়শা ছিল না কিন্তু যে সকল লোক ভারতের উদ্দেশ্য রওনা করেছিল তাদের সব কিছু লুট করে নিয়ে গেছে একটি যুবতী মেয়েকে ও তারা যোর করে তুলে নিয়ে যায়। আমরা কেহই বাধা দেয়ার সাহস পাইনাই কারন তাদের কাছে অস্ত্র ছিল আর আমরা খালি হাতে ছিলাম। প্রধান রাস্তা অতিক্রম করার পরে বাগধা বডার অতিক্রম করে মানিক ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। মানিক ভাই মনরমা ষ্টুডিওর মালিক আলেকান্দায় তার বাসা। তার মাধ্যমে আমরা পিপা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যাই সেখানে ২ দিন থাকার পর মানিক ভাইয়ের সহযোগীতায় আ স ম ফিরোজ ভাইকে বলে ভারতীয় সেনাবাহিণীর প্রশিক্ষনের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। ২৫২ জন যুবক আমরা বিহারের চাকুলিয়া সেনা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য রওনা করি। ২ দিন পর চাকুলিয়ায় পৌছাই।সেখানে আমাদের দীর্ঘ একমাস প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ভারতীয় সেনা সদস্যরা।আধুনিকে এ্যাক্সপ্লোসিভ ও আগ্নেয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। ৩০৩ রাইফেল SMG/SLR/LMG/২” মটার, ৩” মটার/ রকেট ল্যান্সার/বিভিন্ন প্রকার মাইন ইত্যাদি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে কল্যানী আসি, সেখান থেকে ঐ দিন আমরা টকি ৯নং সেক্টরের প্রধান কার্যালয়ে আসি। প্রত্যেকের নামে নতুন অস্ত্র বরাদ্দ দিয়ে ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগের নেতৃত্বে শ্যামসের নগর মুক্তিযোদ্ধ ক্যাম্পে আসি। আমার জীবনে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং এর পরে শ্যামসেন নগর ক্যাম্প। সেখান থেকে ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ ভাই এর অধিনে স্বাধীনতা অর্জন পযর্ন্ত তার সাথেই ছিলাম।শ্যামসেন নগর সুন্দবন ভারতের লোকালয়ের একদম শেষ প্রান্তে। একটা রাইস মিল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ধংশ স্তুপ। সেখানেই তাবু খাটিয়ে আমাদের ক্যাম্প। বিহারের চাকুলিয়ায় ট্রেনিং এর সময় পাওয়া একটা কম্বল, একটা সিঙ্গেল পাতলা চাদর একটা দরী এই ছিল সম্বল।মাটিতে লতাপাতা খড়কুটা বিছিয়ে রাত্রি যাপন করা হত।খাবার নিজেদের ই রান্না করে খেতে হতো রেশন আসতো ক্নিতু তা পর্যাপ্ত না।ক্যাম্পে আমরা প্রায় ৫০/৬০ জনের মতো ছিলাম তবে বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাই বরিশাল শহরের ছিলাম আমরা।মেজর জলিল ভাই এর নির্দেশ ছিল বড় কোন ঝুকি না নিয়ে ছোট খাটো গেরিলা অপারেশন চালানোর।আমাদের ক্যাম্প ছিল ভারতে পাশেই নদী নদীর ওপারে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমী বাংলাদেশ।সেখানে হানাদার বাহিনী বাংকার করে অবস্থান করছিল।নদী পার হয়ে চোরা পথে অপারেশন করে আবার ক্যাম্পে ফিরে আসতাম।যাওয়ার সময় সবাই ১০/১২ জন একত্রে যেতাম কিন্তু ফেরার সময় সবাই একত্রে ফিরতে পারতাম না।যে দিক দিয়ে পারতাম ফিরে আসতাম অনেক সময় নদী সাতরিয়ে ফিরতে হতো।বাংলাদেশের ভিতরে আমাদের কিছু লোক ছিলতারা সব খবর এনে দিত।সেই অনুযায়ী আমরা রেকি করে তার পরই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতাম।কে কে অপারেশনে যাবে কে কি অস্ত্র নিবে তা ক্যাপ্টেন বেগ ভাই নির্দিষ্ট করে দিতেন ও সব কিছু পরিকল্পনা করে ম্যাপ করে বুঝিয়ে দিতেন।আমাদের কাছে ৩০৩ রাইফেল, এস এল আর, এল এম জি, এস এম জি, ২” মটার মাইন গ্রেনেড ব্যাটা গান এমজি এই ছিল সম্বল।এক সময় আমরা বডারের হানাদার বাহিনীকে হাটিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর দখল করে নিই।কিন্ত বেশি সময় স্থায়ী হতে পারি নাই। তার কারন আমরা পেছন থেকে সাহায্য পাইনাই। কেন্দ্রের নির্দেশ ছাড়াই আমরা অভিযান চালাই এবং সফল হই।সেই যুদ্ধে আমাদের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন ও অনেক হানাদার মারা যায় বাকিরা পালিয়ে যায়।পরবর্তীতে তারা অনেক শক্তি নিয়ে আমাদের আক্রমন করে ফলে আমাদের কাছে ভারি অস্ত্র নাথাকার কারনে পিছু হটতে বাধ্য হই।আমরা যত গুলো অপারেশন করেছি তাতে আমাদের সাথে ভারতীয় কোন সেনা সদস্য ছিল না। শ্যামনগর পারুলিয়া ব্রিজ এর উপর দিয়ে হানাদার বাহিনী গাড়ী নিয়ে বডারে টহল দিতে আসতো সিদ্ধান্ত হলো ঐ ব্রীজ ধংশ করে দিতে হবে।তাহলে বডার এলাকা মুক্ত হবে। এর আগে দুই গ্রুপ পারুলিয়া ব্রীজ ধংশ করার পরিকল্পনা করে সফল হয়নি।অতপর নির্দেশ এলো আমাদের উপর ব্রীজ ধংশ করার।ক্যাপ্টেন বেগ ভাই আমাদের নিয়ে রেকি করে আসলেন আমাদের ই এক মুক্তিযোদ্ধা তার নাম আজ মনে নেই । সিদ্ধান্ত হলো মোট ৯ জন এই অপারেশনে অংশ নেবে। ৪ জন করে দুই গ্রুপ দুই দিক থেকে কাভার দেবে এবং বেগ ভাই নিজে এ্যাক্সপ্লোসিভ ফিট করবেন। ব্রীজের দুই পাশে হানাদার বাহিনী পাহারায় ৩ জন করে ৬ জন।অনেক দুর থেকে একটি কলাগাছ নিয়ে মাথার উপরে কচুড়িপানা দিয়ে স্রোতে ভাসতে ভাসতে ব্রীজের পিলারে এ্যাক্সপ্লোসিভ ফিট করে নিরাপদে ফিরে আসবেন। টাইমার ড্রেটনেটর দিয়ে চার্চ করে ফিরে নিরাপদে ফিরে আসার আগেই ওরা সন্দেহ করে বেগ ভাইয়ের উপর গুলি বর্শন করে।আমরাও সাথে সাথে হানাদার বাহিনীর অবস্থান লক্ষ গুলি শুরু করি ওরা বেগ ভােইকে ছেড়ে আমাদের উপর আক্রমন করে।আমরা আধিরে ধিরে পিছনের দিকে সরে আসি। ঐদিকে বেগ ভাই ও নিরাপদে আমাদের নির্ধারিত স্থানে সবাই মিলিত হই। ওরা বুঝতে পারেনাই কি হতে যাচ্ছে। ওরা দুই গ্রুপই একজনের পিঠের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে ব্রীজের উপরে উঠে এলা আর ঐ সময় ব্রীজ ধংশ হয়ে গেল।আমাদেরও কাজ শেষ আনন্দে আমরা ক্যাম্পে ফিরে এলাম।এতে বডার এলাকা মুক্ত হয়ে গেল।এরপর হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ এলাকা মুক্ত করলাম হানাদার বাহিনী পালিয়ে গেলেও রাজাকারদের তো সংগে নিয়ে যায়নি।মুন্সিগঞ্জের এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে ১১ জন রাজাকার ধরে নিয়ে আসলাম। এলাকাবাসীর মতে এরা একটা সংঘবদ্ধ দল রাজাকারে যোগ দিয়ে অস্ত্র নিয়ে নিরিহ ব্যাক্তিদের বাড়ীতে ডাকাতি করে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী লিখে নিয়ে তাদের মেরে ফেলেছে এমন অনেক অভিযোগ। সিধান্ত হলো এদের কে মেরে ফেলা হবে কারন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব এদের বোঝা বহন করার মত অবস্থা নেই। সিদ্ধান্ত অনুযাযী ১১ জনকে পানিতে নামিয়ে এ্যাক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হলো।এলাকার জনগন সামনে ছিল তারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এলাকা মুখরিত করে তুললো। এরপর বেশ কিছু দুরে শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান বাড়ীতে আছে খবর পেয়ে তার বাড়ী রেড দিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্য তাকে পেলাম না। অজ পাড়াগায়ে সুবিসাল অট্টালিকা হাকিয়ে বসেছে। আমরা এ্যাস্কফ্লোসিভ চার্জ করে নিরাপদ দুরত্বে সরে আসলাম ধংশ করে দিব কিন্তু ফাটল ধরলো ধংশ হলো না মজবুত গাথনির কারনে।পরে বেগ ভাই নিজে চার্জ করে ধংশ করে দিলো। শ্যামনগর ক্যাম্প এ থাকার সময় বিউটি অফ খুলনা ছোট লঞ্চটিতে হানাদার বাহিনী রসদ নিয়ে যাচ্ছিল ঐ লঞ্চ তাদের রসদ সহ উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিলাম।ঐ লঞ্চে করে আমাদের গন্তব্য বরিশাল যাওয়ার নির্দেশ এলা সাথে প্রায় ৫০০ শত মুক্তিযোদ্ধা যোগ দিল। তার থেকে কিছু মুন্সিগঞ্জ এ রেখে বাকি সবাই লঞ্চ এবং ৪/৫টি বড় নৌকা নিয়ে লঞ্চের সাথে বেধে সুন্দরবনের ভিতরদিয় রওণা দিলাম গভির রাত জঙ্গলের ভিতর কিছুই বোঝার উপায় নাই।প্রতি মুহূর্তে আক্রমনের জন্য তৈরী সবাই, যে কোন দিকথেকে আমাদের উপর আক্রমন হতে পারে।হঠাৎ লঞ্চ থেমে গেল জানতে পারলাম আমরা হানাদার বাহিনীর ঘেরাউতে পড়েছি।সম্মুখ বিপদ।বেগ ভাই সুন্দরবনে মেজর জিয়া ভাই ছিল তার সাহায্য চাইলেন ওয়াকি টকির মাধ্যমে।পরে জানতে পারলাম হানাদার বাহিনী নয় জিয়া ভায়ের এলাকায় ঢুকে পড়েছি।তারা ভেবেছিল আমরা হানাদার বাহিনী আর আমরা ভেবেছিলাম তারা হানাদার বাহিনী।ওয়াকিটকি থাকায় রক্ষা হয়েছে না হলে কি হতোতা আল্লাহ ই জানেন।রাতে জিয়া ভাইর ক্যাম্পে থেকে পরের দিন আমরা রওনা দিলাম। এর মধ্যে বাংলাদেশ বারত যৌথ বাহিন ঢাকা সহ বিবিন্ন এলাকা আক্রমন করেছে। হানাদার বাহিনী এলাকা ছেড়ে ক্যান্টনমেন্টে আশ্র নিয়েছে। অনেকে পথ খুজে না পেয়ে পোশাক ছেড়ে সাধারন পোশাকে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যাচ্ছিল। এলাকার জনসাধারনের হাতে যেই ধরাপরেচে এলাকার লোকজন তাদের মেরে ফেলেছে।এমন অনেক খবর শুনতে শুনতে এক সময় বরিশাল কালিজিরা নদীতে নবগ্রাম বোডের মাথায় আমাদের যাত্রা সমাপ্ত করি।এসে শুনতে পারলাম বরিশাল শহরে ওয়াপদাতে তারা ক্যান্টনমেন্ট বানিয়েছে ও সবাই সেখানে অবস্থান করছে।এখনো আত্মসমর্পন করে নাই।আমরা ১৭/১৮ ডিসেম্বর বরিশালে পৌছে তাদের আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করি।আমাদের সাথে বরিশাল মেডিকেলের ২য় বর্ষের ছাত্র মইনুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার ছিলেন।তার উপর দায়ীত্ব পড়লো শিকার পুরে কিছু শত্রু সেনা অবস্থান করে ছিল তাদের গ্রেপ্তার করে আনার জন্য তিনি তাদের বন্দি করে নিযে আসলেন। আমাদের বেগ বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধ এখানেই শেষ হয়নি।বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ৩১শে জানুয়ারী আবার আমরা ঢাকা মিরপুর ১১নং এ হানাদার বাহিনী এপযর্ন্ত আত্মসমর্পন করেনাই । আবার আমরা বাংলাদেশের সর্বশেষ হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আত্মসমর্পন করতে বাধ্র করি। এরপর ফিরে যাই আবার আমার ছাত্র জীবনে।ফিরে আসি বাবা মায়ের কোরে। শুরু হয় জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম।আজও সে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি অভাবের তারনায় রেখাপড়া বেশীদুরে আগতে পারিনি পিতার যায়গা জমি যা ছিল নদীতে নিয়েগেছে। বর্তমানে ভূমীহিন ছিন্নমূল বেকার জীবন জাপন করছি। সমাজের যে পরিবর্তনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম তা আর হলোনা তবে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ন মেখ হাসিনা অনেকটা এগিয়ে নিয়েছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৬:৫৭
মোঃ মাসুদুল করিম অরিয়ন বলেছেন: আরো মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস পড়তে ভিজিট করুন
“মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ”