নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

there is no truth but Allah

i want to live simple and die simple

আল মোমিন

i want to live simple and die simple

আল মোমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ইউসুফ

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৩৬

           বিসিএস ক্যাডার এ পোস্টিং হলো মনপুরায় – উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ।চাকুরির সুবাদে অনেকের সাথেই পরিচয় । এর মাঝে যে কয়টি চরিত্র অবশ্যই মনে দাগ কেটে রয়ে যাবে তার  একটির নাম - ইউসুফ । মনপুরা  উপজেলা স্বাস্থ্য  কমপ্লেক্স হাসপাতলে এক নামে চিনে সবাই তাকে । পদবি –হারবাল এসিস্টেন্ট ।কিন্তু হাসপাতালের হেন কাজ নাই যা সে করে না । নতুন স্যার রা এলে স্যারদের মোট বয়ে তার  রুম এ পৌঁছে দেয়া থেকে শুরু হয় তার সাথে পরিচয় । এর পর কেবল ইউসুফ আর ইউসুফ । ঘর ময়লা হয়ে গেছে ? –ইউসুফ । অফিস এর টেবিল -চেয়ারে ধুলা ? –ইউসুফ । চা-সিঙ্গারা খেতে মন চাইছে ? - ইউসুফ । হাসপাতালের যে কোন অনুস্ঠানে খাটবে কে -ইউসুফ ।কাজে ক্লান্তি নেই  , নেই ফাকি । খাটতেও পারে খুব ।

 

           সরকারি প্রজেক্টে চাকুরি হয় তার । এখনো রাজস্ব খাতে স্তানান্তরিত হয় নাই । বেতন পায় না নিয়মিত । আর চাকুরীর অনিশ্চয়তা তো মাথার উপর খাড়ার মতো ঝুলে আছেই । বেতন নিয়মিত নয় ( এবং পরযাপ্ত তো নয় ই ) বলে হাসপাতালে সারাদিন খেটে খুটে নানা রোগীর কাছ থেকে বকশিস  এবং মাঝে মাঝে আমাদের দেয়া বকশিস মিলে ২০ , ৫০ বা কখনো ১০০ যাই হোক তাতেই চলে তার দিন ।কিন্তু তবু কাজে তার না নেই ।

 

             খুব সকালে , ৮ টার আগেই হাসপাতালে এসে হাজির হয় সে । বহিঃবিভাগের টিকেট ঠিক করে , ওসুধ গোছায়  , ওষুধ দেয় । এর মাঝে কোন কাটাকাটির রোগি , একসিডেন্টের রোগী এলে  আমাদের সাহায্য করে ড্রেসিং বা অন্য কাজে ।কখনো কোন কারনে অন্তঃবিভাগে নার্স  ( nurse) না থাকলে রোগিকে স্যালাইন , ইঞ্জেকশন ও সেই দেয় ।শ্বাসকস্টের রোগিকে নেবুলাইজ় করা ও তার ই কাজ । এই করতে করতে দুপুর দুটার দিকে সে বাসায় যায় খেতে । কিন্তু প্রয়োজনে ফোন দিলে তক্ষুনি ছুটে চলে আসে । নয়ত চারটার দিকে ফিরে আসে ।কখনো আমাদের প্রাইভেট চেম্বারে সাহায্য করে ( আমাদের চেম্বার হাসপাতালের ঠিক উলটা দিকে , তিরিশ সেকেন্ডের পথ ) আবার একই সাথে হাসপাতালের গারডের কাজ করে – যে কোন রোগি এল কিনা ।এ সময় অবসর মতো বসে বসে বহিঃবিভাগের ওষুধের হিসাব মেলায় । রোগির চাপের উপর নিরভর করে কখনো কখনো রাত নয়টা , কখনো দশটায় কখনো বা বারটায়  বাসায় ফেরে ।

 

                 ছুটি নেয় না বললেই চলে ( এমনকি ইদে সবাই যখন বাড়ি চলে যায় তখনো ভরসা হয়ে থাকে -ইউসুফ । বছর জুড়ে প্রতিদিন অক্লান্ত শ্রম দিয়ে চলেছে সে এভাবে । কিন্তু চাওয়া খুব সামান্যই । এক কাপ চা আর বিস্কুট খাইয়ে মেলা দিন মেলা কাজ আদায় করেছি ওকে দিয়ে । অবশ্য ভাল খেতে পেলে বেশ খুশি হয়  সে । হবেই না কেন – মনপুরার মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ভালো খাবার হয় ই কালে ভদ্রে , আর হলেই ওকে খাওয়াছে কে । পোলাও ( নিম্নমানের পোলাও  এর এর চাল ই শুধু এখানে পাওয়া যায় ) আর গরুর মাংস (মনপুরায় গরুর মাংস খুব ই দুরলভ ) ওর খুব প্রিয় । ওটার প্রতি দুরবলতা দেখে ওকে কয়েকদিন খাইয়েছি ।

 

                  বেশিরভাগ সময় ই সে হাশিখুশি । মাঝে মাঝে  হয়ত নিজের অবস্থা ভেবে চিন্তিত হয় ।

 

                 বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এরকম কত ইউসুফ পরে আছে কে জানে । কিন্তু আমি মনে করি স্বাস্থ্য খাতে এদের অবদান অনেক । এদের নিরলস পরিশ্রমে আমরা অনেকদুর এগিয়েছি । ইউসুফের সুন্দর জিবন কামনা করে আজ এখানেই থামছি ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:২৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: ইউসুফের জন্য মনের ভিতর থেকে অনেক শ্রদ্ধা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.