![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
i want to live simple and die simple
টুকরো শৈশবঃ
১। টিভি জিনিসটার সাথে যখন পরিচয় ঘটে তখনো নিম্ন –মধ্যবিত্ত আমাদের ঘরে টিভি আসে নাই । টেলিভিশন ( টিভি ) দেখার জায়গা ছিল আমার তৎকালীন জানে –জিগার বন্ধু ( সামনের বাসায় তিনতলায় থাকতো ) এর বাসা আর আমাদের খালাতো- মামা এর বাসা। ( মামাদের বাসায় ই প্রথম ভি সি পি দেখি এবং ওই সময় ওখানে অনেক রাতে হিন্দি সিনেমা দেখতে দেখতে কার্পেটেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম । কষ্ট একেবারে বিফলে যায় নাই - কোন টিচার এবং কারো সাহায্য ছাড়াই কেমনে কেমনে যেন হিন্দি শিখা ফালাইসি ) ।
কিছু পরে আমাদের বাসায় টি ভি ও ফ্রিজ দুইটা ই আসে একসাথে (ডাবল ধামাকা )! এ যেন একদিনে দুই ঈদ , এক আকাশে দুই চাঁদ । এর নেপথ্য ছিলেন আমার বড় ভাই । প্রতি মাসেই নিয়ম করে দেশ থেকে আব্বার কাছে চিঠি পাঠানো হতো । আম্মার চিঠির সাথে আমাদের তিন পিচ্চির নানা আবদারে ভরা তিনটা বাচ্চা চিঠিও যেত একই খামে ।( চিঠি লিখতে ভালো লাগতো না বলে আমার চিঠি খুব বেশি বড় হতো না । তবে তার মধ্যেই চাওয়া-পাওয়ার দড়ি-টানাটানি ঠিক ই করে নিতাম )। সেরকম ই এক বাচ্চা চিঠিতে আমার বড় ভাই আচ্ছা এক আব্দার করে বসেন - আব্বা আমার জন্য “টিবি” আর “ফিরি” পাঠাইবেন । (!! আব্বা ঠিক ই বুঝেছেন যে তার বড় পোলা সুদূর আরব আমিরাত থেকে বসার পিড়ি [আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় “পিড়ি” কে ফিরি বলে] আনার আব্দার করে নাই ! )
তো একদিন সত্যি ই “ফিরি” আর “টিবি” এসে হাজির !
যেহেতু বড় ভাইয়ের আব্দার জয়যুক্ত হয়েছে তাই এই দুই বস্তু নিয়া তার মাতব্বারি ও সয়ে নিতে হল ।
প্রথম প্রথম তো ফ্রিজ ধরাই যেত না !এখন আশ্চর্য লাগে, কিতু সত্যি সত্যি তখন ফ্রিজে তালা লাগিয়ে রাখা হত ! পড়ে আস্তে আস্তে ফ্রিজ তালাবিহিন ই থাকতে লাগলো আর নিয়ম কানুন ও শিথিল হল । তবু - দরজা এমনে খুলবি না , এত জোরে লাগাবি না , এতক্ষণ ফ্রিজ খুইলা রাখবি না , বিদ্যুৎ গেলে গা ফ্রিজ খুলবি না ( তাহলে নাকি গ্যাস চইলা যাইব ! ) এই সব উপদেশ প্রায় ই শুনতে হইত । ফ্রিজ পরিস্কার করার পুরা কাজ এর ভার ছিল একমাত্র মা ও বড় ভাই এর ( পাছে আমরা কখন কি নষ্ট করি ! ) ।
তারপরও ফাকে ফাকে নানা এক্সপেরিমেন্ট এর চেষ্টা অব্যহত রাখতাম। ফ্রিজ এর টেম্পারেচার রেগুলাটর ঘুরানো ছিল এর মধ্যে অন্যতম , আর চান্স বুইঝা বিদ্যুৎ না থাকা অবস্থাতেও ফ্রিজ খুইলা পানি আর বরফ বাইর করা তো ছিল রুটিন কাজ । তবে সবচেয়ে ভালো লাগতো – দুপুর বেলা সবাই শুয়ে থাকলে আস্তে উঠে ফ্রিজে দরজার রাখা কন্ডেন্সড মিল্ক এর ডিব্বা হাল্কা করতে ।
টি ভি আসার পর খেলাধুলার পর প্রধান বিনোদনের উৎস হয়ে যায় । এটা ছোটবেলায় পড়ালেখার বারোটা বাজানোর জন্য দায়ি । কারন এর কিছু দিন পর টি ভি এর অনুষঙ্গ ভি সি পি ও এসে যায় বাসায় ; ফলে প্রায় রাতেই( বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ) মামা, মা আর আমরা ভাই বোনেরা মিলে চান্দা তুলে ছবি দেখা শুরু হল । পাড়ার মোড়ে তখন একটাই ভিডিও সেন্টার । একদিন ছবি আনতে গিয়ে দেখি – দোকানি যে ক্যসেট ই দেখায় , তাই কমন পরতাসে ( অর্থাৎ আগেই দেখেছি ! )। শেষে আগে দেখা একটা সিনেমা ই আবার নিয়ে এলাম ! ( ওই সেন্টার এর সব ক্যসেট আমরা ভাড়া করে দেখে ফেলছি !) বাবা কয়েকটা মাস্টার প্রিন্ট ( সেটা কি জানি না ) হিন্দি ও বাংলা মুভির ক্যসেট এনেছিল – ওগুলো অনুরোধের আসরে এর জন্য ওর জন্য কতবার যে চলল তার কোন হিসেব নেই ।
সবচেয়ে বেশি হিট করেছিল মনে হয় – “বেদের মেয়ে জোছনা” । সামনের বাসার কাজের মহিলা , সামনের বস্তিবাসি থেকে শুরু করে যে কেউ ভাড়া করে ক্যসেট নিয়ে চলে আসতো । আমি চালিয়ে দিয়ে সামনের মাঠে খেলতে চলে যেতাম । আর আমাদের টি ভি রুম ভরে ও সামনের বারান্দা আর রাস্তায় দর্শক উপচে পরত ।
পরে আস্তে আস্তে অনেকের বাসায় ই টি ভি আসায় এই ভীড় কমে যায় । তবে শুক্রবার এ জানালা দিয়ে রিক্সাওয়ালারা উকি মেরে বাংলা ছবি দেখে নিতো ।
আরও পরে মামা বিদেশ থেকে গ্রামের জন্য টি ভি আনেন । পাশাপাশি দুই টি ভি ছেড়ে দিয়ে তুলনা করতাম - ছবিতে কোন বৈষম্য দেখা যায় কিনা !
টি ভি এর জন্য ও অনেক নিয়ম কানুন হয় । প্রথমত টি ভি এর জন্য শক্ত কাঠের এক বক্স তৈরি করা হয় যার ডালা টেনে তালা ( ড্রয়ারে যেমন তালা থাকে তেমন ) মেরে রাখা যেত । তালার চাবি থাকতো আম্মার কাছে । আমাদের তালা খোলা ও ডালা তোলার অধিকার ছিল সীমিত । টি ভি চালু করা , ভলিউম কমান , চ্যানেল বদলানর জন্য ঢাউস সাউজের রিমোট ব্যবহার করতে হতো । টি ভি এর গায়ে যে বাটন গুলা আছে ওগুলোতে হাত দেয়া নিষেধ ছিল ( ওগুলো টিপলে নাকি টি ভি নষ্ট হয়ে যাবে ! )। টি ভি রিমোট দিয়ে বন্ধ না করে ভুলে মেইন সুইচ অফ করা বা প্লাগ টেনে খুলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা মোটামুটি ট্যাবু এর পর্যায়ে ছিল । আর রিমোট হাত থেকে ফেলে দিলে সবাই এক যোগে কোরাসে হা হা করে উঠত । আর কখন অতি ইঞ্জিনিয়ারিং করে যদি অটো সার্চ দিয়া চ্যানেল উল্টা পাল্টা কইরা দিতাম তাইলে শনি অতি নিকটে আইসা পড়তো ।
টি ভি নিয়ে নানা ফ্যান্টাসি ও ছিল সরল মনে ( সব এই মুহূর্তে মনে নাই )- এই মুহূর্তে যেটা মনে পড়ছে – “manimal” সিরিজ ( নায়ক বিভিন্ন প্রাণীতে রুপান্তরিত হতে পারে ) দেখে সেই নায়ক এর মতো হতে চেয়েছিলাম ।
আর আমার বোন মনে করত – আমরা যেমন টি ভি এর ভিতর এর লোকদের দেখি , তেমনি ওরা ও আমাদের দেখে । তাই সে সাজু গুজু করে টি ভি দেখতে বসত !
টি ভি এর বাক্সটা নিয়ে ও একটা কাহিনী আছে । এটা যখন কিছুটা পুরনো হয়ে যায় তখন এটাকে শীতের কাথা বালিশ রাখার জন্য ব্যবহার করা হতো । তো একদিন চোর- পলান্তিস খেলতে গিয়ে আমি ওই বাক্সের মধ্য ঢুঁকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে লুকিয়ে থাকলাম । এদিকে আমার বোন- ভাইরা খুঁজেই পেলনা । আর আমি শীতের আমেজে এমন ঘুম দিলাম যে উঠতে সন্ধ্যা ! এদিকে আমি হারিয়ে গেছি না ছেলে- ধরা ধরে নিয়ে গেছে এই গবেষণা চলতে চলতে থানা – পুলিশ হয় হয় করছে
২। ছোটবেলায় মনে হয় কিছুটা হাবা-হাসমত ই ছিলাম ( এখন যে আইনস্টাইন হইয়া গেসি তাও না) । অনেক কিসুই বুঝতাম না , নিজের মনের মতো একটা কিসু ভাইবা নিতাম । যেমন বাসায় টি ভি আনার পর খবরে প্রায় ই শুনতাম - অমুকে আর তমুকে' মদ্ִ বিনিময় করেছেন । শুইনা 'টাস্কিত্ִ হইয়া যাইতাম ( তখন তো আর টাস্কিত শব্দটা ছিলো না , তাই তখন মনে হয় ' ভোম্বল ' হইতাম ) । কয় কি মদ ! আমরা তো ওইটা হারাম জানি ! আর সেইটা কিনা প্রকাশ্যে বিনিময় করসে , আবার খবরেও দেখায় ! তাইলে কি বড় মানুষেরা মদ বিনিময় করলে কোন দোষ নাই। লজ্জায় ভয়ে কোনদিন কাউরে জিগাইতেও পারি নাই। বহুত বছর মনে খুঁত খুঁত করার পর অবশেষ বুঝসি - ওইটা 'মদ্ִ না , ' মত্ִ
৩। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ( সুন্নাতে খৎনার অনুষ্ঠান ও হতে পারে ঠিক খেয়াল নাই) প্রথম একটি অদ্ভুত পানীয় দেখলাম যা আগে দেখি নাই । সবাই দেখলাম জগ থেকে ঢাইলা নিয়া খাইতাসে । নিজে নিজেই কেন জানি মনে কইরা নিলাম - এইটা ই সেই বহুল কান্খিত ' মদ্ִ ! আজ যখন পাইসি প্রাণ ভইরা খামু। কিন্তু ' মদ্ִ এর জগটি একটু দুরে হওয়ায় নাগাল পাচ্ছলাম না । এদিকে দেখি বড়রা ঢেলে ঢেলে প্রায় শেষ করে ফেলতেসে । আমি সাধের 'মদ্ִ শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে আর তর সইতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলা- ' আমি মদ খাবো , আমাকে ও দাও ' ।
এখনো বিয়ে বাড়িতে গেলে 'মদ্ִ আমার প্রিয় পানীয় তবে সেটার নাম এখন ' বোরহানী'।
৪। ক্লাসে একদিন দুষ্টামি করতেসিলাম আর মিচকি মিচকি হাসতাসিলাম । ম্যাডাম এর চোখা পড়ায় ম্যডাম কয় - হোয়াই আর ইউ লাফিং । বাকি শব্দগুলা কমন পরলেও লাফিং শব্দটা তখনো জানতাম না । মনে মনে কইলাম - লে বাব্বা , ম্যডাম কয় কি , আমি তো জায়গাতেই বইয়া আছি আর ম্যডাম কয় - লাফাই কেন?!।
২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১০
আরফহোস বলেছেন: Bhai apni tokhon eto gulo chanel koi pailen ?
৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩১
রসায়ন বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন । পড়ে মজা পেলাম । ফ্রিজের কাহিনি আমারো আপনার মতই ।
প্লাস দিয়ে গেলাম ।
৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:০৬
নানাভাই বলেছেন: পিলাচ মারলাম।
৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:১৬
আল মোমিন বলেছেন: চ্যানেল একটা ই ছিল কিন্তু অটো সার্চ দিলে চ্যানেল এর পজিশন অনেক সময় চেঞ্জ হয়ে যেত যেমন - আগে হয়তো ১ এ ছিল সার্চ এর পর হয়ে গেল ৮ । এটা পরবর্তীতে যারা টি ভি খুলত তারা বুঝত আর জানতো এই আকাম কে করতে পারে
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০৭
সেলিম মোঃ রুম্মান বলেছেন: আহ্ শৈশব