নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথা বলতে চাই

মাজেদ-উল হক চৌধূরী

মাজেদ

মাজেদ-উল হক চৌধূরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহ্বান শিল্পী গোষ্ঠী সিলেটের জন্ম ইতিহাস

১৭ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৩৯

স্মৃতিকথা

প্রতিষ্ঠালগ্নের ইতিহাস ও পথচলা...

মাজেদুল হক চৌধুরী



১৪৩১ হিজরীর ১৭ ই রামাদ্বান। এশার নামাজের ঘন্টাখানিক আগে আমি ও যায়েদ পাঠানটুলার রসুইঘর রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করছি। গল্পে গল্পে চলে আসলো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কতকথা। আলোচনা হচ্ছিল অপসংস্কৃতির ভযাবহতা নিয়ে। কিভাবে একটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতিকে সুকৌশলে ধ্বংস করে সেখানে বিজাতীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে সে বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর আমাদের কি করণীয় সে বিষয় চলে আসলো। আলোচনার এ পর্যায়ে অপসংস্কৃতি মোকাবেলায় কিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করলাম। প্রাথমিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম একটি সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেই মুহূর্ত থেকেই কাজ শুরু। যায়েদ মাহবুব কে ফোন দিল। সেও দেরি না করে চলে আসলো। তার সাথে পুরো বিষয়টা শেয়ার করলাম। সেও আমাদের সাথে একমত। এ বিষয়ে আরো কিছু আলাপ আলোচনার পর সবার সম্মতিক্রমে সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাম নির্বাচন করা হল “আহ্বান শিল্পী গোষ্ঠী সিলেট”। আমাকে পরিচালক, যায়েদকে সহকারী পরিচালক ও শামসুজ্জামান মাহবুবকে থিয়েটার পরিচালক করে প্রথমাবস্থায় তিন সদস্যের কার্যকরী কমিটি গঠন করা হল। পল্লবী আবাসিক এলাকার কাছে একটি বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় ভাড়া নেয়া হল আহ্বানের প্রথম অফিস। সেখানে আট থেকে দশজন সদস্য নিয়ে আমরা নিয়মিত রিহার্সেল শুরু করি। কিছু দিনের মধ্যেই আহ্বানের সদস্য সংখ্যা বিশ থেকে পঁচিশে পৌছে গেল। তখনও পর্যন্ত কিন্তু আমরা তেমন কোন ভর্তি প্রচারণা শুরু করিনি। আহ্বানের প্রথম ব্যাচের সদস্য জামিল প্রস্থাব তুললো একটি শিক্ষা সফর করার জন্য। এতে সদস্যরা বেশ আগ্রহ প্রকাশ করল। যাওয়া হল সিলেটের জাফলং। অতিথি করা হল আমাদের এলাকার বড় ভাই রমিজ রাজাকে। তিনিও আমাদের মত একই চিন্তাধারার লোক। তাঁর উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো আহ্বান শিল্পী গোষ্ঠীর প্রথম এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গাড়িকে সাজানো হল সেরকম উপযোগী করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন রকম শিক্ষা মূলক আয়োজন আহ্বান সদস্যদেরকে শুধু আনন্দ দেয়নি সেই সাথে জাগিয়ে তুলেছিল তাদের ঘুমন্ত চেতনা। তাদের প্রায় সকলের ভেতরই একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। যে ছেলেগুলো সংস্কৃতি বলতে শুধু নাচ গান আর আমোদ ফুর্তিকে বুঝতো সে ছেলেগুলোই পরবর্তীতে বেহায়াপনা এসব অপসংস্কৃতি ত্যাগ করে সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক কর্মী হয়ে গেল।

আমাদের এখন প্রয়োজন দেশ ও জাতি গঠনে প্রেরণাদায়ক কিছু গান। কিন্তু আমরা যে কেউ গান লিখতে পারিনা ! তখন মনে পড়লো আমার কবিতার সেই লাইন দুটি-

প্রয়োজন তুমি জন্ম দাও হাজার সম্মুখ পথ

প্রয়োজন তুমি চলতে শিখাও বুকে রেখে হিম্মত

কি আর করা। একটা ব্যবস্থাতো করতেই হবে। সহকারী পরিচালক যায়েদকে দায়িত্ব দিলাম সংগীত বিভাগের। বললাম তুমি আহ্বানের জন্য গান লিখ। সে একটা দুইটা করে গান লিখতে শুরু করল। তারপর আমি ও সে দুজনে মিলে গান গুলোতে সুর করতাম। স্রষ্ঠার অশেষ মেহেরবানীতে গানগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে থাকলো। আহ্বানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে রচিত, ‍‍‍সবার মনের কালি ঘুচাতে আজ- আহ্বান নিয়েছে আলোর সাজ- তার এই গানটিকে করা হল আহ্বান সংগীত। দেশ ও জাতি গঠন সহ সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি বিভাগেই যায়েদের কলম চলতে শুরু করল। গান লিখতে লিখতে একপর্যায়ে তার কাব্য প্রতিভা জেগে উঠলো। আহ্বানের সহকারী পরিচালক যায়েদ একসময় কবি তাসনিম যায়েদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। যার ক্ষুরধার লেখনী মুমূর্ষ এ জাতির চেতনা ফিরাতে আপ্রাণ চেষ্ঠা করে চলছে। “মুসাফির নামক তার লিখা একটি কবিতার দুটি লাইন এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়-

কুয়াশায় ঘেরিয়া ধরিয়া রাখিয়াছে- পথ চেনা দায়,

মন্ত্র বুঝিয়া খুঁজিয়া পন্থা চেতনা ফিরাও গায়।

চেতনার কবি তাসনিম যায়েদ আল্লাহর রহমতে দেশ ও জাতির তরে আমৃত্যু লিখে যাবে তার গান ও কবিতা। প্রয়োজনের তাগিদেই আহ্বান শিল্পী গোষ্ঠী থেকে সময়ের ব্যবধানে আরো প্রতিভাবান সাংস্কৃতিক কর্মীর আত্মপ্রকাশ ঘটবে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এতো গেল সংগীত বিভাগের কথা। এবার আসি থিয়েটার বিভাগে। থিয়েটার বিভাগের তৎকালীন পরিচালক ছিল শামসুজ্জামান মাহবুব। তার থিয়েটার বিভাগকে সে সাজিয়েছিল অন্তর নিঃসৃত ভালোবাসা দিয়ে। আমাদের আহ্বানের সুনামটা খুব দ্রুত শহর ও গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে মুলতঃ তার কঠোর পরিশ্রমের কারনে। তাছাড়া আমরা থিয়েটার বিভাগে প্রশিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম সিলেটের সুস্থ ধারার নাট্য অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মিনহাজুর রহমান ফয়সাল-কে। মিনহাজ ভাই তাঁর দীর্ঘ নাট্য জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আহ্বানের থিয়েটার বিভাগকে অল্প সময়েই একটা আদর্শ মানে পৌছিয়ে দিয়েছিলেন যা অতুলনীয়। এমন কোন বড় ধরনের প্রোগ্রাম নেই যেখানে মিনহাজ ভাই আমাদের সাথে নেই। ২০১২ সালে আমরা এস.এস.সি ও জে.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেই। সেখানের পুরো অনুষ্ঠানটিই মুলতঃ মিনহাজ ভাই পরিচালনা করেন। ২০১৩ সালেও আহ্বান আরো বড় পরিসরে এস.এস.সি ও জে.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয়। সেখানেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আহ্বানকে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরুতে হয়েছে। যখনই আহ্বানের উপর দিয়ে মানব সৃষ্ট কোন দুর্যোগ বয়ে যেত তখনই সাহসীকতার সাথে যে ভাইটি এগিয়ে আসতো তার নাম জাকির ইবনে মানিক বক্ত। তাকে আহ্বানের কর্মকান্ডে খুব কম দেখা যেত। কিন্তু যখনই আহ্বান কোন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করত তখনই কোত্থেকে যেন তার আবির্ভাব হয়ে যেত। আমাদের এই সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমার চোখের সামনে আরো অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠন জন্মলাভ করেছে। কিন্তু কয়টিইবা তার অস্থিত্ব ধরে রাখছে পেরেছ ! অধিকাংশই পারেনি। যদিও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স আমাদের থেকে শতগুণে ভালো ছিল। আমাদের আহ্বান শিল্পী গোষ্ঠী তার অস্থিত্ব বজায় রেখে দূর্বার বেগে তার লক্ষ্য অভিমুখে ছুটে চলার মূল কারনই হলÑ উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ। তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্তরিকতা এবং একতা-ই আহ্বানকে অস্থিত্বের সংগ্রামে বিজয়ী হতে এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। যতদিন আহ্বান সদস্যদের মানসিক অবস্থা এরুপ অবিচল থাকবে ততদিন পর্যন্ত আহ্বানের পথচলা কেই রুদ্ধ করতে পারবেনা।

দীর্ঘ আড়াই বছর পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর বিভিন্ন কারনে আমার ব্যস্ততা বেড়ে গেল। আহ্বানকে যতটুকু সময় দেয়া প্রয়োজন ততটুকু সময় দেয়াও আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো। তাছাড়া আমি অনুভব করলামÑ আহ্বানকে নেতৃত্ব দেয়ার মত আমার থেকে যোগ্য ব্যক্তিও এই আড়াই বছরে তৈরী হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ২০১৩ সেশনের শুরুতে আমি পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম। আমার অব্যাহতি নেয়ার পরপরই কবি তাসনিম যায়েদও সহকারী পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নিলেন। সুতরাং ২০১৩ সেশনের শুরু থেকে আহ্বানের পরিচালক হিসেবে শামসুজ্জামান মাহবুব মনোনীন হলেন। মাহবুবের দায়িত্বলাভের পর থেকে আহ্বানের কাজের গতি বেড়ে গেল আগের চেয়ে বহুগুণ। আহ্বান তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে জাতিসত্ত্বাকে রক্ষার জন্য কাজ করে চলছে এবং মনযিলে মকছুদের পৌছার আগ পর্যন্ত এ যাত্রা চলবে কেননা বেহায়াপনা ও অশ্লীললতার অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে এ জাতির যে সকল হতভাগা সন্তান হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের ঘুমন্ত চেতনা জাগাতে আহ্বানের কাছে যেন ফরিয়াদ আসছে-

ওহে ঘুম ভাঙ্গাবার পাখি- আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দাও

করুণ কেঁদে ডাকি - একটু ফিরে চাও।





লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক

আহ্বান শিল্পী গোষ্ঠী সিলেট।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.