![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ভারতে ওয়াকফ বিল: মুসলিম সম্পদের উপর হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের নতুন অধ্যায় ছবিঃ এআই ব্যবহার করে তৈরিকৃত।
ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর দমন-পীড়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এবার যুক্ত হলো একটি নতুন উপকরণ—ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫। গুলি বা বুলডোজার নয়, এবার কাগজ-কলমের ছুতোয় রাষ্ট্রীয় আইনকাঠামোর আড়ালে মুসলিম ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক সম্পদের উপর হস্তক্ষেপের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ (আমানত) বিল, ২০২৫-এর মাধ্যমে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এবং অন্যান্য ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও অমুসলিমদের প্রভাব বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। এই বিল মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত এবং ভারতের সংবিধানের মূলনীতির লঙ্ঘন।
ওয়াকফ: ইসলামী জনকল্যাণের চিরন্তন ভিত্তি
ইসলামী সমাজে ‘ওয়াকফ’ হলো এমন সম্পত্তি, যা চিরস্থায়ীভাবে ধর্মীয়, শিক্ষামূলক বা জনহিতৈষী কাজে ব্যবহারের জন্য উৎসর্গ করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই প্রথার মাধ্যমে মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, এতিমখানা ও দরিদ্র-সহায়তা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, এই সম্পদ ব্যবহার হয়েছে সর্বধর্মের মানুষের কল্যাণে।
বর্তমানে ভারতে প্রায় ৮.৭ লাখ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যা প্রায় ৯.৪ লাখ একর জমির উপর বিস্তৃত—এটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ভূমি মালিকানা। এসব সম্পত্তি মুসলিম শাসক ও দাতাদের ঐতিহাসিক জনসেবামূলক চিন্তার প্রতীক। কিন্তু ওয়াকফ বিল, ২০২৫-এর মাধ্যমে সেই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর একটি নতুন হিন্দুত্ববাদী ছুরি চালানো হয়েছে।
ওয়াকফ বিল ২০২৫: একটি সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট লোকসভায় বিলটি প্রথম উত্থাপন করা হয় এবং ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল লোকসভায় (২৮৮–২৩২ ভোটে) ও ৪ এপ্রিল রাজ্যসভায় (১২৮–৯৫ ভোটে) পাস হয়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৫ এপ্রিল এতে সম্মতি প্রদান করেন। বিলটি ওয়াকফ আইন, ১৯৯৫-কে আমূল বদলে দিয়ে নিচের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যুক্ত করেছে:
১. অমুসলিমদের নিয়োগের বিধান
ওয়াকফ বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে অমুসলিম সদস্য নিয়োগের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। এটি ভারতের সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ—ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার—লঙ্ঘন করে এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ করে।
২. ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ বাতিল
অতীতে বহু সম্পত্তি শতাব্দীর পর শতাব্দী জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় ‘ওয়াকফ’ হিসেবে স্বীকৃত ছিল, এমনকি লিখিত দলিল ছাড়াই। নতুন আইনে এই প্রথাকে বাতিল করে বহু প্রাচীন মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানকে অনিরাপদ করে তোলা হয়েছে।
৩. সরকারি হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি
ওয়াকফ সংক্রান্ত বিরোধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলা কালেক্টরের হাতে, যা কার্যত সরকারের হাতে মুসলিম সম্পদ দখলের বৈধ অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।
৪. ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণের শর্ত
ওয়াকফ প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম ব্যক্তিকে কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ইসলাম পালনের প্রমাণ দিতে হবে—যা ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং ইসলামী শরিয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
৫. কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা
ছয় মাসের মধ্যে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তিকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহু পুরোনো সম্পত্তির যথাযথ দলিল না থাকায় এতে বহু সম্পত্তি বেসরকারিভাবে হস্তান্তরের ঝুঁকিতে পড়বে।
দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ওয়াকফ বিলকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে—কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, চেন্নাই, আহমেদাবাদ প্রভৃতি শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB), জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ, AIMIM সহ নানা সংগঠন বিলটিকে বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
কংগ্রেস, তৃণমূল, DMK, AAP, RJD, AIMIM প্রভৃতি বিরোধী দলও বিলের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছে। রাহুল গান্ধী বলেছেন, “এই বিল সংবিধানের উপর সরাসরি আক্রমণ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের চরম হরণ।” AIMIM নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এই বিলকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং DMK সরকার রাজ্য বিধানসভায় বিল প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাস করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ: আশার আলো
বিলটির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ইতোমধ্যেই ৭৩টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ১৬ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু করে এবং বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ বিলুপ্তি ও অমুসলিমদের বোর্ডে নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
১৭ এপ্রিল কোর্ট একটি আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যেখানে বলা হয়:
৫ মে ২০২৫ পর্যন্ত কোনো ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিকে ডি-নোটিফাই করা যাবে না।
ওয়াকফ বোর্ড বা কাউন্সিলে অমুসলিমদের নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
এছাড়া কেন্দ্রকে সাত দিনের মধ্যে জবাব এবং আবেদনকারীদের পাঁচ দিনের মধ্যে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জমা দিতে বলা হয়।
বিজেপির বক্তব্য বনাম বাস্তবতা
সরকার বলছে, এই আইন ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াবে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। সমালোচকদের মতে, এটি মুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসন হরণ এবং সম্পদ দখলের আইনগত হাতিয়ার। ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ বাতিলের ফলে বহু শতাব্দী পুরোনো মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান আইনি সুরক্ষা হারাতে পারে।
সম্ভাব্য পরিণতি: একটি অস্তিত্ব সংকট
এই বিল কার্যকর হলে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের সামনে একটি ভয়াবহ বাস্তবতা দাঁড়াবে:
লাখ লাখ ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারের দখলে চলে যেতে পারে।
মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসন হুমকির মুখে পড়বে।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও অস্থিরতা বাড়বে।
বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে যথার্থই বলেছেন, “এই বিল সংখ্যালঘু অধিকার হরণের একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
উপসংহার: এই লড়াই কেবল মুসলমানদের নয়
ওয়াকফ বিল ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান ও গণতন্ত্রের মূল কাঠামোর বিরুদ্ধে এক মারাত্মক হুমকি। এই বিল বাতিল না হলে কেবল মুসলমানদের অধিকার নয়, ভারতের বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থাও আক্রান্ত হবে। সুপ্রিম কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এই দুঃসময়ে আশার আলো দেখাচ্ছে।
এই লড়াই কেবল মুসলিমদের নয়—এটি ভারতের আত্মার লড়াই। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধান রক্ষায়, সব ধর্মের মানুষকে এক হয়ে দাঁড়াতে হবে। এটাই সময়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের, ভয়ের বিরুদ্ধে সাহসের, নীরবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের।
১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনি প্লান দেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে আপনার প্লান ভালো হওয়ার কথা।
২| ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৪৩
মেঘনা বলেছেন: বাংলাদেশে ওয়াকফ সম্পদের পরিমান কত ?
১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০
নতুন নকিব বলেছেন:
বাংলাদেশে ওয়াকফ (অর্থাৎ ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক কাজে উৎসর্গিত) সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী:
ওয়াকফ এস্টেট (সম্পত্তি): প্রায় ২৮,০০০টির বেশি নিবন্ধিত ওয়াকফ এস্টেট রয়েছে। তবে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত সব মিলিয়ে ওয়াকফ এস্টেট এর সংখ্যা ১,৩৮,০০০টি বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। যেখানে নিবন্ধিত ওয়াকফ এস্টেটগুলোর অধীনে প্রায় ৫ লাখ বিঘা (প্রায় ১.৬৫ লাখ একর) জমি রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ রয়েছে।
এই ওয়াকফ সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, খানকা, মাজার ও দরিদ্র সহায়ক প্রতিষ্ঠান।
এই তথ্য চ্যাটজিপিটি এবং গ্রোক এআই -এর অনুসন্ধানে প্রাপ্ত।
৩| ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:১৬
অগ্নিবাবা বলেছেন: ১ ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও বোর্ডের গঠন: নতুন বিলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য এবং মুসলিম নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বোর্ডের বৈচিত্র্য ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে ।
২ ওয়াক্ফ ঘোষণার মানদণ্ড: এখন থেকে শুধুমাত্র সেই মুসলিম ব্যক্তি ওয়াক্ফ সম্পত্তি ঘোষণা করতে পারবেন, যিনি কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ধর্মীয়ভাবে অনুশীলনকারী। এছাড়া, নারীদের উত্তরাধিকার সুরক্ষিত রাখার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে ।
৩ সরকারি সম্পত্তির ওয়াক্ফ ঘোষণা: সরকারি সম্পত্তি ওয়াক্ফ হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না। যদি কোনো বিরোধ দেখা দেয়, তবে তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে ।
৪ ওয়াক্ফ সম্পত্তির নিবন্ধন: সব ওয়াক্ফ সম্পত্তি একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টালে ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে ।
Drishti Judiciary
৫ ট্রাইব্যুনালের গঠন: ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালে এখন থেকে জেলা আদালতের বিচারক এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব থাকবেন, যা আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী করবে ।
এইডা হচ্ছে বিলের মূল পরিবর্তনসমূহ, কোন্ডা আপ্নার কাছে খারাপ লাগতাছে?
১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার বিশ্লেষণের জন্য ধন্যবাদ, অগ্নিবাবা। এখন আসুন ঠান্ডা মাথায় আমরা কিছু বিষয় পর্যালোচনা করি।
১. অ-মুসলিম ও নারীদের ওয়াক্ফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি
ওয়াক্ফ সম্পত্তি একটি ইসলামি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এর মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিমদের ধর্মীয়, শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা। এটা খুবই স্পষ্ট যে, অ-মুসলিমদের বোর্ডে রাখার সিদ্ধান্ত বোর্ডের মৌলিক ধর্মীয় চরিত্রকে দুর্বল করতে পারে। পুজা কিংবা মন্দিরের কমিটিতে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্তকরণ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্যতামূলক করা হলে আপনার কেমন লাগবে?
যেমনটি আপনি বলেছেন, “বৈচিত্র্য” বাড়ানো উদ্দেশ্য — কিন্তু এটি কি বাস্তবিকভাবে ইসলামের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী করা সম্ভব? একজন অ-মুসলিম কীভাবে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী ওয়াক্ফ সম্পত্তি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? খুবই হাস্যকর বিষয়!!!
নারীদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি আলাদা বিষয়। ইসলাম নারীকে নেতৃত্বের সুযোগ দিয়েছে, তবে তা অবশ্যই শরিয়াহসম্মত পরিসরে। যোগ্য, ধর্মীয়ভাবে অনুশীলনকারী মুসলিম নারী সদস্য থাকলে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু এটি যদি ইসলামী নীতিমালার বাইরে চলে যায়, সেটা নিশ্চিত করবে কে?
২. ওয়াক্ফ ঘোষণার মানদণ্ড
ধর্মীয়ভাবে অনুশীলনকারী মুসলিমরাই ওয়াক্ফ সম্পত্তি ঘোষণা করতে পারবেন — এটি যুক্তিসঙ্গত এবং শরিয়াহ সম্মত এক পদক্ষেপ। তবে “ধর্মীয় অনুশীলন” কে নির্ধারণ করবে এবং “৫ বছর” সময়সীমা কে ঠিক করল — সেটিই প্রশ্ন। এটি যে রাজ্য বা প্রশাসনের হাতে ‘ব্যক্তিগত বিশ্বাস যাচাইয়ের’ হাতিয়ার হয়ে উঠবে না, সেটা নিশ্চিত করবে কে? আপনি পারবেন এই নিশ্চয়তা দিতে?
নারীদের উত্তরাধিকার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে — এটি শরিয়াহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে অবশ্যই ইতিবাচক। তবে যদি শরিয়াহর উত্তরাধিকার নীতিতে হস্তক্ষেপ হয়, তাহলে এটি মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবেই গণ্য হবে। আর এটা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
৩. সরকারি সম্পত্তি ওয়াক্ফ ঘোষণা করা যাবে না
সরকারি সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ ঘোষণা করা যাবে না — এই নিয়ম প্রশাসনিকভাবে সঠিক হলেও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়: অতীতে বহু মুসলিম ওয়াক্ফ সম্পত্তি এখন “সরকারি সম্পত্তি” বলে দাবি করা হচ্ছে। তাহলে মুসলিম সম্প্রদায় কি তাদের ঐতিহাসিক ওয়াক্ফ সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবে না?
বিরোধ নিষ্পত্তি “জেলা প্রশাসক” এর মাধ্যমে — কিন্তু জেলা প্রশাসক যদি পক্ষপাতদুষ্ট হন বা প্রশাসনিক চাপের মুখে থাকেন? তখন ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ন্যায্য বিচার কোথায় যাবে?
৪. ওয়াক্ফ সম্পত্তির কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টালে নিবন্ধন
এটি একটি ভালো পদক্ষেপ — স্বচ্ছতা ও তথ্যের সহজলভ্যতা বাড়বে। তবে এখানে প্রশ্ন হলো: এই কেন্দ্রীয় পোর্টাল কে নিয়ন্ত্রণ করবে? যদি তা কোনও অ-মুসলিম আধিপত্যে চলে যায়, তবে এর অপব্যবহার বা তথ্য বিকৃতির ঝুঁকি থাকবে।
৫. ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালের কাঠামো
জেলা আদালতের বিচারক ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব — এটি একটি প্রশাসনিক ও বিচারিক মিশ্র কাঠামো। কিন্তু একজন সরকারি কর্মকর্তা কিভাবে শরিয়াহভিত্তিক সম্পত্তির জটিলতা বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন? ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি ছিল। আপনার কী অভিমত?
মূলকথা, এই বিলের বেশ কিছু দিক প্রশাসনিকভাবে উন্নয়নমুখী মনে হলেও, ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও ইসলামী শরিয়াহর সঙ্গে এর সামঞ্জস্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতীয় সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করেছে — তাই ওয়াক্ফ ব্যবস্থাপনায় মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথার সুরক্ষা অবশ্যই থাকতে হবে।
সবশেষে, ভাই অগ্নিবাবা, আপনার প্রশ্ন করার অধিকার যেমন আছে, মুসলিমদেরও ধর্মীয় বিশ্বাস রক্ষার অধিকার আছে। মতভেদ হোক, তবে তা যেন সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়। আমাদের আলোচনাও সেই সৌহার্দ্যের পথেই চলুক।
৪| ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩১
অগ্নিবাবা বলেছেন: আপনার এই দুটো ছাড়া তো বিরো্ধীতা করার আর জায়গা নেই।
১। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য নিয়োগ।
আপনারা শিয়া সুন্নি কাদিয়ানী করে একে অপরকে ঠকান, একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি থাকলে কি খারাপ হবে??
২। যিনি কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ধর্মীয়ভাবে অনুশীলনকারী তিনিই সম্পত্তি ওয়াক্ফ করতে পারবেন।
এতে অসুবিধা কি? নয়া মুসলমানেদের ধর্মটা বুঝতে বছর চার পাঁচ লাগবে না?
নিজেরা তো নিজেদের ভালোর জন্য কিছুই করবেন না, অন্যরা ভালো কিছু করলেই ঘেঊ ঘেঊ করবেন।
আর শোনেন সরকারী জমিতে বিনা অনুমতিতে মন্দির মসজিদ যাই করবেন তা ভেংঙ্গে ফেলা হবে, এটা বাংলাদেশ না এটা ভারত।
১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯
নতুন নকিব বলেছেন:
১. অ-মুসলিম সদস্য নিয়ে আসলে কি নিরপেক্ষতা বাড়বে?
অগ্নিবাবা বলেছেন: “শিয়া-সুন্নি-কাদিয়ানী করে একে অপরকে ঠকান, তাই একজন নিরপেক্ষ অ-মুসলিম রাখলে সমস্যা কোথায়?”
উত্তর: আপনার বক্তব্যে ভুল তুলনা রয়েছে। কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে ইসলাম ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী বলে মুসলিম বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অমুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাই “শিয়া-সুন্নি” মতবাদের সঙ্গে “কাদিয়ানী” মিলিয়ে ফেলা বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা।
এখন, শিয়া ও সুন্নির মধ্যকার কিছু মতপার্থক্য থাকলেও তারা উভয়ই মুসলিম, এবং ইসলামি শরিয়াহ অনুসরণে সম্মত। ওয়াক্ফ বোর্ডে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকা অস্বাভাবিক নয়।
অ-মুসলিম সদস্য ওয়াক্ফ বোর্ডে রাখার মানে হচ্ছে—ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর এমন একজনকে নিয়োগ দেওয়া, যিনি ওই ধর্মে বিশ্বাসী নন, এবং ধর্মীয় আইন বুঝেন না। আপনি কি চাচ্ছেন—মন্দির পরিচালনার জন্য মুসলমানকে পুরোহিত বানানো হোক? সেটা যেমন অসম্ভব, তেমনি মুসলিম ওয়াক্ফ বোর্ডে অ-মুসলিম রাখাও অযৌক্তিক।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে “নিরপেক্ষতা” নয়, বিশ্বাস এবং বিধান গুরুত্বপূর্ণ।
২. পাঁচ বছর অনুশীলন ছাড়া কেউ ওয়াক্ফ করতে পারবে না – এতে সমস্যা কোথায়?
অগ্নিবাবা বলেছেন: “নয়া মুসলমানদের ধর্ম বুঝতে তো সময় লাগে, ৫ বছর তো লজিক্যাল।”
উত্তর: ওয়াক্ফ করার ক্ষমতা ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক, বিবেকবান ও স্বাধীন মুসলিম ব্যক্তির থাকে। কোথাও বলা হয়নি যে তাকে ৫ বছর অনুশীলনকারী হতে হবে।
একজন মানুষ যদি সদ্য ইসলাম গ্রহণ করে, হৃদয় থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পত্তি ওয়াক্ফ করতে চান, তাহলে আপনি বা সরকার তার সেই পূণ্যের পথ রোধ করবেন কেন? ধর্মীয়ভাবে, এ ধরনের বাধা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টির সামিল।
ইসলামে নিয়তের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সময়ের উপর নয়। পাঁচ বছরের সময়সীমা একটি অযৌক্তিক আমলিক শর্ত।
সরকারি জমিতে মসজিদ নির্মাণ বা দখলের বিষয়টি তুলেছেন।
উত্তর: আমরা কোনোভাবেই “জবরদখল” বা অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা নির্মাণকে সমর্থন করি না। তবে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের সময় বহু ওয়াক্ফ সম্পত্তি ছিল, যা ব্রিটিশ ও পরবর্তী প্রশাসনের সময় সরকারি খতিয়ানে বদলে ফেলা হয়। এখন সরকার সেই জমিকে “সরকারি” বলছে, অথচ প্রমাণসহ মুসলিম সমাজ জানে যে সেটি ওয়াক্ফ সম্পত্তি।
সুতরাং, মুসলিমরা যদি দাবি করে, “এই জমি আসলে ওয়াক্ফ ছিল”—তাদের কথা শুনে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত, না যে ভেঙে দেওয়া হবে এটা ভারত, বাংলাদেশ না।
ভারতের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিশ্বাস রক্ষার অধিকার দেয়। তাই সংবেদনশীলতা ও সংবিধানের মান রক্ষা জরুরি।
সবশেষে — “নিজেরা নিজেদের ভালো করতে চান না” — এই কথা অযথা সাধারণীকরণ।
উত্তর: আপনি যদি বলতেন, “কিছু মুসলিম দায়িত্বশীল নয়”, তাহলে মানা যেত। কিন্তু পুরো একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করে বলা, “তারা নিজের ভালোর জন্য কিছু করে না”—এটি সরাসরি বিদ্বেষ ছড়ানো।
মুসলিম সমাজে বহু ওয়াক্ফ মসজিদ, হাসপাতাল, মাদ্রাসা, দরিদ্রকল্যাণ প্রতিষ্ঠান চলমান আছে।
সমস্যা আছে, কিন্তু সমাধানও আছে — এজন্য প্রয়োজন সহযোগিতা, বিদ্বেষ নয়।
মূলকথা:
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বিশ্বাসী সদস্যরাই যথাযথ প্রতিনিধি।
ওয়াক্ফ করার অধিকার নিয়তের সাথে সম্পর্কিত, সময়সীমা চাপিয়ে দেওয়া শরিয়াহ পরিপন্থী।
জমি দখল নয়, তবে ইতিহাসের সাথে ন্যায়বিচার জরুরি।
ভাই অগ্নিবাবা, আপনি বিতর্ক করুন, প্রশ্ন করুন—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে ধর্মের বিষয়ে আলোচনা করতে হলে, সেই ধর্মকে সম্মান করে আলোচনা করা শিষ্টাচারের অংশ। শান্তি আর যুক্তির আলোয় পথ চলুক।
৫| ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে একটা কথা আমি সব সময় বলি- ''মানুষ''কে মানুষ ভাবতে শিখুন।
কে হিন্দু, কে মুসলিম সেটা বড় কথা নয়। আমরা সবাই মানুষ। মানুষকে ধর্ম দিয়ে ভাগ করতে গেলেই সমস্যা শুরু হয়।
১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭
নতুন নকিব বলেছেন:
"মানুষ আগে, ধর্ম পরে"—এই কথাটি আবেগপ্রবণ হলেও বাস্তবভিত্তিক নয়। মানুষ ধর্মসহ এক পূর্ণ সত্তা। তার বিশ্বাস, পরিচয়, মূল্যবোধ—সবই জীবনের অংশ। ধর্ম বাদ দিয়ে মানুষকে বিচার করলে তার আত্মিক ও সামাজিক চাহিদা উপেক্ষিত হয়।
সংবিধানেও ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যেমন ওয়াক্ফ, তার পরিচালনাও ধর্মানুযায়ী হওয়াই যৌক্তিক। ধর্ম ও মানবতা পরস্পরের শত্রু নয়—বরং একে অপরের পরিপূরক।
তাই মানবতা চাইলে ধর্মকে অস্বীকার নয়, সম্মান দিতে শিখুন। অপরকে সবক দেওয়ার মানসিকতা পোষন করার আগে নিজের দিকে তাকাতে শিখুন।
আপনাকে আগেও একাধিকবার বলেছি, আপনি মানসিকভাবে সুস্থ নন, স্থির নন, এখন একটা বলেন তো, একটু পরেই তার বিপরীতটা বলে বসেন। সবচেয়ে বড় কথা, সত্যিকারের অসুস্থ ব্যতিত ফ্যাসিস্ট লুটেরাদের গুণগান করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার উচিত অবিলম্বে একজন মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
৬| ১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:২৬
অগ্নিবাবা বলেছেন: রাজীব ভাই, হক কথা কইছে।
১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯
নতুন নকিব বলেছেন:
তার কথার ঠিক নেই। তিনি সকালে ধর্মের পক্ষে পোস্ট দেন, বিকেলে দেন বিপক্ষে। যাক, তবু আপনাকে খুশী দেখে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ।
৭| ১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩০
মেঘনা বলেছেন: পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের সন্তান বাংলাদেশ - এই দেশ দুটি ঘোষিতভাবে মুসলিমদের জন্য তৈরি হয়েছে। তারা যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান বা অন্যান্য ধর্মের লোকদের থাকতে দিচ্ছে এটা তাদের উদারতা। তারা যে দেশে শরিয়া আইন চালু করতে পারছে না ইহুদি নাসারদের ভয়ে এটা তাদের কাপুরুষতা।
অন্যদিকে ভারত ঘোষিতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। ফলে তাদের আইন শরিয়া বা বেদ বা বাইবেল বা ত্রিপিটক নির্ভর হওয়ার প্রশ্ন ওঠেনা। তারা মুসলিম নারীদেরও মানুষ মনে করে। ফলে ওয়াকফ বোর্ডে মুসলিম নারী, বা অন্য ধর্মের লোকদের রাখতে তাদের সমস্যা হয় না।
আপনার যখন হচ্ছে তখন বুঝবেন আপনি ২০২৫ সালেও শুধুই মুসলমান আপনি এখনো পরিপূর্ণ মানুষ নন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫০
যামিনী সুধা বলেছেন:
পাকিস্তান ও বাংলাদেশীরা কিভাবে সাহায্য করতে পারবে? আপনার প্ল্যান ও লীড কাম্য।