নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অল্পশিক্ষিত পাঠক । পড়তে ভালোবাসি । তাবে, মানসম্মত লেখা ভাল লাগে । প্রত্যককেই তার মত প্রকাশের অধিকার দেয়া উচিত; এই নীতিতে বিশ্বাসী।

ফারুকুর রহমান চৌধুরী

ধর্ম যার যার, মানবতা অধিকার

ফারুকুর রহমান চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমণ স্মৃতি : পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে একদিন

২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:০২

২০১১ সালের ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম । সেখানে গিয়ে চকবাজার কাপাসগোলা রোড হোটেল আল আকাবে রাত্রিযাপন করলাম । কিন্তু কোথাও ঘুরতে যাওয়ার হলো না । ১৭ তারিখ সকাল ঘুম থেকে উঠে পাশের একটি খাবারের দোকানে গেলাম সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য । সেখানে কয়েকজন পর্যটক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কথা আলোচনা করছিলেন । তাদের আলোচনার বিষয় ছিল- “পতেঙ্গা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র/ সমূদ্র সৈকত। চট্টগ্রামে ঘুরতে এলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার আগ্রহ দেখান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। চট্টগ্রাম শহরে ঘুরতে গিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত না দেখলে পুরো ভ্রমনটাই বৃথা। পতেঙ্গা ভ্রমণে যারা যায় না তারা বড্ড বেরশিক ।” এমন আলোচনা শুনে পতেঙ্গা দেখার ইচ্চে জেগে গেলো মুহুর্তেই ।

আমি সারা দিন অবসর, কোন কাজ নেই । তাই সকালের নাস্তা খেয়ে হোটেল ম্যানেজারের কাছে পতেঙ্গা যাতায়াতের দিক নির্দেশনা নিলাম এবং স্বাভাবিক কাপড় পরেই বের হলাম পতেঙ্গার উদ্দেশ্যে । চকবাজার পয়েন্ট থেকে রিক্সায় গেলাম জিইসি মোড়ে। জিইসি মোড়ে দাড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করতে লাগলাম । হঠাৎ চোখে পরল পাঁচজন যুবক একটি সিএনজি অটোরিক্সা চালকের সাথে ভাড়া নিয়ে কথা বলছেন । আগ্রহ দিয়ে এগিয়ে গেলাম তাদের কাছে । প্রাথমিক পরিচিত হয়ে জানতে পারলাম এরা সবাই ঢাকা শহরের একটি গার্মেন্স চাকুরী করে । ছুটি নিয়ে এসেছে পতেঙ্গা দেখার উদ্দেশ্যে । আমি একা যাচ্ছি, কয়েকজন সঙ্গী হলে খারাপ হয় না । তাই বিস্তারিত আলোচনা করে তাদের ভ্রমণ সঙ্গী হয়ে গেলাম ।

সিএনজিতে যেতে লাগলাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখার উদ্দেশ্যে । চট্টগ্রাম শহর থেকে যাত্রা করে গাড়িতে বশে- বড় বড় কারখানা, মেরিন একাডেমি ইত্যাদি তাকিয়ে দেখতে দেখতে অনুমান দেড় ঘন্টার পর আমরা পৌছলাম সমুদ্র সৈকত পতেঙ্গা। প্রথম দেখাতেই আমার ভালো গেলে গেলো। পতেঙ্গার সমুদ্র সৈকতের একদিকে ঝাউ বনের সবুজের সমারোহ, আরেকদিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি । সমুদ্র তীরে বইছে দমকা বাতাস । সমুদ্র তীরে বিশাল বেরী বাঁধ। পাশেই সমুদ্রের বালুকা বেলায় ডেকোরেশনের টেবিল ও চেয়ার পেতে খাবার হোটেল, শামুক-ঝিনুকের সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে বেশ কিছু দোকান। বিকেলে সমুদ্র সৈকতের সুর্যাস্ত দেখার জন্য একটু আগেই এসেছেন সকল বয়সের অসংখ্য মানুষ । আবহাওয়া বৈরী দেখার কারণে সঙ্গীগণ জানালেন বেশি দুর যাওয়া ঠিক হবে না । আশপাশে ঘুরেই চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়া প্রস্তুতি নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে ।

আমি একদম একা । সঙ্গে কেউ না থাকায় তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে তাদের সাথেই ঘুরতে লাগলাম । আর শুনতে লাগলাম সাগরের কল্লোল, দেখতে লাগলাম- জলরাশির অপার ঢেউ। সারি সারি জাহাজ আর নয়নাভিরাম দৃশ্য। যতই দেখছিল ততই অবাক বিষ্ময়ে তাকাচ্ছি । দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের জলরাশি আর সাগরপাড়ে আছড়ে পড়া বিশাল বিশাল ঢেউ দেখে আমি ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গেলাম ভাবের দেশে । পতেঙ্গার অপূর্ব মনকাড়া সৌন্দর্য্য দেখে ভাবতে লাগলাম সিঙ্গেল না আসলে উপভোগের পরিমানটা ডাবল হত। কিন্তু আমি যেহেতু সিঙ্গেল সেহেতু ডাবল আসার স্বপ্ন দেখে লাভ নেই । পতেঙ্গার সৈকতের এদিক ওদিক যাচ্ছি আর ঘুরে ঘুরে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি নিচ্ছি ।

আমার কপালটা খারাপই বলতে হয় । কারণ বৈরী আবহাওয়ায় বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার কারণে ডেকোরেশনের টেবিল ও চেয়ার পেতে বশা খাবার হোটেল এবং শামুক-ঝিনুকের সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে রাখা দোকানগুলো গুটিয়ে নিচ্ছে । বিশাল বিশাল ঢেউয়ের কারণে বাঁধ অনেকটা তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে। তীরে এসে লাতছে বিশাল বিশাল ঢেউ । ফলে তীরে দোকানগুলোর ভিতরেও প্রবেশ করছে সমুদ্রের নুনাজল । এক পর্যায়ে একটা প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাত আমাকে একেবারে গোসল করিয়ে দিলো । আমি কোন ধরণের প্রস্তুতি ছাড়াই গিয়েছিলাম । তাই সাথে অতিরিক্ত কাপড় নেই । নিরুপায় হয়ে বাতাশে শুকাতে হলো আমার শার্ট প্যান্ট ।

দেখতে দেখতে দুপুরের খাবারের সময় পার হয়ে যাচ্ছে । তাই আমরা সমুদ্র তীরের একটি রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবারের ইতিটানলাম কয়েক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ দিয়ে । খাবার শেষে অপরিচিত সেই সঙ্গীরা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বিদায় নিতে চাইলেন। অনেক অনুরোধ করেও তাদের সূর্যাস্ত সময় পর্যন্ত আটকে রাখতে পারলাম না । তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন । আমি একা ঘুরতে ঘুরতে শামুক-ঝিনুক কিনে তাতে নাম, তারিখ ইত্যাদি লিখিয়ে নিলাম । সেই সাথে বার্মিজ কাপড়ের দোকান থেকে বাসার সকলের জন্য সাধ্যমতো কাপড় কিনে নিলাম।

দমকা বাতাশ ক্রমশ বাড়তে চাচ্ছে । এদিকে বৈরী আবহাওয়া অপরদিকে একা একা ঘুরে বেড়ানো মোটেও ভালো লাগছিল না । তাই সূর্যাস্ত না দেখেই চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । একা একা যাব, তাই নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সরাসরি বাসের সন্ধান জেনে নিলাম দোকানিদের কাছ থেকে । এবার চট্টগ্রাম অভিমুখি বাসের সন্ধনে সমুদ্র সৈকত থেকে যাত্রা করলাম । পথেই চোখে পরল বেড়িবাঁধের উপর পদচিহ্ন নামে একটি স্মৃতি ফলক । সেখানে আমাদের জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের সিন্ধু কবিতার পঙ্কি লেখা । স্থানীয়দের কাছে জানতে পারলাম কাজি নজরুল ইসলাম ১৯২৯ সালে এই স্থানে বশেই নাকি সিন্ধু হিন্দোল কাব্য গ্রন্থের- “সিন্ধু কবিতার প্রথম তরঙ্গ” লিখেছিলেন-

হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর, হে চির-বিরহী,
হে অতৃপ্ত! রহি’ রহি’
কোন্ বেদনায়
উদ্বেলিয়া ওঠ তুমি কানায় কানায়?
কি কথা শুনাতে চাও, কারে কি কহিবে বন্ধু তুমি?
প্রতীক্ষায় চেয়ে আছে উর্ধ্বে নীলা নিম্নে বেলা-ভুমি!
কথা কও, হে দুরন্ত, বল,
তব বুকে কেন এত ঢেউ জাগে, এত কলকল?
কিসের এ অশান্ত গর্জন?

স্মৃতি ফলকের কাছে দাড়িয়ে ছবি উঠানোর জন্য কোন সঙ্গী না থাকায় স্মৃতি ফলকের কয়েকটি ছবি উঠালাম । এরপর সী-ভিচ লেখা একটি বাসে অন্যান্য যাত্রীদের সাথে ফিরে এলাম চট্টগ্রাম জিইসি মোড়ে । সেখান থেকে পায়ে হেটে গেলাম দামপাড়া পুলিশ লাইন । শুনেছি আমাদের উপজেলার এক পুলিশ কন্সটেবল (শহীদ শরিফ উদ্দিন) ১৯৭১ সালে এখানেই শহীদ হয়েছিলেন । এখানেই তাঁর কবর আছে। নিজের এলাকার একজন বীর শহীদের কবর দেখার উদ্দেশ্যে কিছু সময় ব্যয় করলাম পুলিশ লাইন এলাকায় ।

কিন্তু কবর কিংবা সমাধি লিপিতে তাঁর নাম না পেয়ে ব্যতীত মনে স্মৃতিসৌধের সাম কয়েকটি ছবি নিলাম অতঃপর রিক্সা নিয়ে ফিরে এলাম চকবাজার কাপাসগোলা রোডের আল আকাব হোটেলে । স্মৃতির পাতায় লিখা হয়ে গেলো ব্যতীক্রমধর্মী এক ভ্রমণ কাহিনী ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.