![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধর্ম যার যার, মানবতা অধিকার
বাউল আব্দুল মজিদ তালুকদার (১৫ জানু ১৮৯৮- ৮ জুন ১৯৮৮) (ইটাউতা ,দলপা ইউনিয়ন, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা), তিনি ছিলেন মরমী বাউল শিল্পী, গীতিকবি ও সুরকার। তিনি ১৯৪২ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া রেডিওতে তালিকাভুক্ত হন। তখনকার সময়ে পূর্ব বাংলার ৪ জন শিল্পীর মধ্যে আব্দুল মজিদ তালুকদার ছিলেন ১ জন। জন্ম ও পরিবার : তার জন্ম ১৮৯৮ সালের ১৫ জানুয়ারী নেত্রকোনা জেলার কেন্দূয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের ইটাউতা গ্রামে এক সভ্রানত মুসলিম পরিবারে ৷তাঁর পিতা মরহুম হাজী মোঃ আমছর তালুকদার ও মাতা মঘলের মা ৷ তিনি বিবাহিত ছিলেন। তাঁদের ৪ ছেলে ৩ মেয়ে। তাঁর ছেলে আবুল বাশার তালুকদার একজন গীতি কবি ও কণ্ঠ শিল্পী। তিনি রেডিও-টিভির তালিকা ভুক্ত নিয়মিত শিল্পী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : তিনি মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং ঐ সময়ে মসজিদে আযান দিতেন।
তাঁর মধুর কন্ঠে আযান শুনে সকলেই মুগ্ধ হতেন। তাঁর মাদ্রাসার প্রধান তাঁর মধুর কন্ঠের প্রশংসা করতে গিয়ে মন্তব্য করেচেলিনে, “মজিদ যদি গান গায় তবে সারাজীবন গানের ভুবনে অমর হয়ে থাকবে।” পরে একদিন সত্যি তিনি মাদ্রাসা ছেড়ে যোগদেন গ্রাম্য গানের দলে, সেখানে অন্যদের সাথে তিনিও গান গাইতেন ।তিনি পুনরায় নেত্রকোনা চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন ও সেখান থেকে এসএসসি পাশ করেন। গান চর্চা : তখনকার সময়ে কেন্দুয়ার মরমী কবি জালাল উদ্দিন খাঁর (১৮৯৪-১৯৭২) বাড়িতে নিয়মিত গানের আসর হত, সেখানে বালক আব্দুল মজিদ এর ছিল অবাধ যাতায়াত। গ্রামে অনুষ্ঠিত পালাগানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও নিয়মিত যাওয়া-আসা করতো। প্রথম জীবনে আব্দুল মজিদ লেঠুর দলে রাধা-কৃষ্ণের অভিনয় ও গান করেন। সেদিন থেকেই গানের যাত্রা শুরু হয় এবং উদাসী ভাবের জন্ম নেয়।তাঁর গান পাটেশ্বরী নদীর কুল কুল স্রোতে ধ্বনিত হয়ে সমবেত জনতার হৃদয় হরণ করে নিয়েছিল। অবশ্য তাঁর পরিবার ছিল গানের ঘোর বিরোধী কারন তাঁর পিতা ছিলেন হাজী। পরিবারের সকল বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি গানকে করে নেন আপন সঙ্গী।নিজের বাড়িতে বৈরী অবস্থার কারণে বিভিন্ন জায়গায় রাতে গান করে, দিনের বেলায় বিভিন্ন জনের বাড়িতে অবস্থান করে বিশ্রাম নিতেন। এভাবেই চলতে থাকে গানের জীবন । প্রথম জীবনে দলপা গ্রামের বাউল সাধক গোবর দনের কাছেই গানের হাতে কড়ি ৷পরে ওস্তাদ জালাল উদ্দিন , রশিদ উদ্দিন ও কবি জসিম উদ্দিনের কাছে তালিম নেন ৷শিল্পী ষোল বছর বয়সে প্রথম বায়াত হন পীরে কামেল সৈয়দ আব্দুল্লাহর কাছে ৷তাঁর ইন্তেকালের পর পঁচিশ বছর বয়সে বায়াত হন মৌলানা আব্দুল কুদ্দুছ হাওলাপুরীর কাছে ৷তাঁর ইন্তেকালের পর ৫৫ বছর বয়সে বায়াত হন শেরে মস্তানের কাছে ৷
পীর মুর্শিদের কাছে আধ্যাতিক বিষয় বস্তু শুনে দিওয়ানা হালে স্বপনে রূহানি ছুরতে পীরকামেলদের আদেশ মোতাবেক খাজা বাবার পবিত্র রুহি দরবার শরীফ স্থাপন করেন নিজ বাড়ীতে এবং প্রতি বছর ওরশ শরীফ পালন করতে থাকেন ৷তাঁর পীরকেবলা মৌলানা আব্দুল কুদ্দুছ হাওলাপুরী সাহেব ভক্ত আব্দুল মজিদ কে বললেন-‘তুমি আমার কাছে কি চাও ?’ আব্দুল মজিদ বললেন , ‘ আমি গান গাইতে চাই’ ৷পীর সাহেব বললেন ‘হা কর’ ও আব্দুল মজিদের মুখে একটা ফুঁ দিয়ে বললেন -‘যাও’ ৷ তখন থেকে আল্লাহর রহমতে তাঁর আর পিছনে তাকাতে হয়নি৷তাঁর গানের সুনাম চারদিকে দেশ বিদেশে প্রচার হতে থাকে ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান গেয়ে সুনাম অর্জন করতে থাকেন। এমন অবস্থায় নেত্রকোনা মহকুমা সদরে এক গানের অনুষ্ঠানে এসডিও সাহেব প্রধান অতিথী ছিলেন এবং তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং তাঁর বিস্তারিত জেনে এসডিও সাহেব এর বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন এবং সেখানে থেকেই তিনি গান করতেন আর এসডিও সাহেব এর দুই মেয়েকে গান শিখাতেন। তিনি ১৯৪২ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া রেডিওতে তালিকাভুক্ত হন। তখনকার সময়ে পূর্ব বাংলার ৪ জন শিল্পীর মধ্যে আব্দুল মজিদ তালুকদার ছিলেন ১ জন। তিনি বাউল আব্দুল করিম সহ দেশের খ্যাতনামা অনেক শিল্পীর সাথে পালা গান করেছেন। আব্দুল মজিদ একতারা বাজিয়ে গান করা শুরু করলেও পরবর্তীতে বেহালা, দু-তারা, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান : স্বাধীনতা উত্তর ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন সমাবেশে তিনি স্ব-রচিত দূটি গান গেয়ে সবার কাছে প্রসংসিত হয়েছিলেন , গান দুটি হলো ১. ঐ দেখ কে যায়রে মজিব, নিশান টাংগাইয়া নাও বাইয়া——– এবং ২. রঙিন কাষ্ঠের রঙিন নাও রঙিন নায়ের ছইয়া , বঙ্গবন্ধূ হাল ধইরাছেন নায়ের পাছায় বইয়ারে ——— ৷এই সব গান শুনে বঙ্গবন্ধু নিজেও শিল্পীকে ভূয়সী প্রশংসা করেন।তখন তিনি মুজিবকোট পরতেন। তিনি স্বাধীনতা যূদ্ধে জীবন এর উপর ঝুঁকি নিয়ে গান গেয়ে মূক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ জুগিয়েছেন। জীবনাবসান: এই মহান শিল্পী ১৯৮৮ সালের ৮ ই জুন অসুস্থ অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
প্রকাশিত গ্রন্থ: তাঁর লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭ টি। ‘শেষ নবী’ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁর কিছু বিখ্যাত গান: তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন।আব্দুল আলিম তাঁর ১২ টি গান গেয়েছেন, নিনা হামিদ , মিনাবড়ূয়া , রহমান বয়াতী, মোস্তুফা জামান আব্বাছী , হাজেরা বিবি, আবুল বাসার তালুকদার সহ অসংখ্য শিল্পী তাঁর লেখা গান গেয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গান হলো- ১. আরে ও ভারতবাসি ভাই, কলের লাংগল নিমের জোয়াল, চল মাঠে চল হাল বাইতে যাই ৷(সর্ব ভারতীয় কৃষক সম্মেলনে স্বরচিত এই গানটি গেয়ে তিনি গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন ) ২.ঐ দেখ কে যায়রে মজিব, নিশান টাংগাইয়া নাও বাইয়া ৷ ৩. রঙিন কাষ্ঠের রঙিন নাও রঙিন নায়ের ছইয়া , বঙ্গবন্ধূ হাল ধইরাছেন নায়ের পাছায় বইয়ারে ৷ (১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনের বিভিন্ন সমাবেশে তিনি স্ব-রচিত এই দূটি গান গেয়ে সবার কাছে প্রসংসিত হয়েছিলেন ) ৪.হীরামন মানিকির দেশে আমার মূর্শিদ অছে ৷৷ সাতসমুদুর পাড়ি দিয়া কেমনে যাই তার কাছে ৷৷ সাত সমুদ্দূর তের নদী পাড় হইতে পারি যদি আমি দেখব সেই রূপনিরবধি যদ্দিন পরান বাঁচে ৷৷ ৫.হরদমে রাছুলের নাম বল দিন গেল. হরদমে রাছূলের নাম বল ৷৷ মোহাম্দমোসতুফা নবী নুরের কায়া নূরে
লেখক : আমিরুল ইসলাম:
©somewhere in net ltd.