![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রত্যক মানুষের জীবনে কাউকে না কাউকে ভালবাসা প্রয়োজন। এম ডি আরিফ
হযরত উমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ:
ইসলাম গ্রহণের আগে হযরত উমর (রাঃ) ছিলেন ইসলামের কঠোরতম দুশমনদের অন্যতম। কুরাইশরা একদিকে ইসলামী আন্দোলন ও তাঁর আহবায়কের বিরোধিতায় চরমপন্থা অবলম্বন করতে লাগলো, অন্যদিকে এদের সঠিক পথ নির্দেশনার জন্যে হযরত (স)-এর হৃদয়-মন প্রেমের আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো। আবু জেহেল এবং উমর উভয়েই তাঁর দুশমনীতে অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলো। দাওয়াত ও তাবলীগের কোনো প্রচেষ্টাই তাদের উপর কার্যকর হচ্ছিল না। তাই একদিন রাহমাতুল্লিল আলামীন সরাসরি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন : ‘প্রভূ হে! আবু জেহেল এবং উমর এ দু’জনের মধ্যে যে তোমার কাছে বেশি প্রিয়, তাকে তুমি ইসলামের দ্বারা সম্মানিত করো। এ দোয়ার কয়েকদিন পরই হযরত ওমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করার তওফীক লাভ করেন। এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরুপ :
খোদ হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, ‘একদা রাত্রে আমি হযরত (স)-কে উত্যক্ত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলাম। তখন তিনি কাবার মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি ত্রস্তপায়ে এগিয়ে গিয়ে নামাজ শুরু করলেন। আমি তা শুনবার জন্যে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি সূরা আল-হাক্কাহ থেকে কিরআত পড়ছিলেন। আমি সে কালাম শুনে বিস্ময়ে মুগ্ধ হলাম। তার কবিত্বময় ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী মনে হলো। আমি মনে মনে ভাবলাম : খোদার কসম! লোকটি নিশ্চয়ই কবি। ঠিক এ মুহুর্তেই তিনি এ আয়াত পড়লেন :
إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ{40} وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيلاً مَا تُؤْمِنُونَ{41}
অর্থ : এ এক সম্মানিত বার্তাবাহকের কালাম, এ কোনো কবির বাণী নয়, কিন্তু তোমাদের মধ্যে খুব কম লোকই ঈমান এনে থাকে। (আয়াতঃ ৪০-৪১)
একথা শোনামাত্রই আমার ধারণা : ‘ওহো, লোকটি তো আমার মনের কথা জেনে ফেলেছে। এ নিশ্চয়ই কোনো গণক হবে।’ এরপরই মুহাম্মদ (স)-এ আয়াত পাঠ করলেন :
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيلاً مَا تَذَكَّرُونَ{42} تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ{43}
অর্থঃ এ কোনো গণকের কালাম নয়; তোমরা খুব কমই নসিহত পেয়ে থাকো। এতো রাব্বুল ‘আলামীনের কাছ থেকে নাযিল হয়েছে। (আয়াতঃ ৪২-৪৩)
তিনি এ সূরা শেষ পর্যন্ত পড়লেন। আমি অনুভব করলাম, ইসলাম আমার হৃদয়ে তার আসন করে নিচ্ছে।’
কিন্তু যতদূর মনে হয়, হযরত উমর (রাঃ) অত্যন্ত শক্ত প্রকৃতির ও দৃঢ় চিত্ত লোক ছিলেন। এজন্যে এবারই তাঁর ভেতরকার পরিবর্তনটা পূর্ণ হলো না। তিনি তাঁর চিরাচরিত পথেই চলতে লাগলেন। এমনকি, একদিন তিনি দুশমনীর তাড়নায় উত্তেজিত হয়ে হযরত (স)-কে হত্যা (নাঊযুবিল্লহ) করার উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত তরবারি নিয়ে ঘর থেকে বেরুলেন। পথিমধ্যে নয়ীম বিন আব্দুল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলো। সে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় যাচ্ছ ওমর?’ তিনি বললেন, ‘মুহাম্মদ (স)-কে হত্যা করতে যাচ্ছি।’ নয়ীম বললো, ‘আগে তোমার নিজের ঘরেরই খবর নিয়ে দেখো। তোমার নিজের বোন-ভগ্নিপতিই তো ইসলাম গ্রহণ করেছে।’
একথা শুনে ওমর মোড় ফিরলেন এবং সোজা বোনের বাড়ীতে গিয়ে হাযির হলেন। তাঁর বোন-ভগ্নিপতি উভয়েই তখন কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। ওমরকে আসতে দেখেই তাঁরা চুপ করে গেলেন এবং কুরআনের অংশটি লুকিয়ে ফেললেন। কিন্তু তারা যে কিছু পড়ছেন, তা ওমর টের পেয়েছিলেনল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী পড়ছিলে? তোমরা নাকি বাপ-দাদার ধর্মকে ত্যাগ করেছ? একথা বলেই তিনি ভগ্নিপতিকে প্রহার করতে লাগলেন। স্বামীর সাহায্যের জন্যে বোন এগিয়ে এলে তাঁকেও তিনি মারতে লাগলেন। এমনকি উভয়ে রক্তাপ্লুত হয়ে গেলেন। কিন্তু এতৎসত্ত্বেও তারা সুস্পষ্ট ভাষায় বললেন, : ‘আমরা সজ্ঞানে ইসলাম কবুল করেছি; সুতরাং তোমার কোনো কঠোরতাই আমাদেরকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।’ তাদের এই অটল সংকল্প দেখে হযরত ওমর (রাঃ) কিছুটা প্রভাবিত হলেন। তিনি বললেন,‘ আচ্ছা তোমরা কি পড়ছিলে আমাকে শোনাও দেখি।’
বোন ফাতিমা কুরআনের অংশটি এনে সামনে রাখলেন। সেটি ছিলো সূরা তা-হা। তিনি পড়তে শুরু করলেন এবং এই আয়াত পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন :
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي{14}
‘আমিই খোদা, আমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই; সুতরাং আমারই বন্দেগি করো এবং আমায় স্মরণের জন্যে নামায পড়ো।’
এ পর্যন্ত আসতেই তিনি এতটা প্রভাবিত হলেন যে, হঠাৎ সজোরে বলে উঠলেন : লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হ। এরপর তিনি সেখান থেকে সোজা হযরত (স)-এর খেদমতে রওয়ানা হলেন। এ সময় হযরত (স) সাহাবী আরকামের গৃহে অবস্থান করছিলেন। ওমর দরজার কাছে পৌঁছলে তাঁর হাতে তরবারি দেখে উপস্থিত সাহাবীগণ ঘাবড়ে গেলেন। কিন্তু হযরত হামযা (রাঃ) বললেন, ‘আসুক না, তার নিয়্যত যদি ভাল হয় তো ভাল কথা। নচেৎ তার তরবারি দ্বরাই তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলবো।’ ওমর ঘরের মধ্যে পা বাড়াতেই হযরত (স) এগিয়ে এসে তাকে সজোরে আকঁড়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন :‘কি ওমর, কি উদ্দেশ্যে এসেছ?’ একথা শুনেই যেন ওমর ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি অত্যন- বিনয়ের সাথে জবাব দিলেন, ‘ঈমান আনার উদ্দেশ্যে।’ হযরত (স) স্বতস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবার’ সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত সাহাবী তকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করলেন।
হযরত ওমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামী সংগঠনের শক্তি যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেলো। এতদিন মুসলমানরা প্রকাশ্যে ধর্মীয় কর্তব্য পালন করতে পারছিল না; কাবা গৃহে জামাআতের সাথে নামায পড়াও ছিলো অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটলো। তিনি নিজেই প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করলেন। এ ব্যাপারে অনেক হাঙ্গামা হলো বটে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুসলমানরা কা’বা মসজিদে জা’মায়াতের সাথে নামায আদায় করার সুযোগ লাভ করলো; তাদের সংগঠনও আগের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হলো। পরন্ত আল্লাহর দরবারে আখিরী নবী (স)-এর দো’আ কতোখানি মঞ্জুর হয়েছিল, তাও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করতে পারলো। দীর্ঘ চৌদ্দশ বছর অতিক্রান্ত হবার পরও আজ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা’আলা হযরত ওমর (রাঃ)-এর দ্বারা ইসলামকে যে সম্মান ও মর্যাদা দান করেন, তার দ্বিতীয় কোনো নজীর নেই।
রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
আবু সলীম মুহাম্মদআবদুলহাই
অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০৭
কদমা বলেছেন: আপনার লেখা থেকে আমি কিন্তু স্পস্ট বুঝলাম না যে হযরত ওমর (রাঃ) আসলে প্রকৃত কোন কারনে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন ?
আল্লার কাছে রসুল (স এর দোয়ার জন্য, নাকি রসুল (স
এর কারনে, নাকি তার বোন-ভগ্নিপতির জন্য, নাকি বাধ্য হয়ে, নাকি নিরুপায় হয়ে, নাকি অর্থ-বিত্তের লোভে, নাকি এই সবকিছুর জন্যই ।
১জন কট্টর বিধর্মি তার মধ্যে কুখ্যাত কুরাইশ বংশের লোক এতো সাধারন কারনে বশ মেনেছিল বলে আমার মনে হচ্ছে না । নিশ্চই আপনি কোন কিছু ভুল জানেন বা না জানেন বা সত্যটা জানেন না ।
আমি প্রশ্নটা ফাজলামো করার জন্য করলামনা, সত্যটা পরিস্কার করার জন্য করলাম । আপনি না জানলে জানার চেস্টা করবেন, আশা করি ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৫
পয়গম্বর বলেছেন: সুবহানাল্লাহ