নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেই নেই নেই

মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম

আজিও ব্যথিত সৃষ্টির বুকে ভগবান কাঁদে ত্রাসে, স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি পাছে বা বড় হয়ে তারে গ্রাসে। (কাজী নজরুল ইসলাম)

মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাজপাখি (ছোটগল্প)

০৬ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:৪৩

আমি সেলিম খান।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলম নিয়ে বসে থাকি।কারণ এটার খোঁচায় আমার পয়সা আসে।একসময় কোন এক পত্রিকায় ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছি।আমার কলমে বহু মানুষের মৃত্যুর বর্ণনা দিয়েছি,খেলেছি অসংখ্যবার! তারপরও তৃষ্ণা মিটেনি।রক্ত আর টমেটোর সস একসাথে করে কালি বানিয়েছি।তবুও নেশা থামেনি।মৃত্যুর খবর লিখতে লিখতে মাংসের নেশা টেনে নিয়ে গিয়েছে বহুদূর। একেকটা চরিত্র তৈরি করতে লাগলাম।কিছু লিখা প্রকাশকরা দেখল।প্রথমবার দূর দূর করে কুকুরের মত তাড়া খেতে হয়েছে।হাল ছাড়িনি।রক্ত আর অবৈধ সম্পর্কের ঘোর যে কতটা লোভনীয় আমার বিকৃত মস্তিষ্ক বারবার টের পেয়েছে।কিন্তু নেশার কাছে সবকিছু হার মেনে নিয়েছিল।আমি লিখলাম- বহুশব্দ মিলিয়ে বিক্ষিপ্ত যৌনতার আর্তনাদ।খুনের বর্ণনা দেয়া ছিল আমার জন্য রক্ত আর পুঁজের মত দুধভাত।কিছু পাঠক আমাকে পছন্দ করল।আবার কেউ ঘৃণা করল।তাতে আমার কি!

কলম দিয়ে এত খুনের মধ্যে ভালোবেসেছিলাম অনুরাধাকে।ধর্ম ছেড়ে এসেছিল আমার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমাতে।আমিও না ওকে রক্তাক্ত হাত গালে রেখে আশ্বাস দিয়েছিলাম।মাথা নুইয়ে বিশ্বাস করেছিলাম।সঁপে দিয়েছিল সে নিজেকে।নেহাতই দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম।ও কখনও আমাকে কলমের দাপটে বাঁধা দেয়নি।তবুও ওর প্রতি মোহ বেড়ে গিয়েছিল।কাউকে খুন করার বদলে অনুরাধার শরীরের আকর্ষণ আমার মন কেড়েছিল।আমি তার প্রতিটি অংশের ভাঁজে ভাঁজে আক্রমণ করেছি।তবুও সে বিরক্ত হয়নি। লিখে দু'পয়সা পেয়ে যা আনতাম তা দিয়ে তাকে সাজিয়ে রেখেছিলাম।মন ভরে দেখতাম।অনু লজ্জায় জোরে জোরে শ্বাস নিত।আমি উপভোগ করতাম।দিন এভাবে ভালই কাটতে লাগলো আমাদের।আমি আবার লিখায় মনযোগ দিলাম।সন্ধ্যায় বসতাম সকালে উঠতাম। প্রকাশকরা আমার কাছ থেকে ভালো কিছু চাইত।আমি দিতে চেষ্টা করতাম।আমার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল।নতুন কনসেপ্ট না পাওয়ার কারণে বিষিয়ে উঠলাম।অনুরাধা চিন্তিত হয়ে গিয়েছিল।কোন একদিন রাগে অনুকে গালে আঘাত করেছিলাম।সেদিন তরতর করে রক্ত পড়ছিল মুখ দিয়ে।কাঁদোকাঁদো চোখে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল।আমি না দেখা ভান করে অন্যদিকে তাকিয়েছিলাম,যেন কিছুই হয়নি।ক্ষমা চাইনি কখনও।আবার যদি প্রেমে পড়ে যাই।আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম।বাইরে বাইরে থাকা শুরু করলাম।অনুরাধা এ নিয়ে কোনদিন কিছুই বলেনি।

আমিও সব ছেড়ে নতুনত্ব পেতে চাইছিলাম।কুকুরের মতো খুঁজছিলাম।খুব আহত হয়ে গিয়েছিলাম।হাত গুটিয়ে বসে থাকিনি।ঘরের খবর ভুলে গেলাম।অনুকে একা থাকতে দিলাম।সে আমাকে ছাড়া থাকার অভ্যাস করল।আমরা এক ঘর থেকেই কেমন যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছিলাম।কেউ-ই টের পাইনি।একদিন এক প্রকাশক বাসায় আসল।তার সাথে লেনাদেনা নিয়ে কথা কাটাকাটি হলো।একপর্যায়ে তুমুল ঝগড়া শুরু।অনু চুপ করে পাশের ঘরে বসে এসব শুনছিল।সে সামনে আসেনি।প্রকাশক চলে যাওয়ার পর আমি ঘর থেকে না বলে বের হয়ে গেলাম।একদিন-দুইদিন-তিনদিন করে অনেকদিন কেটে গেল।ভেতর ভেতর রাগ পুষে রেখেছিলাম বহুদিন।হঠাৎ একবার মনে হলো-আমি ভুল করছি।আমার অনুরাধাকে প্রয়োজন।তাকে ছাড়া আমার চলবে না।তার ওই টলটলে কাঁদোকাঁদো চোখের কথা খুব মনে পড়ছিল।নিজেকে খুব দোষী মনে হলো।আমি রওনা দিলাম অনুর কাছে ফেরার জন্য।সাথে তেমন টাকা-পয়সা ছিল না।অগত্যা একটা গোলাপ ফুল নিয়েই নিলাম।বাসার সামনে আসার পর দেখি গেট খোলা।ঢুকে পড়লাম খুব খুশি মনে।রুমের ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ ছিল।যেই কড়া নাড়তে যাব অমনি ভেতর থেকে ভেসে আসলো হাসির খিলখিল আওয়াজ।আমি অপ্রস্তুত ছিলাম।সবে নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা চলছিল।কখনও নিজেকে দমিয়ে রাখিনি।সেদিন হয়তো ভুলেই জানালার পর্দা একটু সরানো ছিল।ওইদিনটা ছিল আমার প্রায়শ্চিত্তের দিন।প্রত্যক্ষ করতে হয়েছিল উন্মাদনা।আমার ভাঁজে অন্যের স্পর্শ পড়েছিল।সেদিন ছিল নগ্নতার রক্তাক্ত বিনোদন।বিশ্বাস হচ্ছিল না।শুধু আমার দাড়িগুলো ভিজেছিল।চশমা গরম বাষ্পে আবছা হয়ে গিয়েছিল।

কয়েকঘন্টা পর বাসায় ফিরলাম।আমার আসাতে অনু অপ্রস্তুত ছিল।ওর চোখের দিকে তাকালাম।আগে মতো বিশ্বাস তার চোখে ছিল না।আমি স্বার্থপর হতে চেষ্টা করলাম।সেদিন রাতটা ছিল আরও ভয়ংকর।এটা ছিল আমার অভিজ্ঞতার প্রথম নিদর্শন।কখনও ব্যর্থ হতে শিখিনি।হতে চাই না।আমার বিষাক্ত হাত অনুর পিঠ ছোঁয়াতে সে কেঁপে উঠলো।বাঁধা পাইনি।সংকেত পেয়েছি কাছে আসার।তার অপবিত্র বিষে আমার আক্রমণের প্রহর গুনছিল।আমি থেমে যাইনি।উন্মাদনা বাড়িয়েছিলাম নিরবিচ্ছিন্নতার সাথে।আমার সামলাতে কষ্ট হচ্ছিল।অনুরাধা সেদিন পাখি হয়ে ডানা মেলেছিল।তার গরম শ্বাস আমার কানের কাছে এসে বাঁধা দিচ্ছিলো।আমি মুচকি হেসে তার দু'পা ও হাত বেঁধে দিলাম।সে মুচকি হেসেছিল।অনু তার চরম উত্তপ্ত পারদের বহিঃপ্রকাশ চোখ বুজে করছিলো।আমি তার মুখে কাপড় গুঁজে দিলাম।তারপর হাত ও পায়ের রগ কেটে দিলাম।অনুরাধা চিৎকার করতে চাইলো।মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে আমার ঠোঁট দিয়ে সেই চিৎকার বন্ধ করে দিলাম।সেদিন অনুর চোখের পানি আমার গালে এসে লেগেছিল।আমি আটকায়নি। আমার বিশ্বাস অনুরাধা আমার ঠোঁটের পরশে সেদিন কেঁদেছিল!

আমি সেলিম খান।
আজ রাতে নিজের স্ত্রী-এর খুনের বর্ণনা নিজেই লিখছি।অনুরাধা চা নিয়ে এসেছে আমার জন্য।মিষ্টি করে হেসে বলল- ঘুমাবে না? আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে সায় দিলাম।তারপর ডায়েরিটা রেখে দিলাম।অনু বিছানায় শোয়ে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।সে হয়তো জানে না আমি আরও গভীর রাতের অপেক্ষায় আছি।আর তর সইছে না। কখন শেষ হবে সেই বিষাক্ত চুম্বনের ইতিকথা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.