নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেই নেই নেই

মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম

আজিও ব্যথিত সৃষ্টির বুকে ভগবান কাঁদে ত্রাসে, স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি পাছে বা বড় হয়ে তারে গ্রাসে। (কাজী নজরুল ইসলাম)

মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিক্রিয়া (ছোটগল্প)

১৩ ই জুন, ২০২১ ভোর ৫:৩৬

আদনান কখনও শূন্য থেকে উঠতে শেখেনি।শূন্যতা আর পরিপূর্ণতার মাঝের ফারাক সে কখন বুঝতে পারেনি।কারণ তার মা রেবেকা সুলতানা চান না ছেলে খুব তাড়াতাড়ি এতকিছু বুঝে উঠুক।এক ছেলে বলে ছাড় দেবেন-কথাটি ভাবতেও কষ্ট হয় আদনানের।হয়রানি,হয়রানি এবং হয়রানি;তার কাছে ভাগ্যের গোলকধাঁধায় পরিণত হয়েছে।কলেজে ওঠার পর থেকে মাথার সব ব্রেন ওলটপালট করে দিয়েছে মা।আদনান সবচেয়ে ভয় পায় মায়ের হাতের মারকে।বড় হওয়ার পরও ছেলের গায়ে হাত তোলতে ভয় পান না রেবেকা।ভয় পান না বললে ভুল হবে,লজ্জাও লাগে না রেবেকার।ছেলের ছোট অন্যায়গুলো তিনি চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ করেন।তারপর হাতের কাছে যা পা তা দিয়ে মারতে থাকেন।

আদনান এখন বড় হয়েছে।কলেজে পড়ে।বাবা সবসময় ব্যবসায়িক কাজে বাইরে থাকেন।খুব কম কথা হয়।কোনকিছুর প্রয়োজন পড়লে বাবাকে বলে।তবে শর্ত থাকে যে, পড়াশোনার কোনো সামগ্রী ছাড়া অন্যকিছু চাইতে মায়ের অনুমতি লাগবে।মায়ের কড়া শাসন সে মুখ বুজে সহ্য করে নেয়।না করে কি করবে সে? শরীর ও মন যে বিষিয়ে গিয়েছে।সেদিন পুরোনো স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলছিল।মা রেবেকা কাছে এসে জোরে জোরে চিৎকার করে বললেন, এত ফোনের টাকা নষ্ট করছো কেন? ইনকাম করো না তুমি।এত কিসের কথা।আদনানের বন্ধু ফোনের ওপাশ থেকে শুনছিল।তারা উভয়েই লজ্জিত হয়।আদনান ফোন রেখে দিয়ে চুপটি করে বসে থাকে।কথা বলে না সে।মা ঘর থেকে বেরিয়ে যান।আর কখন সেই বন্ধু সাথে কথা হয়নি তার।

কলেজে প্রথম বর্ষের প্রথম সাময়িকের রেজাল্ট দিয়েছে।রেবেকা সুলতানা ছেলের রেজাল্টের খোঁজ নিতে কলেজে গেলেন।বাসায় ফিরলেন অগ্নিমূর্তি হয়ে।মায়ের মুখ দেখে আদনানের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল।রেবেকা মার্কশিট ছেলের মুখে ছুঁড়ে মারে।আদনান মার্কশিট হাতে নেয়।সে দেখে, ইংরেজিতে ষাট,ম্যাথে পয়ষট্টি ।আর পড়তে পারে না সে।পড়ার স্পৃহা হারিয়ে গিয়েছে।রান্না ঘর থেকে লোহার খুন্তি দিয়ে হাতে আঘাত করতে থাকে রেবেকা।টেবিল থেকে বইগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেয়।আদনান চুপচাপ রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে।

কিছুক্ষণ পর রেবেকা শান্ত হয়ে বসে আছেন বিছানার উপর।চোখ বুজে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।আদনান এখনও রুমের কোণে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে।পাশের বাসার দিলরুবা বাইরে ফেলে দেয়া বইগুলো কুড়িয়ে আছে।আদনানের টেবিলে রাখে।আর আদনানকে বলেন, বাবা মায়ের কথা শুনে একটু পড়াশোনা করো বাজান।তা না হলে তো জীবনে সফল হতে পারবা না।রেবেকা মুচকি হেসে বলেন, ও শুনবে আমার কথা ভাবী! পাগল হইছেন আপনি।মাথায় কিছু থাকলে না পড়াশোনা করবে।দিলরুবা আদনানের দিকে তাকান,তারপর রেবেকার দিকে তাকিয়ে বলেন, ভাবী জানেন আমার মেয়ে রোখসানা কলেজে উঠার পর থেকে যা সিরিয়াস হইছে।মেয়েটা আমার পড়াশোনার চাপে তিনবেলার জায়গায় কখনো একবেলা কখনও দু'বেলা খায়।এখন থেকেই সে পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে।পড়াশোনা করতে হলে অনেক সেক্রিফাইজ করতে হয় ভাবী।যাই ভাবী,এক ছেলেকে মারছেন এখন একটু আদর করে দেন।দিলরুবা চলে যায়।এবার রেবেকা রাগে আরও ফেটে পড়ে।ছেলেকে কোথা থেকে কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।তিনি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান।আদনানের কাছে গিয়ে তার থুতনিতে ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে চিৎকার করে বলেন, দেখেছিস কুত্তার বাচ্চা, একটা মেয়ে মানুষ হয়ে কিভাবে পরিশ্রম করে।তুই জীবনেও পারবি না।এক কাজ কর রোখসানার পায়খানা আর প্রস্রাব এনে দিই,খেয়ে দেখ পরীক্ষায় একটু ভালো করতে পারিস কিনা।আদনানের শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল।সে ছিল বাকরুদ্ধ।মায়ের এমন কটুক্তি শোনা থেকে তার কাছে মরে যাওয়াটা শ্রেয় বলে মনে হচ্ছিলো।

আদনানের অভাব ছিল না।মায়ের বাঁধাগুলো পার হয়ে যাওয়া ছিল তার কাছে সবচেয়ে কঠিন।মায়ের কাছে সে ছিল পরাজিত।বন্ধুদের সাথে এত বেশি দেখা করা যাবে না,ছুটি হলে বেড়ানো যাবে না,কেউ খুশি হয়ে তাকে টাকা দিলে রেবেকা তার কাছে রেখে দেন কারণ ছেলের এতো টাকার প্রয়োজন নেই।রুমের দরজা খোলা রেখে ঘুমাতে হবে।মায়ের কত আবদার কত শর্ত মেনে নিতে হয় তা আদনান থেকে ভালো কেউ জানে না।এই সমাজে কত আদনান ক্রিটিক্যাল পারিবারিক হয়রানিতে হারিয়ে যায়, ঘরের চারকোণা আবদ্ধ আদনানরাই ভালো বলতে পারবে।

ব্রেকফাস্ট করে টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে আদনান।সে ফেসবুক মেসেঞ্জারের কিছু মেসেজ খুঁটিয়ে দেখছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন নিয়ে কথা হচ্ছিল বন্ধুদের সাথে। আগামীকাল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথমদিন।যেহেতু প্রতিদিন মায়ের ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে হয় সেদিনও বাদ ছিল না।রেবেকা ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে আর ছেলেকে পড়াশোনার ব্যাপরে শাসাচ্ছেন।আদনান বিরক্ত হয়ে বলল, দেখো মা কাল এক্সাম বিরক্ত করো না।খুব চাপ আছে।রেবেকা বিরক্ত নিয়ে বকবক করতে থাকে।আর সে থামে না।আদনান চুপ করাতে চেষ্টা করে।একসময় মায়ের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে।রেবেকা ছেলের দিকে তেড়ে আসে আর বলে,পরীক্ষার আগেরদিন কিসের সাজেশন তোর! সারাবছর পড়া নাই তোর।আদনান মাকে বুঝাতে চেষ্টা করে।কিন্তু আর বুঝিয়ে উঠতে পারে না।হঠাৎ মাকে গালি দিয়ে বসে।পরিস্থিতি আরও ঘলাটে হয়।রেবেকা রাগে আদনানকে লাথি দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দেয়।আদনান তীব্র গতিতে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায়।টেবিল থেকে ল্যাপটপ নিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করে বসে।তারপর সে মা-কে পেছন দিকে জোরে ধাক্কা দেয়।রেবেকার মাথার পেছনের অংশটা কাঠের ওয়্যারড্রোবের কোণায় লেগে থেঁতলে যায়।ফ্লোর রক্তে ভেসে গিয়েছে।আদনান স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।সেদিন তার পায়ে কাছে রক্তের ঢেউ এসে খেলা করেছিল।কিন্তু সে একটুও চমকায়নি।
আজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন।কিন্তু আদনানের অনেক তাড়া।সে জানাজার নামাজের প্রস্তুতি নিয়েছে।আজ তার মা রেবেকা তাকে ঘর থেকে বের হতে বাঁধা দেয়নি।জানাজা শেষে আদনান হ্যান্ডকাফ পরেছে।কারণ আদনান ভুলে গিয়েছে আজ তার পরীক্ষার প্রথমদিন!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.