![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজিও ব্যথিত সৃষ্টির বুকে ভগবান কাঁদে ত্রাসে, স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি পাছে বা বড় হয়ে তারে গ্রাসে। (কাজী নজরুল ইসলাম)
(১)
বইয়ের নামঃ পদ্মা সেতু
লেখকঃ মোঃ এনায়েত চৌধুরী
আমার রেটিংঃ ১০/১০
যারা নিয়মিত ইউটিউব ভিডিয়ো দেখেন তারা অবশ্যই লেখককে ভালো করে চিনেন।তথ্যবহুল ভিডিয়োর জন্য তিনি সারাদেশে সুপরিচিত। এটিই ওনার লেখা প্রথম বই।'পদ্মা সেতু' উপর এই বইটি বাংলাদেশ প্রথম।বাংলাতে এত সহজ-সরল বই সেতুর উপরে নির্ভর করে আগে কেউ কখনও লেখেননি হয়তো।বইটিতে সেতু তৈরির ইতিহাস থেকে শুরু করে পদ্মা সেতুর- মাটির স্বরূপ,পাইলিং,সেতু উপরিকাঠামো,চলাচলের সুবিধা,সেতুর গুরুত্ব সবকিছুই ভেঙে ভেঙে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।আপনি যদি কোন অশিক্ষিত লোককে বইটি পড়ে শোনান তাহলে সে ব্যাখ্যাগুলো সহজেই বুঝতে পারবে।এক কথায় বিজ্ঞানের বিষয়গুলো লেখক যেভাবে বাংলাতে বুঝিয়েছেন তা এক কথায় অনবদ্য। কেউ বইটি না পড়লে অনেককিছু মিস করেছেন।
(০২)
বইয়ের নামঃ দ্য আর্ট অব ওয়ার
লেখকঃ সান জু
অনুবাদঃ সাবিদিন ইব্রাহিম
এই বইয়ের রেটিং দিলে নিজের মান-ইজ্জত কিছুই থাকবে না।আজীবন রেটিংয়ে দশে দশ থাকবে।
বিশ্লেষণঃ নাম দেখেই বুঝা যায় বইটি যুদ্ধের নিয়মাবলির উপর।একটুও বোরিং লাগে নি।আমি এমনি অনেক ঘুমকাতুরে।পড়ার সময় ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল।মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল হায় খোদা! কি একেকটা লাইন! যুদ্ধের এত সুন্দর বিশ্লেষণ শুধু খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচশো বছর আগে জন্ম নেয়া চীনের চি রাজ্যের সমরবিশারদ সান জু'র দ্বারাই সম্ভব।বইটি শুধু যুদ্ধে না জীবন যুদ্ধেও অনেক কাজে লাগে।মিলিটারিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় এই বইটি পড়তে বলা হয়।কারণ যুদ্ধের নীতি সব দেশেই এক।আপনি যদি নিজের মত করে যুদ্ধের নিয়ম বদল করেন তাহলে ঘুরেফিরে ওই সান জু'র কাছেই আসতে হবে।
(০৩)
বইয়ের নামঃ উইলে চার টাকা দুই আনা সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভিতর-বাহির
লেখকঃ জয়নাল হোসেন
আমার রেটিংঃ ০৬/১০
বিশ্লেষণঃ আদিকাল থেকেই হিন্দু ঐতিহাসিকেরা মুসলিম সম্রাটদের ইতিহাসের বইয়ের পাতায় হেয় প্রতিপন্ন করে আসছে।ব্যাপারটা এখন খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে মুসলিমদের মাথা ব্যথা না থাকাই ভালো।বই পড়ে এতটা খারাপও লাগে নি আবার ভালোও লাগে নি, তবে খুব তথ্যবহুল ছিল।আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন হাফেজ,আলেম,ন্যায়পরায়ণ বাদশা,দরবেশ আবার অনেকে তাঁকে বলেন জিন্দাপীর।বইটিতে সম্রাটের বহুল পরিচিত ঘটনাবলিই চিত্রিত হয়েছে।বইটি পড়লে আরও জানা যাবে সম্রাট শাহজাহান কতটুকু ন্যায়পরায়ণ ছিলেন প্রজাদের প্রতি, ছেলে সম্রাট আওরঙ্গজেব কেন তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন।
সমালোচনাঃ লেখক "আওরঙ্গজেব" ও "ওরঙ্গজীব" দুইটি নামের পার্থক্য করতে গিয়ে কি বুঝিয়েন এটি আমার বোধগম্য নয়। সম্রাট আওরঙ্গজেব যদি এতই চরিত্রবান হতেন তাহলে তার ভাই দারাশেকোহর মহলের অল্পবয়স্কা বাদী উদিপুরী মহলকে কেন বিয়ে করেছিলেন(এটা আওরঙ্গজেবের চতুর্থ ও সর্বশেষ বিবাহ ছিল)?
যে বিষয়গুলো ভালো লেগেছেঃ
(১) পিতার ও পুত্রের কাছে আওরঙ্গজেবের চিঠি ও
(২)"আহকাম-ই-আলমগিরি" তে বর্ণিত বারটি নীতি সম্বলিত উইল।
(০৪)
বইয়ের নামঃ হিব্রু থেকে ইহুদি
লেখকঃ খন্দকার মাহমুদুল হাসান
আমার রেটিংঃ ০৭/১০
ইহুদিজাতি পৃথিবী সবচেয়ে বেহায়া,যুদ্ধবাজ ও পথভ্রষ্ট জাতি।তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও হত্যা হয়েছে খ্রিস্টান ক্রুসেডার ও হিটলার দ্বারা।মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ হয়েছে তখনি যখন তারা বিদ্রোহ শুরু করতো।আবার এই ইহুদিরাই মুসলিমদের অধীনে সবচেয়ে আরাম ও নিরাপদে থেকেছে।কথায় আছে না -
" অতি সুখে ভুতে কিলায়"। যুদ্ধের মনোভাব নিয়ে যাদের জন্ম তারা শান্তি পাবেই কি ভাবে বলেন! প্যালেস্টাইন আজ ইহুদিদের দখলে।জেরুজালেম এবছর তাদের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে।কিন্তু কেন? কারা এজন্য দায়ী? এখন আমি যদি আমি বলি, এজন্য দায়ী মূর্খ ও অলস আরবজাতি।অবাক হচ্ছেন? বইটি পড়লে আসল সত্যই আপনার সামনে বের হয়ে আসবে।আর কেনইবা ইহুদিরা জেরুজালেমকে পেতে চায়? কেনইবা কয়দিন পর পর জেরুজালেমের এখানে ওখানে তারা খোঁড়াখুঁড়ি করার ঘটনা শোনা যায়? কি আছে এই জেরুজালেমের নিচে? তাহলে আপনাকে বইটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
(০৫)
বইয়ের নামঃ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ( হাউ টু রিড আদারস থটস বাই দেয়ার জেসচারস)
লেখকঃ এলাম পীচ
অনুবাদঃ ফারজানা রহমান শিমু
আমার রেটিংঃ ০৯/১০
মানুষ সৃষ্টির জন্মলগ্নে মিস্টার অ্যাডামকে প্রথম ক্রিয়েট করা হলো।তিনি নিজেকে একা পেয়ে বিষিয়ে উঠলেন।মহামান্যের কাছে প্রার্থনা করলেন তাঁর সঙ্গীর প্রয়োজন।দোয়া কবুল করা হলো।মহামান্য ইভসকে (মিসেস অ্যাডাম) প্রেরণ করলে।অ্যাডাম সাহেব তৃপ্তি পেলেন।আমাদের জন্ম হলো।এভাবেই পুরুষ সৃষ্টির জন্মকাল থেকেই নারীদের কাছে হেরেছিল।প্রত্যেক মেয়ের যৌন আবেদনের কাছে কোন পুরুষকে কখনও না কখনও হেরে যেতে হয়।
আপনার হাসির কারণটা হয়তো কারো জানা নেই কিংবা হাতের তালু খোলা রেখে বা বন্ধ করে কথা বলা লোকটির ইঙ্গিতে বুঝতে পারা যাচ্ছে না। আপনার আবেদন বা নিবেদন দুইটোই প্রিয়ার নরম নরম শরীরে দিকে, ধরুন আপনার এক পা একটু আগে বা পিছনে আর এই কারণগুলোর সমাধান নিয়েই এলান পীচ "বডি ল্যাংগুয়েজ" বইয়ে আলোচনা করেছেন। তবে জেনে রাখা ভালো শারীরিক ভঙ্গিমার বিশ্লেষণ জানতে হলে আপনাকে আগে ওই দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান থাকতে হবে। "বডি ল্যাংগুয়েজ" সম্পর্কে জানা বর্তমান সময়ে খুব মজাদার একটি বিষয়।
বইয়ের যে যে বিষয়গুলো ভালো লেগেছেঃ
১। বঙ্গানুবাদ ভালো ছিল।
২।বড় বড় কঠিন বিষয়গুলোকে সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
৩। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।
৪। ছবিগুলোকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
(০৬)
বইয়ের নামঃ অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ
লেখকঃ লুকিউস আন্নাইউস সেনেকা
আমার রেটিংঃ ০৮/১০
রোমান দার্শনিক সেনেকা ছিলে রোম সম্রাট নিরোর শিক্ষক।সেনেকা চেয়েছিল নিরোও তার মতো একজন দার্শনিক হয়ে উঠুন।কিন্ত সে ক্ষেত্রে তাঁকে ব্যর্থ হতে হয়েছিল।নিরোর দর্শনের প্রতি কোন অাকর্ষণ ছিল না।তাইতো ইতিহাসের পাতায় কথিত আছে- "রোম যখন পুড়ছিল,নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল।"
বইটির মূল বিষয় সময় নিয়ে।যে সময় চুরি করে সেনেকার ভাষায় সে চোর নয় সে ডাকাত।সেনেকা মূলত স্টোয়িসিজমে বিশ্বাসী ছিলেন।স্টোয়িকবাদের মানে হচ্ছে- অাত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসাত্মক আবেগগুলোকে কাঠিয়ে উঠা।স্টোয়িকবাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক ছিলেন এপিকটেটিউস।
সময়কে কেন্দ্র করে জীবন গঠিত।জীবন কখনও ছোট হয় না।বড় করে দেখতে হয়।হতাশা থেকে বাঁচতে উপযুক্ত কাজ খুঁজে নিতে হয়।সময় কারও জন্য বসে থাকে না।যখন বয়স বাড়বে তখন কাজের গতি কমে যাবে।নিজেকে দিতে হবে শুধুই ধিক্কার।
(০৭)
বইয়ের নামঃ যদ্যপি আমার গুরু
লেখকঃ আহমদ ছফা
আমার রেটিংঃ এ ধরণের বইকে ব্যাক্তিগতভাবে রেটিং দেয়ার যোগ্যতা আমি রাখি না।
যারা পিএইচডি করতে চায় তাদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার বই এটি। একজন পিএইচডিধারীর কি রকম মেন্টালিটি হওয়া উচিত এই বইটিতে খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।বইটির মূল কেন্দ্রীয় চরিত্রই হচ্ছে জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে। আহমদ ছফার পিএইচডি থিসিসের সুপারভাইজার ছিলে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক।তাঁদের মধ্যে এ নিয়ে যে স্মার্ট কথোপকথন হয়েছে তাই এই বইয়ের মূল বিষয়বস্ত। এছাড়া অনেকে মূল্যবান অজানা রাজনৈতিক গোপন বিষয় সমূহ উঠে এসে আহমদ ছফার বিশেষ এ লেখনিতে। কি নেই এ বইয়ে! সাহিত্য, রাজনীতি, সাহিত্যের ভেতর অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও সবি রয়েছে বইটিতে।
(০৮)
বইয়ের নামঃ গাভী বৃত্তান্ত
লেখকঃ আহমদ ছফা
আমার রেটিংঃ ০৮/১০
বর্তমান সময়ে এ ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক রাজনৈতিক উপন্যাস লেখা হলে ছফাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ঘৃণিত রাজনীতিই এ উপন্যাসের মূল বিষয়।যদিও লেখক তাঁর লেখনীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সরাসরি বলে নি। এই উপন্যাসের গঠনশৈলী অন্য উপন্যাস থেকে অনেকটাই ব্যাতিক্রম।ছোট ছোট ঘটনাগুলো লেখক তার বিবরণীতে খুবি সুন্দরভাবে চলমান রেখেছেন।যা অন্যান্য উপন্যাসে বেশি দেখা যায় না।কঠিন বিষয়গুলোকে লেখক এত সহজভাবে বুঝিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যা দেখে কিছুটা হতবাক হয়েছি।হ্যাঁ, এটাই আহমদ ছফা।
(০৯)
বইয়ের নামঃ প্রদোষে প্রাকৃতজন
লেখকঃ শওকত আলী
আমার রেটিংঃ ১০/১০
যখন কোন মানুষের মেধা এক্সট্রিম লেভেলে পৌঁছায় তখনি এ ধরণের উপন্যাস লেখে।উপন্যাসটি ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে রচিত।এরকম উপন্যাস সচারাচর রচিত হয় না।আমার মনে হয় লেখকের অনেক দায়বদ্ধ ছিল।তাই এরকম উপন্যাসের বহিঃপ্রকাশ।এতে প্রধান চরিত্র- শ্যামাঙ্গ, লীলাবতী , বসন্তদাস, মায়াবতী ছাড়াও আরও অনেকে। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, সেন রাজার আমলে সামাজিক প্রেক্ষাপট কেমন ছিল ও তুর্কীদের অাতর্কিত হামলার কারণসমূহ। এই উপন্যাসের চরিত্র বন্টন ও লেখকের ব্যাখ্যা ছিল নান্দনিক।স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে তিনি মৌলিকরূপে পাঠকদের মাঝে তুলে ধরেছেন।তখনকার সময় হিন্দুরা মুসলিমদের নিয়ে কি ভাবতো তাও বর্ণনা আছে সংক্ষিপ্তভাবে।যুদ্ধ নয়,মানুষের জীবন বাঁচানোই মানুষের বড় যুদ্ধ।
(১০)
বইয়ের নামঃ একটু উষ্ণতার জন্য
লেখকঃ বুদ্ধদেব গুহ
আমার রেটিংঃ ৭/১০
বই নাম একটু উষ্ণতার জন্য না দিয়ে মেয়েদের বিশ্বাস নাই নামটা দিলে খুব ভালো হত।উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ব্যারিস্টার সুকুমার বোস একজন এডভোকেট ও লেখক।হাইকোর্টে মক্কেলদের সময় দিতে দিতে স্ত্রী রমার কাছ থেকে সম্মান ও ভালোবাসা দুটোই হারিয়ে বসে বেচারা! অবশেষে বাধ্য হয়ে অল্পবয়সী ছুটির দিকে ঝুঁকে পড়েন।এক সময় অসম প্রেমের লীলায় ভাসতে থাকে দুজন।আইন ও ভালোবাসার বন্ধনে থেকে সুকুমার বোস কি ছুটিকে নিয়ে বাঁচতে পারবে? রমা কি ফিরে আসবে তার কাছে? না এই ত্রিভূজ প্রেমের মধ্যে অন্য কেউ এসে হানা দেবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে বুদ্ধদেব গুহর 'একটু উষ্ণতার জন্য' উপন্যাসটি পড়তে হবে।উপন্যাসটিতে প্যাট চরিত্রটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
সমালোচনাঃ লেখক উপন্যাসটিতে মেয়েদের বাজে ভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে আমার মনে হয়।শরীরী বর্ণনাগুলো আমার মোটেও ভালো লাগেনি। নায়িকার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়ে একটু বেশিই চুমুর বর্ণনা দিতে হয়েছে লেখককে।
২৭ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৪৯
মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম ভাই।আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১০:২১
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার রিভিউ।