|  |  | 
| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
স্বপ্ন বিলাসি মিজান সাহেবের বাঁচার অবলম্বন 
                                                                                          মোঃ খুরশীদ আলম
হীম শীতল বাতাস ভেদ করে তীব্র বেগে ছুটে চলে মিজান সাহেব। উদ্দেশ্য, আদুরে কন্যার হেফজখানা। এখন রাত সাড়ে তিনটা। কিছুক্ষণ আগে সেহেরি খেয়েছেন মিজান সাহেব। সেহেরি খাওয়ামাত্রই মিজান সাহেবের একমাত্র কাজ হলো মেয়েকে মাদরাসায় পৌছে দেয়া। রমজান মাসে হেফজখানার স্বাভাবিক নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন আসে। সেহেরির পরে কুরআন তেলাওয়াত শুরু, সকাল সাতটা হাতে দশ টা পর্যন্ত ঘুম তার পর আবার যথানিয়মে অধ্যায়ন শুরু। 
রাস্তার দু’পাশে অন্ধকার। এই অন্ধকারের ভিতর দিয়ে বাইকের হেডলাইটের আলোয় বাপ-মেয়ে চলতে থাকেন। ঘর হতে মাইল খানেকের রাস্তা। পাঁচ মিনিটেই পৌছে যান। এই পাঁচ মিনিট সময়ও মিজান সাহেব হেলায় নষ্ট করতে চাননা। হেফজের পাশাপাশি তিনি নিজেই ইংরেজী পড়ান।  বাবা-মেয়ের ভালই সখ্যতা, জান্নাত যেন। মিজান সাহেব বলেন আর মেয়ে তার মুখে মুখে মুখস্থ করতে থাকে –
 
                                                            “ সবাই বলে কোন কিছুর নামকে বলে নাউন
                                                                          যেমন ঢাকা টাউন,
                                                                 প্রোনাউনের হয়  ব্যবহার একটা শুধু শর্তে
                                                                            নাউনের পরিবর্তে,
                                                               যখন তুমি এটা সেটা করতে কিছু পারবে
                                                                             পরবে সেটা ভার্বে,
                                                                     এডভার্বে হয় কাজের ধরন,
                                                                              জেনে রাখ ভাই,
                                                                             জানতে নিষেধ নাই।
                                                               দোষে গুণে এডজেকটিভ হয়
                                                                        জেনে রাখা চাই
                                                                        জানতে নিষেধ নাই।
                                                                 সম্পর্কে হয় প্রিপোজিশন
                                                                        তাওকি জান না,
                                                                     খাবে কান টানা। ”
মিজান সাহেবের আদুরে কন্যা এখানে এসে হো হো করে হেসে উঠে। এভাবে চলতে থাকে বাপ-মেয়ের। 
মিজান সাহেব স্বপ্ন বিলাসি মানুষ। তবে, উচ্চাকাঙ্খী নন। ডাল ভাত খেয়ে সংসারে সুখে থাকলেই হলো। মিজান সাহেব মাদরাসায় বাচ্চাকে যথাসময়ে নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়া প্রতিদিনের কাজ। সময় মতো পৌঁছাতে না পারলে সেদিন আর ক্ষমা নাই। আদুরে মেয়ের শাসন ও বকাঝকা সেদিন কপালে জুটে। আবশ্য আদুরে মেয়ের আদো আদো গলায় বকাঝকা মিজান সাহেবের মন্দ লাগে না। 
দু’সন্তানের জনক মিজান সাহেব বড় সান্তনকেও মাদরাসায় পড়ান। নামকরা প্রতিষ্ঠান  বায়তুশ শরফ এর ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র। নিয়ম করে প্রতিদিন মাদরাসায় পৌঁছে দেয়া মিজান সাহেবের এক মহাপবিত্র কর্ম। 
মিজান সাহেব সন্তানদের খুব ভালবাসেন। আদর ও শাসনে বড় করে তুলছেন তাদের। কড়া শাসন, কখনো কখনো মনে হয় তার মতো বদমেজাজি দ্বিতীয়টি নেই। 
খুব বেশী পাড়াশোনা করতে পারেননি মিজান সাহেব। কোন রকমে কলেজের গন্ডি পার করেছেন। কিন্তু সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে ইচ্ছুক। তিনি চান আদর্শ সন্তানদের আদর্শ পিতা হতে। তাই একটা মুহুর্তও বেকার নষ্ট করতে চান না। অফিস ছুটির পরে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষে সন্তানদের নিয়ে পড়ার টেবিলে বসেন। কখনো  ছেলের ইমামতিতে নামায আদায় করেন। আহা কি সুন্দর তেলাওয়াত, ভাবেন, সোনালী সময় অবহেলায় কাটিয়েছেন। সন্তানদের বেলায় তা হতে দিতে চান না তিনি। 
মিজান সাহেবের আরো একটি কাজ হলো শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলা, পাঠোন্নয়নে পরামর্শ দেয়া। অনেকেই তাকে বাড়াবাড়ি ধরণের মনে করে, বুঝতে পারেন মিজান সাহেব। কিন্তু কিছু মনে করেন না। ভাল কিছু পেতে হলে সব কথা আমলে নিলেতো আর চলে না। ধৈর্যের পরিচয় দেন, হাসি মুখে এড়িয়ে যান। 
আগে জেনেছেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের জন্য সবকিছু গুছিয়ে নিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। স্বল্প আয়ের লোকদের এই সমস্যা। কারো মন রক্ষা করে চলতে পারেন না। এর ফলে মিজান সাহেবের মতো লোকেরা অসামাজিক, সেকেলে বিশেষণে বিশেষিত হন। তাদের মনের ভিতরের দিকটা অনেকেরই অজানা থেকে যায়। তাদের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ একেবারেই নেই। আমাদের সমাজটা কেমন যেন। তেলা মাথায় ঢাল তেল রুক্ষ মাথায় ভাঙ্গ বেল টাইপের। যার আছে তাকে নিয়ে সবাই ব্যস্থ কিন্তু যার কিছুমাত্র নাই তার দিকে কারো নজরও নাই। মিজান সাহেব নিজের জীবনের সাথে বঙ্কিমচন্দের “বিড়াল” গল্পের খুব মিল পান। না পারেন কারো কাছে হাত পাততে না পারেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিতে। চিরকালই মিজান সাহেবরা অসামাজিক আর সেকেলে রয়ে যান। 
মিজান সাহেবদের বাঁচার অবলম্বন একটাই, তাদের তালেবে এলেম সন্তানরা। যারা একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। পরম করুণাময়ের দরবারে তাদের অসামাজিক এই পিতার জন্য  দু’হাত তুলে দুয়া করবে “ রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বয়ানি সাগিরা। “ 
 ৪ টি
    	৪ টি    	 +০/-০
    	+০/-০  ১০ ই জুন, ২০১৮  বিকাল ৩:২৮
১০ ই জুন, ২০১৮  বিকাল ৩:২৮
মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: ভাললাগায় ধন্যবাদ।
২|  ১০ ই জুন, ২০১৮  বিকাল ৪:৪৫
১০ ই জুন, ২০১৮  বিকাল ৪:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ সকল অসহায় মানূষের সহায় হোক।
  ১২ ই জুন, ২০১৮  দুপুর ২:০৩
১২ ই জুন, ২০১৮  দুপুর ২:০৩
মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: আমিন ।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০১৮  বিকাল ৩:২৩
১০ ই জুন, ২০১৮  বিকাল ৩:২৩
হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: ভাল লাগল।