নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ ও মানবতার স্বার্থে\n

Md Mamun Hossain

আমি একজন মানুষ।

Md Mamun Hossain › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যর্থ যখন ইবাদাত

০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:১৯


হাজারো প্রশ্ন ও হাজারো জীজ্ঞাসার মাঝে মানুষের বসবাস। অসংখ্য বিষয় নিয়ে মানুষের নিত্য সংসার। তবে জীবনের মূল প্রশ্ন ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনটি? এটি কি চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি-বাকুরি বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয়ে জ্ঞানলাভ? পেশাদারি জীবনে সফলতা বা অর্থ ও রাজনৈতিক জীবনে বিজয়ই জীবনের মূল সফলতা? মানব সৃষ্টির মূল লক্ষ্য কি এমন সফলতা? বিষয়টি এতই গুরুত্ব পূর্ণ যে এখানে ভূল হলে জীবনে বাঁচাটাই ব্যর্থ হতে ব্যর্থ। বিজ্ঞানের সূত্র, সমূদ্রের গভীরতা বা গ্রহনক্ষত্রের বিবরণ না জানলে জীবন কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু পুরা জীবনটাই ব্যর্থ হয় এ মূল প্রশ্নের উত্তর না জানায়। এটি এতই গুরুত্ব পূর্ণ যে প্রশ্নের সঠিক জানাতে মহান আল্লাহতায়ালা লক্ষাধিক নবীরাসূল পাঠিয়েছেন। কেতাব নাজিল করেছেন। এবং সেটি ইতিহাস বা জ্ঞানবিজ্ঞান শেখাতে নয়। জীবনের সে লক্ষ্যটি হল ইবাদত।
কোআন পাকে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘‘ওয়া মা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসানা ইল্লা লি ইয়াবুদুন।’’ অর্থ: ‘‘ইবাদত ভিন্ন অন্য কোন লক্ষ্যে আমি মানুষ ও জিন্ জাতিকে সৃষ্টিই করিনি।’’ ফলে ইবাদত ভূলে নিছক কাজ-ারবার, ব্যবসাবাণিজ্য ও জ্ঞানবিজ্ঞানের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অর্থ জীবনকে তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে দেওয়া। পথ না জেনে ভ্রান্ত পথে গাড়ি চালানোর মতই এটি ভয়ংকর। যা একমাত্র ধ্বংস বা বিপদই ডেকে আনতে পারে। তাই জীবনের সফলতা যাচায়ের মাপকাঠি সম্পদ নয়, রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রতিষ্টাও নয়। বরং ইবাদতে ব্যক্তি কতটা অগ্রসর সেটি। হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, ’আল্লাহর কাছে হিসাব দেওয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নাও।’ কিন্তু সে হিসাব ক’জনের? আল্লাহতায়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে উদ্দেশ্য ছাড়াই সৃষ্টি করবেন সেটি ভাবা যায়? পবিত্র কোরআনের ঘোষণাঃ ’আফা হাসিবতুম আন্নামা খালাকনাকুম আবাসা (সূরা মোমিনূন-১১৫) অর্থঃ তোমরা কি ভেবেছো আমি তোমাদেরকে হাসি তামাশার জন্য সৃষ্টি করেছি? মানুষের সৃষ্টির পিছনে মহান আল্লাহর একটি সুনির্দ্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। মানব জীবনের সর্বাধিক দায়িত্ব হলো সে লক্ষ্যটিকে জানা এবং স্রষ্টার সে লক্ষ্য পূরণে অগ্রসর হওয়া। ইবাদত ভিন্ন মানব সৃষ্টির যেমন ভিন্নতর লক্ষ্য নেই, তেমনি এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাও নেই। মহান স্রষ্টার সে উদ্দেশ্য পূরণের চেয়ে মানব সৃষ্টির জীবনে আর কোন আরধ্য কাজ থাকতে পারে?
তবে ইবাদত কী? ইবাদত হল মহান আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্য। যেখানে সে আনুগত্যের অভাব সেটি হল বিদ্রোহ। এমন বিদ্রোহ ব্যক্তিকে কাফেরে পরিণত করে। তাই কাফের শুধূ মুর্তিপুজারি নয় বরং আল্লাহর হুকুমের প্রতিটি অমান্যকারি। মুসলমান হওয়ার অর্থই হল সে তার প্রতিটি কর্মে আল্লাহর হুকুমের অনুসারি হবে। এর মাধ্যমে তার আচরণ ও নৈতিকতায় আসে পরিশুদ্ধি। মুসলমানদের জাতীয় জীবনে এভাবে আসে ইসলামের প্রতিষ্ঠা। আনে কল্যাণ। শত্র“র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আনে আল্লাহর প্রতিশ্র“ত সাহায্য। আনে বিজয়। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের কোথায় আজ সে পরিশুদ্ধি? কোথায় সে বিজয় ও সাহায্যপ্রাপ্তী? দূর্নীতিতে মুসলমানেরাই কি আজ বিশ্বে প্রথম নয়? বিজয় দূরে থাক, তারাই কি বিশ্বে সবচেয়ে পরাজিত ও অপমানিত নয়? শিক্ষায় অনগ্রসর, বিজ্ঞানে পশ্চাৎপদ এবং মানবাধিকার বর্জিত রাষ্ট্রগুলি কি এখনও মুসলমানদের নয়? নিছক বাঁচাটা নিশ্চিত করতেই কি ঘরবড়ি ছেড়ে অমুসলিম দেশে তারা পাড়ি জমাচ্ছে না? এটিই কি কম লজ্জাকর? এত অপমান ও পরাজয়ের পরও কি ভাববার অবকাশ থাকে যে সাফল্যের মূল চাবিটি মুসলিম জনপদে যথার্থ ভাবে কাজ করছে? মুসলমানেরা অতীতে শূণ্য থেকে শুরু করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিলেন। পরাজিত করেছিলেন বড় বড় বিশ্বশক্তিকে। এবং সেটি কি সংখ্যা বলে? জনবিরল আরবের কি সে সংখ্যাবল ছিল? সংখ্যাবলে বিজয় সম্ভব হলে তেমন বিজয় আসা উচিত ছিল আজকের মুসলমানদের। অন্ততঃ পঁচিশ কোটি আরব অর্ধকোটি ইসরাইলীদের উপর বিজয়ী হতো।
বিশ্বব্যাপী পরাজয়, সীমাহীন গ্লানী ও কদর্যতার পর মুসলমানদের আজ ভাবা উচিত কেন তাদের এ পতিত দশা। এতদিন যে পথে তারা চলছে সেটি যে বিজয়ের নয় উপর্যপরি পরাজয়ই তা প্রমাণ করেছে। বছরের পর বছর সেবনেও যে ঔষধে রোগ সারে না সেটি যে যথার্থ ঔষধ নয় সেটি নিয়ে অন্ততঃ বোধোদয় হওয়া উচিত। সিরাতুল মোস্তাকিম জ্ঞান করে যে পথে আমরা চলছি এবং ভাবছি এ পথে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছবোই, সেটি যে সফলতা দি্েচ্ছ না সে হিসাব কি নিয়েছি? আমাদের বিপন্নদশা নিতান্তই আমাদের নিজস্ব অর্জন। এ বিপদ থেকে নিজ চেষ্টায় আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। নইলে আল্লাহর সাহায্য জুটবে না। পবিত্র কোরআন বলা হয়েছে, ’ইন্নাল্লাহা লা ইউগাইয়েরু মা বি কাউমিহি হাত্তা ইউগাইয়েরু মাবি আনফুসিহিম।’ অর্থঃ আল্লাহপাক কখনই কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনে। এ ভাবে সাহায্যলাভে মহান আল্লাহতায়ালাও শর্ত্ব বেঁধে দিয়েছেন। আর সেটি হলো ব্য্িক্তজীবনে কাঙ্খিত পরিবর্তন। পরিবর্তনের সে পথটি হলো ইবাদতের। কিন্তু সে ইবাদত আমাদের জীবনে কতটুকু ক্রিয়াশীল?
আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, জীবনের এ মূল লক্ষ্য নিয়ে অজ্ঞতা। গন্তব্যস্থল না জেনে গাড়ী চালানোর ন্যায় অনেকেই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি জীবনের মুল এজেন্ডা না জেনেই। কখনও মূল এজেন্ডা স্থির করেছি নিজস্ব খেয়াল খুশীতে। অথচ জীবনের এজেন্ডা নির্ধাারণের দায়ভার আল্লাহতায়ালা মানুষকে দেননি, নির্ধারণ করেছেন তিনি নিজে। হাজার হজার নবী রাসূল পাঠিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কি ভাবে সে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে সেটিও। মানব বাঁচবে এবং বাঁচার জন্য কর্মে বা উপার্জনে নামবে - সেটি স্বাভাবিক। তবে ব্যক্তির জীবনে এগুলো বেঁচে থাকার কৌশল মাত্র, কিন্তু বাঁচার মূল লক্ষ্য নয়। মুল লক্ষ্য আল্লাহর ইবাদত। এবং ইবাদতের এ পথই হলো সিরাতুল মোস্তাকিম। একমাত্র এ পথটিই জান্নাত মুখী। এ পথটি ভ্নি অন্য সব পথ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে পৌছাবে। তবে ইবাদতের অর্থ শুধূ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত বা তাসবিহ-তাহলিল নয়। এটি হলো আল্লাহতে পূর্ণ আনুগত্য। নামায-রোযা,হজ্ব -যাকাত বা তাসবিহ পাঠকালীন সময়ে এ দাসত্ব সীমাবদ্ধ নয়। ইবাদতের ক্ষেত্র নিছক জায়নামায বা মসজিদ-মাদ্রাসাও নয়, এটির বিস্তার ব্যক্তির সকল কর্মক্ষেত্রে। এ আনুগত্যর মেয়াদ আমৃত্যু।
সৈনিকের জীবনের সামান্য সময়ের বিদ্রোহ তাকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখী করে, বিচারে প্রান নাশও হয়। মুসলিম মাত্রই আল্লাহর সৈনিক। তাই আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে সামান্য বিদ্রোহও তাকে অভিশপ্ত করবে এবং জাহান্নামে নিয়ে পৌঁছাবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়। নামাজ-রোজা-হজ্ব পালনের পরও যারা সূদ খায়, ঘুষ খায় এবং কোরআনী আইনের বিরোধী করে তাদের অবাধ্যতা তো অনেক। আল্লাহর কাছে বাব্দার কোরবানীর অর্থ, রক্ত, গোশতো কোনটিই পৌছে না, পৌছে না তার রুকু সিজদাও। যেটি পৌছে সেটি হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্য। আর এ আনুগত্য অবিভাজ্য। কোথাও আল্লাহতে অনুগত আবার কোথাও বিদ্রোহী ঈমানের ক্ষেত্রে তেমনটি চলে না। এটি মোনাফেকি। মুসলমান তাই মসজিদে নামাজ পড়বে আবার দোকানে মদ বিক্রি করে বা বেপর্দা ও অশ্লিলতাকে প্রশ্রয় দিবে সেটি হয় না। এটি বস্তুতঃ আল্লাহর হুকুমের প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচারন। তাই রাজনীতিতে নেমে যে ব্য্িক্তটি ইসলামের প্রতিষ্ঠাকেই অসম্ভব করে তোলে তাকে কি মুসলমান বলা যায়? আল্লাহতে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনের নামই হলো ইসলাম। যেমনটি ইব্রাহীম (আঃ) করেছিলেন। এমন আত্মসমর্পিত ব্যক্তিকে বলা হয় মুসলমান। মুসলিম নামটিও তার দেওয়া। এমন আত্মসমর্পনকারী ব্যক্তি ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতিতে স্ব্চ্ছোচারি হতে পারে না। হতে পারে না অনৈসলামের অনুসারি।
মুসলিম দেশে আজ লাখো লাখে মসজিদ নির্মিত হয়েছে। বেড়েছে নামাযীর সংখ্যা। কিন্তু আইন আদালতে শরিয়তের অনুপস্থিতি, অর্থনীতিতে সূদ এবং সংস্কৃুতিতে অশ্লিললতার বিজয় দেখে কি মনে হয় এসব দেশের মুসলমানদের আল্লাহতে আত্মসমর্পণ যথার্থ। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ন্যায় জীবনের গুরুত্বপূণ ক্ষেত্র জুড়ে যদি হয় আল্লাহর অবাধ্যতা তবে নিছক মসজিদের চার দেয়ালের মাঝের ইবাদতে কি আল্লাহতায়ালা খুশী হবেন? কোরআন পাকে বলা হয়েছে, ”ইয়া আইয়োহাল্লাযীনা আমিনু উদখুলু ফিসসিলমি কা’আফফা” সুরা বাকারা ২০৮; অর্থঃ হে ঈমানদারেরা! ইসলামের মধ্যে পুরাপুরি প্রবেশ কর। অর্থাৎ শুধু নামায-রোযা বা হজ্ব-যাকাতে মুসলিম হলে চলবে না, মুসলিম হতে হবে রাজনীতি, সংস্কুতি, অর্থনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি তথা জীবনের প্রতিকর্মে ।
ইবাদতের অর্থ আল্লাহর দ্বীনের বিজয়েও সে আপোষহীন ও নিষ্ঠাবান হবে। সাহাবায়ে কেরাম সে নিষ্ঠার কারণে ইসলামের বিজয়ে শুধু অর্থ ও শ্রমদানই করেননি, প্রাণদানও করেছেন। কিন্তু বছরের পর বছর নামায-রোযা ও হজ্ব পালন করে যারা শরিয়ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভোট দানেও রাজী নয় তাদেরকে কি বলা যাবে? বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলীতে এদের ভোট নিয়্ইে কি ইসলামের বিপক্ষ শক্তি বার বার বিজয়ী হয়নি? গাছের একটি পাতা অহেতুক ছিঁড়লে সে হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে। ফলে ইসলামের শিকড় কাটতে যারা শ্রম দেয়, অর্থ দেয় এবং ভোট দেয় সে হিসাব কি তাদের হবে না? নিছক দোয়ার মাধ্যমে যারা মুসলমানদের মুছিবত লাঘব বা বিজয়ের স্বপ্ন দেখেন তারা ইসলামের ইতিহাস থেকে জ্ঞান লাভ করেনি। স্বয়ং নবীজী(সাঃ)কে জিহাদের প্রতিটি ময়দানে কাফেরদের তলোয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে হয়েছে। মসজিদে জায়নামাজে বসে মোনাজাতে সম্ভব হলে ইতিমধ্যেই সেটি সাধিত হতো। একটি অমুসলিম দেশের রাজধানী লন্ডনে যত নামাযী প্রতি নামাযে আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে হাত তোলে নবীজীর (সাঃ) আমলে ততজন মুসলমানই ছিল না। কিন্তু সে আমলে তাঁরা বিজয়ের পর বিজয় আনলেও আমরা এনেছি পরাজয়ের পর পরাজয়। তাদের ইবাদতে আল্লাহপাককে এতট্ইা খুশী করেছিল যে তাদের পরাজয় তাঁর কাছে অসহ্য ছিল। ফলে ফেরেশতা পাঠিয়ে তিনি তাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছেন। আল্লাহতায়ালা অতীতের ন্যয় আজও তার অনুগত বান্দাদের সাহায্যে উদগ্রীব, কারণ এটিই তাঁর সূন্নত। কিন্তু সে সাহায্য লাভে আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি ও বিণিয়োগ কতটুকু?
আল্লাহতায়ালা ইবাদতের ওজন দেখেন। নামায-রোযা ও হজ্ব পালনের সংখ্যা বিচারে আজকের বহু মুসলমানই পূর্ব কালের মুসলমানদের হারিয়ে দিবেন। হযরত হামযা (রাঃ), হযরত ইয়াসির (সাঃ), হযরত সুমাইয়ার (রাঃ) মত ইসলামের অতি উচূ মরতাবার বহু সাহাবা হজ্ব করেননি। মাহে রামদানের একটি রোজাও রাখেননি। রোযা বা হজ্ব ফরজ হওয়ার আগেই তারা শহিদ হয়েছেন। ফিরাউনের দরবারে হযরত মূসা (আঃ) এর সাথে লড়তে এসে যে যাদুকরেরা মুসলমান হলেন তারা তো কোনরূপ ইবাদতের ফুরসতই পাননি। আল্লাহর উপর ঈমান আনার সাথে সাথে তাদেরকে হাত পা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ ’আমরা মূসা (আঃ) ও হারুনের (আঃ) রবের উপর ঈমান আনলাম’ তাদের এ সংক্ষিপ্ত উচ্চারণে যে বলিষ্ঠ প্রত্যয় ছিল তা ক’জনের সারা জীবনের নামায-রোযায় সৃষ্টি হচ্ছে? আল্লাহ পাক তাদের ্উপর এতই খুশী হয়েছিলেন যে কোরআনে সে কাহিনী বার বার উল্লেখ করেছেন। তাদের স্মুতীকে ইতিহাসে এমন অমর ও অক্ষয় করেছেন যে নাম না জানা লক্ষাধিক নবীরাসূলদের ভাগ্যেও তা জুটেনি। পবিত্র কোরআনে ইবাদতের ও্রজনের গুরুত্ব বর্নীত হয়েছে এভাবে, ’ফা আম্মা মান ছাকুলাত মাওয়াজিনুহু ফা হুয়া ফি ঈ’শাতের রাদিয়া’ অর্থঃ অতঃপর যাদের আমলের ওজন সেদিন (বিচার দিনে) ভারী হবে তারা সেদিন অতিশয় আনন্দ ও প্রসন্ন চিত্তে বসবাস করবে।’ - সূরা ক্বারিয়া।
ব্যক্তির প্রতি কর্মে বিমূর্ত হবে আল্লাহর প্রতি দাসত্ব। শুধু মসজিদে বা বায়তুল্লাহ ক্বা’বাতে নয়, বরং ক্ষেতে-খামার,দোকান-পাঠ, অফিস-আদালত, বুদিধবৃত্তি ও রাজনীতির প্রতি ময়দানে। আল্লাহতায়ালা চান তাঁর দ্বীন বিশ্বে বিজয়ী হোক। বিভ্রান্ত বিশ্ববাসী তার জীবনের পথ চলায় পাক সিরাতুল মোস্তাকিম। কোরআনে ঘোষিত হয়েছেঃ হুয়াল্লাযী আরসালা রাসূলাহু বিল হুদা ও দ্বীনূল হাক্ক লিইয়ুয হিরা আলা দ্বীনে কুল্লিহি। অর্থঃ তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি পথনির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ রাসূলকে পাঠিয়েছেন যেন তার দ্বীন (ইসলাম) দুনিয়ার সকল ধর্মের উপর বিজয়ী হয়। সে বিজয়ের কাজে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হলো প্রতিটি মুসলমান। ইবাদত হলো সে প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব। এখানে আপোষ চলে না। স্বেচ্ছাচারি খায়েশের কাছে আত্মসমর্পনে বা বহমান সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জোয়ারে ভেসে সে ইবাদত কি সম্ভব?
অতিশয় গুরুত্বপুর্ণ ইবাদত জ্ঞানার্জনেও। অজ্ঞানতায় আর যাই হোক ইবাদত হয় না। বেহুশ ও অসুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তিরা এজন্যই ইবাদতের দায়ভার থেকে মুক্ত। সিরাতুল মোস্তাকিম বা সঠিক পথপ্রাপ্তীটি ভাগ্যগুণে হয় না। নিছক দৈবাৎয়েও ঘটে না। এটি সাধনাবলে অর্জনের বিষয়। আল্লাহ একমাত্র তাদেরই পথ দেখান যারা সে কাজে পরিশ্রমে নামেন।কোরআনে বলা হয়েছেঃ ”ওয়াল্লাযীনা জাহাদু ফিনা লা নাহদিয়ান্নাকুম সুবুলুনা” অর্থ এবং যারা আমার পথে প্রচেষ্ঠা করবে আমি অবশ্যই তাদেরকে পথ দেখাবো।” - সূরা আন-কাবুত। সে প্রচেষ্টার কাজটি অজ্ঞতায় হয় না, হয় জ্ঞানশক্তি বলে। জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন তাই সবার। এ জন্যই ইসলামে জ্ঞানার্জনকে ফরজ করা হয়েছে প্রতিটি নারী-পুরুষের উপর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেনঃ ’ইন্নামা ইয়াখশাল্লাহা মিন ইবাদিহি উলামা’ অর্থঃ মানবসৃষ্টির মাঝে একমাত্র জ্ঞানীরাই আমাকে ভয় করে। তবে জ্ঞানী হওয়ার অর্থ মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাটিফিকেটধারী হওয়া নয়, ইসলামের গৌরব কালে কোন ব্যক্তিরই সেটি ছিল না। বরং সে জ্ঞানী ব্যক্তিটি হলেন তিনিই যার রয়েছে আল্লাহর কুদরাত অনুধাবনের সামর্থ। সামর্থ রয়েছে আল্লাহর দেয়া রোডম্যাপটি থেকে পাঠোদ্ধারের। পবিত্র কোরআন হলো সে রোড ম্যাপ। সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে পদে পদে এ রোডম্যাপের অনুসরণটি ফরজ, নিছক তেলাওয়াত নয়। এটির অনুসরণই হলো ইবাদত। অথচ পরিতাপের বিষয়, মুসলিম বিশ্বে সাটিফিকেটধারী জ্ঞানী ব্য্িক্তর সংখ্যা বাড়ালেও আল্লাহর দেয়া রোডম্যাপ বুঝতে পারে এমন ব্যক্তির সংখ্যা বাড়েনি। বাড়েনি এর পরিপূর্ণ অনুসরণকারির সংখ্যাও। বরং এ বিষয়টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বৃদ্ধ প্রফেসরও ততটুকুই জ্ঞানহীন ও বিভ্্রান্ত যতটুকু বস্তির নিরক্ষর ব্য্িক্তটি। এজন্যই বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম জনপদে বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের এত সংখ্যাধিক্য। এটিই আজকের মুসলিম সমাজের সবচেয়ে বড় বিকলাঙ্গতা। নিছক সম্পদ দিয়ে এটি দূর হবার নয়।
আল্লাহপাক বলেছেন, ’ইন্নাস সালাতা তানহা আনিল ফাহশে ওয়াল মুনকার’। অর্থঃ নিশ্চয়ই নামায অশ্লিলতা ও খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। ফলে নামায কতটা সত্যিকারের নামায সেটি যাচাইয়ের নির্ভূল মানদন্ড হলো অশ্লিলতা ও খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার সামর্থ । কিন্তু এ কোটি কোটি মানুষের এ নামায কি আদৌ কাজ দিচ্ছে? কাজ যে দিচ্ছে না তার প্রমান, বিশ্বে দূর্নীতিতে পাঁচবার প্রথম হওয়ার দূর্নাম অর্জন করেছে সেটি কোন অমুসলিম দেশ নয় বরং মুসলিম দেশ। সেটিও মসজিদের দেশরূপে খ্যাত বাংলাদেশ। কিন্তু কেন এ ব্যর্থতা তা নিয়ে কি কোন ভাবনা আছে? ব্যকি—র জীবনে নামায তখনই পরিশুদ্ধি আনে যখন নামাযের উচ্চারিত বাক্যগুলী চেতনায় জাগরন তোলে। তখন ঘুমন্ত ও সুপ্ত বিবেকও্র জেগে উঠে। নামাযের এ উচ্চারণ হলো আল্লাহর কাছে তার অঙ্গিকার যা প্রতিদিন বহুবার সে উচ্চারণ করে। কিন্তু যে নামাযী জানলোই না নামাযে দাঁড়িয়ে সে কি পাঠ করলো, এমন ব্যক্তির জীবনে পরিশুদ্ধি আসবে কেমনে? পরিশুদ্ধি তো উপলদ্ধিতে। উপলদ্ধি বা চিন্তার সামর্থই ব্যাক্তির কর্মে পরিবর্তন আনে। পবিত্র কোরআনে তাই ’আফালা তা’কিলুন’, ’আফালা তাদাব্বারুন’ অর্থাৎ’তোমরা কেন বুদ্ধিকে কাজে লাগাও না’ ’তোমরা কেন চিন্তাভাবনা করো না’ বার বার বলা হয়ে হয়েছে। কোরআনের জ্ঞানতো সে সামর্থই বাড়ায়। জ্ঞানার্জন এজন্যই ফরজ। ব্যক্তির চেতনার পুষ্টি বাড়াতে এর চেয়ে উত্তম উপকরণ আর নেই। ফলে খোলাফায়ে রাশেদার আমলে আজকের ন্যায় এত বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও যে ভাবে হাজার বিজ্ঞ দার্শনিক পয়দা হয়েছে মুসলিম বিশ্বের হাজার হাজার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ তার শত ভাগের এক ভাগও্র হচ্ছে না।
মুসলিম বিশ্বে নামাযীর সংখা বাড়লেও নামাযের ওজন বাড়েনি। এমন নামায পরিত্রাণ দিচ্ছে না পাপকর্ম থেকে। কোটি কোটি টাকার অচল নোট জমিয়ে লাভ কী? ওজনহীন নামায পরকালেই বা কতটুকু কল্যাণ দিবে? কল্যাণের কিছু থাকলে সেটির প্রভাব পড়া উচিত ছিল নামাযীর কর্ম ও আচরণে। এরূপ ব্যর্থতার কারণ অনেক। তব্ েমূল কারণ, জ্ঞানের অভাব। এবং সেটিও একারণে যে, মুসলমানদের মাঝে কোরআনের তেলাওয়াত গুরুত্ব পেলেও কোরআনের জ্ঞান নয়। নফলের চর্চা বাড়লেও ফরজ গুরুত্ব পায়নি। সমস্যা তাই নিছক ইবাদত নিয়ে নয়, ইবাদতের মাঝে কোনটি অধিক জরুরী সেটি নিয়েও। অথচ ইবাদতে ব্যর্থ হলে অন্য ক্ষেত্রেও সফলতা আসে না। ব্যক্তি, জাতি বা সমাজ-উন্নোয়নের কাজে অবিরাম অনুপ্রেরণা আসে তো ইবাদতের চেতনা থেকেই। তাই ইবাদতের ধারণা যথার্থ হলে উম্মাহর কল্যানে শুধু অর্থদান ও শ্রমদান নয়, প্রাণদানে আগ্রহী ব্যক্তিরও অভাব হয় না । যুগে যুগে মুসলমানেরা এ পথেই গৌরবজনক ইতিহাস গড়েছে। এনেছে বিজয়। আজও এছাড়া ভিন্ন পথ আছে কী?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.