নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিশ্রমী হাত সবসময় কর্তৃত্ব করে, আর অলস পরিণত হয় পরধীন দাসে

নিও ০০৭

নিও ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার শুরু

০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ২:২৭


“রুমা ও রুমা, তোমার জামাই তোমারে দিবে মিষ্টি মিষ্টি চুমা।”
কি বিচ্ছিরি ছড়া! শুনেই গা ঘিনঘিন করে উঠলো রুমার। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার। এরকম ছড়া কোনো ভালো মানুষ বানাতে পারে? ছেলেটা নিশ্চয়ই অত্যন্ত নিচু মনের।

অফিসে সুমনের সাথে পরিচয়ের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। অফিস ইনচার্জ কল্লোল ভাই যখন রুমাকে সুমনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন নাম শুনেই ছেলেটা মনে মনে ছড়াটা বানিয়েছে – অবশ্য বলার সাহস করেনি রুমার সামনে। বলেছে সহকর্মীদের সাথে, চায়ের আড্ডায়। আর ছড়াটা রুমা শুনেছে কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টের মিনা আপার মুখে, তিনি আবার শুনেছেন তার ইনচার্জ আমিন ভাইয়ের কাছ থেকে। অফিসের কথা। ফাইল যেমন টেবিলে টেবিলে ঘোরে, তেমনি ঘোরে কথাও।


আমিন ভাই মজার মানুষ, কথায় কথায় হাসেন, হাসানও। মিনা আপার সাথে তার চার বছরের সম্পর্ক, আগামী মাসেই বিয়ে। ক্যান্টিনের টেবিলে বসে যখন আমিন ভাই মিনা আপাকে ছড়াটা শোনাচ্ছিলেন, তখন মিনা আপা হাসতে হাসতে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন।

সুমনকে আমিন ভাই খুব স্নেহ করেন। দু’বছর ধরে অফিসের বিভিন্ন কাজ হাতে-কলমে শিখিয়েছেন তাকে। তারপরেও নিজের ডিপার্টমেন্টে রাখতে পারেননি। দুর্নীতির দায়ে অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের দুজনেরই হুট করে চাকরি যাওয়ায় বস, মানে রহমান সাহেব, একরকম জোর করেই সুমনকে সেখানে ট্রান্সফার করেন। সঙ্গে প্রমোশনের অফারও। আমিন ভাই-ই সুমনকে বুঝিয়ে রাজি করান।


রুমার অফিস জয়েন করা হয়েছে কিছুদিন হলো। সদ্য অনার্স শেষ করেছে। তার চাচা ইদ্রিস আলী ছিলেন রহমান সাহেবের স্কুলজীবনের সহপাঠী। ইদ্রিস সাহেবের সুপারিশে এবং রুমার ভালো রেজাল্টের কারণে একাউন্টস ডিপার্টমেন্টেই তাকে নিয়োগ দেন বস। রহমান সাহেব আসলে এমন কাউকেই চাইছিলেন যাকে চোখ বুজে ভরসা করা যায়।

কিন্তু নতুন জায়গায় রুমার শুরুটা কেমন জানি অস্বস্তিকর হয়ে উঠল। কারও ব্যবহারে কোনো একটা সমস্যা নেই, কিন্তু ছড়াটা যেন মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। আচ্ছা, যে ছেলেটা এমন ছড়া বানাতে পারে, সে কি কাজে সিরিয়াস?


অফিসে ধীরে ধীরে সময় কাটতে থাকে। রুমা তার কাজে মনোযোগী। হিসাবনিকাশ, ভাউচার, বিভিন্ন কাগজপত্র—সব কিছুর ভেতরে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে সে। আর তখনই আবিষ্কার করে এক নতুন সুমনকে। ছেলেটা কাজের প্রতি একাগ্র, সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক। একদিন একটা বড় ভুল হয়ে যায় রুমার—একটা ফাইলের ভেতরের হিসাব গড়মিল হয়ে যায়। কল্লোল ভাই একটু রেগে যান। কিন্তু সুমন পাশে দাঁড়ায়।

— “আমি ঠিক করে দিচ্ছি। চিন্তা কোরো না।”
রুমা একটু অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে।
— “ধন্যবাদ। সবাই রেগে গেল, আর আপনি পাশে দাঁড়ালেন!”
সুমনের মুখে হালকা হাসি,
— “সবাই নতুন থাকে এক সময়। ভুল না করলে শিখবে কীভাবে?”


এরপর দিনগুলো বদলাতে থাকে। সাদাকালো ছবি বদলে জীবন রঙিন হতে শুরু করে। ক্যান্টিনে একসাথে বসে খাওয়া, টেবিলে ঠাণ্ডা চা নিয়ে মজার কথা, কাজের মাঝে চোখাচোখি—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত নতুন ছন্দ তৈরি হয়। সুমনের কাছ থেকে রুমা বুঝে নেয় মানুষের প্রকৃত রূপ দেখার জন্য সময়ই যথেষ্ট। সেই বিচ্ছিরি ছড়ার ছেলেটা এখন কাজের মানুষ, নির্ভরতার নাম।

একদিন মিনা আপা আবার ছড়াটার কথা তুললেন। অফিস শেষে সবাই যখন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে, এমন সময় হঠাৎ বলে উঠলেন—
— “ওই ছড়ার কথা মনে আছে রুমা? এখন তো দেখছি সেটাই সত্যি হয়ে যাবে। রুমার গালে যেন একটু একটু রঙ লাগে!”
সবার সামনে একটু লজ্জা পেয়ে যায় রুমা। কিন্তু গম্ভীর না থেকে হেসে ফেলে।
— “মিনা আপা ছড়া দিয়ে নয়, এখন কাজ দিয়েই চেনা হয় মানুষকে।”
আমিন ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠলেন—
— “কিন্তু রুমা ছড়া না থাকলে তো গল্পের শুরুই হতো না!”
রুমা একটু ভেবে বলে,
— “হয়তো তাই। একেকটা ছড়াই একেকটা গল্পের শুরু।”


সেদিন বিকেলে অফিস শেষে যখন দুজন একসাথে নিচে নামছে, তখন লিফটের সামনে হঠাৎ সুমন একটু থেমে গেল।
— “রুমা, ছড়াটা... আসলে আমার বলা উচিত হয়নি। আমি ভুল করেছি।”
রুমা তাকাল তার দিকে।
— “তুমি বলোনি তো, অন্যরা বলেছে। আর এখন আমি নিজেই বুঝে নিতে শিখেছি—কে কেমন।”
সুমন একটু চুপ করে থেকে বলে,
— “তবে এবার একটা নতুন ছড়া বানাতে চাই। কাজ, জীবন আর...”
হঠাৎ সে থেমে যায়।
রুমা মুচকি হেসে বলে,
— “আর কি ? ভালোবাসা?”
সুমন মাথা নিচু করে হেসে ফেলে।

শেষ লাইনে সেই পুরোনো ছড়ার ছায়া থাকলেও, এবার ছড়াটার রঙ বদলে গেছে—রসিকতা থেকে গা জ্বালানো নয়, বরং আস্থা আর নির্ভরতার ছোঁয়ায় মিষ্টি করে রাঙানো।
একটা অফিস, কিছু হাস্যরস, কিছু ভুল বোঝাবুঝি—আর তার ফাঁকে ছড়া থেকে জন্ম নেওয়া এক নতুন গল্প, ভালোবাসার শুরু।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আপনি কি লিখেছেন??

০১ লা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:২৮

নিও ০০৭ বলেছেন: রাজীব ভাই, আসলে আমি কিছু লিখি নাই। লেখার চেষ্টা করেছি। একদিন বাসে যাওয়ার সময় হঠাৎ শুনলাম একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে ডাকছে, এই রুমা নাম তাড়াতাড়ি। সেখান থেকেই ছড়াটা মনে এল। তবে সেই রুমাকে আমি দেখিনি। বাস্তবে রুমা নামের কাউকে চিনি ও না। কিন্তু এলোমেলো কিছু চিন্তা এক করে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করলাম আরকি।

আপনাদের লেখাগুলো আমি পড়ি। ভালোই লাগে। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.