![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের শুরু একটা প্রকাণ্ড বটগাছ দিয়ে। তারপর পুকুর, লম্বা সুপুরি গাছ, তার গা বেয়ে মাথা পর্যন্ত উঠছে আগাছা, তারপর ব্রিজ। নিচে লুঙ্গি পরা সাইকেল থেকে এক পা নামানো দুইজন মানুষের বোকা কৌতুহলী দৃষ্টি।
একটা ঝিল। একটা না, অনেকগুলো ঝিল, ছোট ছোট সাদা শাপলার ঝাক ফুটেছ আছে সেথা। ইচ্ছা হয় ট্রেন থকে হাত বাড়িয়ে তুলে আনি কয়েকটা। ঘর-বাড়ি, গ্রাম, মেঠো পথে একলা তরুনী নিয়ে যাওয়া ভ্যান, বেগুনি টকটকে শাড়ি পরে স্বামীর হাত ধরে মোড়ের দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া নতুন বধহহু, হাতে লাগেজ। ধোয়া ওঠা চায়ের দোকান, হৈ-চৈ, হট্টোগোল, পাশের কামরায় এক পাল ‘বাদাম্যা’ ছেলে উঠেছে। গ্রামে চাল-চুলো নাই এমন ছেলেকে ‘বাদাম্যা’ ছেলে বলা হয়। আমি একা আমার ফার্স্ট ক্লাস এসি কম্পার্টমেন্টে বসে কিছু একটায় মন দেবার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু মন যাকে দেওয়ার সে তো ফুড়ুৎ - দিব কী করে। আমি কখনও তীক্ষ্ণ বর্তমানে বসে, কখনো সুদূর অতীতে গিয়ে প্রকান্ড ‘শেভড’ মাঠে একলা গরুর মত স্মৃতির জাবর কাটছি।
অনেকক্ষণ পরে দামি লাল শার্ট পরা, আস্তিন গুটানো, চোখে সানগ্লাস পরা যুবক ভদ্রলোক আমার পাশে এসে বসলেন নাক মুছতে মুছতে। যাক একজন সঙ্গী পাওয়া গেল। একটা গাছ ছিল। দুটো গাছ হলো। এই অসীম মহাশূন্য মাঝারে দুটি গাছ দাড়ায়ে। কেউ কাউকে চেনে না, কারও সাথে কারো কোন পরিচয় নেই। আমি অবশ্য চাইও না হোক। আলগা পীরিতি আমার পছন্দ না। “বড়র পীরিতি বালির বাঁধ” একটা কথা আছে।
যুবক ভদ্রলোক মনে হয় বি.সি.এস পরীক্ষার্থী। একটু পরপর সেলফি তুলে মুখ দেখছন আর বই খুলে পড়তে বসছেন। তার হাতে লাল কলম দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি অনেক সিরিয়াস। সিরিয়াস ছাত্ররা লাল কলম, নীল কলম, সবুজ কলম, কালো কলম ছাড়া সব কলম নিয়ে পড়তে বসে। কালো কালিতে তাদের দাগানোর কিছু নাই। সবই ইম্পর্ট্যান্ট। সামনে আব্দুল্লাহপুর সরকারী কলেজ। আব্দুলপুর স্টেশন। ট্রেন থেমে আছে।
ভদ্রলোকের মনে হয় চা খাওয়ার বাতিক আছে। একটু পর পর চায়ের অর্ডার দিচ্ছেন। চা আসছে। তিনি খুব চিন্তিত ভঙিতে চা খেয়ে দেখছেন, এবং প্রতিবারই বলছেন, এরকম বিস্বাদ চা পুকুরের নর্মার চেয়ে বাজে জায়গায় ঢেলে ফেলা উচিৎ। আমি কয়েকবার দেখলাম। কিছু বললাম না। তৃতীয়বারের বার বললাম, খাচ্ছেন কেন?
- ও চা খেত খুব, আমাকেও অভ্যাসটা ধরিয়ে দিয়ে গেছে। ছাড়তে পারিনি।
- ও আচ্ছা। কিছুটা বিদ্রুপ করেই বললাম, “ও”টা কি এখনও আছে না গেছে?
ভদ্রলোকের মুখ কাঠিন্যের ছাপ পড়ল। কিছুক্ষণ অর আবার স্বাভাবিক হয়ে এল। উনি গলা নামিয়ে বললেন, না গেছে। আপনার?
- না, আমারও গেছে।
- ছাড়লেন কেন?
- ছেড়ে গেছে।
- কেন?
- কেন তা তো বলা মুশকিল। বনি-বনা হচ্ছিল না অনেকদিন থেকেই। কলেজ থেকে প্রেম ভাই বুঝলেন। টিকল না।
ভদ্রলোক মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করলেন।
- আমারও টিকে নি ভাই। ইউনিভার্সিটিতে দুই বছর চুটিয়ে প্রেম করলাম। সবাই বলত, এমন সোনায় সোহাগা আর হয় না। নাহ, টিকল না।
- কেন?
- ঐতো, বনিবনা হলো না। আমি বলি, সূর্য ভালো, সে বলে, না, ওটা কালো। আমি বলি, চল ডান দিকটায় হেঁটে আসি। সে বলে, দেখো না, বাম দিকটা কি সুন্দর পাখি বসেছে!
- আমারও ভাই। রূপের দেমাগ ছিল খুব। কোনদিন দিনকে দিন বলে স্বীকার করত না। রাতেকে রাত বলে না। গুণের মধ্যে ঐ রূপটুকুই যা ছিল। আর মেয়েটা অভিমানী ছিল খুব। ওর অভিমান ভাঙ্গাতে রীতিমত বেগ পেতে হতো আমাকে।
- ঠিক বলেছেন ভাই। রূপের দেমাগ মেয়েদের ঐ আরেক দোষের জিনিস। আল্লাহপাক রূপটুকু দিয়েছিল বলে, না হলে যে কি করত? রূপের দেমাগ আমিও কম দেখেছি নাকি? দিনে একশ বার করে বলতাম, তুমি সুন্দর। তুমি সুন্দর। তুমি রাণী। তুমি দেবী। তুমি সুচিত্রা সেনের নাতনি রাইমা সেন, তুমি এমা স্টোন কিংবা ওয়াটসন যা চাও তাই। কিন্তু আমার ‘দেবীচৌধুরাণী’ প্রবোধ মানল না।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বললাম, মেয়েটা ভাল ছিল অনেক। আমাকে বুঝত। কখন কি বলতে চাচ্ছি, কখন কি করতে যাচ্ছি ঠিক ঠিক ধরে ফেলত। একটু-ও উনিশ বিশ হতো না।
- তা ভাই, আপনি তাহলে লাকি। আমি কত চেষ্টা করলাম আমাকে মেলে ধরতে। আমি তো বলেছিলাম, আমাকে ভালবাসতে হবে না। আমাকে একটু বোঝ। আমাকে যত্ন নিতে নিতে হবে, শুধু মানবিকতাটুকু দেখাইও। কিন্তু না, সে ন্যয়দণ্ড হাতে দেবী ‘থেমিস’। সব বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক। তার বিচারই ন্যয়, তার বিচারই মানবতা। বলা বাহুল্য, আমি মানুষ না বলেই কি না কে জানে, সে মানবতা আমার কাছে প্রহসন মনে হতো। কেবল, ওর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের হাতিয়ার মনে হতো।
- বাহ, আপনি তো খুব সুন্দর করে কথা বলেন। ভাই, একটা সিগারেট খাবেন?
- না ভাই, আমি নন-স্মোকার। তবে বন্ধু বান্ধব এক-আধটা সিগারেট খায়। দেখতে খুব ভাল লাগে। আপনি ধরান। সমস্যা নাই।
- আমি হাসলাম, ভার্সিটির অভ্যাস ভাই। আমার ভার্সিটি উঠার আগেই প্যাশন ছিল সিগারেট খেয়ে দেখব, জিনিসটা কেমন। এই আইডিয়া পেয়েছিলাম বই পড়ে।
আমি সিগারেট ধরালাম। নিঃশব্দে আরেকজনের মুখের উপর সিগারেট খাওয়া যায় না। আমি ধোয়া যতসম্ভব নিচুতে রেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি করেন ভাই আপনি?
- আমি ঢাকা কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। বি.সি.এস দিচ্ছি। হবে-টবে বলে মনে হচ্ছে না। সবাই আমাকে ডাকে হাবা বাবুল। আমার বুদ্ধিমত্তায় প্রীত হয়ে আমাকে বন্ধুমহল এই নাম দিয়েছিল। আছে, এখনও আছে। হাহাহা। আপনি?
- আমি ভাই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।। দূর্বল ইঞ্জিনিয়ার। ট্রান্সক্রিপ্টে কয়েকটা “F” আর অনেকগুলো “D” নিয়ে কোনমতে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। একটা বেসরকারি ফার্মে কাজ জুটিয়েছি। বেশিদিন রাখবে বলেও মনে হচ্ছে না। তাদের নাকি টেকনিক্যাল কাজ-বাজ খুবই দ্রুত ডেভেলপ করছে। আমি এত দ্রুত তাল মিলাতে পারছি না। ছাঁটাই করে দিবে মনে হয়।
- ছাঁটাই করে দিলে খাবেন কি?
- বাপের ব্যবসা আছে। ব্যবসা দেখাশোনা করব। আল্লায় চালায় নিবে।
- হুম। চালায় নিলেই ভাল।
তারপর দীর্ঘক্ষণ নীরবতা।
অনেকক্ষণ চুপ থেকে আমিই আবার কথা তুললাম, তারপর ভাই, একসাথে কি থাকা গেলই না?
- যেত হয়ত। কিন্তু থাকা হলো না। না থাকাটা ওরই সিদ্ধান্ত।
- সিদ্ধান্ত যে একপাশ থেকে আসে না, তা তো বোধ করি অস্বীকার করবেন না?
- হ্যাঁ তা করব না। কিন্তু মেয়েটা ভীষণ জেদী ছিল আর স্টাবর্ন। শেষের দিকে ওর ধারণা হয়েছিল, আমি নাকি ডমিন্যান্ট। সে ডমিনেন্স টলারেট করবে না। Zero Tolerance to Dominance. হাহাহা।
- এটা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছিল। আমি কখনো ভাবতাম না সেভাবেই। ও ভাবত। নতুন নতুন জামা পরে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে, খেতে যাবে তাতে কিছু হত না। আমার সাথে নতুন জামা পরে বেরোতে বললে কিংবা অ্যানিভার্সারির শাড়িটা শখ করে পরতে বললে সেটা নাকি ওর স্বাধীন ইচ্ছায় মত চাপানো। ওর বড় বোন ওকে ইনফ্লুয়েন্স করত খুব। কোনটা নারী স্বাধীনতা, কোনটা ব্যক্তিস্বাধীনতা এসব শিখাত খুব।
- ভাই , দেখেন দেখেন, বর্ষার উত্তাল যমুনা নদী। দেইখ্যা মনে যায় না একখান লাফ দেই।
আমি হেসে বললাম, হ্যাঁ দেই। নদীর উপর রূপালি ঢেউ চিকিচিক করতেছে। এবার কি সুন্দর চর নাই দেখেন। যৌবনা নারীর মত বুক ভরা পানি।
- তা ভাই, বিয়ে করেন নি কেন? বিয়ে করে একেবারে বেঁধে রাখতেন?
- ও কেয়ার করত না তেমন আমার ব্যপারে খুব একটা। ওর মনের ইচ্ছাই ছিল একদিন চলে যাবে। যে চলে যাবেই, তাকে আর বেধে রেখে লাভ কি? যে যাওয়ার সে আজ হলেও যাবে, কাল হলেও যাবে ৩০ বছর পরে হলেও যাবে? কি লাভ বেধে রেখে ভাই বলেন?
- আমি করি নি , করতে দেয় নি বলে। চাকরি নাই, বাকরি নাই। নিজে এক বেলা নুন আনতে পানতা ফুরোয়। বিয়ে করলে খাওয়াব কি? এমন ছেলের সাথে কে মেয়ের দিবে বলেন? আপনার মেয়ে হলে আপনি দিতেন?
- তারপরেও তো। জীবনের শুরুতে কষ্ট তো সবার জীবনেই থাকে। ধীরে ধীরে কাটায়ে উঠতেন।
- হয়ত উঠতাম। কিন্তু ওদের ফ্যামিলি হচ্ছে সৈয়দ বংশ। আর আমার বাবা ছাপোষা কেরানি। আমার বাবার মুরোদ হয়নি ওদের বাড়ি প্রস্তাব পাঠানোর। আর ও সাফ বলে দিয়েছিল, বাব মার অমতে বিয়ে করবে না। ব্যস, আর হয়ে উঠে নি।
- ভাই , আপনি আমার বন্ধু। আপনার আমার ভাগ্যনদী দুটো এখানে এসে শেষে হয়েছে – এই ট্রেনে। এই ট্রেন থেকে নেমে যাব। আপনি আপনার পথে, আমি আমার পথে। জীবনস্রোতে কে কোথায় ভেসে যাব কে জানে, তার আগে আপনার সাথে “ভাই” পাতায়ে ফেলতে চাই। আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম, “আমার নাম শফিক”।
ভদ্রলোক হেশে হ্যাণ্ডশেক করলেন, “আমার নাম মিলন। আমরা দু’জনই ব্যত্থ প্রেমিক্ক। হাহাহা। ভাই, সিগারেট দিতে চেয়েছিলেন না। দিন, একটা সিগারেট খেয়ে দেখি”।
- আপনার প্রেমিকার খবর জানেন কিছু?
- না, বিয়ে হয়ে গিয়েছিল শুনেছিলাম বছরখানেক আগে। বড়লোকের ছেলে। বাড়ি আছে, গাড়িও আছে শুনেছিলাম। আর খোজ-খবর নিতে যাই নি তেমন। ইচ্ছে করেই নেই নি। নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে যত সম্ভব ব্যস্ত রাখা যায় চেষ্টা করেছি। এতদিন পর নিজেকে গুটিয়ে এনেছি অনেক।
- আমার প্রেমিকার শুনেছিলাম স্কলারশিপ হয়ে গিয়েছিল কানাডায়। ওখানেই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শুনছিলাম। প্রথমে বিশ্বাস করিনি।
- হুম, সুন্দরী মেয়ে। হাজারটা কথা শুনবেন ভাই, বিশ্বাস করবেন না একটা কথাও। কেবল নিজে যা দেখবেন তাই বিশ্বাস করবেন।
আমি হাসলাম। যেন আমার চেয়ে বিশ্বাস তারই এক কাঠি উপরে।
আমি খুব অভ্যস্ত হাতে ভদ্রলোককে মুখে সিগারেট দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে যাচ্ছি এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হলো। দরজার ওপাশ থেকে নারী কন্ঠ ভেসে আসছে।
নাটকের এই পর্যায়ে এক অতি রূপবতী তরণী কামরায় প্রবেশ করল। তরুণীর গা থেকে ভুরভুর করে দামি পারফিউমের গন্ধ আসছে। তরুণী চুল ঝটকা দিয়ে আমাদের দিকে তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম। বোধ করি, পাশের জনও। কেউ কোন কথা বলল না। শুধু মনে হলো, সময় থেমে গেছে। মুহূর্তের জন্য মহাকাল জমে এক হয়ে গেছে। হৃদয়ের স্পন্দন থেমে গেছে আর মুখে রক্ত জমে গেছে। যেন দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া প্রলয়দেব শিঙায় ফুঁৎকার করিতেছিলেন আর এইমাত্র থামিয়া গিয়া বিশ্বমঞ্চকে নৈশব্দের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে গেলেন। ভদ্রলোক আমার দিকে তাকালেন। আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম। আমি তরুণীর দিকে তাকালাম। তরুণী আমার দিকে তাকালো। ভদ্রলোক তরুণীর দিকে তাকালেন। তরুণী ভদ্রলোককে চাহনি ফেরত দিলেন। কিন্তু কেউ কোন শব্দ করল না। সবার মুখে একটা চাপা ভয় গোঙা আর্তনাদ করে ফিরে আসতে চাচ্ছে, “এও কি সম্ভব”?
এরপর আর তেমন আড্ডা জমে উঠে নি। ওয়েটার চা-নাস্তা নিয়ে এসেছে। কারও মুখে কথা না শুনতে পেয়ে চলে গেছে। টিকেট চেকার মেয়েটির টিকেট চেক করতে এসেছিল। কেবল তখনই আড়চোখে দু’চোখ ভরে মেয়েটিকে দেখেছি। খরতপ্ত বুকে সে দৃষ্টি শ্রাবণের এক পশলা বৃষ্টির মত সিক্ত করে দিয়ে গেল। হয়ত চোখের কোণে দু’ফোটা জলও জমে উঠেছিল। জানালার দিকে তাকিয়ে থেকে সে জল শুকিয়েছিল। নাকি জামার হাতায় মুছেছিলাম ঠিক মনে নেই।
ট্রেন ঢাকা চলে এসেছে। নামার আগে শুধু তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “বিয়ে করেছ?”। তরুণীকে এই প্রথম এত বিষন্ন দেখলাম। বলল, মনের মত মানুষ আড় পেলাম কোথায়? আমি বললাম, পাওনি? “পাই নি যে দেখতেই পাচ্ছ”।
- “তবে যে শুনেছিলাম?”
- “কি শুনেছিলে?”
- “তোমার বিয়ে হয়ে গেছে”।
- “মিথ্যা কথা। আমি পি.এইচ.ডি করতে কানাডা চলে গিয়েছিলাম। বাবা অসুস্থ শুনে দেশে ফিরেছি এক সপ্তাহ হলো। তুমি?”
- “নাহ, ঐ যে রাতে একদিন ফোনে কথা বলতে বলতে বলেছিলাম, তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়েই করব না। সেই যে প্রতিজ্ঞা করে ফেঁসে গেলাম। আর বেরোতে পারি নি। হাহা”।
তরুণীর হৃদয় মমতায় চোখের জল হয়ে ছলছল করে বেরিয়ে আসতে চাইল। আমি ভাবলাম, মুছে দিই। পরক্ষণেই ভাবলাম, এরকম কত সহস্র মুহুর্তে তার চোখের জল বেরিয়ে এসেছে। তখন তো আমি মুছে দেওয়ার সময় পাশে ছিলাম না। এখন কেন নিছক এ ছেলেমানুষী!!
তরুণী ট্রেন থেকে এক পা দিয়ে নেমে গেল। আমি যতদূর পারি তাকিয়ে থাকলাম। ধূর ছাই, চোখ আবারও পানিতে ভিজে এসেছে। ডাক্তার দেখাতে হবে মনে হয়।
ছয় মাস পরে আমার অফিসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিলমোহর মারা একখানা চিঠি পেলাম। সাথে একখানা কার্ড। কার্ডের উপর সুন্দর করে লেখা, “এস আই বাবুল মোর্শেদ, বাংলাদেশ পুলিশ”। আমার ট্রেনের সহযাত্রী আমাকে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিটি নিচে উল্লেখ করে দিলাম।
প্রিয় শফিক ভাই,
পরসমাচার এই যে, আমি আল্লাহর রহমতে ভাল আছি। আমি এই বি সি এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশে জয়েন করেছি। কোন বিপদাপদ হলে ট্রেনের এই ‘ভাই’টিকে জানাবেন। আপনার মত ভাল মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নিবেন।
ইতি,
এস আই বাবুল
পুনশ্চঃ আপনাকে ভাই বলে ডেকেছি। আপনার কাছে কিছুই গোপন করব না। সেদিন ট্রেনে যেই মেয়েটি এসে উঠেছিল সেই আমার প্রাক্তন প্রেমিকা মাধবী। ওকেই আমি একসময় আমার জীবনের উর্দ্ধে ভালবেসেছিলাম। ও মনে হয় আমাকে চিনতে পেরেছিল। তাই কোন কথা বলে নি। কি জানি, মনে হয় লজ্জায়। আমার মনে হয়, হয়ত ও আমাকে এখনও ভালবাসত। সত্যিকারের ভালবাসা কখনও মরে না ভাই।
আমি চিঠিটা দুইবার পড়লাম। একটা ট্রেন। তিনটি জীবনকে কিছুক্ষণের জন্য এক করেছিল। যারা একজন আরেকজনকে জীবনের বিভিন্ন সময় তীব্রভাবে ভালবেসেছিল। সেও ভালবেসেছিল, আমিও বেসেছিলাম। একই মানুষকে ভালবেসেছিলাম। কারওটাই বেঁচে নেই এখন। আবার মরেও যায়নি। সত্যিই তো, সত্যিকারের ভালবাসা কখনও মরে না। অপেক্ষা করে হয়ত। অনন্ত অপেক্ষা। আমরা অপেক্ষা করেই যাচ্ছি। যে অপেক্ষার ক্লান্তি নেই, শেষ নেই।
মোঃ জাহিদ হাসান
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৮
Z@hid বলেছেন: এই সম্পর্ক তো ভেঙ্গে গিয়েছিল অনেক আগে। হঠাৎ একটা বিশেষ ঘটনায় পুরোনো কথা মনে পড়েছে। তাতে যে কারও খারাপ লাগবে এটা বেশি স্বাভাবিক।
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬
মার্কো পোলো বলেছেন:
পুরনো প্রেমের কাহিনী বেশ আবেগসঞ্চার করেছে। ভাল লাগলো।
৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৬
Z@hid বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৫
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভেঙে যাওয়া সস্পর্ককে মনে রাখলেও চলার পথে সমস্যা হয়। গল্প হিসেবে ঠিক আছে...