নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।
কিছুক্ষণ এইরুম, ঐ হলওয়ে অপেক্ষার পর একটা বড় রুমে এনে বসানো হলো আমাকে আরও প্রায় আনুমানিক জনা পঞ্চাশ মানুষের সাথে। কেউ অল্প বয়সী তরুণী, হয়তবা কোলে বছর খানেকের বাচ্চা; কেউবা বৃদ্ধ - বৃদ্ধা, কারো হয়তো ছেলে-মেয়ে বাবা মা মিলিয়ে ৫/৬ জনের পরিবার আর আমি। ঠিক সেইদিন খুব সম্ভব আমিই ছিলাম একমাত্র একটা ছেলে যে কিনা তার বউ-এর কাছে যাবার জন্য ঐ রুমটায় বসে ছিলো।
ব্যাপারটা খুবই লজ্জার তাইনা? ঐ দেশে অনেকে যায় স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য, কেউবা যায় অফিসের কোনো কনফারেন্সে এটেন্ড করবার জন্য, কেউবা হয়তো যায় নাতি নাতনী, ছেলে মেয়ের সাথে দেখার করবার জন্য। আবার আমার মতও হয়তো কেউ যায়, নতুন জীবন শুরু করবার জন্য কিন্তু যাদের আমি আসলে ঠিক জানি বা চিনিনা। সত্যি বলতে কেউ বুঝবে কিনা অনুভব করতে সে আমি ঠিক জানিনা, খুবই অস্বস্তির, অনেকটা লজ্জার।
কেন লিখছি, কাকে লিখছি? হয়তো নিজেকেই লিখছি, জানি কখনো এই সময় গুলো, উপলব্ধি গুলো ভুলে আমি না যাই। একটা দীর্ঘ সময় পর মনে হয় আসলো আমার ডাক, মোটামুটি আর সবার মতই একটা কমন প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, কার কাছে যেতে চাই আর পারপাস, যদিও মোটামুটি আমার সব ইনফরমেশন তারা দীর্ঘ ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা জেনে নিয়েছে, তবু সম্ভবত সামনা সামনি সাইকোলজিক্যাল প্রতিক্রিয়া দেখে কিংবা শুনেই তারা শেষ সিদ্ধান্তটা নেয়। কি দেখে বা বুঝে তারা সিদ্ধান্ত নিল আমি বলতে পারিনা, শুধু মোটামুটি ১০ মিনিটের ইন্টারভিউটার পরে কাঁচের ঘরটার ওপাশে বসে থাকা বিদেশী ভদ্রলোক অনেকটা খাঁটি বাংলাতেই বললো "আপনার ভিসাসহ পাসপোর্ট আগামি ১৪ দিনের মধ্যে ডেলিভারি সেন্টারের মাধ্যমে ফেরত দেয়া হবে। শুভেচ্ছা আপনাকে।" লোকটার কথা কী আমি ঠিক নাকি ভুল শুনলাম জানিনা, মনে হচ্ছিলো আমারতো খুব খুশিই হওয়া উচিত তাইনা? শুধু লোকটাকে বললাম থ্যাঙ্ক ইউ। বের হয়ে এসে আরেকটা বুথ থেকে এতদিন আমার আর ওঁর পাঠানো সব ডকুমেন্ট একটা ফাইল আকারে ফেরত নিলাম। ওয়াশ রুমে গেলাম, আয়নায় নিজেকে দেখলাম, বুঝতে চেষ্টা করলাম, আমার আসলে ঠিক কেমন লাগছে? বুঝলাম না। বের হয়ে এসে একবার মনে হল বাসায় ফোন করি। তখন মনে পড়লো আমার সাথে ফোন নেই, ওদের নিষেধ ছিল।ঠিক সামনে এসে দাঁড়ানো বাসটায় উঠে বসলাম। ভরদুপুর তখন। কি ভাবতে ভাবতে বাসার গলির সামনেও একসময় এসে পৌছালাম।
বাসায় এসে দেখি আব্বু আম্মু উদবিগ্ন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি শুধু ব্ললাম, আমার সম্ভবত হয়ে যাবে। দুজনেই বললো, আলহামদুলিল্লাহ। খুব কষ্ট লাগছিলো ঐ মুহূর্তে জানেন? আম্মুকে শুধু বললাম খাওয়া দিতে।খুব খিধে পেয়েছে। ফোনটা নিয়ে দেখলাম ওপাশ থেকে ওঁর কয়টা কল আর কিছু মেসেজ। ফোন করলাম, জেগেই ছিল। শুনে খুব খুশি। এতদিন ধরে এতো অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়তো হচ্ছে।
অদ্ভুত এই মানুষের জীবন আমাদের। একি খবরে কেউ আমরা খুব খুশি হই, কারো আমাদের গলার মধ্যে চাঁপা কষ্ট জমে থাকে।
©somewhere in net ltd.