নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

একান্ত নিনাদ

বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।

একান্ত নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনগুলো

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৩৫

আমার জগতে তখন সাদাকালোর কোন ঠাঁই ছিলনা, পুরোটাই ছিল ভীষণ রকম রংদার। স্কুলের ঘন্টা বাজত ঢংঢং, এবিকেলের ফিকে আলোয় দেখতে পেতাম যেন রংধনুর সাত রঙ। বাড়ি ফেরার সময় গুটি গুটি পায়ে হেঁটে আসতাম যখন, টুংটুং করে বেল বাজানো রিকশাওয়ালা, শাঁ করে হঠাৎ চলে যাওয়া দুরপাল্লার কোন বাস, স্টেশনারি দোকানের ক্লিশে সাইনবোর্ড, স্কুলের বাহিরে বিক্রি করা এক কি দুই টাকা দামের আইসক্রিম, সবকিছুই দেদারসে আনন্দ বিলিয়ে যেত, আমার মনে তখন অবারিত আনন্দের জগত।
আমরা যেখানটায় থাকতাম জায়গাটাকে একটা গ্রামই বলা যায়। আব্বুর কাজ ছিল সেখানে, সরকারি একটা টেক্সটাইল মিলের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতাম আমরা। সরকারি বলেই হয়তো আমাদের বাসাটা ছিল অনেক বড়। বিশাল একেকটা রুম, বারান্দা আর জানালা। আমাদের দোতলা বাসাটার পিছনে একটা পুকুরও ছিল। বরষার দিনে জানালা দিয়ে সেই পুকুরটার দিকে বসে তাকিয়ে থাকতে কিযে ভালো লাগতো। কাউকে হয়তো দেখতাম বৃষ্টির মাঝে মাথায় ছাতা দিয়ে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে পুকুরে। সেই ছোট বেলায় ঐ কাজটাকেই বুঝি সবচেয়ে অসাধারন মনে হতো।
ছুটির সময় আব্বুর একজন সহকর্মী রুহুল আমিন আংকেল আমাকে আনতে যেতেন স্কুল থেকে। হেঁটেই আসতাম আমরা। ২০/২৫ মিনিটের মতো মনে হয় লাগতো। সবসময়ের কথা তেমন মনে পড়েনা। একদিন স্কুল ছুটির পর আসছি, এসময় মুশুলধারে আসলো বৃষ্টি। আংকেল ছাতা নিয়ে এসছিলেন একটা। বৃষ্টি মনে হয় ছাতাকেও মানবেনা। হাঠতে পারছিলামনা বৃষ্টি, কাঁদা আর বাতাসের মাঝে জেনো উড়িয়েই নিবে। আমাকে উনি পিঠে তুললেন, বললেন শুধু শক্ত করে যেন ওনাকে ধরে বসি। ঐ দিনটাকে আজো আমি চাইলে কল্পনা করতে পারি। হয়ত আমাকে নিয়ে জেতে ওনার কষ্টই হয়েছিল সেদিন। কিন্তু আমার মনে পড়ে। মাঝে মাঝে ভাবি উনি এখন কথায় কেমন আছেন? ওনার হয়তো মনে নেই, কিন্তু আমারতো খুব মনে পড়ে মাঝে মাঝে ঐ দিনটার কথা।
স্কুল থেকে আসার পর বিকেলটা যেন টুপ করে হারিয়ে যেত। আমাদের কলোনির ভিতর ছিল পুরনো ইটের এক স্তুপ, সেই ইটের স্তুপে চলত লুকোচুরি খেলা। আমার সমবয়সী অন্যদের মতো খেলাধুলোয় ওত ভালো ছিলামনা আমি। মেজর খেলা গুলোয় তাই কেউ নিতোও না আমাকে। খারাপ হবার কারনে কেউ যে নিতোনা, এটা নিয়ে কিন্তু আমার কখনো তেমন খারাপ লাগতনা। বসে খেলা দেখতেই ভালো লাগতো বেশি। একবার আব্বুর সাথে মিলের মাঠে বড়দের ফুটবল খেলা হচ্ছিল, দেখতে গেলাম। কি মনে করে একটু পাশে হাঠছিলাম, সম্ভবত নিজের মনের অজান্তেই ছিলাম, খেয়াল করিনি কখন খুব জোরে এসে একটা বল লাগলো পেটের ঠিক মাঝখানটায়। মুহূর্তে বুঝি কিছুক্ষনের জন্য কোথায় হারিয়ে গেলাম। একটু পর বুঝলাম, আব্বু আমার পাশে বসে আছে। কোথা থেকে পানিও নিয়ে এসছে। সেইদিনের কথাকি আব্বুর মনে পড়ে? আমার কিন্তু মনে পড়ে।
একসময় হলুদরঙ আলোটা মিইয়ে আসত, মুয়াজ্জিনের জলদগম্ভীর আযান শোনা যেত একটু পরেই।মনটা দমে যেতাম ভীষণভাবে, খেলা এই সাঙ্গ হয়ে এল বলেই হয়তো। সেই থুত্থুড়ে পুরনো কলোনির বাতাসটাকে আমার বেকায়দা রকম গুমোট মনে হত, আঁধার জেঁকে বসার সাথে সাথে সেই ভাবটাও আরো প্রকট হত।
নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের কথা বলি। ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় দুই মাস। নভেম্বর ছিল কারন ফাইনাল এক্সামের পর কি কি করব তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই কেটে যেত এই মাসটা। এক্সামটাকে কোনো বড় কিছুই মনে হতোনা (গ্রামের স্কুলে ছিলাম বলেই হয়তো) বরং তখন আশু সুন্দর সময় গুলোর জন্য দিনগুনতাম শুধু।
আর ডিসেম্বর ছিল অনেকটা এরকম। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে গল্পের বই নিয়ে বসতাম। দুপুরে আম্মু হয়তো জোর করে খাওয়া আর গোসল। তারপর আবার বই। বিকেলে কলোনির ভিতর একটু হাঠতে বের হওয়া কোনোদিন। আবার সন্ধ্যায় গল্পের বই। এমনকি রাতে খেতে খেতেও। ঘুম যখন আসতো শুধু বইটা পাশে রেখে ঘুমাতাম। মাঝে মাঝে স্কুলে বেড়াতে যেতাম হাঠতে হাঠতে। দেখতাম স্যাররা স্কুলের মাঠে চেয়ার টেবিল এনে রোদে পিঠ দিয়ে বসে পরীক্ষার খাতা দেখছেন। স্কুল ছুটি থাকলেও ওনাদের হয়তো ছুটি ছিলনা। কিন্তু ছুটিহীন ঐ জীবনটার কথা যখন মনে আসে, এখন মনে হয় ওনাদের জীবনটাই সবচেয়ে সুন্দর ছিল। হয়তো ওনাদের কারোর জীবনই আমি জানতাম না, জানিও না আজকে কেমন আছেন কে, কিন্তু রংদার না হলেও সুখই দেখতাম ওনাদের ঐ সাদা কালো জগতটার মাঝে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: সাতটি রঙের মাঝে আমি মিল খুঁজে না পাই, জানি না তো কেমন করে কি দিয়ে সাজাই।।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৬

একান্ত নিনাদ বলেছেন: সবাই সম্ভবত বলেন দুঃখের কোন ভাষা খুঁজে পাননা। কিন্তু আমার মনে হয় সত্যিকারের আনন্দ বা সুখকেও হয়তো ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। ভালো থাকবেন ভাইয়া।

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১২

চাঙ্কু বলেছেন: আহ! সেইসব শৈশব!!

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৩

একান্ত নিনাদ বলেছেন: মনে হলে কখনো নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। কখনো আবার মনে এতো সুন্দর সময় দিয়ে আসার কারনেই হয়তো সামনে এতো অসুন্দর।

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২০

নজসু বলেছেন:



ঝরে পড়া দিনগুলোও যেন পিছু ডাকে।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪১

একান্ত নিনাদ বলেছেন: কেনো ডাকে বলতে পারেন? শুধুই কি সেখানে ফিরে যাবার জন্য নাকি সেখান থেকে আরেকটাবার শুরু করতে পারার জন্য?

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩২

আকিব হাসান জাভেদ বলেছেন: গল্পে গল্পে শৈশব । ভালো লাগা ছোট্ট বেলা। সুন্দর গল্প ।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪০

একান্ত নিনাদ বলেছেন: ভালো লাগা মনে হয় কখনো মুছে যায় না তাই না জাভেদ ভাই?

৫| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: নিজের পরিচয় সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছেন, আপনার এ লেখাটা পড়ার আগে সেগুলোই আগে পড়ে নিলেম। ভাল লেগেছে। +
স্মৃতিচারণটাও ভাল লাগলো। পড়তে পড়তে মনে হলো, আমি যখন ১০/১২ বছরের বালক, তখন গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়ার সময় হঠাৎ এক প্রতিবন্ধকের সম্মুখীন হই। একটা শুকনো নালা হঠাৎ করেই বর্ষার পানি পেয়ে খরস্রোতা খালে পরিণত হয়েছিল। শশ্রুমন্ডিত আমার সে বয়স্ক আত্মীয় সেই খাল অতিক্রম করে এসে আমাকে তাঁর পিঠে উঠতে বললেন। তাঁর পিঠে চড়েই সেদিন আমি সে খালটার পানি (ওনার প্রায় বুকসমান) পার হয়েছিলাম।
পোস্টে প্রথম ভাল লাগা + + রেখে গেলাম।

৬| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩০

একান্ত নিনাদ বলেছেন: কিছু কমেন্টও কতো ছুঁয়ে দিতে পারে!
অনেক ভালো থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.