নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

একান্ত নিনাদ

বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।

একান্ত নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবাউট নিউ অরলিন্স

১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৩২

ডিউক অফ অর্লিন্স - ফিলিপ-ডি-অরলিন্সের এর নামে এই শহরের নাম হয় La nouvelle-orléans বা নিউ অরলিন্স। বিশাল চওড়া তরঙ্গায়িত মিসিসিপি নদীর দুকূল জুড়ে অবস্থিত এই শহরের পশ্চিম জুড়ে রাজকীয় হ্রদ লেক পঞ্চার্ট্রেনের নীল জলরাশি, আর দক্ষিণে গালফ অফ মেক্সিকো। অফশোর, অনশোর পেট্রোল এবং ন্যাচারাল গ্যাস উৎপাদনের ঘাঁটি ও অামেরিকার অন্যতম বৃহত পোর্ট সিটি এটি।

ভারতবর্ষে গ্রেট ব্রিটেনের ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি যেমন রাজত্ব করতে এসে কোলকাতায় গড়েছিল তাদের রাজধানী ঠিক তেমনি ৭ই মে, ১৭১৮ সালে ফ্রেঞ্চ মিসিসিপি কোম্পানি আমেরিকায় এসে নিউ অরলিন্স শহরের গোড়াপত্তন করেছিল । তারপর নেপোলিয়ান এই শহরের আশপাশের এলাকা লুইসিয়ানা স্টেট হিসেবে আমেরিকাকে বিক্রি করেন ১৮০৩ সালে। আমেরিকার দক্ষিণে অবস্থিত বলে ক্রীতদাস প্রথা বহু যুগ ধরে চালু ছিল এখানে আর জনসংখ্যার ও বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ।

হাঁটার জন্য আপনি তৈরিতো?
প্রখ্যাত মার্কিন লেখক টেনেসি উইলিয়ামস বলেছিলেন, আমেরিকাতে আছে শুধু তিনটেই শহর - নিউইয়র্ক, স্যান ফ্রান্সিসকো আর নিউ অরলিন্স। বাকি সবই ক্লিভল্যান্ড। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বলেছিলেন? লেখকর দৃষ্টিতে এই তিনটেকেই সম্ভবত শুধু সমগ্র আমেরিকার মাঝে গ্লোবাল সিটি হিসেবে ধরা জেতে পারে। এই লিস্টের অন্যতম শহর হিসেবে এখানে বিবিধ সংস্কৃতির মানুষ আপনি পাবেন। টুরিস্ট প্লেস হিসেবে জনপ্রিয় বলে বছর জুড়েই পাবেন ঘুরতে আসা মানুষ। কিন্তু তবু তাদের জন্য মোটামুটি পুরোনো এই শহরটিতে অন্য স্টেট গুলোর আদলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আসলে সেইভাবে তৈরি হয়নি। মিসিসিপি নদীর উপর দিয়ে শহরটির পশ্চিম দিকে যাওয়া ফেরি আর শহরের মাঝ দিয়ে যাওয়া স্ট্রিট কার (ট্রামকে এখানে স্ট্রিট কার বলা হয়) হয়তো আপনার রোমান্টিক লাগতে পারে। কিন্তু যদি কারো সাথে নিজের গাড়ি না থাকে, নিউ অরলিন্স হয়তো আপনাকে হতাশই করবে। বেশিরভাগ অতিথিদের এখানে দেখা যায় পায়ে হেঁটেই দেখছেন ফ্রেঞ্চদের ছেড়ে যাওয়া এই শহরটাকে দেখছেন।

মারডি গ্রাঃ
মূলত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসকেই মারডি গ্রা সিজন ধরা হয়ে থাকে এখানে। কিন্তু কি হয় এখানে? কমিউনিটি, আর্ট, হিষ্ট্রি, নূতন বছরের শুরু আর আনন্দ এই সবকিছুকে নিউ অরলিন্সের মারডি গ্রা উৎসবের উপলখ্য হিসেবে ধরা জেতে পারে। এসময় বসে ব্যাক স্ট্রিট কালচারাল মিউজিয়াম, রাস্তা জুড়ে প্যারাড, আবার সেই প্যারাডকে কেন্দ্র করে কিছু বিয়ে, আর এক সময় সেই প্যারাড গিয়ে শেষ হয় মিসিসিপি নদীর ধারে।

ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারঃ
শহরের ডাউনটাউন এলাকাটিতে পাবেন আপনি ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার যাকে বলা হয়ে থাকে ক্রাউন জুয়েল অফ নিউ অরলিন্স। এখানে এখনো আছে ফ্রেঞ্চ আদলে বানানো সব বাড়িঘর, ফ্রেঞ্চ মার্কেট, বুটিকশপ, অ্যান্টিক স্টোর, পুরনো বেশ কিছু ফরাসি রেস্তোরা। ফুটপাথ ঘেঁষা গথিক স্টাইলের স্থাপত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা স্বমহিমায়। কেমন একটা মন কেমন করা পুরোণো গন্ধ পাবেন এই শহরটায় এলে, আমেরিকার অন্যসব শহর গুলিতে গিয়ে যা হয়তো পাবেন না। বহুমুখী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হয়ে নিউ অরলিন্স বাকি আমেরিকা থেকে যেন এখানে বিছিন্ন।
নতুন আমেরিকার শপিংমলের গন্ধও কিন্তু আছে এখানে, আছে মোড়ে মোড়ে পিৎজা জয়েন্ট বা বার্গার পয়েন্ট, আছে এক্সপ্রেসওয়ে এর চাকচিক্য কিন্তু তার সঙ্গে আবার এখানে ঘুরে বেড়ায় প্রাচীন যুগের প্রেতাত্মারা এখানের নানা হন্টেড হাউজ গুলোতে। ইউরোপীয় সংস্কৃতির অনন্দাধারা পাবেন এখানে। ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারকে যার বিদ্যমান পোর্টেট বললে ভুল হবেনা। এখানে আছে ঐতিহাসিক জ্যকসন স্কয়ার আর বারবার্ন স্ট্রিটের কথাতো না বললেই না। বছরের প্রায় প্রতিটি রাতকে এখানে মনে হবে আপনার উৎসবের রাত। "বিগ ইজি" নিকনেম ধারি এই শহরের প্রায় প্রতিটা রাস্তায় আছে রাউন্ড দ্যা ক্লক নাইট লাইফ, লাইভ মিউজিক, সি ফুড আর আফ্রিকান আমেরিকান কালচার সমৃদ্ধ এই শহরটি।

খাওয়া দাওয়াঃ
পাবগুলোতে গুলোতে যদি যান, পাবেন এখানকার বিশেষ পানীয় মার্গারিটা। মেক্সিকোর "ব্লু অগাভে" নামের ক্যাক্টাস জাতীয় গাছ থেকে তৈরি পানীয় টেকিলার সাথে আরো কিছু মিশিয়ে বানানো হয় এই মার্গারিটা।
লুইসিয়ানার খাবারে ক্রেওল আর ক্যাজুন এই দুই অভিনব ঘরানার সংমিশ্রণ ঘটেছে। ক্যাজুন আর ক্রেওল হলো ফ্রেঞ্চ কুইসিনের অপভ্রংশ যার সাথে মিশেছে ইওরোপিয়ান, মেডিটেরেনিয়ান,লোকাল রেড ইন্ডিয়ান এবং আফ্রিকান ধারা। ক্যাজুন হল লুইসিয়ানার আদি বাসিন্দার শহুরে খাবার আর ক্রেওল হলো পরে আসা কিছু ফরাসীদের এক গ্রাম্য এবং কিছুটা মশলাদার খাবার। গাল্ফ অয়েষ্টার, স্টীমড বা বয়েল্ড ক্রফিশ, রেড-বিনস আর স্মোকড রাইস হলো এই দুই মিশ্র খাবারের প্রধান অঙ্গ। একটা কথা এখানে বলে নেই, পোর্ট সিটি এই নিউ অরিলিন্সে এলে কেউ এখানের সি-ফুড ট্রাই করতে ভুল করবেননা।
আরেকটা ব্যাক্তিগত রিকমেন্ডেশন দিবো, কেউ যদি কখনো কফি লাভার হয়ে থাকেন, অবশ্যি অবশ্যি, ক্যাফে ডু মনডের ক্যাফে লাটে আর বেনিয়ে চেখে দেখবেন, প্লিজ। মনে মনে থ্যাঙ্ক ইউ বলবেন আমাকে পরে।

জ্যাজ মিউজিকঃ
নিউ অরলিন্স আবার জ্যাজ মিউজিকের জন্মস্থান বলে জনপ্রিয়। বিখ্যাত জ্যাজ শিল্পী লুই আমস্ট্রং নিউ অরলিন্সেই প্রথম এই মিউজিক শুরু করেন। পথেঘাটে এখানে দেখবেন বিশালকায় স্যাক্সোফোনে জ্যাজ মিউজিক বাজাচ্ছে মানুষজন। আমার মতো জ্যাজ মিউজিকের কিছু না জানলেও, কিন্তু মানুষগুলোর সঙ্গীত চর্চা আর নিষ্ঠা দেখে মুগ্ধ হতে আপনি বাধ্য। মজার শহর নিউ অরলিন্স, সবাই নিজের খেয়ালখুশিতে চলে। কোনো সময়ের অভাব নেই, নেই কোনো একঘেয়েমি । কোনো বাড়ির পোর্টিকো-তে গীটারে জ্যাজ বাজায় কোনো তরুণ, কোথায় আবার দেখবেন বিউগল বাজিয়ে ভিক্ষা চাইছে যুবক, কোথাও আবার একর্ডিয়ানে সুর তুলতে ব্যস্ত কোনো বৃদ্ধ শিল্পী।

সিটি অফ আর্ট, গ্যালারীঃ
এখানে আপনার চোখে পড়বে রাস্তায় একটু পরপর চিত্র শিল্পীদের শিল্পকলা। বেশীর ভাগ শিল্পীরা চান তাদের তুলির আঁচড়ে শহরের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকেই ফুটিয়ে তুলতে। এখানে অনেক নয়নভরানো আর্ট গ্যালারিও পাবেন।

হারিকেন ক্যাটরিনাঃ
২৯শে আগস্ট ২০০৫-এর এক বিধ্বংসি সাইক্লোন, গাল্ফ অফ মেক্সিকো থেকে উড়ে এসে আছড়ে পড়ে এখানে। কুখ্যাত এই সাইক্লোন এখানে হারিকেন ক্যাটরিনা নামে পরিচিত। এর আঘাতে মিসিসিপি নদীর বাঁধ ভেঙে যায় এবং সমুদ্রের জলের উচ্ছ্বাসে সারা নিউ অরলিন্স শহর গভীর জলে নিমগ্ন হয়। হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়ে এবং ব্যাবসা বাণিজ্যের বিপুল ক্ষতি হয় । আঠারো বছর আগে ঘটে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এখনো মুছে যায়নি নিউ অরলিন্স থেকে, এর অর্থনীতি থেকে, এমনকি শহরের মানুষের মন থেকে। এখানে এলে কেউ বা কেউ তাদের জীবন কথার সাথে হারিকেন ক্যাটরিনার কথা বলতে আপনি শুনবেন।

শুধু নিউ অরলিন্সকে নিয়ে আরো অনেক কিছু লিখার আছে। আজকে শুধু বিশালকায় আমেরিকার সাউথের সমৃদ্ধ এই শহরটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। যদি পরে ইচ্ছে আর আপনাদের আগ্রহ আছে জানি। এতক্ষণ লিখাটা কেমন লাগলো জানিনা, শেষে শুধু শ্রদ্ধেয়, প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ স্যারের মে ফ্লাওয়ার বইয়ের একটা প্যারা কোট করবো, "আমি যেসব জায়গায় যেতে চেয়েছি, সেগুলো হলো, স্যান ফ্র্যান্সিসকো, নিউ অরলিন্স আর নিউ ইয়র্ক। স্যান ফ্র্যান্সিসকো পছন্দ করার কারন ঔপন্যাসিক স্টেইনবেক এখানকার মানুষ।তাঁর বেশিরভাগ উপন্যাসের পটভুমি স্যান ফ্র্যান্সিসকোর সেলিনাস ভ্যালি। নিউ অরলিন্স পছন্দ করার কারন সেখানকার ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার। এখানে বসেই উইলিয়াম ফকনার প্রথম উপন্যাস লিখার শুরু করেন। ও হেনরির ও প্রথম উপন্যাস লিখা শুরু হয় এইখানে। টেনেসি উইলিয়ামসের বিখ্যাত লিখা "আ স্ট্রিট কার নেমড ডিসায়ার" লেখা হয় নিউ অরলিন্স ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে বসেই।এই ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে আংকেল টমস কেবিন উপন্যাসের অকশান ও হয়।কাজেই অতি বিখ্যাত এই জায়গাটি সম্পর্কে আমার কৌতুহল হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.