নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।
রাজু পেশায় একজন মোটর গ্যারেজ মেকানিকের আসিস্ট্যান্ট। বয়স এখন ১৩। যে বয়সে সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পর চোখ ডলতে ডলতে স্কুলে যাবার কথা, সে বয়সে ও ঘুম ভেঙ্গে আমির ভাইয়ের গ্যারেজের উদ্দেশ্যে হেঁটে যায়। যেতে যেতে কেনো জানি আজকের দিনটাকে রাজুর অনেকটা ঈদের দিনের মত মনে হলো। কারন রাস্তায় আজকে গাড়ি কম মনে হচ্ছে। আজকে কি তাহলে হরতাল? যেদিন হরতাল থাকে, রাস্তায় গাড়ি কম থাকলেও মোটর গ্যারেজ গুলোতে ভিড় থাকে গাড়ির। অনেকটা ঈদের দিনের মতই লাগে সেদিন রাজুর। কারন আমির ভাইয়ের মন মেজাজ থাকে সেদিন ফুরফুরে। অনেক কাজ থাকে, রাজুকে মাঝে মাঝে এমনদিনে আমির ভাই দিন শেষে কাজের টাকা দিবার সময় খুশি মনে দশটা টাকা বেশিও দিয়ে দেন।
রাজুর মনের একটা স্বপ্নের কথা এখানে বলেই দেই। রাজুর কাছে এখন রোজকার খরচ শেষ করার পর নিজের কাছে জমানো ১৮০ টাকা আছে। এই নিয়ে রাজু মনে মনে খুবই খুশি কারন আর সত্তর টাকা জমলে ২৫০ টাকার মতো দিয়ে রাজু একটা নতুন শার্ট কিনতে পারবে। এখন শুধু রাজুর দুইটা টি শার্ট আছে, এর একটা একদিন ধুতে দিয়ে অন্যটা আরেকদিন কাজে পরে যায় ও। মনে মনে প্ল্যানও করে ফেলেছে ও, একটু যে, নতুন জামাটা কিনলে ও পড়বে শার্টটা মায়ের কাছে বাড়ি ফিরে যাবার দিন।
মা? মায়ের কথা মনে আসতেই কেমন জানি করে মনটা। কেমন জানি আছে মা। মাঝে মাঝে ও ভাবে শুধু শুধু শার্ট না কিনে আরও কিছু টাকা জমিয়ে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে নিয়ে গেলে কেমন হয়? কেনো জানি মনে হয় রাজু হয়তো এটাই করবে শেষ পর্যন্ত। এইসব ভাবনার জগতে ডুবে হাটতে হাটতে ও যখন আমির ভাইয়ের গ্যারেজের কাছে একসময় এসে পৌছুলো, তখন খেয়াল করলো অনেক মানুষ আর শোরগোল। কিছু না বুঝে এদিক সেদিক তাকাতে একটু দূরে আকবরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। আকবরও ওর মতই এই গ্যারেজে কাজ করে। ওর কাছে এগিয়ে যেতেই আকবর বলল এতো দেরি করে আসলি, আজকে তো গ্যারেজ বন্ধ। শুনে স্বভাবতই রাজু জিগ্যেস করলো, কোনো? কোন ঝামেলা হয়েছে কি? ওর প্রশ্ন শুনে আকবর হেসে ওকে আশ্বস্ত করে বললো, আরে না রে, তুই জানিস না, আজকে তো সবাইকে এখানে থেকে মিছিলে নিয়ে যাবে।
শুনে কিছু না বললেও একটু মনই খারাপ হলো রাজুর। ওর অবস্থা বুঝেই হয়তো আকবর বললো, ভাবিস না তুই। আমির ভাই নিজেই আজকের মিছিল আর সব আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে। সবাইকে বলেছে ১০০ টাকা করে দেয়া হবে আর দুপুরে পাবি বিরিয়ানির প্যাকেট।
বিরিয়ানির কথা বলতে বলতেই যেন আকবরের চোখ চকচক করে উঠলো। রাজু কিছু বললোনা শুনে। এভাবে আরো কিছুক্ষণ সময় কেটে গেলো, বেলা ১১টার দিকে ওর মনে হল আমির ভাই ভালই মিছিলের আয়োজন করে ফেলেছেন। কারন চারিদিকে ভালই লোক জমায়েত হয়েছে এতক্ষণে। আরএকটুপর মিছিল আরম্ভ হলো, আমির ভাই প্রথম সারি থেকে শ্লোগান দিচ্ছেন আর রাজু অন্যসব ছেলেদের সাথে একটু পিছনের সারিতে হাঁটতে লাগলো। আরো একটুপর ও খেয়াল করলো পুলিশের একটা গাড়ি ওদের মিছিলের ঠিক পিছে আস্তে আস্তে প্রায় ওদের সাথেই চলেছে পথধরে। ব্যাপারটা ওর ভালই লাগলো, অনেকটা এরকম, যেনো ওরা কোনো বিশেষ কেউ আর পুলিশ ওদের পাহারা দিয়ে চলেছে।
ওরা রাস্তার ঠিক যে পাশ দিয়ে চলেছে একটুপর অন্যপাশ দিয়ে আরেকটা মিছিল আসতে দেখল ওরা। এটাও ভালই লাগলো রাজুর কারন সবাই আজ বিরিয়ানি পাবে। বেলা আরেকটু যখন হয়ে এলো, সূর্য যখন মাথার আরেকটু উপরে এলো, সবাইকে মনে হলো একটু উত্তেজিতই যেন হয়ে উঠেছে। পুলিশের গাড়িটাকেও এখন আর পিছনে দেখতে পেলনা ও। হঠাৎ মনে হলো চারিদিকে শোরগোলটা একটু বেশিই। আরো একটুপর ওর মনে হলো চোখে কেন জানি কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা ও। তারও একটুপর ওর মনে হলো পথের একধারে বসে থাকলেই বুঝি ভালো, সব নিশ্চয়ই একসময় থেমে যাবে। ঠিকই থেমে গেলো একটা সময় সব। একটা দেহ পাওয়া গেলো মিছিলের দুই গ্রুপ আর পুলিশের সংঘর্ষে। কাজের অংশ হিসাবে রাজুর ছোট্ট দেহটাকে পুলিশ নিয়ে গেল ময়না তদন্তে। লাশের উপরে একটা কাগজে ওর পরিচয় লিখা হলো অগ্যাত। কেউ জানলো না তার নাম রাজু।রাজু পেশায় একজন মোটর গ্যারেজ মেকানিকের আসিস্ট্যান্ট। বয়স এখন ১৩। যে বয়সে সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পর চোখ ডলতে ডলতে স্কুলে যাবার কথা, সে বয়সে ও ঘুম ভেঙ্গে আমির ভাইয়ের গ্যারেজের উদ্দেশ্যে হেঁটে যায়। যেতে যেতে কেনো জানি আজকের দিনটাকে রাজুর অনেকটা ঈদের দিনের মত মনে হলো। কারন রাস্তায় আজকে গাড়ি কম মনে হচ্ছে। আজকে কি তাহলে হরতাল? যেদিন হরতাল থাকে, রাস্তায় গাড়ি কম থাকলেও মোটর গ্যারেজ গুলোতে ভিড় থাকে গাড়ির। অনেকটা ঈদের দিনের মতই লাগে সেদিন রাজুর। কারন আমির ভাইয়ের মন মেজাজ থাকে সেদিন ফুরফুরে। অনেক কাজ থাকে, রাজুকে মাঝে মাঝে এমনদিনে আমির ভাই দিন শেষে কাজের টাকা দিবার সময় খুশি মনে দশটা টাকা বেশিও দিয়ে দেন।
রাজুর মনের একটা স্বপ্নের কথা এখানে বলেই দেই। রাজুর কাছে এখন রোজকার খরচ শেষ করার পর নিজের কাছে জমানো ১৮০ টাকা আছে। এই নিয়ে রাজু মনে মনে খুবই খুশি কারন আর সত্তর টাকা জমলে ২৫০ টাকার মতো দিয়ে রাজু একটা নতুন শার্ট কিনতে পারবে। এখন শুধু রাজুর দুইটা টি শার্ট আছে, এর একটা একদিন ধুতে দিয়ে অন্যটা আরেকদিন কাজে পরে যায় ও। মনে মনে প্ল্যানও করে ফেলেছে ও, একটু যে, নতুন জামাটা কিনলে ও পড়বে শার্টটা মায়ের কাছে বাড়ি ফিরে যাবার দিন।
মা? মায়ের কথা মনে আসতেই কেমন জানি করে মনটা। কেমন জানি আছে মা। মাঝে মাঝে ও ভাবে শুধু শুধু শার্ট না কিনে আরও কিছু টাকা জমিয়ে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে নিয়ে গেলে কেমন হয়? কেনো জানি মনে হয় রাজু হয়তো এটাই করবে শেষ পর্যন্ত। এইসব ভাবনার জগতে ডুবে হাটতে হাটতে ও যখন আমির ভাইয়ের গ্যারেজের কাছে একসময় এসে পৌছুলো, তখন খেয়াল করলো অনেক মানুষ আর শোরগোল। কিছু না বুঝে এদিক সেদিক তাকাতে একটু দূরে আকবরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। আকবরও ওর মতই এই গ্যারেজে কাজ করে। ওর কাছে এগিয়ে যেতেই আকবর বলল এতো দেরি করে আসলি, আজকে তো গ্যারেজ বন্ধ। শুনে স্বভাবতই রাজু জিগ্যেস করলো, কোনো? কোন ঝামেলা হয়েছে কি? ওর প্রশ্ন শুনে আকবর হেসে ওকে আশ্বস্ত করে বললো, আরে না রে, তুই জানিস না, আজকে তো সবাইকে এখানে থেকে মিছিলে নিয়ে যাবে।
শুনে কিছু না বললেও একটু মনই খারাপ হলো রাজুর। ওর অবস্থা বুঝেই হয়তো আকবর বললো, ভাবিস না তুই। আমির ভাই নিজেই আজকের মিছিল আর সব আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে। সবাইকে বলেছে ১০০ টাকা করে দেয়া হবে আর দুপুরে পাবি বিরিয়ানির প্যাকেট।
বিরিয়ানির কথা বলতে বলতেই যেন আকবরের চোখ চকচক করে উঠলো। রাজু কিছু বললোনা শুনে। এভাবে আরো কিছুক্ষণ সময় কেটে গেলো, বেলা ১১টার দিকে ওর মনে হল আমির ভাই ভালই মিছিলের আয়োজন করে ফেলেছেন। কারন চারিদিকে ভালই লোক জমায়েত হয়েছে এতক্ষণে। আরএকটুপর মিছিল আরম্ভ হলো, আমির ভাই প্রথম সারি থেকে শ্লোগান দিচ্ছেন আর রাজু অন্যসব ছেলেদের সাথে একটু পিছনের সারিতে হাঁটতে লাগলো। আরো একটুপর ও খেয়াল করলো পুলিশের একটা গাড়ি ওদের মিছিলের ঠিক পিছে আস্তে আস্তে প্রায় ওদের সাথেই চলেছে পথধরে। ব্যাপারটা ওর ভালই লাগলো, অনেকটা এরকম, যেনো ওরা কোনো বিশেষ কেউ আর পুলিশ ওদের পাহারা দিয়ে চলেছে।
ওরা রাস্তার ঠিক যে পাশ দিয়ে চলেছে একটুপর অন্যপাশ দিয়ে আরেকটা মিছিল আসতে দেখল ওরা। এটাও ভালই লাগলো রাজুর কারন সবাই আজ বিরিয়ানি পাবে। বেলা আরেকটু যখন হয়ে এলো, সূর্য যখন মাথার আরেকটু উপরে এলো, সবাইকে মনে হলো একটু উত্তেজিতই যেন হয়ে উঠেছে। পুলিশের গাড়িটাকেও এখন আর পিছনে দেখতে পেলনা ও। হঠাৎ মনে হলো চারিদিকে শোরগোলটা একটু বেশিই। আরো একটুপর ওর মনে হলো চোখে কেন জানি কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা ও। তারও একটুপর ওর মনে হলো পথের একধারে বসে থাকলেই বুঝি ভালো, সব নিশ্চয়ই একসময় থেমে যাবে। ঠিকই থেমে গেলো একটা সময় সব। একটা দেহ পাওয়া গেলো মিছিলের দুই গ্রুপ আর পুলিশের সংঘর্ষে। কাজের অংশ হিসাবে রাজুর ছোট্ট দেহটাকে পুলিশ নিয়ে গেল ময়না তদন্তে। লাশের উপরে একটা কাগজে ওর পরিচয় লিখা হলো অগ্যাত। কেউ জানলো না তার নাম রাজু।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:২০
একান্ত নিনাদ বলেছেন: অবশ্যই, ধন্যবাদ ভাইয়া ফিডব্যাক দিবার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১৯
ইয়াসিনুর রহমান ফাহিম বলেছেন: লেখাটা পড়ে ভালো লাগল। তবে বানানের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।