নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

একান্ত নিনাদ

বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।

একান্ত নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার একান্ত নিনাদ (৬) _ ঢাকা থেকে দোহা

১৩ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ২:৫৭

বাস বা ট্রেন ভ্রমনে কেউ যদি একটা জানালার পাশে সিট পেয়ে যান, অনেকেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। সে হিসাবে দূরের জার্নিতে প্লেনে যারা জানালার পাশে সিট পেয়ে থাকেন, তারা ঠিক নিজেকে কি মনে করেন আমার জানা নেই, কারন এই অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনো হয়নি, প্রথম স্টপেজ অর্থাৎ ঢাকা থেকে দোহা পর্যন্ত কাতার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটায় আমার জানালার পাশে একটা সিট পেলাম। আমার পাশে বসে বসলেন ঢাকা থেকে দোহা থেকে ইরাকগামী দুই যাত্রী। কথা হলো তাদের সাথে, জব নিয়ে যাচ্ছেন ইরাকের পথে। একজনের বাবা আর তাঁর বড় ভাই পাঁচ মাস আগে একি ভাবে ইরাক গিয়েছেন, এখন বাড়ির ছোট ছেলেও যাচ্ছেন, দেশে মা কে রেখে দুই ছেলে বাবার সাথে ইরাকে ভাগ্যান্নেসনে। অন্যজনের সাথে তেমন কথা বলা হয়নি। শুধু এইটুকু জেনেছিলাম, দুইজনি ঢাকা এসছেন গ্রাম থেকে তার দুইদিন আগে। এই দুইদিন তারা যে এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন, তাদের অফিসে বসে ছিলেন, ভিসা, টিকিট ও অন্যান্য প্রসেসিংএর কাজে। সেদিন দুপুরেই শুধু তারা জানতে পারলেন আজই রাতে তাদের ফ্লাইট। দেশ ছেড়ে দূরে কথাও যেতে কেমন লাগে, ব্যাপারটা এর আগে অনেকের লেখায় অনেক অভিজ্ঞতা পড়লেও আমি ঠিক নিজের কেমন লেগেছিল বুঝাতে পারবনা। আমি জানিনা, কেউ যদি অফিসের কাজে, অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে কয়দিনের জন্য কোথাও যান, তারা ঠিক বুঝতে পেরেছেন কিনা। যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমি যাচ্ছিলাম, মনের মধ্যে এমনিতেই ছিল ভোঁতা এক অনুভূতি। নিজেকে কিছুতেই ভাঙবোনা এইটুকুই চাইছিলাম, স্বাভাবিক সব কিছুর পর ঠিক যখন প্লেনটা ঢাকার মাটি ছেড়ে একটু আকাশে উড়লো মনের অজান্তেই রাতের নিভু নিভু আলোয় ভরা ঢাকা শহরটা দেখে চোখ দিয়ে একটু পানি পড়লো। এইকি তাহলে দেশ ছাড়ার অনুভূতি? খুব তুচ্ছই ছিল যদিও ব্যপারটা।কিন্তু এইটাই কি সেই অনুভূতি? মনটাকে ঠিক রাখতে চেষ্টা করছিলাম নিজেরই পাশে স্মভবত আমার চেয়ে বয়সে ছোট দুই দেশি ভাইকে দেখে।বারবার শুধু মনে হচ্ছিলো আমার মতই কতো অজানা তাদের আগামির দিনগুলো। তবু তারা হাসি খুশি, হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছিলেন, কখনো এয়ারহোস্টেস কে ডেকে অ্যাপেল জুস খেতে চাইছিলেন, একটা সময় মনে আসছিলো, এখন আব্বু আম্মু কি করছে? ওরা যদি ঘুমিয়ে যেতে পারে তাহলেই ভালো।ঘুম ভাঙতে ভাঙতেই হয়তো আমি কাতার যেয়ে আব্বু আম্মুর সাথে সকালে একটু কথা বলতে পারবো। নিজেকে শুধু বুঝাতে চেষ্টা করছিলাম, সব স্বাভাবিক রাখতে হবে, জানি ভেঙে না পড়ি একটুও।

বাংলাদেশ সময় রাত একটা পঞ্চাশ মিনিটে যে ফ্লাইটটা ছাড়লো দোহা হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট গিয়ে পৌছালো স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটা দশ মিনিটে। ভিনদেশের মাটিতে প্রথম পা রাখলাম আমি। ভাবলাম হাত মুখ ধুব, হয়তো একটু ফ্রেশ লাগবে, এতো বড় লাইন ছিল, সাথে যারা নামলো, তাদের প্রায় সবাইকেই হারিয়ে ফেললাম। এই ফ্লাইটটা কানেক্টিং ছিল, যে যার মতো অন্য ফ্লাইট ধরবার জন্য নানা দিকে চলে গিয়েছিলো। মুখ ধোবার পর প্রথম যে জিনিসটা মাথায় আসলো, ওয়াইফাই কানেকশন নিয়ে বাসায় ফোন করতে হবে। এয়ারপোর্টের একটা বিলবোর্ডে ডিরেকশন দেয়াই ছিল, শুধু বোর্ডিং পাসের পিছনে থাকা কোডটা দিতে হয়েছিল। ফোন করে সাথে সাথেই আম্মু, আব্বুকে পেলাম, ওরা ততোক্ষণে ফজর নামাজের জন্য ঘুম থেকে উঠেছে। একটু কথা বলে এবার বোর্ডিং পাস অনুযায়ী আমার যে ব্লকে যেতে হবে খুঁজে বের করা।অনেকেই জানেন, শুধু বলার জন্যই বলা, এয়ারপোর্টের বড় মনিটরগুলোতে লিখা থাকে, কোন ফ্লাইট নাম্বারের জন্য কোন ব্লক বা সেকশনে গিয়ে কয়টার মধ্যে চেক-ইন করতে হয়। হাতে আরও প্রায় ৩০ মিনিট মতো ছিল দেখে আমার নির্ধারিত ব্লকের বাহিরে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। একটুপর দেখি একটা ছেলে আমাকে বাংলাতেই জিগ্যেস করলেন, আমি কি বাংলাদেশ থেকে কিনা? ওনার কথা শুনে হেসেই উত্তর দিলাম, জানলাম, উনি যাচ্ছেন সাইপ্রাসে। তাঁর কোন গেটে চেক-ইন করতে হবে বুঝতে পারছিলেন না।ওনাকে দেখালাম কিভাবে নিজের চেক-ইন ইনফরমেশন জানতে হয়, একটু পর খুশি হয়ে ছেলেটা আমাকে বললো, আমার সময় থাকলে আমরা কথা বলতে পারি কিছুক্ষণ। ভালই মনে হলো ছেলেটাকে, কথা বলতে বলতে জানলাম, ওনার একটা ফোনের চারজার কেনা দরকার, আসার সময় ভুলে মেইন লাগেজে উনি চারজার দিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে ওনাকে ইমারজেন্সি ফোন করা লাগবে। আমি বললাম এখানে থেকে কিছু কিনতে একটু ভালই খরচ পড়বে স্মভবত, যদি খুব ঝামেলা না হয় না কিনে থাকতে পারলে আর ইন্টারনেট দিয়ে কল করা গেলে আমার ফোনও উনি এখন চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। কি মনে করে একটু ইতস্তত বোধ করে ছেলেটা আমাকে যা বললো, ব্যাপারটা হচ্ছে এই, উনি কনট্রাক্টের মাধ্যমে সাইপ্রাস যাচ্ছেন। কিছু টাকা উনি দেশে দিয়েছেন স্থানীয় দালাল ভাইকে, বাকি অংশ উনি ইউরো করে সাথে এনেছেন, এয়ারপোর্টে নেমে তাদের সাইপ্রাস প্রতিনিধিকে ফোন করে ইউরো দিলে, তারা এসে উনাকে সেখানকার এয়ারপোর্ট থেকে বের করার প্রসেস করবেন। পুরো ব্যপারটা ভীতিকরই ছিল আমার জন্য, শুধু ছেলেটাকে বললাম, সাথে করে যে ইউরো নিয়ে যাচ্ছেন ব্যপারটা যেন উনি আর কারো সাথে শেয়ার না করেন, সম্ভবত এতো ইউরো নিয়ে যাওয়াটা বেআইনিও।
কিছুক্ষণ পর এই প্রবাসে পরিচিত হওয়া ক্ষণিকের বন্ধুকেও বিদায় দিয়ে আমার জন্য নির্ধারিত চেক-ইন পয়েন্টে আসলাম, নিজে আর হ্যান্ড লাগেজ সবকিছু সিকিউরিটি চেকের পর (সিকিউরিটি চেকের ব্যাপকতা সম্পর্কে কিছু নাই বললাম কারন এরপর..) বড় যে রুমটায় অনেকের সাথে এসে যেখানে বসলাম, সেখানে থেকে ফ্লাইটটা নিউইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে যায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

প্লেনের ভেতরে দেশী ভাইদের এটিকেট নিয়ে কিছু বলুন।
তাদের আচারআচরণ কেমন জানার ইচ্ছে হচ্ছে।

১৩ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৪৭

একান্ত নিনাদ বলেছেন: ধন্যবাদ সাজ্জাদ ভাই, কমেন্টের জন্য।
এটিকেট খেয়াল করার মতো মানুষিক অবস্থায় ছিলাম না আসলে। অন্যরকম কিছু মনে হয়নি, কারন আমিও যে স্বদেশী :)

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: প্লেনে জানালার পাশে সিট পাওয়া আহামরি কিছু না। তবে অনেকে জানালার পাশে সিট পছন্দ করেন।

১৩ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৫০

একান্ত নিনাদ বলেছেন: রাজীব ভাই, ভালো আছেন? আপনার লিখা আমার অনেক ভালো লাগে। অনেকি। প্লিজ লিখে যান।
জানালার পাশের সিটের ব্যাপারটা এম্নি লিখেছি, ব্যপকতার অর্থে না। ঐ মুহূর্তে কোনো কিছুই স্পর্শ করছিলোনা হয়তো এরকমই কিছু বুঝাতে চেয়েছি। ভালো থাকবেন ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.