নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

একান্ত নিনাদ

বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।

একান্ত নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেট ক্রিকেট!

০৭ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩১

তখন আমার হাফপ্যান্ট পরার বয়স। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অ্যাকশন প্র্যাকটিস করতাম, ঠিক এভাবে বলটা ছুঁড়তে হবে! আমাদের শোবার ঘর আর ডাইনিং রুমের মাঝের একরত্তি জায়গাটা ছিল আমার রানআপের জায়গা। দিনমান কেটে যেত এভাবে। বিশেষ করে যখন বাসায় কেউ থাকতো না। খুব জোরে বল বা ব্যাট চালানো যাবে না, জানালার গ্লাস যদি ভেঙে যায়!

তখন টিভি বলতে চিনতাম শুধু বিটিভি। ঈদের সময় ইত্যাদি, আনন্দমেলা, শুক্রবার দুপুরে হতো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। তখন আমার বাসায় আসতো ভোরের কাগজ। বুঁদ হয়ে পড়তাম টেন্ডুলকার, লারাদের জাদুকরী সব ইনিংসের কথা। ওই যে, সাদাকালো ছবিতে ব্যাটটা উঁচিয়ে আছে টেন্ডুলকার! আমাকে আকর্ষণ করতো সাউথ আফ্রিকার সাদা বিদ্যুৎ খ্যাত আলান ডোনাল্ড। মুখে আর ঠোটে ওর মতো ক্রিম লাগিয়ে (ও ব্যবহার করতো সানস্ক্রিন, আমি হয়তো আম্মুর কোনো নিভিয়া ক্রিম) নিজেকে দেখতাম আয়নায়। আমাকে কি ওর মতোই ভয়ঙ্কর লাগে আয়নায়?

এমন সময় পড়লাম মালয়েশিয়ায় কিলাত ক্লাব মাঠে আইসিসি ট্রফি হচ্ছে। সেটাতে ফাইনালে উঠলে নাকি বিশ্বকাপে খেলবে। বিশ্বকাপ! তখনো মাত্র জয়াসুরিয়া, কালুভিতারানাদের স্মৃতি চোখে লেগে আছে। সে কি ধুন্দুমার মার! সেই টেন্ডুলকার স্টামড হয়ে গেল জয়াসুরিয়ার বলে। আর রিচি রিচার্ডসনের শট তো আম্পায়ারের কানটাই ফাটিয়ে দিয়েছিল। সেই বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ! পেপারে-টেপারে কী লিখেছিল এখন আর অতশত মন নেই। হঠাৎ একদিন ছোটমামা এসে পড়ল, বাংলাদেশ হল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছে। এই ম্যাচটা জিতলেই নাকি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আকাশটায় বাংলাদেশের ফ্ল্যাগটা দেখতে কেমন হয় আমার ভাবনার জগতটা তখনও এতো বড় হয়নি।

এমন সময় একদিন হঠাৎ ছুটি হয়ে গেল স্কুল। সাধারন বিজ্ঞান স্যার এসে বললেন, বাংলাদেশ স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে। তার মানে বিশ্বকাপ! আকরাম, বুলবুলদের একনামেই যানতো সবাই রেডিওর ধারা বর্ণনার কল্যাণে। আর ছিল পেপারের খেলার খবর। বিশ্বকাপে ওঠার আনন্দে আমরা একটা আস্ত কাঠের বল কিনে ফেলি স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে। এর আগে আব্বু একটা নতুন ব্যাটো কিনে দিয়েছিল। সেদিন থেকে আর আমরা কেউ লারা-টেন্ডুলকার বা ডোনাল্ড নই, সবাই আকরাম, বুলবুল আর শান্ত।

ফাইনাল কেনিয়ার সাথে। সকাল সকাল আমরা রেডিওর সামনে রেডি। সেখান থেকে গমগম করা উত্তেজনাকর শরাফত উল্লাহ'র ধারাভাষ্য শুনছিলাম। বুঝতে পারছিলাম, কেনিয়ার ওদুম্বে-টিকোলো নামের দুইজন বেদম পিটুনি দিচ্ছে। আমাদের সবার একটু মন খারাপ হলো। আইসিসি ট্রফির ফাইনালটা কি আমাদের আর জেতা হবে না?

পরদিন শুনি বৃষ্টির পরে খেলা আবার শুরু হয়েছে। আবার রেডিওতে কান লাগিয়ে উৎকর্ন হয়ে অপেক্ষা। এবার টার্গেট ছোট, ওভারও অবশ্য কম। কিন্তু সেদিনটা আসলে আমাদেরই ছিল। একেকটা চার হয়, আর আমরা উল্লাসে ফেটে পড়িতে থাকি। শুরুর দিকে এসে আম্মু মুখ ঝামটা দিয়ে যাচ্ছিলেন, ক্রিকেট ক্রিকেট করে বাপছেলে সব বরবাদ হয়ে গেল। একটু পর দেখি, আম্মা নিজেই এসে বলছেন, ভলিউমটা বাড়িয়ে দে, রান্না করতে করতে শুনব। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি।

খেলা তখন শেষের দিকে। ধারাভাষ্যকার বারবার বলছেন, ম্যাচে টানটান উত্তেজনা। হঠাৎ চিৎকার, ছক্কা! পাইলট নাকি বল সীমানার ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছে। আনন্দ, রোমাঞ্চের অদ্ভুত এক অনুভূতিতে আমি কাঁপতে থাকি। চলে আসে শেষ বল। এক বলে তখন দরকার এক রান। আমরা সবাই থরোথরো করে কাঁপছি। সবার শুধু দেহটা দেশে, মন ওই কিলাত ক্লাব মাঠে। জিতে গেছি, হঠাৎ চিৎকার। আমার কেমন জানি বিশ্বাস হতে চায় না! আমরা টুর্নামেন্ট জিতে গেছি? আসলেই?
তারপর দিন স্কুল থেকে ফিরার সময় কে জানি এসে আমাকে রঙ মাখিয়ে দেয়। জীবনে সেই প্রথমবার রঙ লাগে গায়ে। ক্রিকেট এরপর অবশ্য আরও অনেক অনেকবার আমাদের মনে রঙ লাগিয়েছে।

সেই শুরু। এরপর আরও কতোশতো স্মৃতি। বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। বিশ্বকাপের আগে সে কী প্রতীক্ষা। সারাদিন বসে থাকতাম, কখন বিটিভিতে শুভ্রদেবের গুডলাক বাংলাদেশ গানটা দেখাবে। “পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমার ঢেউ বিশ্ব দেখুক... যাত্রা শুভ হোক”... হুনহুন করে গাইতে গাইতে কী যে দারুণ একটা অনুভূতি হতো। তখন আরেকটু ক্রিকেটের খবর জানতে শুরু করেছি।

চলে আসল বিশ্বকাপ। একেকটা রানও তখন আমাদের কাছে কত মহার্ঘ্য ! মাঝে মাঝে আবার নান্নুর ব্যাটের কানায় লেগে চার হয়ে যায়। সেসব অবশ্য আমরা টিভিতেই দেখতে পাচ্ছিলাম। ওই যে শান্ত আর পাইলট। এর মধ্যেই আবার হারিয়ে দিল স্কটল্যান্ডকে। এরপর পাকিস্তানকেও হারানো, উরেব্বাস! মনে আছে পুরো বাংলাদেশ উত্তেজনায় কাঁপছিল তখন।

দুঃখও কী কম পেয়েছিলাম? ঈদের আগের দিন, আয়েশ করে বসলাম টাইগারদের জয় দেখবো বলে। ওমা, কোথাকার কোন কানাডা এসে হারিয়ে দিয়ে গেল। সেবারের মতো কষ্টের আর পানসে ঈদ আজ অবধি কাটাইনি। পুরো ঈদটাই যেন মাটি হয়ে গিয়েছিল।

কান্না ? সেটাও দিয়েছে। এশিয়া কাপের সেই ফাইনালের কথা কি সারাজীবনেও ভোলা যাবে? মাঠে কাঁদছিল সাকিব, মুশফিকরা, আর তাদের সাথে কেঁদেছিলাম আমরা পুরোদেশ।

স্বপ্ন যেখানে দেখার সুযোগ, সেখানে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা থাকবেই। আনন্দের সাথে গলাগলি করে থাকবে বেদনারা। প্রাপ্তির সাথে থাকবে হতাশা, বঞ্চনা। ক্রিকেট ছাড়া এতসব অনুভূতির সাথে আমাদের আর কে একাত্ম করেছে? ভাবতে অবাক লাগে, একসময় একটা জয়ের অপেক্ষায় আমরা বসে থাকতাম দিনের পর দিন, এখন সেই জয় কতো অনায়াসেই না আসে। ভাবা যায়?একসময় টানা পাঁচ বছর আমরা একটা ম্যাচও জিতিনি! একসময় একটা জয় পেলে টিএসসি ছুটে যেত সবাই, এখন সিরিজ জিতলেও তেমন কোনো উৎসব হয়না। কে জানে, বিশ্বকাপটা একবার আমরা জিতলেই হয়তো!

আমাদের প্রজন্মটা অনেক কারণে ভাগ্যবান। আমরা টেন্ডুলকার-লারাদের স্বর্ণযুগ দেখেছি, দেখেছি ম্যাকগ্রা, ওয়াসিম-ওয়াকার, ওয়ার্ন, ডোনাল্ডদের। সবার পরেও ব্যাঘ্রশাবকদের যে বেড়ে ওঠাটা চোখের সামনের দেখেছি, সেটাকেই আমি এই প্রজন্মের পরম পাওয়া বলব।

দিনশেষে ক্রিকেটেইতো আমরা একটু খানি শান্তি খুঁজি!




মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯

কলাবাগান১ বলেছেন: দিনশেষে ক্রিকেটেইতো আমরা একটু খানি শান্তি খুঁজি!

২| ০৭ ই জুন, ২০১৯ রাত ১১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই পোষ্ট অতীতের অনেক কথা মনে করিয়ে দিল।

৩| ০৮ ই জুন, ২০১৯ রাত ১১:৩৫

একান্ত নিনাদ বলেছেন: আশা করি সুন্দর অতীত ছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.