নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

একান্ত নিনাদ

বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।

একান্ত নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

৪১ দিন

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:০৬

দেয়ার ইজ অ্যা সেয়িং। ইফ উই ক্যুড স্টপ দ্যা ওয়াচ অফ আওয়ার লাইফ।
মানুষ কি কি কারনে জীবনের ঘড়িটাকে বন্ধ করে রাখতে চায়? বিভিন্ন কারনে চাইতে পারে, কেউ সুন্দর মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখতে, কেউ ব্যাস্ততার খাতাটাকে একটু পাশে ফেলে একটু নিজের জন্য সময় বের করতে, কেউ হয়তোবা এক্সাম ডেটটাকে আরেকটু দূরের ভাবতে,কেউবা আমার মতোই সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে, কোনোই কিছু না করে, শুধুই ভাবতে। আমি কি চেয়েছিলাম, ঠিক জানিনা।
মনে পড়ে তখন বোধহয় ক্লাস টুতে পড়ি। আব্বুর একজন কলিগ আমার ভাইয়াকে পড়াতে আসতো।রেজাউল স্যার। আমি গিয়ে পাশে বসে থাকতাম পড়ানোর সময় দেখে আমাকে টুকটাক আস্যাইনমেন্ট দিতেন উনি। হয়তো ভাবতেন আমি ওনার কাছে পড়া বা পড়ানো দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে সেখানে যেতাম। আমি আসলে গিয়ে বসে থাকতাম ওনার হাতে থাকা ক্যাল্কুলেটর ওয়ালা ক্যাসিও ঘড়িটার দিকে একপলক তাকিয়ে বসে থাকতে। কি ছিল সেই বিস্বয় এখন আর মনে পড়েনা, এর বিনিময়ে উনি যা লিখতে বলতো লিখে দিতাম, পড়তে বলতো পড়তামও। একদিন কিভাবে যেন মুখ ফুটে ওনাকে বলেও ফেললাম, আমাকে আপনার মতো একটা ঘড়ি এনে দিবেন?কি বুঝলেন উনি, জানিনা, উত্তর দিলেন, কালকেই এনে দিবেন। এখন যখন ভাবি, কিভাবে আমি অই বয়সে, একজনের কাছে এভাবে চাইতে পারলাম, যার প্রতি আমার তেমন অধিকারই নেই।সত্যি এতোগুলো বছর পরে মনে আসলে খুব লজ্জাই লাগে।
তো পরের দিন সন্ধ্যা বেলার জন্য অপেক্ষায় থেকে সময় আমার আর কাটেনা। স্যার আসলেন, যথা রীতি পড়াতে বসলেন আর সব ভুলে উনি নাস্তা করে যখন চলে যাবেন আমি ওনার সাথে দরজা পর্যন্ত যেয়ে জীবনের আরেকবার লজ্জার মাথা খেয়ে সম্পর্কর মাথা খেয়ে সরাসরি জিজ্ঞ্যাসা করলাম, স্যার আমার ঘড়ি আনেন নাই? উনি বোধহয় খুবই বিব্রত হয়েছিলেন সেদিন, ভদ্রলোক আসলে সেভাবে মনেও রাখেননি, অথবা সিরিয়াসলিও নেননি যে আমি বেহায়ার মতো অপেক্ষা করবো।উনি আনেনি সেদিন।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, হয়তোবা লজ্জায়, হয়তোবা না পাওয়ায়।পরের দিন আর ওনার সামনেও যাইনি। যে খাতাটায় উনি এক বা দুই পেইজের হোমওয়ার্ক দিতেন, মনের দুঃক্ষে কি ভেবে সারাদিন বসে পুরো খাতা হোমওয়ার্ক করে ফেললাম।কিন্তু ওনার কাছে আমি আর যাবোনা।
রাত নয়টার দিকে সম্ভবঃত উনি পড়ানো শেষ করে যাবার আগে আমাকে ডেকে আমার হাতে নূতন একটা ছোটদের ক্যাসিও ঘড়ি এনে দিলেন। স্বাভাবিক ভাবে, ওই ঘড়িতে ক্যালকুলেটর ছিলনা। সেই কি খুশি আমার।দৌড়ে আম্মুকে গিয়ে দেখালাম তখন।আম্মু একটু রাগই করলো কেনো ওনার কাছে চেয়ে ঘড়িটা নিয়েছিলাম। তখন আরেকবারের মতো মনটা খারাপ হলো, এবার ঘড়িটা পাবার পরেও।কেনো জানি মনে হতে লাগলো আম্মু যদি কালকে স্যারকে ডেকে ঘড়িটা দিয়ে দেয়? কিন্তু আমি যে চাইনা দিতে। কতো কতো দিন আনমনে এই রকম একটা ঘড়ি কল্পনা করেছি। খুব ভেবে বের করলাম, এই ঘড়ি আমি দিবনা, লুকিয়ে রাখবো। কিন্তু কোথায় লুকাবো? আমার যে একান্ত নিজের বা লুকোনো কোনো জায়গাই নেই।কি ভেবে যে বিছানার যে বালিশে শুয়ে আমি ঘুমাবো, সেই বালিশেরই কভার এর ভিতর রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। এক্টু বেলা যখন হলো, ঘুম ভাঙলো। সুন্দর বা সুখের কোনো স্বপ্নই বোধহয় দেখেছিলাম সেই রাতে। ঘুম ভাঙা চোখে প্রথম বালিশের কভারের মাঝেই হাতটা দিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম, একটু স্পর্শ করতে যাচ্ছিলাম,
অদ্ভুত কি, যে বালিশে আমি শুয়েছিলাম, উঠে দেখি, সেই বালিশে কোনো কভারই নেই। উঠে আম্মুকে যেয়ে জিজ্ঞ্যাসা করলাম, আম্মু বললো, আমার ঘুমের মাঝেই কভারগুলো খুলে গরম পানি দিয়ে ধুতেঁ দেয়া হয়েছে।জানিনা কেমন লেগেছিল ঠিক তখন, কাঁদতে কাঁদতে যখন আম্মুকে খুলে বললাম, আম্মু তখন ওই কভারগুলোর একটার মাঝে আমার সেই ঘড়িটা খুজে পেলো।গরম পানিতে সিদ্ধই হয়ে গেছে আমার সেই একরাতের ঘড়ি ততক্ষণে। আসলে, আম্মু কখনো বলেওনি, সেই ঘড়ি আমার কাছে থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। আর আম্মু জানতোও না আমি ওই ভাবে রেখেছি।
খুব নাকি কতো টুকু কেঁদেছিলাম আসলেও মনে পড়েনা সেইদিন। আমি আর রেজাউল স্যারের সামনে গেলাম না।বোধহয় উনি জানতে পেরেছিলেন, আমাকে ডেকে পরদিন বললেন, আরেকটা ঘড়ি এনে দেয়া হবে। আমি শুধু বলেছিলাম, আমি আর চাই না। আর সত্যিই আমি নেইনি অই রকম বা কোনো ঘড়ি - ওনার থেকে বা আব্বু আম্মুর থেকেও। আমি যে আসলেই আর চাইনি।
অনেক বছর পরে একবার কাওরান বাজার দিয়ে বন্ধু আতিকের সাথে হেঁটে কোথাও জাচ্ছিলাম,ঠিক অই রকম কিন্তু বড়দের একটা ঘড়ি দেখলাম ফুটপাতের একজন বিক্রি করছে। অনেক অনেক দিন পরে ছোটো বেলার কথা মনে পড়ে গেল, কতো দিয়ে জানি কিনলামও। যাই হোক, সেই সস্তা ঘড়িটাও এখন আমার কাছে আর নেই।
কেনো এতো ঘড়ি ঘড়ি করছি। আসলে সময়। মাঝে আমার জীবনের বড় বেলার সবচেয়ে অস্বস্তিকর ৪১টা দিন পার করলাম। আল্লাহ রহমান। উনি সব কিছু অনেক দীর্ঘ করতে পারেন, সহজও করতে পারেন। এই সময়টায় আমি অনেক কিছু নতুন করে শিখলাম, জানলাম। এখনো আমি যাদেরকে চিনতাম কিন্তু আসলে আমার অচেনা মানুষগুলোর কাছে চেয়ে ফেলি অনেক কিছু বেহায়ার মতো। আমার কিছু বিশ্বাস ভাঙলাম, কিছু জানলাম।জীবনের সব কিছু আমাদের জীবনে অনেক দরকার। ঘড়িটার কথা যেমন এতোগুলো বছর পরে লিখতে ইচ্ছে হলো, হয়তো বেঁচে থাকলে এই ৪১ দিনের কথাও কোনো একদিন লিখতে ইচ্ছা হবে। নাও হতে পারে, কিন্তু এই দিনগুলো কখনো আমার কাছে থেকে ঘড়ির মতো চলে যাবেনা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


বড় বেলার ৪১ দিন, কোন দিনগুলো?

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৯

একান্ত নিনাদ বলেছেন: জানাবো হয়তো কোনো একদিন চাঁদ ভাই।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৩:১৭

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: সময় কখনো ফিরে আসে না
.......................................................
নষ্টালজিয়া আপনার বোধহয় অতিপ্রিয় ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৫

একান্ত নিনাদ বলেছেন: ভাইয়া, যখন বর্তমানের মাঝে কোনো কিছু খুঁজে পাইনা, তখন অতীতের থেকে খুঁজি..
থ্যাংক ইউ আপনার কমেন্টের জন্য।

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: অভিজ্ঞতা মানুষের অনেক বড় সম্পদ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৮

একান্ত নিনাদ বলেছেন: এই জীবনটাই আসলে একটা সম্পদ রাজীব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.