নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

একান্ত নিনাদ

বাংলাদেশে জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য। রিটায়র্ড বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন ছেলের মাঝে দ্বিতীয়। বাবার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির কারনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখার সুযোগ হয়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি, বর্তমানে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের টেকসাস অঙ্গরাজ্যের হিউসটন শহরে বসবাস। ভালো লাগে বেড়াতে, ছবি তুলতে, পড়তে, ভাবতে, লিখতে।

একান্ত নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“অ্যামেরিকার স্বপ্ন”-এর নতুন রূপ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪

“অ্যামেরিকান ড্রিম” নামে একটি ধারণার প্রচলন রয়েছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মোটামুটি সারা বিশ্বের মানুষই শুনে থাকবেন এরই মধ্যে। কিন্তু কি এই অ্যামেরিকান ড্রিম বা অ্যামেরিকার স্বপ্ন? এর মানে কি কোনো ভাবে শুধু অ্যামেরিকা নামের দেশটিতে যেতে পারা? যেয়ে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট বা সিটিজেন হওয়া? নাকি স্বপ্নের এই দেশটিতে এসে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভালো চাকরি করা? নাকি এই দেশে আছে অপার কোনো প্রাচুর্য, যা যে কাউকেই ধরা দেয়? অনেকের অনেক দ্বিধা থাকতে পারে এই অ্যামেরিকান ড্রিম ব্যপারটা নিয়ে, তাই হয়তো অনেকেই একে নিজেদের মতো করে সংজ্ঞায়িত করতে চেষ্টা করেছেন। এদেরই মধ্যে একদল মানুষ মনে করেন, অ্যামেরিকান ড্রিম আসলে একটা বিশ্বাস, যেখানে ধরা হয়, আমেরিকার যে যেখানেই থাকুক না কেন, যে শ্রেণী বা পরিবারেই তারা বেড়ে উঠুক না কেন, তাঁরা চাইলে তাদের নিজেদের মতো করে সফলতা অর্জন করতে পারে। আর এই সাফল্য তাদেরই আসবে, যারা পরিশ্রম করেন, রিস্ক নেন আর স্যাক্রিফাইস করেন সুযোগ এর আশায় না বসে থেকে।
অ্যামেরিকান ড্রিম টার্মটি প্রথম জেমস ট্রসলো অ্যাডামস নামের এক ভদ্রলোক ১৯৩১ সালে তার বেস্ট সেলিং বই “এপিক অফ অ্যামেরিকা” তে প্রথম আনেন। যেখানে তিনি এমন একটা ভূখণ্ড-এর স্বপ্ন দেখেন যেখানে উন্নত জীবন থাকবে, সবাই সাচ্ছন্দে জীবনযাপন করবে, আর সবাই সুযোগ পাবেন যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী নিজের ভাগ্য উন্নয়নের। ট্র্যাডিশনাল ধরানার এই অ্যামেরিকান ড্রিম কন্সেপ্টে আশাই করা হয় সবার মোটামুটি একটা ভালো বাসস্থান থাকবে, নিজস্ব গাড়ি থাকবে, এবং গ্রাজুয়েশন বা কলেজ ডিগ্রী নেয়ার পর সবাই একটি ভালো চাকরিতে থাকবেন যা তাকে সেটেল্ড একটা জীবন পেতে সাহায্য করবে। লেখকের এই আশাবাদের সাথে অ্যামেরিকানরা একমত হয়েছিলেন, কারন তিনি যেই ভূখণ্ডটির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আসলে খুব অসম্ভব কিছুইনা, বরং আমরা মানুষ হিসেবে এসব কিছুই মৌলিক চাহিদা যে কারো থাকতেই পারে। তার স্বপ্ন আরও বাস্তব মনে হয়েছিল কারন, অ্যামেরিকানরা বিশ্বাস করতো জাতীয়তা যার যাই হোক, সবাই এই দেশটির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে, কারন তারা জাতিগত ভাবে অনেক আগে থেকেই ফ্রি মার্কেট ইকোনমিতে আস্থাশীল, ট্রেড এগ্রিমেন্ট ও বিদেশী বিনিয়োগ কে তারা সবসময়ই স্বাগত জানাতো আর তথ্য ও সংস্কৃতি-এর আদান প্রদানে তারা সবচেয়ে উদার। সর্বপরি একটি বিশেষ জায়গায় অ্যামেরিকান রা সবসময়ই একমত হয় - যেখানে তাদের সরকার ও প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ গুলোর স্বার্থ জড়িত।
এই ছিল ট্র্যাডিশনাল কন্সেপ্টের অ্যামেরিকান ড্রিম। আজকের যারা অ্যামেরিকান তাদের কাছে এই স্বপ্নটা একটু অন্যরকম। ট্র্যাডিশনালদের পরে বেশ কয়টি জেনারেশন আসে, যেমন বেবি বুমারস, জেনারেশন এক্স, মিলেনিয়ালস, জেনারেশন জি। আজকের অ্যামেরিকান বলতে আমি এখানে মিলেনিয়ালস আর জেনারেশন জি-দের কে বুঝাচ্ছি। জানানোর জন্য মাত্র, মিলেনিয়ালস হচ্ছে যাদের জন্ম ১৯৮০ থেকে ১৯৯৬ এর মধ্যে আর জেনারেশন জি বলতে যাদের জন্ম তারও পরবর্তি সময়ে। তো এখনকার অ্যামেরিকানরা তেমন আর এই সাদা ফেন্সদেয়া বিশাল জায়গা নিয়ে বাড়ি চায়না। তারা এই বাড়ির মালিকানা এমনকি বিয়ে করা কেও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় এনে দায়বদ্ধতা মনে করে। যদিও আর সব প্রজন্মের মধ্যে এই মিলেনিয়ালসদেরকে সবচেয়ে শিক্ষিত প্রজন্ম হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা এদের কাছে সবচেয়ে খরুচে বিনিয়োগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এর কারন একটাই পাস হয়ে বের হতে হতে তাদের যতটাকা স্টুডেন্ট লোণ হয়ে দাঁড়ায়, বেশির ভাগ সময়ই তারা সেই লোণ পরিশোধ করে নিজের আনুষঙ্গিক খরচের পর সাচ্ছন্দে চলার মতো জীবন দিবে এমন ভালো চাকরি পায়না। তাই তারা জীবনের এক সময়ে বড়বাসা, বিলাসী গাড়ি, সন্তান-সন্তুতি এসবের চেয়ে নিজের একান্ত ছোটোখাটো শখ পূরণ করতে পারা কেই অ্যামেরিকান ড্রিম হিসেবে ধরে নেয়। আর তাদের ৯টা-৫টা হোয়াইট কলার জব যেহেতু অনেক কিছুর জন্যই পর্যাপ্ত না, তারা এখন অনেকেই রেগুলার জবের চেয়ে ফ্রিল্যান্সিং বা কনসাল্টিং-এ আগ্রহী হয়ে উঠছে। চাকরির চেয়ে তারা তাদের অনলাইন বিজনেসটাকে নিয়েই বেশি আশাবাদী। আর যারা চাকরিও করছে, তারা চায় ফ্লেক্সিবল আওয়ার বা টেলিকমিউটিং সুবিধা। তারা মনে করছে, নিজেই নিজের মতো কাজের শিডিউল বেছে নেয়ার সুযোগ/ স্বাধীনতা তাদেরকে নিজের লাইফস্টাইল বা পছন্দের জিনিসগুলোর জন্য একটু সময় বের করার সুযোগ করে দেয়।
এই প্রজন্মের কাছে অ্যামেরিকান ড্রিমের আরেকটা মাপকাঠি রয়েছে, যা হচ্ছে আর্থিক স্বাধীনতা। এমনকি নতুন একটা মুভমেন্টের কথাও হয়তো আপনি এরই মধ্যে শুনে থাকবেন, “ফাইনেন্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড রিটায়ার আর্লি”, সংক্ষেপে ফায়ার। যার মূল ধারনা হচ্ছে, জীবনকে এমনভাবে ডাউনসাইজ (সংক্ষেপিত) করা যাতে তা কোনো ভাবেই খরুচে না হয়ে দাঁড়ায়, আগ্রাসীভাবে সঞ্চয় করা আর একি সাথে সেই অর্থ বিনিয়োগ করা, সব দায় (ডেবট) পে-অফ করা, নিজের এমন কিছু স্কিল বের করা বা গড়ে তোলা যাতে করে ট্র্যাডিশনাল ডিগ্রি নির্ভর হয়ে বাকি জীবন না চলতে হয়।
এসব ছেলে মেয়েদের সবারই নিজস্ব আপ্রোচ রয়েছে কিন্তু এই “ফায়ার” মুভমেন্ট এর মূল ধারনা হচ্ছে জীবনের কয়টা বছর কষ্ট করে চলা, সঞ্চয় আর বিনিয়োগ করা আর যত দ্রুত সম্ভব রিট্যায়ার করা। আর সর্বপরি পরবর্তী সময়টা নিজেকে খুশি রাখে এমন কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা – সেটা হতে পারে কোনো সেচ্ছাশ্রম (ভলান্টিয়ারিং) বা ট্র্যাভেল বা নিজের প্রিয় মানুষগুলোর সাথে টাইম স্পেন্ড করা।
তারা জীবনের এক পর্যায়ে এসে তীব্রভাবে জানার চেষ্টা করে, কোন জিনিসগুলো তার কাছে অর্থপূর্ণ আর গুরুত্ববহন করে। তারা বোঝার চেষ্টা করে তাদের জীবনের মুল্যবোধ আর লক্ষ্য। এরা ঋণখেলাপি হওয়াকে তেমন আর বুদ্ধিমানের মতো কিছু মনে করেনা বরং তারা বেশি ইন্টারেস্ট বেয়ারিং লোণটাকে আগে পরিশোধ করার প্ল্যান করে। ঋণমুক্তির পাশাপাশি তাদের সাধ্য অনুযায়ী সেইভ করে সেই টুকু অর্থ কোথাও বিনিয়োগ করতে চেষ্টা করে। নতুন যুগের অ্যামেরিকান সন্তানেরা স্মার্ট স্পেন্ডিং-এর ব্যপারে সচেতন।এদের মধ্যে যারা বাড়ি বা গাড়িও কিনে তাদের প্রথমত তারা তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দামি কিছু কিনতে চায়না, যতটুকুই কিনে, চেষ্টা করে ব্যাংক ইন্টারেস্ট না দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী নিজের সঞ্চয়করা অর্থ দিয়ে কিনতে।
পরিশেষে, অ্যামেরিকা নামের দেশটাতে যেমন খুবই ডাইভারসিটি রয়েছে, এই অ্যামেরিকান ড্রিমটাও তেমনি আজকের অ্যামেরিকানদের কাছে নানারূপ অর্থ বহন করে। তারা এমনি একটি জীবন চায় যা তারা উপভোগ করে। সেই জীবনে বাড়িই থাকুক আর ছোট্ট কোনো এপার্টমেন্টই থাকুক।
এই লিখাটি আমার-এর আগের লিখাটির ধারাবাহিকতা হিসেবে ধরা যেতে পারে। ধীরে ধীরে আমরা আরও ভিতরে যাওয়ার চেষ্টাই করবো।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১১

শোভন শামস বলেছেন: অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ, লিখে চলুন

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:২৯

একান্ত নিনাদ বলেছেন: ইনশাআল্লাহ, ইচ্ছা আছে।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমেরিকান মধ্যবিত্তের প্রকৃত আয় নাকি গত ৩০ বছর একই জায়গাতে আছে। ওখানে গড়ে মাথা পিছু দুইটা ক্রেডিট কার্ড। এখন হয় তো পরিস্থিতির কারণে অনেকে সঞ্চয়ের দিকে ঝুকছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে অ্যামেরিকার অর্থনীতি প্রচণ্ডভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। এই ধারা এর পরের কয়েক দশক ক্রমাগতভাবে চলে। ১৯৮৫ বা ১৯৯০ এর পরে বিভিন্ন নীতির কারণে মানুফাকছারিং খাতগুলি বাইরে চলে যায়। অ্যামেরিকার অনেক ছাত্র/ছাত্রি নিজেদের উদাসিনতার/ প্যাশনের জন্য এমন সব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয় যার ফলে তাদের অনেকে স্টুডেন্ট ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খায়।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২০

জাহিদ হাসান বলেছেন: আমার কবিতার একটি অপ্রকাশিত বই আছে। আমেরিকান স্বপ্ন। এই নামে। ব্লগে এই বইয়ের কবিতাগুলি প্রকাশ করছি। পড়েছেন তো?

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: এখন মানুষ আমেরিকা কম যেতে চায়। এখন যেতে চায় কানাডা।

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৪৭

সেনসেই বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ। পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষাই থাকলাম।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:২৬

একান্ত নিনাদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, সত্যি উৎসাহ পেলাম।

৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০৬

জাহিদ হাসান বলেছেন: রাজীব নুর বলেছেন: এখন মানুষ আমেরিকা কম যেতে চায়। এখন যেতে চায় কানাডা।


আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা দুইটা একই রকম। পরিবেশ, আবহাওয়া, স্থাপত্যশৈলী। দুইটা উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পড়ছে তো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.