নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনার জাগরণ নতুন দিনের বিষ্ফোরণ। আমরা গড়ব নতুন ভূবন, নতুন আশা মনে। এই কথাটির প্রতিধ্বনী বাজুক জনে জনে।

সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।

› বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাভাষার শব্দ পরিবর্তনের ধারা

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:২২


বাংলাভাষার শব্দ পরিবর্তনের ধারা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

এদেশের ৯৯.৫০ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এখানকার মানুষ দ্বিভাষায় কথা বলে। যেমন সাধভাষার সাথে ও চলিত ভাষার ব্যাপক মিশ্রণ। অনেক সংবাদপত্রে এখনো চালু রয়েছে সাধুভাষা ইত্তেফাক এবং যুগান্তরের সম্পাদীয় এখনো সাধুভাষায় লেখা হয়।

বিদেশী শব্দের ব্যবহারের সাথে, আঞ্চলিক ও নতুন শব্দের ব্যবহার হরদম চলছে। অনেক পুরনো একটা হিসেব অনুযায়ীঅ বাংলা ভাষায় তদ্ভব শব্দ: ৫১.৪৫%, তৎসম শব্দ: ৪৪.০০%, আরবি-ফারসি: ৩.৩০%, ইংরেজি-পর্তুগিজ : ১.২৫% জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গলাভাষার অভিধান থেকে এ পরিসংখ্যান করেছিলেন সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়।

ততকালীন সময়ে এ অভিধানে দেড় লক্ষ বাংলা শব্দ থেকে এ জরিপটি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষা ও এর নানা উপভাষা নিয়ে এসব এসব ভাষার শব্দের বিভিন্ন রুপ এলাকাভিত্তক ভিন্ন ভিন্ন নাম সব ধরনের শব্দ সংখ্যাও এর চেয়ে অনেক বেশি হবে এবং আরবি ও ইংরেজি শব্দের পরিমাণ বর্তমানে কয়েকগুন বেড়ে গেছে। বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান (১৯৯২) গ্রন্থে শব্দসংখ্যা ছিল ১৭,৭৫৮টি। এর মাত্র তিন বছর পর ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে যখন একই অভিধানের নতুন সংস্করণ বের হয়, তখন শব্দ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯,৮৫২।
যেমন : অবমুক্তি, বোরহানি, অর্থায়ন, আত্তীকরণ, উপগ্রহ, উপনির্বাচন, কূলখানি, গ্যান্জাম, জোটনিরপেক্ষ, দূতাবাস, নির্বাহী, প্রজন্ম, যানজট, শিল্পোদ্যোগ ।

এতে কী দাঁড়ায়, মাত্র তিন বছরে শব্দ বেড়ে গেছে প্রায় দুই হাজার। বাস্তবে এর চেয়ে বেশী শব্দ যুক্ত হচ্ছে। একদিকে নতুন নতুন ব্যবহার্য জিনিস আমদানী হওয়ার কারনে নতুন শব্দ যুক্ত হচ্ছে আবার অন্যদিকে বিদেশী শব্দ ব্যবহারের যে প্রবণতা তার কারনেও প্রতিনিয়ত অনেক শব্দ যুক্ত হচ্ছে। যদি আমরা ধরে নিই যে তিন ১০০০ দিনে ২০০০ শব্দ যুক্ত হয়েছে। তাহলে প্রতিদিন ২টা করে শব্দ বাংলায় প্রবেশ করছে। ১০/২০ কিংবা ৫০/১০০ বছর পর এই পরিণতি কি হবে তা ভাববার বিষয় রয়েছে।
এছাড়া কিছু শব্দ কিন্তু বিদেশীভাষা থেকে আসেনি এগুলো নতুন ব্যবহারিক কারণে বাংলা শব্দসম্ভারে যুক্ত হচ্ছে। আবার কিছু শব্দ রয়েছে এসব শব্দের বিকল্প বাংলা ভাষায় ছিল, কিন্তু নতুন অর্থে শব্দ যুক্ত হচ্ছে যেমন

নতুন শব্দ পূর্বের শব্দ


১. পরিচ্ছন্নতাকর্মী : সুইপার
২. নাট্যজন : নাট্যকার
৩. বাকশিল্পী : আবৃত্তিকার
৪. কলমবন্ধু : কলামনিস্ট/কলামিস্ট
৫. বয়ান : ভাষণ
৬. ধোলাই : উত্তম-মধ্যম
৭. সংসদ সদস্য: সাংসদ
৮. আবাল: বেকুব বা বোকা
৯। মোবাইল: মুঠোফোন
১০। ফ্রিজ: ঠান্ডা আলমারি

ছোটো হয়ে যাচ্ছে অনেক শব্দ :

পূর্বের শব্দ বর্তমানে ব্যবহৃত
খাবার জিনিস : খাবার
ক্ষুদ্র শস্য : খুদ

অনেকে মনে করেন শব্দের ব্যবহাওে নারীদেও মর্যাদাহানি হয় তাই তারা কিছু তিছু শব্দের ব্যাপাওে আপত্তি তোলেন সেগুলো আজকাল পরিবর্তন হচ্চে।
পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ বর্তমানে ব্যবহৃত শব্দ

মহিলা : নারী
ছাত্রী : শিক্ষার্থী
শিক্ষিকা : শিক্ষক
মহিলা কবি : কবি
অধ্যাপিকা : অধ্যাপক
বখাটে ছেলে : বখাটে
ধর্ষিতা : আহত
নেত্রী : নেতা
কেলেঙ্কারি : অপ্রীতিকর

গত একশ বছওে বেশকিছু শব্দের অর্থেও ব্যবহার বদলে গেছে এবং প্রতিনিয়ত ঘটেেছ।
অর্থ পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেক শব্দের :

মূল শব্দ: পূর্বের অর্থ: বর্তমান অর্থ
মহাজন: মহৎ ব্যক্তি: সুদখোর ব্যবসায়ী
মন্দির :গৃহ: দেবতার ঘর
সন্দেশ :সংবাদ: মিষ্টি বিশেষ
পাষ- :ধর্ম সম্প্রদায়: অত্যাচারী
নাগর ;নগরের লোক: অবৈধ প্রণয়ী
শ্বাপদ :কুকুরের পা: সকল বন্য প্রাণীর পা
ধুরন্ধর :ভারবাহক (গাধা/ঘোড়া): অতিচালাক
কারসাজি (কারসাজ): নির্মাতা; শয়তানি।

অন্যরকম কিছু শব্দের ব্যবহার: কিছু কিছু শব্দ হুট কওে তৈরী হয় ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। এগুলোর কিছু শব্দ আবার হারিয়েও যায়। কিন্তু অভিধানে তোলার সময় পন্ডিতগণ এস শব্দকে মূল্য দিতে চান না। অবশ্য এগুলো লিখিত ভাষার শব্দ নয় এগুলো কথ্য ভাষার শব্দ । কিন্তু আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিকশিত হওয়ার কারণে এই শব্দগুলো মানুষ সংক্ষিপ্ত বার্তা ও সংক্ষিপ্ত মত দেয়ার সময় ব্যবহার করে।

যেমন:
টাংকি মারা: আড্ডা দেয়া
ছ্যাকা খাওয়া: প্রেমে ব্যর্থ হওয়া
এভাবে ভাষা বদলে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে এই বদলে যাওেয়ার প্রবণতা আশংকা জনক হারে বেড়েছে। ভাষার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক বিষয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইতিবাচকও বটে। কিন্তু মূল ভাষা ও ভাষার কাঠামোকে বিকৃত করে বিদেশী শব্দের আধিক্যজনিত ভাষার বিবর্তন স্বীয় ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য হুমকি স্বরুপ। তাই যারা ভাষাকে যেভাবে বিকৃত করুক না কেন, ভাষা প্রেমিকদেরকে মূল ভাষার চর্চাও ও ব্যবহার ধরে রাখতে হবে এবং একে ছড়িয়ে দিতে হবে।


তথ্যসূত্র:
গ্রন্থ: বাংলা অভিধান। বাংলা একাডেমী প্রকাশিত
গ্রন্থ: বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান
প্রবন্ধ: বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভার, ড। মোহাম্মদ হান্নান
বাংলাপিডিয়া, খ- ৬, ২০০৩, পৃষ্ঠা ৩৭৫
গ্রন্থ: জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গলাভাষার অভিধান
প্রবন্ধ: বাংলা ভাষার নতুন শব্দ: সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়।
গ্রন্থ: বাংলা ব্যাকরণ: নবম দশম শ্রেনী



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনি দেখি, সেই আমলের উচ্চশ্রেণীর লোকেদের মত কথা বলছেন| ওরা খাঁটি আর্য ভাষায় বলত, আপনি খাঁটি বাংলার কথা বলছেন| আসলে মূল বাংলায় কথা বললে, ভাষাটাই মৃত হয়ে যাবে| বাংলার এই যে পরিবর্তন এটাই প্রমাণ করে বাংলা কতটা জীবন্ত! আর জীবনই সুন্দর!

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৩

মোমবাত্তি বলেছেন: এদেশের স্মার্ট ছেলে মেয়ে যখন 'কিরে, খাইছস?' ; ' আজকে তুমি যাবা?' 'ওটা করবা না? এই চাদরটা জড়ায়ে ধর' টাইপের বাংলা বলে সেটা আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন? এই ধরণের ভাষা কিন্তু আঞ্চলিক না, বাংলা ভাষার স্মার্ট পরিনতি বলা যায়!

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৪

বলেছেন: আমি কিন্তু ভাষা বদলের পক্ষ বা বিপক্ষে কিছু লিখিনি। শুধু চিত্রটা তুলে ধরেছি। শেষে শুধু এই মন্তব্য লিখেছি । যে এটা কোনো ক্ষেত্রে ইতিবাচক। বিকৃত চর্চা বন্ধ করা কঠিন। তাই ভাষা পরিবর্তন হবে মূলকে ঠিক রেখে। আর সঠিক চর্চাটাও বজায় থাকবে।

‘‘এভাবে ভাষা বদলে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে এই বদলে যাওেয়ার প্রবণতা আশংকা জনক হারে বেড়েছে। ভাষার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক বিষয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইতিবাচকও বটে। কিন্তু মূল ভাষা ও ভাষার কাঠামোকে বিকৃত করে বিদেশী শব্দের আধিক্যজনিত ভাষার বিবর্তন স্বীয় ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য হুমকি স্বরুপ। তাই যারা ভাষাকে যেভাবে বিকৃত করুক না কেন, ভাষা প্রেমিকদেরকে মূল ভাষার চর্চাও ও ব্যবহার ধরে রাখতে হবে এবং একে ছড়িয়ে দিতে হবে।’’


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.