নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আইভানহো

আমি একজন স্বপ্নবাজ।

আইভানহো › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহস কী?

২৭ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ২:৩৭

“সাহস হচ্ছে মৃত্যু থেকে ভীত হওয়া, কিন্তু বাঁচার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।” -জন ওয়েন।





“ভয়ের অনুপস্থিতির নাম সাহস নয় বরং সাহস হচ্ছে এই বিচারবোধ যে, ভয়ের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ অন্যকিছু আছে।”-এ্যাম্বরোজ রেডমুন।





“সাহস হচ্ছে ভয়কে রোধ করা, ভয়ের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা। ভয়ের অনুপস্থিতি নয়।”-মার্ক টোয়াইন।



‘সাহস’ সম্পর্কে মনিষীদের এ উক্তিগুলি আমি পছন্দ করি। এ বক্তব্যগুলি থেকে বোঝা যায় যে, সাহস হচ্ছে ভয় সত্বেও আপনার নিজের কাজে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য। ইংরেজিতে courage বা সাহস শব্দটি ল্যাটিন core শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ heart বা হৃদয়। আমাদের মতে, সাহস বিষয়টি যতটা না আবেগ বা হৃদয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত তার চেয়ে বেশী বুদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। বুদ্ধির ব্যাপরটি মানুষের মস্তিকের অসাধারণ অংশের (যার নাম ‘নিও-কর্টেক্স’) সাথে জড়িত। ‘নিউ-কর্টেক্স’ নামের এই অংশটি শুধুমাত্র মানুষেরই আছে। মস্তিকের এই অংশটি মস্তিকের অপর অংশ যাহা সকল পশু-প্রাণীরই মস্তিকে আছে তা থেকে পৃথক। ‘লিম্বিক ব্রেইন’ নামের মস্তিকের অপর অংশটি (যাহা সকল প্রাণীরই আছে) তাহা আবেগ পরিচালনা করে। আপনার লিম্বিক ব্রেইন বিপদ এবং ভয়ের অনুভূতি প্রদান করে কিন্তু আপনার মস্তিকের ‘নিও-কর্টেক্স’ অংশ যুক্তি দিয়ে যাচাই করতে পারে যে, সেই বিপদ বা ভয়টি সত্যিকারের কোনো বিপদ বা ভয়ের বস্তু কি-না। তাই ভয় হচ্ছে একটি পাশব অনুভূতি অর্থাৎ এটি একটি আদিম, জান্তব, প্রাকৃতিক অনুভুতি। তাই কোনো ব্যাপার বা ঘটনার সাথে সত্যিকারের ভয় বা বিপদের কোনো সংযোগ না থাকলেও যাচাই-বাছাই না করে তাতে প্রথমেই ভয় পাওয়টা একটি আদিম, প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক অনুভূতি। যেমন, শীতের দিনে পানিতে হাত দিলে চামড়ায় ঠান্ডার অনুভূতি পাওয়া যায় তাই বলে সেই ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে কেউ মারা যাবে এমন ভয় অযৌক্তিক। কোনো ব্যাপারে আগেই ভয় পাওয়া বা কাজে না নেমেই অসফলতার চিন্তা করাটিও সেইরকম ব্যাপার। এটি মস্তিকের লিম্বিক অংশের একটি স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতি। এই অংশটি সব প্রাণীর মস্তিকেই আছে। প্রাকৃতিক ভাবেই সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই নতুন কিছুর ব্যাপারে ভয় থাকে। প্রত্যেক প্রাণীই নতুন কাজ, নতুন পরিবেশ, নতুন ঘটনার ক্ষতিকারক দিক থেকে সতর্ক থাকতে চায়। ফলে প্রথমেই সে নতুন কিছুর ব্যাপারে একটি আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিতে চায়। তাই সে নতুন কিছুর ব্যাপারে শুরুতেই বাস্তব-অবাস্তব-কল্পিত-অকল্পিত-দুনিয়ার যাবতীয় ভীতিকারক অবস্থার কথা কল্পনা করে নেয়। অবশ্য নতুন কাজ, নতুন পরিবেশ, নতুন ঘটনার ব্যাপারে এই ভয় পাওয়ার বিষয়টি একদিক থেকে উপকারী। নতুন কিছুর ব্যাপারে যাচাই বাছাইবিহীন এই ভয়ের অনুভূতির কারণেই সকল প্রাণী সত্যিকারের বিপদের সময় তাৎক্ষণিকভাবে বিপদ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। একারণেই সকল প্রাণীর মস্তিকের ‘লিম্বিক’ অংশটি সবসময় যাচাই বাছাইবিহীন এই ভয়ের অনুভূতি প্রদান করে চলে। এতে প্রাণীর আত্মরক্ষার সুবিধা হয়। এ অনুভূতি না থাকলে সব প্রাণীই অসচেতন অবস্থায় যখন তখন শিকারের পাল্লায় পড়ে মারা যেত।



আপনি একটি ইঁদুর না-কি মানুষ?





লিম্বিক ব্রেইনের দেয়া ভয়ের অনুভূতি আপনার জন্য উপকারী। কিন্তু অন্য সকল অবোধ প্রাণীর সাথে আপনার তুলনা চলবে কি? আপনি হচ্ছেন মানুষ। জগতের সেরা প্রাণী যারা সভ্যতা নির্মাণ করে, যারা সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া জয় করে, যারা পাখীর চেয়েও দূরন্ত শক্তিতে আকাশে ওড়ে, যারা মাছের চেয়েও বেশী সাবলীলতায় মহাসমুদ্রের গভীরতায় বিচরণ করে, যারা যাচাই বাছাইবিহীন ভয়ের অনুভূতিকে মস্তিকের ‘নিও-কর্টেক্স’ অংশের দ্বারা যাচাই করে জীবনের পথ চলে, যারা সংকল্পবদ্ধ হলে ভয়কে জয় করে সবকিছু করতে পারে। আপনি হচ্ছেন মানুষ যার মস্তিকে একটি বিশেষ অংশ আছে যা অন্য প্রাণীর নেই। আপনার মস্তিকে আছে অসাধারণ ‘নিও-কর্টেক্স’ যা আপনাকে দেয়া হয়েছে ভয়ের প্রাথমিক ও জান্তব অনুভূতিকে ঝেড়ে ফেলে মানুষের মত আচরণ করতে। তাই আপনার পছন্দনীয় কাজ শুরু করতে যেসব ভয় আপনাকে প্রথমেই পেয়ে বসে তা সত্যি নয়। তা সবই আপনার ব্রেইনের ‘লিম্বিক’ অংশের দেয়া সতর্কতামূলক পাশবিক, জান্তব ও প্রাকৃতিক ভয়। এটা সেই ভয় যখন একটি ইঁদুর খাবারের সন্ধানে গর্ত থেকে প্রথম মুখ বের করে। তারপর চারপাশ দেখে নিয়ে দ্রুত তার খাবার খুঁজে নিয়ে তা খেতে শুরু করে। আপনি কি একটি ইঁদুর না আপনি একজন মানুষ? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরের উপরই আপনার সফলতা নির্ভর করবে। আপনি ইঁদুর হবেন না মানুষ হবেন সে সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। আপনি ইঁদুর হয়ে থাকলে ভয়ে ভয়ে চলবেন আর আশপাশের সবকিছু থেকে গা বাঁচিয়ে অন্যদের উচ্ছিষ্ট খাবারটুকু দ্রুত খুঁজে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে খাওয়া শুরু করবেন। আর আপনি মানুষ হয়ে থাকলে আপনার ‘লিম্বিক’ পর্যায়ের ভয় বা প্রাথমিক পর্যায়ের ভয়কে আপনার মস্তিকের অসাধারণ ‘নিও-কর্টেক্স’ অংশের দ্বারা যাচাই করে নিয়ে নিজের কাজে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাবেন। নতুন কিছু শুরু করার সময় যেসব অসংখ্য অযাচিত ভয় আপনাকে ভর করে আপনার ব্রেইনের ‘নিও-কর্টেক্স’ অংশ ব্যবহার করে আপনি তার বেশীর ভাগই ঝেড়ে ফেলতে পারেন কারণ সে সকল ভয়ের বেশীরভাগই অমূলক, অবাস্তব ও কল্পিত ভয়। কাজেই ভয়কে ঝেড়ে ফেলে অথবা ভয় পাওয়া সত্বেও দৃঢ়সংকল্পে আপন কাজে অগ্রগামী হওয়াই মানুষের মত আচরণ। তাই ভয়কে অনুসরণ না করে বরং ভয়কে ভয়ের জায়গায় রেখেই আপনি আপনার কাজে অগ্রসর হোন। ভয় সত্বেও আপনি যত এগোতে পারেন আপনি ততখানিই মানুষ। আর ভয়কে অনুসরণ করে যতই আপনি ভয় পেতে থাকেন ততই আপনি ইঁদুর কিংম্বা অন্য কোনো নিম্নশ্রেণীর প্রাণী। এটি কোনো কথার কথা নয়, কোনো আবেগের কথাও নয়। আপনি যতই আপনার ‘লিম্বিক ব্রেইনের’ দেয়া প্রাথমিক ভয় দ্বারা তাড়িত হন ততই আপনি একটি ইঁদুর বা ইতর প্রাণী আর যতই আপনি আপনার ‘নিও-কর্টেক্স ব্রেইন’ ব্যবহার ক'রে সেইসব কল্পিত ভয়কে যাচাই-বাছাই করে নিতে পারেন আপনি ততই মানুষ। অতএব, “আপনি মানুষ হবেন না ইঁদুর হবেন?”- এটা পুরোপুরি একটি বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন। আপনি যখন নতুন কিছুতে ভয় পান তখন আপনি ইঁদুর কিন্তু যখন ভয় পাওয়া সত্বেও কাজে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখনই আপনি মানুষ। তাই যারা সাহসী ও সফল মানুষ তারা ভয় পান না তা নয়। আপনার মত তাঁরাও ভয় পান কিন্তু তারা ভয়ের সামনে স্তব্ধ হয়ে যান না। আসল ব্যাপার হলো, তারা ভয় পাওয়া সত্বেও এগিয়ে চলেন এবং সফলতা লাভ করেন। সফল মানুষেরা জানেন যে, ইঁদুর হয়ে বাঁচার চাইতে মানুষ হয়ে মরাও ভাল। যদিও ইঁদুরের চাইতে মানুষের বাঁচার সম্ভাবনাই বেশী। তাই আপনি আর একটু সাহস দেখালে সকলের জন্যই তা ভাল হবে। আপনি তা করবেন কি?



সচেতনভাবে বাঁচার সাহস







“নিরাপত্তার বোধটি মূলত একটি কুসংস্কার। এটা প্রকৃতিতে আদৌ নেই। মানবসন্তানেরা সমষ্টিগতভাবে তা অনুভবও করেনা। বিপদকে এড়ানোর চেষ্টা বিপদকে সরাসরি মোকাবেলা করার চাইতে ভালো কিছু নয়। জীবন হয় একটি দুঃসাহসিক ভ্রমণ অথবা জীবনটা কিছুই না। পরিবর্তনের মুখোমুখি হওয়া এবং ভাগ্যের সামনে মুক্তচিত্ত থাকা অপরাজেয় শক্তির পরিচয়।”

-হেলেন কেলার।





আপনার দৈনন্দিন জীবনে সাহসিকতার গুণটি কিন্তু তেমন মনোযোগ পায়না। সাহসিকতা গুণটি যেন সৈনিক, যোদ্ধা আর কর্মীদের জন্যই তোলা থাকে। আজকাল নিরাপত্তার ব্যাপরটিই যেন সব। সম্ভবত আপনি সবসময় দৃঢ় এবং সাহসী হওয়ার ক্ষেত্রে নিরু্সাহিত হয়েই এসেছেন। “এটা খুবই বিপদজনক। এ কাজ করো না। অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিও না। জনতার মধ্যে নিজের দিকে মনোযোগ টেনো না। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসরণ কর। অপরিচিতদের সথে কথা বলো না। সন্দেহজনক লোকজনের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। নিরাপদ থেকো।”- আপনি সবসময় এইসব কথাই শুনে এসেছেন। আমাদের পিতামাতা সবসময় আমাদেরকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দিয়ে চলার শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উপর বেশী জোর দিয়ে চলার কুফল এই যে, এটা আপনাকে প্রতিক্রিয়াশীল করে গড়ে তোলে। কোনো ঘটনায় অংশ নেয়া বা কোনো ব্যাপারে দায়িত্ব নেয়ার পরিবর্তে ঘটনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবন চালানোর অভ্যাস তৈরী হয়। অর্থাৎ তখন নিজস্ব লক্ষ্য স্থাপনের বদলে, লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা করার বদলে এবং সেগুলির পিছনে আকাঙ্খা নিয়ে ধাবিত হওয়ার বদলে আপনি সেগুলি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। কোনো কাজে বা ঘটনায় অংশ নিয়ে কিছু ফল লাভ করার চিন্তা আপনার জন্য ভীতিকর হয়ে উঠে। কোনো কাজ শুরু করার আগেই সেই কাজে কি কি বিপদ বা ঝুঁকি থাকতে পারে তা চিন্তা করে পছন্দের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে আপনার সাহস হয় না। আপনি ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারেন না বরং ঘটনাই আপনাকে ভয় পাইয়ে দেয়। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আপনি কাজ করার চিন্তা বাদ দিয়ে পিছিয়ে আসেন। অবশেষে নিজের পছন্দনীয় একটি কাজে সফলতা লাভ করার পরিবর্তে আপনার অপছন্দনীয় বিরক্তিকর একটা কাজ নিয়ে আপনাকে থাকতে হয় যদিও তা আপনাকে সন'ষ্ট করতে পারে না। দুনিয়া আপনাকে দয়া করে যা দেয় তার থেকে বেশী কিছু আপনি আদায় করে নিতে সাহস করেন না। অসফলতার অনুভূতি বয়ে নিয়ে আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও অন্যদের সাথে অসন্তোষপূর্ণ সম্পর্ক চালিয়ে যেতে হয় যদিও আপনি মনে মনে সফলতা লাভের গোপন উদ্যম নিয়ে ভিতরে ভিতরে অবসন্ন বোধ করতে থাকেন। মাঝে মাঝে মনে হয় দুনিয়ার সবকিছুকে বদলে দেবেন। কিন্তু সবকিছুকে উল্টে দেবেন এমনটি ভাবার আপনি কে? বরং জীবনে আপনার ভ্যাগকে বরণ করে নিন এবং সেখান থেকেই সবচে ভাল সুফলটি বের করে আনুন। জীবন আপনাকে এই মূহুর্তে যা দিয়েছে তা দিয়েই শুরু করুন। জীবনে আপনার বর্তমান অবস্থাকেই আপনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করুন। ভয় ঝেড়ে ফেলে সাহসের সাথে এগিয়ে যান। প্রথমে স্রোতের সাথে মিশে যান। আপনার একমাত্র আশা থাকবে যে, জীবনের স্রোত আপনাকে একটি অনুকূল অবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। সন্দেহ নেই যে, জীবনে সত্যিকারের কিছু বিপদ আছে যা আপনাকে এড়িয়েই চলতে হবে। কিন্তু সাহসিকতা এবং দুঃসাহসিকতার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। আমি এখানে বীরোচিত সাহসিকতার কথা বলছি না। আমি বলছি না যে, আপনি নিজের জীবন বিপন্ন করে কোনো জ্বলন্ত প্রাসাদ থেকে রাজকুমারীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসুন। সাহসিকতা বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি কল্পিত সব ভয়কে সরাসরি জয় করা এবং অনেক বেশী শক্তিশালী একটি জীবন ফিরে পাওয়া যা থেকে আপনি নিজেকে বঞ্চিত করে এসেছেন। সফলতা লাভের পথে অসংখ্য কল্পিত ভয় আপনাকে তাড়া করে ফিরেছে। চিরজীবনের অভ্যাসমত ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নেবার বদলে ঘটনা ঘটার আগেই বক্তিগত নিরাপত্তার চিন্তায় এবং অসফলতার ভয়ে পথ ছেড়ে সরে এসেছেন। চিরজীবনের অভ্যাসের কারণে ঘটনাই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আপনি সংঙ্কল্প বাদ দিয়ে যেমন্ততেমন জীবন গ্রহণ করে নিয়েছেন। আপনি একটি সস্তা, একঘেঁয়ে, প্রতিক্রিয়াশীল জীবন যাপন করে এসেছেন। অথচ আপনি ইচ্ছা করলে ঘটনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে বরং একটু সাহস দেখালেই ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সফলতার ইচ্ছায় নতুন কোনো কাজ শুরু করতে গেলে সব ধরনের ভয় আপনাকে তাড়া করবে, অথচ চিন্তা করে দেখুন, তা সবই কল্পিত ভয়। পরাজয়ের (কল্পিত) ভয়। পরিত্যাজ্য হবার (কল্পিত) ভয়। খন্ডিত হবার (কল্পিত) ভয়। একাকীত্বের (কল্পিত) ভয়। নিগৃহীত হবার (কল্পিত) ভয়। জনতার সামনে কথা বলার (কল্পিত) ভয়। পরিবার ও বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবার (কল্পিত) ভয়। শারীরিক অসুস্তুতার (কল্পিত) ভয়। আক্ষেপের (কল্পিত) ভয়। সফলতা লাভে (কল্পিত) ভয়। ভেবে দেখুন তো, এই ভয়গুলির কতগুলি আপনাকে পিছনে টেনে রেখেছে?







ভয়গুলি আসলে কতটা ভয়ের?





আপনার যদি আদৌ কোনো ভয় না থাকে তবে আপনি জীবনে চলতে বিশৃংখল হয়ে পড়বেন এটা ঠিক। সত্যিকারের বিপদ দেখলে ভীত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপরও কোনো বিপদ বা ভয় সত্যিকারের বিপদ বা ভয়ের বস্তু কি-না তা যাচাই করে নিতে হবে আপনার বুদ্ধিমত্তা ও আপনার সাধারণজ্ঞান ব্যবহার ক’রে, কোনো প্রকার ভয়ের আবেগ ছাড়াই। আপনি কি ঝুঁকি নিতে আর একটু ইচ্ছুক হবেন যখন আপনার অনুমানকৃত সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটি আদৌ ঘটবে না। আপনি কি আর একটু বেশী মুখ খুলবেন, আর একটু বেশী অপরিচিতদের সাথে কথা বলবেন, বিক্রয় চেষ্টা আর একটু বাড়াবেন, আপনার যেসব উচ্চাকাঙ্খী কাজকর্মের পরিকল্পনা আছে তাতে দৃঢ়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বেন? কেমন হয় যদি আপনি এখন যেসব কাজে ভয় পাচ্ছেন তা আনন্দের সাথে করার শিক্ষা পান? এরূপ ঘটনা আপনার জীবনে কি ধরনের পার্থক্য এনে দেবে? আপনি কি পূর্বে কখনও নিজেকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন যে, আপনি কোনোকিছুর ব্যাপারে আদৌ ভীত নন। কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে, আপনি যখন আপনার সফলতার কাজ করা থেকে বিরত থাকেন তখন সেসব কাজ না করার ব্যাপারে সবসময় কিছু উপযুক্ত অজুহাত খাড়া করে থাকেন। কোনো অপরিচিতের কাছে নিজেকে তুলে ধরা আপনার কাছে কঠিন মনে হয় কারণ তাতে নিজের কোনো দূর্বল দিক প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। জনতার সামনে আপনার কথা বলতে আপনার ভয় কারণ বলার মত কোনো কথা আপনার নেই। এক্ষুণি একটি পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টা করা আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হয় কারণ অফিসের গোপন রিপোর্ট সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত নন ... ইত্যাদি। অথচ আপনি ভাবতে পারেন না যে, অপরিচিতের কাছে কোনো দূর্বলতা ধরা পড়লে তাতে এমন কোনো ক্ষতির বিষয় নেই। সব মানুষেরই দূর্বলতা আছে। দূর্বলতা আর শক্তি দু’য়ে মিলেই মানুষ। কাজেই অপরিচিতের কাছে আপনার দূর্বলতা যদি ধরা পড়ে তবে সাথে সাথে আপনার শক্তিও তার কাছে প্রকাশিত হবে। তাছাড়া যার সাথে পরিচিত হচ্ছেন মানুষ হিসেবে তারও দূর্বলতা আছে। আর অসামাজিক মানুষ ছাড়া অন্য কেউ কারো দূর্বল দিক নিয়ে মাথা ঘামায় না। বেশীরভাগ মানুষ অন্যদের দূর্বল দিককে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে। তাই এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। সর্বোপরি একঘরে-নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করার চাইতে অপরিচিতের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে বন্ধু ও শুভাকাংখীর সংখ্যা বৃদ্ধির ঝুঁকি নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ... ইত্যাদি। এভাবে দেখবেন সব ব্যাপারেই কাজটি না করার পক্ষে প্রথমে যে অজুহাত আপনার মনে আসে তা কত ঠুনকো। আপনি যদি শুরুতেই থেমে না গিয়ে আর একটু সাহস নিয়ে কাজটি করার পক্ষে ভাবনা শুরু করেন তবেই দেখবেন কত সহজে আপনি কাজটি করতে পারছেন। সফলতার দরজা আপনার সামনে খোলা পড়ে আছে শুধু সাহস নিয়ে সফলতার রাজ্যে প্রবেশ করুন। করবেন কি?



৫। ভুতের ভয় তাড়ান





আপনি যখন শিশু ছিলেন তখন কি আপনি ভুতে বিশ্বাস করতেন না? রাতের বেলায় অদ্ভূত শব্দ শুনে কি ভীত হতেন না? আপনার শিশু বয়সে ভুত নিয়ে আপনার ভয়টি ছিল বাস্তব। শিশু বয়সে ভূতের ভয়ে আপনার শারীরিক পরিবর্তনও দেখা দিত। মুখ শুকিয়ে যেত, হার্টবিট বেড়ে যেত, ঘাম দেখা দিত। অথচ এই বয়সে যখন আপনি যখন শিশুবেলার ভূতের ভয় নিয়ে চিন্তা করেন তখন আপনার নিশ্চয়ই হাসি পায়। কত অবাস্তব ছিল আপনার শিশুবেলার ভয়! অথচ অবাস্তব সেই ভয় তখন আপনার কাছে সত্যিকারের ভয় হয়ে আপনার হার্টবিট বাড়িয়ে দিত, আপনার মুখ শুকিয়ে দিত, আপনার শরীরে ঘাম দেখা দিত। আপনার সেই ভূতের ভয়টি একটি ভৌতিক কাহীনি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এটা ছিল শুধুই একটি মায়া, একটি অবাস্তব কল্পনা নির্ভর বিশ্বাস যার কোনো মূল্য নেই। সেটা ছিল অবাস্তব কাহিনী নির্ভর একটি বাস্তব অনুভূতি। সেক্ষেত্রে অবাস্তব কিছু কাহিনী বিশ্বাস করার ফলে আপনার মনের মধ্যে কিছু বাস্তব ভয়ের অনুভূতি জাগ্রত হতো। তাহলে দেখুন কিছু অবাস্তব কল্পনা গভীর বিশ্বাসের সাথে যুক্ত হয়ে কিভাবে আপনার মধ্যে বাস্তব অনুভূতি প্রদান করতে পারে আর তার ফলে আপনার শারীরিক পরিবর্তনও ঘটাতে পারে। ঠিক আছে, যখন আপনি শিশু ছিলেন তখন ভূতের ভয়ে কাতর হলে কেউ আপনাকে দোষ দিত না। শিশুরা ভুতের ভয় পেলে বড়রা তাদেরকে স্নেহের ডোরে জড়িয়ে নেবেন তা-ও ঠিক। কিন্তু যারা যথেষ্ট বয়স্ক হওয়া সত্বেও অহেতুক কিছু অনিশ্চয়তা আর ভয়ের কারণে উদ্বেগ আর আশংকায় কাতর হয়ে তাদের সফলতার স্বপ্ন ত্যাগ করে তাদেরকে আপনি কি বলবেন? জোয়ানার কথাই ধরুন। সে একসয় আমাকে বলল যে, তাদের কোম্পানী তাদের কর্মচারীদের বেতন কমানোর চিন্তাভাবনা করছে। সে বেতন কর্তনের ভয় পাচ্ছিল। এমনকি সে ভয় পাচ্ছিল তাকে চাকুরীটি হারাতে হতে পারে। সে শুনেছিল ছয় মাস আগে থেকে তার কোম্পানী কর্মচারীদের বেতন আট শতাংশ পর্যন্ত এবং পেনশন ফান্ড থেকে চার শতাংশ কর্তন করবে বলে চিন্তাভাবনা করছে। এই ছয় মাসে জোয়ানা সবসময় ভেবে এসেছে যে, চাকুরীটি তার তিলে তিলে শেষ হতে যাচ্ছে। তার এই ভীতি তার জীবনের স্বাভাবিক উদ্দীপনা কেড়ে নিয়েছিল। তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। ফলে খিটখিটে মেজাজ আর অবসন্ন শরীর নিয়ে তার এই ছয়মাস কেটেছে। এই ছয় মাসে প্রায়ই যখন বড়কর্তা তার অর্থ-সচিবের সাথে রুদ্ধদ্বার মিটিং করতে বসতেন তখনই জোয়ানার মনে হতো এই বুঝি তার চাকুরীটি গেল। চারদিকে বেতন আর পেনশন ফান্ড থেকে টাকা কর্তনের গুজব চলছিল। অবশেষে বড়কর্তা একটি সাধারণ সভায় সকলকে ডেকে জানালেন যে, বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে এবং পেনশন ফান্ডও আগের মতই থাকছে।

তাহলে এখন ভেবে দেখুন, এই ছয়মাসের ভোগান্তি নির্ঘুম রাত, মানসিক যন্ত্রণা সবই বৃথা গেল। আপনারও কি মাঝে মাঝেই এমন অভিজ্ঞতা হয় না? হয়ত যা নিয়ে ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে দিন কাটালেন সে দূর্ঘটনা অবশেষে আদৌ ঘটল না। চিন্তা করে দেখুন এই মুহুর্তে আপনার মনে যে বিষয়গুলি নিয়ে উদ্বেগ ও ভয় কাজ করছে তার কতটি আসলে বাস্তবে ঘটবে? আর আদৌ যদি তা ঘটেও তবে তার ফলাফল কি এতই ভয়াবহ যতটা আপনি ভাবছেন? তাই বলছি যে, ভূতের ভয় বাদ দিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। আপনি তা করবেন তো?



এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?





আমার নতুন কেনা গাড়ীটি আমার বেডরুম থেকে মাত্র দশ ফুট দূরে বেডরুমের জানালার কাছেই গ্যারেজে রাখা থাকত। আমি এখনও ভেবে আশ্চর্য হই যখন এক বছর আগে এক রাতে গাড়ীর দরজার চাবি বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। ঐ রাতে কেউ একজন আমার গাড়ীটি চুরি করার চেষ্টা করেছিল। ভাবতেই চমকে উঠি যে, কেউ আমার গাড়ীটির ইগনিশনের ফুটোর মধ্যে একটি চুলের ক্লিপ বা একটি শলা ঢুকিয়ে দিয়ে গাড়ীটি চালু করে হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যাবার চেষ্টা করছে যখন আমি মাত্র দশ ফুট দূরে আমার বেডরুমে ঘুমিয়ে আছি। আমার সৌভাগ্য সে রাতে দুস্কৃতিকারীরা আমার গাড়ীটি চালু করতে পারে নি। তারা আমার গাড়ীর ইগনিশনের ফুটোটি নষ্ট করে রেখে গিয়েছিল ফলে তাতে গাড়ীর চাবি ঢুকছিল না। আমাকে আবার টাকা খরচ করে ইগনিশন সারিয়ে নিতে হবে ভেবে মন খারাপ হলো। তবে গাড়ীটি যে চুরি যায়নি তা ভেবে সামান্য ক্ষতির ব্যাপারে আর মাথা ঘামালাম না। আমি দেখেছি, এ ধরনের ঘটনায় অনেকেই খুব নিরাপত্তহীনতা আর আহত বোধ করে। তারা নিরাপত্তার তীব্র অভাব বোধ করতে থাকেন। তারা ভীত হয়ে পড়েন। তারা ভাবতে থাকেন যে, তারা একই দূর্ঘনার শিকার আবার হতে পারেন। তারা ভয় আর অস্বস্তিতে বসবাস করতে থাকেন। আপনি বলুন এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? মনের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা আর সন্ত্রাসের ভয় নিয়ে এ কেমন বেঁচে থাকা? অথচ এরূপ ঘটনার ব্যাপারে তাদের একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে তারা আরও নিশ্চিন্ত ও স্বস্তিময় জীবন যাপন করতে পারতেন। আমার কথাই ধরুন, দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা গাড়ী চুরির চেষ্টার পর আমি হতভম্ব ও নিরাপত্তাহীন বোধ করার চাইতে বরং এই ভেবে মনে মনে নিজেকে সংম্বর্ধনা দিতে লাগলাম যে, আমি বড় ক্ষতির পরিবর্তে অল্প ক্ষতির শিকার হয়েছি। আমি হতাশা ও অস্বস্তি ভোগ করার বদলে বারবার এ কথাই ভাবতে লাগলাম যে, অল্প ক্ষতির উপর দিয়ে আমি একটি বড় শিক্ষা পেয়ে গেলাম। আর কখনও অসতর্কভাবে গাড়ীর দরজা খোলা না রাখার শিক্ষা। সবচে বড় কথা, আমি এই শিক্ষা পেলাম যে, মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত অনেক কিছুই যে কোনো সময় ঘটতে পারে এবং শিক্ষা পেলাম সেগুলি সহজভাবে গ্রহণ করার। আমি বরং নিরাপত্তাহীন বোধ করার চাইতে এই কথাই মেনে নিলাম যে, আমরা চোর এবং দুস্কৃতিকারীদের মাঝে বাস করি। আমাদের উচিত দূর্ঘটনার শিকার হলে তা থেকে বাস্তবতার শিক্ষাটুকু স্বীকার করে নেয়া। যত তাড়াতাড়ি আমরা বাস্তবতার শিক্ষাটুকু মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করব ততই শাি্তিতে বাস করতে পারব। কোনো দূর্ঘটনা ভবিষ্যতে আবার ঘটতে পারে এই দুশ্চিন্তায় নিরাপত্তাহীন একটি অস্বস্তিকর জীবন যাপন করা কোনো সুবিবেচনার কাজ হতে পারে না। পরাজয়, উদ্বেগ, আতংক, আত্মগ্লানি আর হতাশার মত ভয়ও একটি অভ্যাস মাত্র। শিশুবেলায় যেমন কল্পিত ভূতের ভয়ে আপনার হাত-পা জড়িয়ে আসত তেমনি ভবিষ্যতের কোনো কাল্পনিক দূর্ঘটনা বা কল্পিত পরাজয়ের ভয়ে সফলতার পথে চলতে আপনার হাত-পা আর এগুতে চায় না। তাহলে দেখুন, ভবিষ্যত্যের কল্পিত ভয়ংকর ঘটনার চিন্তায় আপনার শরীর-মনে যেমন উদ্বেগ, আশংকা আর অস্বস্তির প্রকাশ দেখা দেয় একইভাবে ভবিষ্যতের সকল সমস্যা ডিঙিয়ে সফলতা লাভের চিন্তা ও বিশ্বাস আপনাকে কি আপনাকে একজন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না? ভেবে দেখুন তো, সবধরনের আজেবাজে ঘটনা ও দুনিয়ার যাবতীয় ভয়ংকর ঘটনা কল্পনা করার ক্ষমতা যদি আপনার থাকে তাহলে সমস্যা ডিঙিয়ে সফলতা লাভের কল্পনা করার ক্ষমতাও আপনার আছে কি-না? আপনার অবশ্যই তা আছে। তাহলে আপনার ভয় পাওয়ার কু-অভ্যাসটি বদলে নিয়ে আশাবাদী হয়ে সফলতার পথে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে চলার সু-অভ্যাসটি গড়ে নিচ্ছেন না কেন? হতাশ হওয়ার অভ্যাসটি বাদ দিয়ে আশাবাদী, আত্মবিশ্বাসী আর উদ্যমী হয়ে সফলতার ভাবনায় জেগে উঠুন। সাহস নিয়ে ভয়কে জয় করুন। বিশ্বাস করুন, কোনো ব্যাপারে আপনার যত বেশী ভয় সেই বিষয়টি জয় করতে আপনার আনন্দও তত বেশী হবে। কাজেই “ভয়”কে আর ভয় নয়। ভয় হচ্ছে আপনার সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি পরীক্ষা। জীবনে আমাদের এমন সময় আসে যখন আমরা নিজের মনেই বলে উঠি, “আমি আর ভয়ে ভীত হয়ে বসে থাকতে চাইনা। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসুক, কন্ঠে কাঁপুনি উঠুক, পেটের নাড়ী গুলিয়ে উঠুক তবুও আমি আমার কাজে এগিয়ে যাব।” ভয় পাওয়া সত্বেও এগিয়ে যাওয়ার এই ছোট্ট সিদ্ধান্তটিই পারে আপনার পৃথিবীকে বদলে দিতে। আপনার ব্যর্থতাকে সফলতায় পরিণত করতে।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.