নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেঘ বলেছে চৈত্রে যাব

মেঘ বলেছে চৈত্রে যাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিরোনামহীন-১

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৪

১.

"ইয়াবা সহ যাত্রা দলের নাচিয়ে বুশরা আটক।"

খবরটা ভালোভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছে সুনীল। বেশ রসালোভাবেই লিখেছে পত্রিকাটি।



বুশরা মেয়েটার নকল নাম।

মেয়েটার আসল নাম কি, কোথায় বাড়ি, কিছুই জানা যায় নি।

অবশ্য বুশরা কাউকেই এই তথ্য গুলো দেয় নি। এমনকি তার যাত্রাদলের প্রধানও এই তথ্যগুলো জানে না।



যাত্রাদলের প্রধান প্রশান্ত চৌধুরীকেও আটক করেছে পুলিশ।

তার তথ্যমতে বুশরা ছিল তার যাত্রাদলের হটকেক। এই নিয়ে অন্য যাত্রাদল গুলোর সাথে তার বিরোধ চলছিল। আর এই শত্রুতার জের ধরে কেউ তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালিয়েছে। দাবি প্রশান্তের।



২.

চারদিকে বিভিন্ন ধরনের লাইটিং করা।

মাইকে একজন এনাউন্স করছে, কে কখন মঞ্চে উঠছে। রসবোধযুক্ত কথা বলে সে মানুষজনকে মাতানোর চেষ্টা করছে।

হঠাৎ ঘোষনা এল, সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ, আপনেরা যে যার আসনে খিঁচ্চা বসেন। কিছুক্ষনের মধ্যে মঞ্চে আইতাছে আপনাদের সক্কলের প্রিয়, হৃদয়ে কাঁপন তোলা, হিটহট নর্তকী বুশরা।

চারপাশে তালিতে ফেটে পড়ল। কেউ শিষ কেউবা সিটি বাজাচ্ছে।

দর্শক সারির এক কোনায় বসে আছে সুনীল। অন্ধকারমত জায়গা। মানুষের হৈহুল্লোড় আর নাচানাচিতে সে কাহিল।



গান বাজছে, মোবাইল ফোনে শুনলাম না রে আই লাভ ইউ। এই গানের তালে তালে নাচছে বুশরা।

তার পড়নে ঘাগরা আর একটা শর্ট কামিজের মত পোশাক।

নাচের তালে তালে বিভিন্ন অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে সে দর্শকদের মাতানোর চেষ্টা করছে।

একটার পর একটা গান বাজছে আর বুশরার কাপড় চোপড় সংক্ষিপ্ত হচ্ছে।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা ছিল টিপ টিপ বর্ষা পানি গানটাতে।

বাহির থেকে তার শরীরে পানি ঢালা হচ্ছে। বৃষ্টির গান, তাই মেকি বৃষ্টি নামানোর চেষ্টা।

দর্শকদের সিটি, তালি আর বিভিন্ন ধরনের কমেন্টে মুখরিত মঞ্চের আশপাশ।

"ঐ খাঙ্কি, রেন্ডি, পুরো খুলিস না ক্যান? কাপড় খোল।"

"আরেকটু দেখা। আরেকবার দেখা।...লে চুম্মা..."



যমুনার জল দেখতে কালো, স্নান করিতে লাগে ভালো, গানটা চলার সময় বুশরার শরীরে কিচ্ছুই ছিল না। শুধু নিচের অংশ ঢাকার জন্যে একটা নেংটি মত কিছু একটা ছিল।

সুনীলের মাথা ধরে গেল।

বেশির ভাগ সময়েই সে মাথা নিচু করে ছিল।

হঠাৎ সে চোখে মুখে অন্ধকার অনুভব করল।

বুঝতে পারছিল না কিছুই। তার পৃথিবীটা স্লো হয়ে যাচ্ছিল।

মনে হচ্ছিল তার শরীরের উপর দিয়ে কেউ হেমার চালাচ্ছে।



একটু একটু করে জ্ঞান ফিরছে সুনীলের।

সে বুঝতে পারছে, তার মাথায় কেউ একজন হাত বুলাচ্ছে। ঠান্ডা পানির ঝাপটা লাগছে তার চোখে। মাথায়ও পানি ঢালার অনুভূতি পেল। কপালে জলপট্টি।

চোখ খোলার সাথে সাথে সাথেই সে আবার মূর্ছা গেল।



এইবার যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করল।

পাশে তার এক বন্ধু ছিল।

সুনীলের মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।

চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।



৩.

সাড়ে চার বছর আগে সুনীল আর রাত্রির বিয়ে হয়েছিল।

তাদের একটা কন্যা সন্তান আছে। নাম শুক্লা।

দুই বৎসর আগের ঘটনা।

সুনীল এবং রাত্রি চাঁদপুর বেড়াতে গিয়েছিল আত্মীয়ের বাড়িতে। জৈষ্ঠ্য মাস ছিল তখন।

একদিন তারা তিনজন এবং আরও কয়েকজন মিলে নদি ভ্রমণে গিয়েছিল।

নৌকাটা যেতে যেতে অনেক দুর চলে যায়।

হঠাৎ কালো মেঘে আকাশটা ঢেকে যেতে থাকে। মাঝি তাড়াতাড়ি তীরের দিকে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রবল ঢেউয়ে নৌকাটি উল্টে যায়।

সুনীল কোনরকম শুক্লাকে নিয়ে তীরে উঠে আসে। কিন্তু রাত্রি সহ আরও কয়জন তীরে আসতে পারে নি।

ঝড় থামার পর সেদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। কিন্তু রাত্রিসহ বাকিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনদিন পর এক মেয়ের লাশ ভেসে উঠেছিল। এরপর আর কাউকেই পাওয়া যায় নি।



৪.

- পাপা, তুমি কাঁদছ কেন?

- কাঁদছি না তো মা। চোখে মনে হয় কিছু একটা পড়েছে।

- পাপা, তুমি খালি মিথ্যে কথা বল। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার চোখের পানিতে কাগজটা ভিজে যাচ্ছে।

মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সুনীল ফুঁফিয়ে কাঁদা শুরু করল।



৫.

খবরটা সুনীল পেয়েছিল তার সাংবাদিক বন্ধু রাকেশের কাছে।

নাটোরের লালপুরে বৈশাখী মেলা হচ্ছিল।

মেলায় একটা যাত্রাদল মঞ্চ তৈরি করেছে। যার নাম, প্রশান্ত যাত্রাপালা।

মেলায় জুয়া আর অশ্লীলতার ভয়বাহতা নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে, লালপুরের স্থানীয় প্রতিনিধির সাহায্য নিয়ে মেলায় যায় রাকেশ। সেখান থেকেই বুশরার সাথে দেখা তার।

সেদিন রাতেই সুনীলকে জানায় সে।

ভোরের বাস ধরে সুনীল ছুটে যায় নাটোরের দিকে।

রাতেই ঘটে বিপত্তি। বুশরা নামে সে যাকে মঞ্চে অশ্লীল নৃত্যে দেখেছিল, মেয়েটা দেখতে অবিকল রাত্রির মত। হুঁ, সুনীলের বউ রাত্রির মত।



৬.

সুনীলের বন্ধু সায়িদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তারা হলে একই রূমে থাকত।

সায়িদ ক্ষমতাসীন ছাত্রজোটের নেতা ছিল। খুব ভয়ঙ্কর ধরনের নেশাখোর ছিল।

পড়াশোনা আর শেষ করতে পারে নি সে।

এখন একটা বার দিয়েছে। লাইসেন্স করা।

ইয়াবার ডিলারও সে।

- হ্যালো দোস্ত। আমি সুনীল।

- আরে সুনীল্যা..কি অবস্থা কেমন আসস?

- ভালা নাইরে দোস্ত...

- ক্যান, তর বউ তরে দেয় না?...হা হা হা...

- ফালতু কথা বাদ...একটা উপকার করতে হবে দোস্ত...

- আমি করুম তোর উপকার?! হা হা হা...ক, কয় প্যাক লাগব? দেশি, নাকি বিদেশি? মামা, কঠিন মালও আছে...হা হা হা...

- ধূর শালা, ফাইজলামি রাখ...কাজের কথা শুন...

- আইচ্ছা, ক...শুনতাছি....



- হ্যালো, বুশরা বলছেন?

- জ্বি বলছি...আপনি কে?

- আমি সায়িদ..

- কি চাই আমার কাছে?

- আপনি তো ভালো নাচেন। আপনার শরীরের ভাঁজও চমৎকার...

- কাজের কথা বলুন...

- কাজের কথায়ই তো বলছি...

- জ্বি শুনছি...

- আপনাকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে...বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা পাবেন...

- টাকা পেলে আমি সব করব। কি কাজ আর এমাউন্ট কত?

- আমার কিছু ইয়াবা একজন পার্টির কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সাথে একটু খাতির যত্ন...বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা পাবেন...

- ৩০ হাজার টাকা এডভান্স লাগবে।

- সমস্যা নেই...

- তাহলে আপনার ঠিকানাটা এসএমএস করে দিন। আমি আমার মালিককে ম্যানেজ করছি এরমধ্যে...



ইয়াবা সহ বুশরা বনপাড়া থেকে ধরা খায়।

পুলিশকে আগে থেকে ইনফর্ম করা ছিল।

আর এই নাটকের মূল হোতা ছিল সুনীল। তাকে সাহায্য করেছে রাকেশ আর সায়িদ।

বুশরার এই যাত্রাদলে আসার পেছনের ইতিহাস জানার পরেই সুনীল এই নাটকটা সাজায়।

দুই বছর আগে প্রশান্ত যাত্রাদল নদীর পাশে পড়ে থাকা রাত্রিকে তাদের নৌবহরে তুলে নিয়ে বানিয়েছে, আজকের নাচিয়ে বুশরা।

কাজটা তাদের কাছে সহজ হয় যখন বুঝতে পারে রাত্রি কোনভাবেই আগের স্মৃতি মনে করতে পারছে না।



পথটা কোনভাবেই মসৃণ ছিল না সুনীলের কাছে।

অন্যকোন উপায় না পেয়েই এই পথ বেছে নেয় সুনীল।

এখন শুধু রাত্রির জামিনের অপেক্ষায়। সায়িদ বলেছে, পারা যাবে।

সমস্যা হল রাত্রি তার ২ বছর আগের কোন স্মৃতিই মনে করতে পারছে না।



৭.

রাত্রিটা গাঢ় হচ্ছে।

তারাদের মিছিল দেখা যাচ্ছে না।

আকাশে সেদিনের মত চাঁদটাও নেই।

সুনীল ছাদে শুয়ে আছে। তার চোখ যতদূর যাচ্ছে, শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। ঘুম গুলো বাষ্প হয়ে যাচ্ছে তার। চোখের কোনে এসে জল হচ্ছে সেইসব সুখের দিনের স্মৃতি।



[পুনশ্চ: একটা খাপছাড়া গল্প পড়িয়ে আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্যে আন্তরিকভাবে দু:খিত।

আর হ্যাঁ, এই গল্প পুরোটাই কাল্পনিক।]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.