![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমাদের গর্বের বিষয় যে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত এত বড় মাপের একজন নেতা পেয়েছিলাম। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে তাদের জাতির পিতা থাকে। আমাদের দেশেও আছেন।
আর তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বাংলা
কোন দিনই স্বাধীন ছিল না। আর্য,মুঘল,পাঠান,হিন্দুস্তান,বৃটিশ,পাকিস্তানরা শাসন করেছে এই বাংলাকে। আমরা নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলে থাকি, কিন্তু তিনি নিজেও উর্দূ ভাষী ছিলেন। হাজার হাজার বছর ধরে চলা এই পরাধীন বাংলাকে স্বাধীন সার্বভৌমত্ত্ব এবং স্বাধীন ভূ-খন্ড উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও তার সংগঠন আওয়ামী লীগ। অনেক দেশেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় একই সাথে একাধিক নেতা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, কিন্তু বাংলাদেশে নেতা একজনই ছিলেন আর তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু। তার অবর্তমানে জাতীয় চার নেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু তাদের লক্ষ্য ও আদর্শ ছিল বঙ্গবন্ধু। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা,স্বাধীনতা মানেই বঙ্গবন্ধু। তাই বঙ্গবন্ধুই জাতির পিতা।
তবে মাঝে মাঝে কিছু অবুঝ লোকের কথায় অবাক হই। তারা বলে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার
করি না, তবে জাতির পিতা মানতে পারি না! তাদের যুক্তি শুনলে অনেকে হাসবেন, কিন্তু এটাই সত্য যে
তাদেরকে কিছু লোক ভুল বুঝাচ্ছে । এবং এদের সংখ্যা কমও নয়, যারা ভুলের মধ্যে ডুবে আছে !
তারা বলে আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ।
আসুন আমরা দেখি জাতি বলতে কী বুঝায়:
বঙ্কিম চঁন্দ্র চট্রোপাধ্যায় তার প্রবন্ধে লিখেছেন, জাতি
বলতে কোন একক অংশকে বুঝায় না। জাতির বহুরূপতা আছে । যেমন – দেশ জাতি, ভাষা জাতি,
ধর্ম জাতি, বর্ণ জাতি, গোত্র জাতি, প্রভৃতি।’
কিন্তু আমরা ধর্ম জাতি ও দেশ জাতিকে বিভেদ না করে ,এক করে ফেলছি। এটা ঠিক নয় । আমরা
এক এক জন মানুষ একই সাথে বহুজাতির মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। বঙ্কিম এর কথাতে যদি আমি আমাকে
টানি তবে দেখব, আমি দেশ জাতি হিসেবে একজন বাংলাদেশি, ভাষা জাতি হিসেবে একজন বাঙ্গালি,
ধর্ম জাতি হিসেবে একজন মুসলিম/হিন্দু, বর্ণ জাতি হিসেবে একজন শ্বেতাঙ্গ/কৃষ্ণাঙ্গ, ইত্যাদি। এত গুলো বিভাজিত জাতির মধ্যে যে যে অংশে যে নেতার অবদান সে সে অংশে বা গন্ডিতে তিনিই
জাতির পিতা। সে ক্ষেত্রে কেউ কারও স্ব স্ব অবস্থান ছেড়ে অন্যের অবস্থান কেরে নিতে যাবেন না।
যে জাতিতে আমি মুসলিম সে জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ এবং যে জাতিতে আমি একজন
বাঙালি সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমান, এই কথাটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
আসুন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখা যাক, বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গালি জাতির জনক বললে ক্ষতি আছে
কি’ না?
আল্লাহ তা’লা হযরত ইব্রাহিমকে কোরআনে যে অংশে জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন
সেখানে বলেছেন-
”মিল্লাতা আবিকুম ইবরাহিম.হুয়া সাম্মাকুমু-লমুসলিমিন”।
(সূরা- হাজ ঃ ৭৮)
অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। তিনিই তোমাদের কে মুসলিম
নাম প্রদান করেছেন পূর্বেও আর পরেও।
এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীন দ্বারা ধর্মকে বুঝায়। তাই এখানে ইব্রাহীম(আঃ) এর সাথে পিতা, ধর্ম, এবং
মুসলিম । এই তিনটি শব্দ স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যার অর্থ দ্বারায় মুসলিম ধর্মের জাতির পিতা। আল্লাহ তা’লা হলেন মহাজ্ঞানী তিনি ভাল ভাবেই জানেন জাতি কোন একক বিষয় নয় তাই তিনি ভালভাবেই
’মুসলিমীন’ কথা উল্লেখ করে জাতিগত বিভেদ দূর করেছেন । তাই এই নিয়ে বিতর্কের কোন স্থান নেই।
আমাদের মধ্যে যদি কেউ বঙ্গবন্ধূকে এই বলে জাতির পিতা বলতে অস্বীকার করে যে ’ইব্রাহীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নয়।’ সে মূলত না বুঝেই এ কথা বলল। এবং কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝল না।
কোরানে কেন আল্লাহ ইব্রাহিমকে মুসলিম জাতির পিতা বলেছেন? তা আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখব,
ইসলাম আমাদের ধর্মের নাম কিন্তু ধর্মীয় জাতিতে আমরা মুসলিম। ইসলাম ধর্ম এসেছে আজ থেকে দেড়
হাজার বছর আগে, কিন্তু মুসলিম জাতিসত্তা এসেছে কয়েক হাজার বছর আগে। সেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছ থেকে। যুগে যুগে সকল নবীর অনুসারীগণ ধর্ম ভিন্ন হলেও, তারা জাতিতে মুসলিম ছিল।
ইহুদি, ঈসাহী, সাবেইন, প্রভৃতি ধর্ম যুগে যুগে এসেছে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে এবং তাদের সবার অনুসারীগণ জাতিতে মুসলিম ছিল। কারণ মুসলিম অর্থ আত্মসমর্পণকারী । যারাই আল্লাহকে এক বলে মেনেছে তারাই আল্লাহ’র নিকট আত্মসমর্পণকারী বা মুসলিম। ইসলাম শেষ ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে এর ব্যতিক্রম নয়। আল্লাহর একত্তবাদ (তাওহীদ) এর প্রচার শুরু হয়েছে ইব্রাহীম থেকে। আর যেহেতু মুসলিমরা এতে
বিশ্বাসী। তাই এ জাতির প্রবক্তা ও অবদান সরূপ তাকেই আল্লাহ জাতির পিতা করেছেন। এখানে আল্লাহ
নিদর্শন দিয়েছেন যে, যেখানে যার অবদান সেখানে তাকে তার পিতা বলা যায়। বা যে জাতিতে যার অবদান সে জাতিতে তাকে পিতা বলা যায়। তাই আমরা পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশেই জাতির পিতা
দেখতে পাই। এবং যেসব ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির অবদান সেসব ক্ষেত্রে তাকেই তার জনক বলি। যেমনঃ অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ, পেনিসিলিয়ামের জনক লুইপাস্তুর, আধুনিক জীবন বিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল, কম্পিউপারের জনক আইকেন ইত্যাদি।
আসুন দেখি বাইবেলে কি বলছে। এখানে ঈশ্বর আব্রাহামকে বলছেনঃ-
I MAKE THIS COVENANT WITH YOU; I PROMISE THAT YOU WILL BE THE ANCESTOR OF MANY
NATIONS. (GENESIS 17:4 / OLD TESTAMENT)
অর্থাৎ- আমিই তোমার সহিত আপন নিয়ম স্থির করিতেছি, তুমি বহুজাতির আদিপিতা হইবে।
আবার বাইবেলের GOSPEL বলছে
I HAVE MADE YOU A FATHER OF MANY NATIONS
(ROMANS 4:17 / NEW TESTAMENT)
অর্থাৎ- আমি তোমাকে বহুজাতির পিতা করিলাম।
এখানে লক্ষ্যনীয় যে বাইবেলে বহুজাতি বলতে কোন কোন জাতির কথা বুঝাচ্ছে তার উল্লেখ নেই।
তবে কোরআনে সুস্পষ্ট ভাবে মুসলিম কথা উল্লেখ আছে। তাই মুসলিমরা অন্তত এ নিয়ে বিতর্ক করতে পারে না, যদি সে কোরআনকে মানে ও বিশ্বাস করে। আর যদি বাইবেলে বিশ্বাসী হয় তবে বিতর্ক থাকতে পারে, কারণ বাইবেলে জাতিগত দিকের ব্যাখ্যা বা নাম নেই।
আমার জানা মতে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা নবী ইব্রাহীমকে রাস্ট্রীয় ও ধর্মীয় জাতির পিতা সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে তা হল ইহুদী দেশ ইসরাইল । শুধু তারাই সংবিধানে হযরত ইব্রহিমকে রাস্ট্রীয় জাতির পিতা ঘোষণা করেছে ।
বাঁকি সব সব মুসলিম দেশগুলো ইব্রাহীম নবীকে মুসলিম জাতির পিতা মানলেও নিজ নিজ দেশে জাতির পিতা আলাদা ।
আসুন আমরা দেখি অর কোন দেশে জাতির জনক আছে কি’না ।
আমরা পৃথিবীর বহুদেশেই তাদের জাতির পিতা দেখতে পাই। যেমন: আমেরিকার জাতির জনক জর্জ ওয়াশিংটন। আবার সে দেশে কৃষ্ণাঙ্গ (বর্ণ) জাতির পিতা হলেন মার্টিন লূথার কিং। অর্থাৎ একজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানের কাছে তার জাতির পিতা তিন জন। দেশ জাতি অর্থাৎ আমেরিকান হিসেবে তার জাতির পিতা জর্জ্ব ওয়াশিংটন, কৃষ্ণাঙ্গ (বর্ণ) জাতি হিসেবে তার পিতা মার্টিন লূথার কিং, আবার খৃষ্টান
বা ধর্ম জাতির পিতা আব্রাহাম। চীনের জাতির পিতা হলেন সান ইয়াত-সেন , দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা তাদের বর্ণবাদি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের জাতির পিতা হলেন মহত্মা গান্ধি, ইংল্যান্ডের জাতির পিতা হলেন স্যার ইউন্সটোন স্টরটিন, রাসিয়ায় পেটার আই , নিউগিনীতে স্যার মাইকেল সমার, সেন্টলুসিয়ায় জোন কোম্পটন, শ্রীলংকাতে ডোন স্টিফেন সেনানায়াক, তানজিনিয়াতে জুলিয়াস নিয়ারের , উরুগুয়েতে জর্জ গোরভাসিও আরটিগাস...... প্রভৃতি।
এ গুলো গেল অন্য ধর্মের দেশের কথা। এখন দেখব মুসলিম দেশে জাতির পিতা আছে কি’না।
আমরা জানি মুসলিম বহুদেশে তাদের জাতির পিতা আছে। যেমনঃ- পাকিস্তানের জাতির পিতা(বাবা-এ-কওম) কায়েদে আজম জিন্ন্াহ। আমাদের মধ্যে যারা এখন বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে নারাজ, তারা বা তার পূর্ব পূরুষ কায়েদে আজম জিন্নাহ কে খুব জাতির পিতা মেনেছেন। তখন ধর্ম যুক্তি কিছুই প্রয়োজন হয় নি।
আবার আমরা দেখব পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতে জাতির পিতা হলেন জনাব সূকর্ণ সাহেব। ইরানের মত এত বড় ধর্মীয় অনুশ্বাসনের দেশেও জাতির পিতা আছেন, আর তিনি
হলেন ইরানের সর্বচ্ছ ধর্মীয় নেতা হযরত আল্লামা আয়েতুল্লাহ খামেনী (রহঃ)। তিনি হাদিস কোরআনে
প্রচুর ধারণা রাখতেন। সেখানে কোন ধর্মীয় বিরোধ নেই জাতির পিতা মানার ক্ষেত্রে। একমাত্র ইউরোপিও মুসলিম দেশ তুর্কিস্থান, সেখানে জাতির পিতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক । ফিলিস্তিন, যে দেশ ইহুদি দ্বারা আক্রান্ত , সে দেশের জাতির পিতা হলেন ইয়াসির আরাফাত।সংযুক্ত আরবআমিরাতে শেখ যায়েদ বীন সুলতান নাহিয়্যান, আফগানিস্তানে মুহাম্মাদ জহীর শাহ্ , আরও অনেক মুসলিম দেশেই জাতির
পিতা আছে।
এখন কথা হলো যদি কেউ মনে করে আমাদের জাতির পিতা ইব্রাহিম তাই বাঙালি জাতির পিতাব বা রাস্ট্রপিতা মানিনা, তবে সে ত বাংলাদেশ বা মুসলিম কোন দেশকে অনুসরণ না করে সরাসরি ইসরায়েলী ইহুদীদের মতো আচরণ করলো ।
তাই বলতে হয় আমাদের দেশে জাতির পিতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এতে কোন ভাবেই ধর্মীয় বিরোধ নেই। তবে কোন জাতি তা উল্লেখ করতে হবে। আর তা হলো বাজ্ঞালি জাতি। আমাদের
বলতে হবে, ”সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাজ্ঞালি, বাজ্ঞালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:২১
যা বলার বলবো বলেছেন: Don't take my comments from political perspective.
Who'd be the father for "Bengali of West Bengal" ? Who`d be the father of "aborigines in hill tracks in Bangladesh" ?