নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সফল হবার সাধারন চেষ্টা! :) :)

মেহেদী হাসান (রনি)

মেহেদী হাসান (রনি) › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাশকাটা ঘর (হরর গল্প)

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:১৪

লাশকাটা ঘর




শহর থেকে দূরে বিচ্ছন্ন নির্জন এই এলাকাটিতে সূর্য প্রায় ডুবতে বসেছে!
এ অঞ্চল ভীষণ নির্জীব! এখানে আধারের রাজত্ব!এখানে সূর্য যেমন দুরু দুরু বুকে আকাশে উঠে তেমনি যেনো অস্ত যেতে পারলেই বাচে!
আশেপাশে তেমন কোন বাড়িঘর দেখতে পাওয়া যায় না! যা আছে তাতে মানুষ নেই! শোনা যায় এখানে বটতলায় যে লাশকাটা ঘরটা আছে তার ভৌতিক অভিজ্ঞতাই সরিয়ে নিয়ে গেছে এখানকার লোকদের!

দাড়িয়ে ছিলো রাশেদ ঠিক সেই লাশকাটা ঘরের সামনেই!পরিত্যাক্ত সেই লাশকাটা ঘরের রহস্যের টানেই তার এখানে আসা!
খুব সাবধানে দালানটির দিকে তাকালো রাশেদ! একতলা বাড়ি, প্লাস্টার খুলে গিয়ে ভেতরের ইটগুলো দেখা যাচ্ছে! মনে করা হয় ঘরটিকে লাল রং দিয়ে রং করা হয়েছিলো একসময়! আজও তারই কিছু অবশিষ্ট রয়েছে এককোনার দেয়ালে !
পাশেই বট গাছটি একটু বেশিই হেলে পড়েছে দালানটির উপর!বিশাল বটগাছের নিচে ২-৩ কক্ষের এই প্রাচীন বাড়িটিকে বড্ড বেমানান লাগছে!

রাশেদ ক্যামেরায় কিছু ছবি তুললো!
দিনের আলো কমে আসছে! এখনই তাকে বেরিয়ে পড়তে হবে জায়গাটা ছেড়ে!
রাশেদ দরজার দিকে সামান্য এগুলো!
ঘুণে খাওয়া কাঠের দরজা যেনো রিতীমত যুদ্ধ করে শেষ শক্তিটুকু দিয়ে লেগে আছে দেয়ালের সাথে!
দেরি হয়ে যাওয়ায় ভতরে ঢুকলো না রাশেদ!
বরং পাশের ভাঙ্গা জানালাটি দিয়ে ভেতরে তাকালো!
ঘুটঘুটে অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না!
অন্ধকারটা চোখে সয়ে গেলে কিছু একটা দেখতে পেলো রাশেদ! ঠিক দেয়ালের কোনার দিকে!
একজোড়া চোখ তার দিকে বিদ্রুপের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
অন্যকেউ হলে হয়তো সেখানে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারাতো!
রাশেদ কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে জানালার থেকে সরে গেলো!
আর এক মুহুর্ত দেরি না করে স্টার্ট করলো মোটরবাইক!
অন্ধকার প্রায় হয়েই এসেছে!ঘাসে ঢাকা কাচা রাস্তা দিয়ে বাইক ছুটে চলেছে দ্রুত বেগে!


সারা রাত ঘুম হলো না রাশেদের!মনে পড়তে থাকলো সেই চোখ দুটির কথা! বহু বছরের পুরোনো সবকিছুর মধ্যে চোখদুটো যেনো তখনও চকচক করছিলো!
ওখানে কে থাকতে পারে এটা ভেবেই পার করে দিলো সারা রাত!
ঠিক করলো রাতে ঘুমোবেনা! সকাল হতেই রওনা দিবে সেই লাশকাটা ঘরের উদ্দেশ্যে!
কিন্তু ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়লো রাশেদ!
যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন সূর্য ঠিক মধ্য গগনে!
নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো তার!
তাড়াতাড়ি করে গোসল সেরে লাঞ্চ করে বেরিয়ে পড়লো অজানা সেই রহস্যের খোজে!বেরোনোর আগে একটা চর্ট এবং ক্যামেরাটা সঙ্গে নিয়ে নিলো সে!

ও যখন সেই বটতলায় ঘরটির নিচে পৌছালো তখন প্রায় ৪ টা বাজে!
গ্রীষ্মের রোদ তার উত্তাপ হারাতে শুরু করেছে মাত্র!
আর দেরি না করে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো ও!
ভাঙ্গা দরজাটাতে সামান্য ধাক্কা দিতেই হড়হড় করে খুলে গেলো দরজা!

ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার!
প্রথমেই টর্চ জালালো না রাশেদ!
অন্ধকারে চোখ সয়ে যেতই দ্বীতীয় বারের মতো ধাক্কা খেলো রাশেদ!
৫ ফুট দুরেই দেয়ালে একটা তৈলচিত্র ঝুলছে!
ছিমছিমে চেহারার একজন মধ্যবয়সী মানুষের তেল চকচকে ছবি!
পোশাক দেখে বেশ অভিজাত মানুষ মনে হচ্ছে! জমিদার জাতীয় কেউ হতে পারে!
ছবিটাকে একটি বেশিই প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে! যেনো এইমাত্র ছবিটি একে ঝুলেয়ে রাখা হয়েছে !
রাশেদ বুঝতে পারলো কালকে সন্ধ্যায় এই ছবিটা দেখেই ভয় পেয়েছিলো সে!
বুকথেকে বিশাল একটা পাথর নেমে গেলো এই ভেবে যে কালকের ওটা শুধুই ছবি ছিলো!
বাইরে বেশ ঝড় শুরু হলো তখন! বৃষ্টি হচ্ছে! রাশেদ টর্চ বের করলো!
আস্তে আস্তে ঘরটার চারিপাশে চোখ বুলাতে লাগলো ও!
ঘরটাতে কোন আসবাবপত্র নেই! বেশ বড়সড় রুম!
রুমের ভেতরে একটা দরজা!
পাশের রুমে যাবার দরজা হতে পারে!
রাশেদ অন্যরুমে ঢুকলো!
এখানে একটা পুরোনো টেবিল আছে!
এটাই মূলত লাশকাটা ঘর!
এখানেই শুইয়ে কাটা হতো বিভিন্ন মৃত মানুষকে! ভাবতেই কাটা দিয়ে উঠলো ওর শরীরে!
পাশে রাখা বেশ কিছু ছুরি কাচি!
ও এগিয়ে গেলো টেবিলের দিকে!
অবাক করার মতো ব্যাপার হলো যে রুমের প্রায় সকল জিনিসই কমপক্ষে ৪০-৫০ বছরের পুরোনো কিন্তু ছুরি গুলো একদম নতুনের মতো!
কিন্তু এদিকে যে কোন লোক আসারর কথা না!
তাহলে চাকুগুলো এতো নতুন কেনো?
যেনো আজই বানিয়ে আনা হয়েছে!
রাশেদ একটি চাকু হাত দিয়ে তুলতেই
তার নিচে থাকা একটা চাকুর দিকে নজর গেলো!
ওর চোখ আটকে গেলো তাতে!
চাকুটাতে রক্ত লেগে আছে!
দেখেই বোঝা যাচ্ছে একদম তাজা রক্ত!
এবার বেশ ভয় করতে লাগলো রাশেদের!
এদিকে সন্ধাও হয়ে আসছিলো!
ও তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে বড় রুমটা থেকে বের হতে যাবে এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা খেলো!
রাশেদ প্রায় চিৎকার করতে করতে নিজেকে সামলে নিলো!
লোকটি রাশেদের দিকে তাকিয়ে বললো " কি হয়েছে? "
রাশেদ অপ্রস্তুত স্বরে জাবাব দিলো " না কিছু না! "
-এভাবে বেরিয়ে যাচ্ছো যে?
-না এমনি! আপনি কে?
-আমি এখানেই থাকি!এটাই আমার বাড়ি!
-আচ্ছা আমি যাই!
-কোথায় যাবে?বাইরে বৃষ্টি! ভেতরে আমার সাথে আসো!তোমার সাথে গল্প করি!


রাশেদ পিছু পিছু লোকটার পিছনে গেলো!
লোকটি লাশকাটা সেই টেবিলের উপর গিয়ে বসলো!
অন্ধকারে মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো না!একটু পরেই বিদ্যুত চমকালো!
এক ঝলকে ও দেখতে পেলো সেই লোকটার মুখ!
অনেকটা ভয়ই পেয়ে গেলো লোকটাকে দেখে।
ঘরের কোনায় টাঙ্গানো সেই তৈলচিত্রের ছবির লোকটার মতো অবিকল দেখতে! তবে মুখের একপাশে বড় বড় সেলাই!
এবং মুখে বিচিত্র হাসি!
রাশেদ ভয় পেয়ে গেলো!
রাশেদ ভয়ার্ত সুরে বললো " আমি তাহলে যাই!"
লোকটা বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলো!
রাশেদ বের হয়ে যাচ্ছিলো! কিন্তু রুমে হটাৎ দেয়ালটার দিকে চোখ পড়তেই ধাক্কা খেতে হলো তাকে!
দেয়ালটায় যেখানে তৈলচিত্রটি ছিলো সেখানটা ফাকা!তৈলচিত্র টি নেই!
ওটা কে সরালো তাহলে?
ওর মনে অজানা এক অাশঙ্কা দেখা দিতে লাগলো!
রাশেদ আবার সেই লাশকাটা রুমটার দিকে এগিয়ে গেলো পা টিপে টিপে।
ছোট্ট রুমটার দিকে নজর পড়তেই গায়ের সব লোম দাড়িয়ে গেলো তার!
রুমটি ফাকা! সেইসাথে মাংস পচা বিকট গন্ধ।
রুমে কেউ কেই!
ভয়ে উত্তেজনায় মাথা কাজ করছিলোনা রাশেদের!
কোথায় গেলো লোকটি!
তবে কি....
এসব কিছু ভাবার সময় নেই ওর!
রাশেদ ছুটছে!
যেভাবেই হোক এই লাশকাটা ঘর থেকে দূরে যেতে হবে তাকে!
কোন অশুভ জিনিস যেনো তাড়া করছে ওকে।
রাশেদের মোটরবাইক ছুটছে ভীষণ গতিতে! তবুও তার সারাক্ষণ মনে হচ্ছে বড় বড় পা ফেলে তার পিছনে পিছনে দৌড়ে আসছে কেউ এবজন, যার মুখের একপাশে বড়বড় সেলাই!



লিখা :মেহেদী হাসান রনি

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ
বেশ ভুতুরে হয়েছে গল্পটি! :)

+++

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩৬

মেহেদী হাসান (রনি) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই! :)

২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

পুলহ বলেছেন: আপনার লেখার হাত ভালো, সেটা গোছানো বাক্য গঠন দেখে বোঝা যায়।
পাঠক হিসেবে একটা সাজেশন থাকবে, লাইন-লাইন এতো ফ্রিকুয়েন্টলি আলাদা আলাদা না লিখে প্যারা প্যারা করে লিখলেই বোধহয় গল্পের প্রকৃত আমেজ পাওয়া যায়। তা না হলে মনে হয় বুঝি গল্প নয়, কবিতা পড়ছি।
ভালো থাকবেন ভাই। শুভকামনা আপনার জন্য

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩৯

মেহেদী হাসান (রনি) বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য! ভুলটা আপনি বড় একটা জিনিস ধরিয়ে দিয়েছেন! আমি লিখার সময় খেয়াল করিনি! আশা করি পরবর্তী লেখাগুলোতে ভুলটা শুধরে নিবো! ধন্যবাদ আবারো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.